আল মায়িদাহ আয়াত ১১৮
اِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَاِنَّهُمْ عِبَادُكَ ۚوَاِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَاِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ ( المائدة: ١١٨ )
In tu'azzibhum fa innahum ibaaduka wa in taghfir lahum fa innaka Antal 'Azzezul Hakeem (al-Māʾidah ৫:১১৮)
English Sahih:
If You should punish them – indeed they are Your servants; but if You forgive them – indeed it is You who is the Exalted in Might, the Wise." (Al-Ma'idah [5] : 118)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই বান্দাহ আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর তুমি তো মহাপরাক্রান্ত মহাপ্রজ্ঞার অধিকারী।’ (আল মায়িদাহ [৫] : ১১৮)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও, তবে তারা তোমারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি তো পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’[১]
[১] অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তাদের ব্যাপার তোমার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। কেননা, তোমার যা ইচ্ছা তাই করতে পার। আর তোমাকে কেউই প্রশ্ন করার ক্ষমতা রাখে না, কেউ প্রতিবাদও করতে পারে না। {لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ}তিনি যা করেন, সে বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা যাবে না, বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে। (আম্বিয়া ২৩) সুতরাং এ আয়াতে আল্লাহর সামনে বান্দাদের অক্ষমতা ও অসহায়তার বহিঃপ্রকাশ হয় এবং আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ত্ব এবং তাঁর সর্বশক্তিমান ও সকল এখতিয়ারের একচ্ছত্র অধিকারী হওয়ার বিবরণ পাওয়া যায়। আর উক্ত উভয় কথার বরাতে ক্ষমা ও মার্জনার আবেদনও প্রকাশ হয়। সুবহানাল্লাহ! একি বিস্ময়কর ও ভাষালঙ্কারসমৃদ্ধ আয়াত! (আর এ কথার বক্তাও কত বড় দয়াবান!) একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করীম (সাঃ) এক রাতে এই আয়াত পাঠ করতে করতে তাঁর এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, তিনি এই আয়াত বার বার পড়তেই থাকেন। এমন কি পরিশেষে ফজর হয়ে যায়! (আহমাদ ৫/১৪৯)
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
‘আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন তবে তারাতো আপনারই বান্দা [১],আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তবে আপনি তো পরাক্রমশালী,প্রজ্ঞাময় [২]।’
[১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ নিশ্চয় কেয়ামতের দিন তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে এবং কিছুসংখ্যক লোককে পাকড়াও করে বাম দিকে অর্থাৎ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলবঃ আমার উম্মত! তখন আমাকে বলা হবেঃ আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি সব নতুন পদ্ধতির প্রচলন করেছে। তখন আমি বলবঃ যেমন নেক বান্দা বলেছেন, “এবং যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের কাজকর্মের সাক্ষী, কিন্তু যখন আপনি আমাকে তুলে নিলেন তখন আপনিই তো ছিলেন তাদের কাজকর্মের তত্ত্বাবধায়ক এবং আপনিই সব বিষয়ে সাক্ষী। আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন তবে তারাতো আপনারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তবে আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় " [বুখারীঃ ৪৬২৬]
