১৬-২০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
বানী ইসরাঈলকে যে সকল নেয়ামত দান করা হয়েছিল উক্ত আয়াতগুলোতে তার কয়েকটি উল্লেখ হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি বানী ইসরাঈলকে কিতাব অর্থাৎ তাওরাত দান করেছিলাম এবং দিয়েছিলাম রাজত্ব বা শাসন ক্ষমতা অথবা বিবেক ও বিচার করার এমন যোগ্যতা, যা মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য জরুরী ছিল। তাদেরকে দান করা হয়েছিল নবুওয়াত, আকাশ হতে মান্না-সালওয়াসহ আরো উত্তম রিযিক এবং তাদেরকে বিশ্ববাসীর ওপর তথা তৎকালীন বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছিল। এছাড়াও তাদেরকে দেয়া হয়েছিল হালাল-হারাম বিবৃত স্পষ্ট বিধান। তাদের নিকট সঠিক জ্ঞান আসার পর তারা পদ-মর্যাদার জন্য পরস্পর হিংসা ও বিদ্বেষবশত দীনের ব্যাপারে মতবিরোধ করতে শুরু করে এবং রাসূলের রিসালাতকে অস্বীকার করে, ফলে তারা শাস্তির হকদার হয়ে যায়।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা উম্মাতে মুহাম্মাদীকে সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, তারা যেন বানী ইসরাঈলের মতো না হয়। তারা যেন কোন ব্যক্তির বা অজ্ঞ-মুশরিকদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ না করে।
(بَغْيًاۭ بَيْنَهُمْ) অর্থ আপোসে একে অপরের প্রতি হিংসা বা বিদ্বেষ পোষণ করা।
شريعة আভিধানিক অর্থ হলো- রাস্তা, ধর্মাদেশ, বিধান ও নিয়ম-পদ্ধতি। রাজপথ বা প্রধান সড়ককে شارع বলা হয়। কারণ তা গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয়। তাই শরীয়ত বলতে সে দীনের বিধানকে বুঝানো হয়েছে যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন, যাতে সে পথে চলে মানুষ আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে।
(فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَا۬ءَ)
অর্থাৎ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর উম্মাতকে এ শরীয়তের অনুসরণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কারণ শরীয়তের বাইরে কিছুই নেই, কোন ব্যক্তির আল্লাহ তা‘আলার কাছে পৌঁছতে ও আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য শরীয়তের যথাযথ অনুসরণই যথেষ্ট। সুতরাং যাদের শরীয়ত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নেই, যাদের বিশ্বাস কেবল শরীয়তের অনুসরণ করেই একজন ব্যক্তি পূর্ণ ঈমানদার ও আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি হাসিল করতে পারবে না, বরং তরীকত, মারেফত ধারাক্রম অতিক্রম করে হাকিকত পর্যায়ে পৌঁছতে হবে তারা সঠিক বিষয়ের অনুসারী নয়, বরং তারা ভ্রান্ত ও রাসূলুল্লাহ এর আনীত শরীয়ত বর্হিভূত বিষয়ের অনুসারী।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. বানী ইসরাঈলের যে মর্যাদা ছিল তা জানা গেল।
২. এমন ব্যক্তি যে শরীয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে অজ্ঞ তার অনুসরণ করা যাবে না।
৩. মু’মিনদের বন্ধু স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা।
৪. আল-কুরআন মানব জাতির জন্য পথ-নির্দেশ।