নামকরণ ও আলোচ্য বিষয় :
মুহাম্মাদ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাম। কুরআনে একটি মাত্র সূরা যা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামে নামকরণ করা হয়েছে। সূরার দ্বিতীয় আয়াতে উল্লেখিত মুহাম্মাদ নাম থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। এ সূরাকে সূরা কিতাল ও ‘সূরা আল-লাজিনা কাফারু’ নামেও নামকরণ করা হয়েছে।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : এ সূরাটি মদীনায় অবতীর্ণ, তবে একটি আয়াত ছাড়া; এটি অবতীর্ণ হয় বিদায় হাজ্জ শেষে ফিরে আসার পথে, তখন তিনি মক্কার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলেন আর কাঁদছিলেন। আয়াতটি হল :
(وَكَأَيِّنْ مِنْ قَرْيَةٍ هِيَ أَشَدُّ قُوَّةً مِنْ قَرْيَتِكَ)
ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিবের সালাতে এ সূরা পড়তেন। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ২/১১৮, সহীহ)।
সূরার শুরুতে কাফির ও মু’মিনদের পরিণতি বর্ণনা করে যুদ্ধের ময়দানে কাফিরদেরকে করায়ত্ত করতে পারলে কী করতে হবে তা বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলাকে সাহায্য করলে তবেই আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে সাহায্য করবেন, জান্নাতের উপমা এবং আমলের পূর্বে জ্ঞানার্জন করার নির্দেশ, কোন কাজের ব্যাপারে দৃঢ়মনস্ত হলে কী করণীয়, যারা কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না তাদের তিরস্কার, যারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের অবস্থা এবং সবশেষে দুনিয়ার উপমা ও মানুষ আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য না করলে যে তিনি অন্য জাতি নিয়ে আসবেন যারা তাঁর আনুগত্য করবে ইত্যাদি বিষয় এ সূরাটিতে আলোচিত হয়েছে।
১-৩ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
যারা কাফির তাদের সকল আমলের প্রতিদান আল্লাহ তা‘আলা বাতিল করে দিয়েছেন। দুনিয়াতে তারা যত সৎ আমল করেছে যেমন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায়, দরিদ্রদেরকে খাদ্য দান ও প্রতিবেশীকে সহযোগিতা করা ইত্যাদি কিয়ামাতের দিন তাদের কোন উপকারে আসবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَقَدِمْنَآ إِلٰي مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنٰهُ هَبَا۬ءً مَّنْثُوْرًا)
“আমি তাদের কৃতকর্মের দিকে অগ্রসর হব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।” (সূরা ফুরকান ২৫ : ২৩)
অর্থাৎ কুফরী অবস্থায় দুনিয়াতে যে সকল সৎ আমল করেছে তার সওয়াব বাতিল করে দেয়া হবে। কেউ কেউ এখানে কাফির দ্বারা কুরাইশদের বুঝিয়েছেন। আবার কেউ আহলে কিতাবদের বুঝিয়েছেন। তবে আয়াতটি ব্যাপক, সকল কাফিরদের জন্যই প্রযোজ্য। কারণ আমল কবূলের পূর্বশর্ত হল স্বচ্ছ ঈমান ও আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য করা। এসব কাফিররা ঈমান আনেনি এবং তাদের সৎ আমলগুলো দুনিয়ার স্বার্থে করে থাকে, আল্লাহ তা‘আলাকে পাওয়ার জন্য নয় এবং আরো কারণ হল তারা বাতিলের অনুসরণ করে, আর যে বাতিলের অনুসরণ করে তার আমলগুলোও বাতিল।
পক্ষান্তরে যারা মু’মিন তাদের অপরাধসমূহ মোচন করে দিয়ে তাদের অবস্থাকে ভাল করে দিবেন। কারণ তারা সত্যের অনুরসণ করে, যারা সত্যের অনুরসণ করে তাদের আমলগুলোও সত্য। মু’মিনরা প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত সত্যের অনুসারণ করে বিধায় তিনি তাদের অপরাধ মোচন করে অবস্থা ভাল করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(أَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ اجْتَرَحُوا السَّيِّاٰتِ أَنْ نَّجْعَلَهُمْ كَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لا سَوَا۬ءً مَّحْيَاهُمْ وَمَمَاتُهُمْ ط سَا۬ءَ مَا يَحْكُمُوْنَ)
“যারা খারাপ কাজ করে তারা কি মনে করে যে, আমি জীবন ও মৃত্যুর দিক দিয়ে তাদেরকে সেসব ব্যক্তিদের সমান গণ্য করব যারা ঈমান আনে ও সৎআমল করে? তাদের সিদ্ধান্ত কতই না মন্দ”। (সূরা জাসিয়াহ ৪৫ : ২১)
(وَاٰمَنُوْا بِمَا نُزِّلَ عَلٰي مُحَمَّدٍ)
‘এবং ঈমান এনেছে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে মুহাম্মাদের প্রতি’ ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : এখানে একটি ব্যাপক বিষয়ের পর বিশেষ বিষয়কে উল্লেখ করা হয়েছে যাকে
عطف خاص علي العام
বলা হয়। যদিও অত্র আয়াতের প্রথমে ঈমান ও সৎ আমলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে রাসূলের প্রতি ঈমান আনা শামিল করে তথাপি এখানে বিষেশভাবে উল্লেখ করার কারণ হল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগমনের পর তাঁর প্রতি ঈমান আনা ছাড়া ঈমান শুদ্ধ হবে না।
(وَأَصْلَحَ بَالَهُمْ)
‘এবং তাদের অবস্থা ভালো করে দিয়েছেন’ অর্থাৎ মু’মিনদের দীন, দুনিয়া, অন্তর, আমল ও প্রতিদান বৃদ্ধি ও সংশোধন করে ভাল করে দেবেন এবং তাদের সকল অবস্থার উন্নতি সাধন করে দেবেন। কারণ তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে আগত সত্যের অনুসরণ করে।
সুতরাং যারা বিশ্বাস করে ঈমান আনার পর অপরাধমূলক কাজ করলে ঈমানের কোন ক্ষতি হবে না যেমন কাফির অবস্থায় ভাল কাজ করলে কোন উপকারে আসবে না তাদের এ বিশ্বাস ভ্রান্ত। বরং ঈমান না আনার কারণে কাফিরদের ভাল আমল গ্রহণযোগ্য হবে না, আর মু’মিনরা ঈমান আনার পর অপরাধমূলক কাজ করলে গুনাহগার হবে। সে গুনাহ ছোটও হতে পারে আবার বড়ও হতে পারে, তবে ছোট গুনাহ ভাল আমলের কারণে ক্ষমা হয়ে যায়, আর বড় গুনাহর জন্য তাওবা করতে হয়। তাওবা না করে মারা গেলে তা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাধীন থাকবে, আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দেবেন, অথবা তার অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে জান্নাত দেবেন। ==
অসম্পূর্ণ =====