[২] অর্থাৎ আপনি বান্দাদের প্রতি যুলুম ও অন্যায় কঠোরতা করতে পারেন না। তাই তাদেরকে শাস্তি দিলে তা ন্যায়বিচার ও বিজ্ঞতা-ভিত্তিকই হবে। আর যদি ক্ষমা করে দেন, তবে এ ক্ষমাও অক্ষমতাপ্রসূত হবে না। কেননা, আপনি মহাপরাক্রান্ত ও প্রবল। তাই কোন অপরাধী আপনার শক্তির নাগালের বাইরে যেতে পারবে না। তাদের শাস্তির ব্যাপারে আপনার ক্ষমতাই চুড়ান্ত। মোটকথা, অপরাধীদের ব্যাপারে আপনি যে রায়ই দেবেন, তাই সম্পূর্ণ বিজ্ঞজনোচিত ও সক্ষমতাসুলভ হবে। ঈসা আলাইহিস সালাম হাশরের ময়দানে এসব কথা বলবেন। যাতে নাসারাদেরকে সৃষ্টিকুলের সামনে কঠোরভাবে ধমকি দেয়া উদ্দেশ্য। ইবন কাসীরা এর বিপরীতে ইব্অরাহীম ‘আলাইহিস্ সালাম দুনিয়াতে আল্লাহ্ তা’আলার দরবারে দো’আ করে বলেছিলেনঃ “হে রব, এ মূর্তিগুলো অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে। তাদের মধ্যে যে আমার অনুসরণ করে, সে আমার লোক এবং যে আমার অবাধ্যতা করে, আপনি স্বীয় রহমতে (তাওবাহ ও সত্যের প্রতি প্রত্যাবর্তনের শক্তিদান করে অতীত গোনাহ) ক্ষমা করতে পারেন”। হাদীসে এসেছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এ আয়াতখানি পাঠ করে হাত উঠালেন এবং দোআ করে বললেনঃ হে আল্লাহ! আমার উম্মাত, আমার উম্মাত এবং কাঁদতে থাকলেন। তখন আল্লাহ্ তাআলা জিবরাঈলকে বললেনঃ মুহাম্মাদের কাছে যাও এবং তাকে জিজ্ঞাসা কর -যদিও তিনি সর্ববিষয়ে ভাল জানেন- কেন তিনি কাঁদছেন? জিবরাঈল তার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন আর রাসূলও তার উত্তর করলেন। তখন আল্লাহ্ আবার বললেনঃ হে জিবরাঈল, মুহাম্মাদের কাছে যাও এবং তাকে বল, আমরা আপনার উম্মাতের ব্যাপারে আপনাকে সন্তুষ্ট করে দেব; অসন্তুষ্ট করব না। [মুসলিমঃ ২০২] হাদীসে আরও এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমার কিছু উম্মতকে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে, আমি তখন ‘আমার সাথী’ বলতে থাকব, তখন আমাকে বলা হবে, আপনি জানেন না, তারা আপনার পরে দ্বীনের মধ্যে নতুন কি কি পন্থা উদ্ভাবন করেছিল। আমি তখন সেই নেক বান্দার মত বলব, যিনি বলেছিলেন, ‘আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন তবে তারাতো আপনারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তবে আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [বুখারী; ৪৬২৫; মুসলিম; ৩০২৩]
3 Tafsir Bayaan Foundation
যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তবে তারা আপনারই বান্দা, আর তাদেরকে যদি ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’
4 Muhiuddin Khan
যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন, তবে তারা আপনার দাস এবং যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন, তবে আপনিই পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞ।
5 Zohurul Hoque
''তুমি যদি তাদের শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই দাস, আর যদি তাদের তুমি পরিত্রাণ করো তবে তুমিই তো মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।’’
6 Mufti Taqi Usmani
যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন, তবে তারা তো আপনারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয়ই আপনিই মহাপরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।
7 Mujibur Rahman
আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তাহলে ওরাতো আপনার বান্দা; আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তাহলেতো আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
8 Tafsir Fathul Mazid
১১৬-১১৮ নং আয়াতের তাফসীর:
আয়াতে উল্লিখিত প্রশ্ন আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আঃ)-কে কিয়ামত দিবসে করবেন। পৃথিবীর বুকে যত ব্যক্তিকেন্দ্রিক শির্ক করা হয়েছে এবং যাদেরকে মা‘বূদ বানিয়ে নেয়া হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন কাউকে ছাড়বেন না; কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব নেবেন, কী জন্য তাদেরকে মানুষ মা‘বূদ বানিয়ে নিয়েছে এমনকি নাবীদেরকেও, তার প্রমাণ এই আয়াত।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কিয়ামতের দিন নাবীগণ ও তাদের উম্মাতদেরকে ডেকে আনা হবে। অতঃপর ঈসা (আঃ)-কে ডাকা হবে, তারপর তাকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নেয়ামতের কথা স্মরণ করে দেবেন, ঈসা (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতের কথা স্বীকার করবেন। তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন:
(أَأَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُوْنِيْ وَأُمِّيَ إِلٰهَيْنِ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ)
“তুমি কি লোকেদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার জননীকে দুই ইলাহরূপে গ্রহণ কর?” (সূরা মায়িদাহ ৫:১১৬) তখন ঈসা (আঃ) বলবেন: আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, যার অধিকারী আমি নই এবং যে গুণ আমার মাঝে নেই সে দিকে মানুষকে আহ্বান করব এটা কক্ষনো আমার জন্য শোভা পায় না। আমি যদি বলে থাকি তাহলে আপনি নিশ্চয়ই তা জানেন। এ কথা বলে তিনি তা অস্বীকার করবেন। তখন খ্রিস্টানদেরকে নিয়ে আসা হবে। অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হবে। তারা বলবে হ্যাঁ, তিনি আমাদেরকে এরূপ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এ কথা শুনে ঈসা (আঃ)-এর মাথা ও দেহের লোম (ভয়ে) খাড়া হয়ে যাবে। ফেরেশতাগণ তখন তাঁর মাথা ও শরীরের চুল ধরে থাকবেন। আর এ খ্রিস্টানদেরকে আল্লাহ তা‘আলার সামনে এক হাজার বছর পর্যন্ত জোড় পায়ে বসিয়ে রাখা হবে। অবশেষে তাদের বিরুদ্ধে দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে এবং সত্য তাদের সামনে প্রকাশিত হয়ে যাবে। আর তাদের জন্য ক্রুশ ওঠানো হবে। অতঃপর তাদেরকে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। (তিরমিযী হা: ৩০৬২, সহীহ)
ঈসা (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার প্রশ্নে যে শিষ্টাচারপূর্ণ জবাব দেবেন তা অত্র আয়াতে উল্লেখ করেছেন। অতএব যারা ঈসা (আঃ) ও তাঁর মাকে আল্লাহ তা‘আলার সন্তান ও স্ত্রী বানিয়ে নিয়েছে কিয়ামতের দিন তাদের কোন জবাব থাকবে না।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেন: হে মানব সকল! কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে খালি মাথা, উলঙ্গ দেহ এবং জুতাবিহীন পায়ে ওঠানো হবে, যেমন তোমরা তোমাদের জন্মের দিন ছিলে। সর্ব প্রথম ঈবরাহীম (আঃ)-কে পোশাক পরানো হবে। এরপর আমার উম্মাতের মধ্য হতে কতক লোককে নিয়ে আসা হবে যাদেরকে জাহান্নামের নিদর্শন হিসেবে বাম দিকে রাখা হবে। তখন আমি বলবো এরা তো আমার উম্মাত। সেই সময় বলা হবে, তুমি জান না এরা তোমার ইনতেকালের পর দীনের মধ্যে কী কী নতুন বিষয় তৈরি করে ছিল। তখন আমি সৎ বান্দা ঈসা (আঃ)-এর মত বলব:
(وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا...... الْحَكِيْمُ)
‘যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী ছিলাম, কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমিই তো ছিলে তাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক এবং তুমি সর্ববিষয়ে সাক্ষী।’ (সহীহ বুখারী হা: ৪৬২৫, সহীহ মুসলিম হা: ২৮৬০)
(فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِيْ)
“কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে” অর্থাৎ আমাকে তুলে নেয়ার পর তাদের কর্মের ব্যাপারে আমার কোন জ্ঞান ছিল না। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে নাবীরা গায়েব জানতেন না। যতটুকু আল্লাহ তা‘আলা তাদের জানিয়েছেন ততটুকু ব্যতীত। ঈসা (আঃ)-কে উঠিয়ে নেয়ার পর যেমন খ্রিস্টানরা ধর্মের বিকৃতি করেছে তেমনি নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর পর সাহাবীদের স্বর্ণযুগ অতীত হবার পর এ উম্মাতের এক শ্রেণির মানুষ ধর্মের বিকৃতি ঘটাবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কিয়মাতের দিন আমার দিকে আমার উম্মতের একটি দল আসার চেষ্টা করবে। কিন্তু ফেরেশতারা তাদের বাধা দেবে। আমি বলব: এরা আমার উম্মত তাদের আসতে দাও। কিন্তু ফেরেশতারা বলবে: আপনি জানেন না তারা আপনার মৃত্যুর পর আপনার দীনের মধ্যে কী কী বিদআত চালু করেছিল। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন এ কথা শুনবেন তখন তিনি সে কথাই বলবেন, যা আল্লাহ তা‘আলার নেক বান্দা ঈসা (আঃ) বলেছেন:
(وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا مَّا دُمْتُ فِيْهِمْ ج فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِيْ كُنْتَ أَنْتَ الرَّقِيْبَ عَلَيْهِمْ)
“অর্থাৎ যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী ছিলাম। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমিই তো ছিলে তাদের কার্যকলাপের পর্যবেক্ষক।”(সহীহ বুখারী হা: ৪৭৪০, ২৮৬০)
(إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ)
‘তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই বান্দা’আল্লাহ তা‘আলা কাউকে শাস্তি দিলে এটা তার ন্যাপরায়ণতা, তিনি কাউকে জুলুম ও অন্যায় করে শাস্তি দেবেন না, আর কাউকে ক্ষমা করে দিলে বা জান্নাত দিলে এটা তার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ। ঈসা (আঃ)-কে জিজ্ঞাসাবাদের পর যখন একশ্রেণির মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে তখন দয়ার বশবতী হয়ে এ কথা বলবেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদেরকে হাশরের মাঠে একত্রিত করা হবে। এক প্রকার মানুষকে বাম দিকে অর্থাৎ জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন আমি সৎ বান্দা ঈসা (আঃ)-এর মত এ কথা বলব: ‘‘তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর তবে তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’(সহীহ বুখারী হা: ৪৬২৬, সহীহ মুসলিম হা: ২৮৬)
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাতে এ আয়াত তেলাওয়াত করছিলেন, তেলাওয়াত করতে করতে তাঁর এমন অবস্থা সৃষ্টি হয় যে, তিনি এ আয়াত বারবার তেলাওয়াত করতেই থাকেন। এমনকি ফজর হয়ে যায়। সকাল হলে এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন: আপনি এ আয়াত দ্বারা রুকু সিজদা করে রাত অতিক্রম করে দিলেন? তিনি বললেন: আমি আমার প্রভুর কাছে আমার উম্মাতের জন্য শাফায়াতের আবেদন করেছি, আশা করি তিনি তা আমাকে দেবেন, কেউ শির্ক না করলে তা পাবে ইনশা আল্লাহ। (মুসনাদ আহমাদ হা: ২১৩২৮, নাসায়ী হা: ১০১০, সহীহ)
আমর বিন আস হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইবরাহীম (আঃ)-এর সে-কথা স্মরণ করলেন যা তিনি আল্লাহ তা‘আলার কাছে বলেছিলেন:
(رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيْرًا مِّنَ النَّاسِ ج فَمَنْ تَبِعَنِيْ فَإِنَّه۫ مِنِّيْ ج وَمَنْ عَصَانِيْ فَإِنَّكَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ)
‘হে আমার প্রতিপালক! এ সকল প্রতিমা তো বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত, আর যে আমার অবাধ্য হবে তুমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৬) এবং ঈসা (আঃ)-এর এ কথা স্বরণ করলেন। তখন তিনি দু’হাত তুলে আল্লাহ তা‘আলার কাছে বললেন: হে আল্লাহ, আমার উম্মত! এ কথা বলে তিনি কেঁদে ফেললেন। আল্লাহ তা‘আলা বললেন: হে জিবরীল (আঃ)! তুমি মুহাম্মাদের কাছে যাও এবং তাকে জিজ্ঞাসা কর, তিনি কেন কাঁদছেন? (মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেন কাঁদছেন এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা ভাল জানেন) জিবরীল (আঃ) আসলেন এবং জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানিয়ে দিলেন। আল্লাহ তা‘আলা বললেন: হে জিবরীল! তুমি মুহাম্মাদের কাছে যাও এবং বল:
إِنَّا سَنُرْضِيكَ فِيْ أُمَّتِكَ وَلاَ نَسُوءُكَ
তোমার উম্মতের ব্যাপারে আমি তোমাকে সন্তুষ্ট করব, কষ্ট দিব না। (সহীহ মুসলিম হা: ৫২০)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার সামনে বান্দাদের অক্ষমতা ও অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমতা ও বড়ত্বের কথা বলা হয়েছে। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, তাঁকে প্রশ্ন করার কেউ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُوْنَ)
“তিনি যা করেন সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা যাবে না; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।” (সূরা আম্বিয়াহ ২১:২৩) সুতরাং আমাদের উচিত একক মা‘বূদ আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করব, নাবীদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করব না এবং দীনের মাঝে বিকৃতি ঘটাব না, তাহলেই পরিত্রাণের আশা করতে পারি।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বাতিল মা‘বূদকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট জবাব দিতে হবে।
২. নাবীগণ গায়েব জানতেন না, তবে আল্লাহ তা‘আলা ওয়াহীর মাধ্যমে তাদেরকে যতটুকু জানাতেন কেবল সেটুকু জানতেন।
৩. যারা নাবীগণের রেখে যাওয়া দীন কম-বেশি করে বিকৃত করেছে তারা কিয়ামতের দিন সফলকাম হতে পারবে না।
৪. উম্মতদের প্রতি নাবীগণ দয়াবান হয়ে থাকেন।
৫. কেউ মুশরিক অবস্থায় মারা না গেলে সে জান্নাতে যাবে, যদিও তাকে পাপের শাস্তি ভোগ করতে হয়।
9 Fozlur Rahman
“তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও দিতে পার, কারণ তারা তোমারই বান্দা; আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করে দাও তাও পার, কারণ তুমি তো পরাক্রমশালী, পরম প্রাজ্ঞ।”
10 Mokhtasar Bangla
১১৮. হে আমার রব্ব! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিলে তারা তো আপনারই বান্দা। আপনি তাদের সাথে যা চান তাই করতে পারেন। আর আপনি তাদের মু’মিনদেরকে দয়া ও ক্ষমা করলে তাতে আপনাকে বাধা দেয়ারও কেউ নেই। আপনি হলেন অপরাজেয় পরাক্রমশালী। আপনি নিজ পরিচালনায় অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়।
11 Tafsir Ibn Kathir
১১৬-১১৮ নং আয়াতের তাফসীর:
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা হযরত ঈসা (আঃ)-কে এই কথাগুলো ঐসব লোকের সামনে সম্বোধন করে বলবেন যারা তাকে ও তার মাতাকে মা'বুদ বানিয়ে নিয়েছিল। এ কথাগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহ খ্রীষ্টানদেরকে ধমক দিয়েছেন ও ভয় প্রদর্শন করেছেন। কাতাদা (রঃ) ও অন্যান্যগণ এরূপই বলেছেন। হযরত কাতাদা (রঃ)-এর উপর আল্লাহ পাকের هٰذَا یَوْمُ یَنْفَعُ الصّٰدِقِیْنَ صِدْقُهُمْ (অর্থাৎ এটা ঐ দিন যেদিন সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদীতার পুরস্কার দেয়া হবে) এ উক্তিটিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এ সম্বোধন ও উত্তর দুনিয়াতেই ছিল। ইবনে জারীর (রঃ) এ কথাকে সমর্থন করে বলেন যে, যখন হযরত ঈসা (আঃ)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল এটা ঐ ঘটনার সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) দু'প্রকারে-এর উপর দলীল গ্রহণ করেছেন।
প্রথম প্রকার এই যে, এ কথাটি مَاضِىْ বা অতীতকালের ক্রিয়া দ্বারা বলা হয়েছে, قَالَ অর্থাৎ বলা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রকার এই যে, اِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَاِنَّهُمْ عِبَادُكَ এবং وَ اِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَاِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِیْزُ الْحَكِیْمُ- এটা হচ্ছে শর্তযুক্ত উক্তি এবং এই উক্তি দুনিয়াতেই করা হয়েছিল। আর শাস্তি প্রদান ও ক্ষমা করণের শর্ত আখিরাতের জন্যে উঠিয়ে রাখা হয়েছে। এ দু'টি দলীলের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনার অবকাশ আছে। কেননা, অতীতকালের ক্রিয়া আসলো তো কি হলো? কিয়ামতের অধিকাংশ ঘটনাকেই অতীতকালের ক্রিয়া দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে, যাতে ওটা সংঘটিত হওয়ার উপর যথেষ্ট দলীল হতে পারে। এখন বাকী থাকলো وَاِنْ تُعَذِّبْهُمْ শব্দটির কালামে শরতিয়া হওয়ার কথা। এ সম্পর্কে বলা যাবে যে, এর দ্বারা পাপীদের প্রতি হযরত ঈসা (আঃ)-এর অসন্তুষ্টি প্রকাশ পেয়েছে এবং তাদের পরিণাম আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর শর্তের উপর কোন কিছু সম্পর্কিত হওয়া ওটা সংঘটিত হওয়ার দাবিদার হতে পারে না। কুরআন কারীমের আয়াতসমূহে এর বহু নযীর বিদ্যমান রয়েছে। এই ব্যাপারে হযরত কাতাদা (রঃ)-এর বর্ণনা রয়েছে তা খুবই স্পষ্ট। তা হচ্ছে এই যে, এটা হবে কিয়ামতের দিনের কথোপকথন, যাতে সেদিন সকলের সামনে খ্রীষ্টানদের সব কিছু খুলে যায় এবং তাদের মনে ভয় ও সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়। হযরত আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন- কিয়ামতের দিন নবীগণ ও তাদের উম্মতদেরকে ডাক দেয়া হবে। অতঃপর হযরত ঈসা (আঃ)-কে আহ্বান করা হবে এবং আল্লাহ তাআলা তাঁকে স্বীয় নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। তিনি তা স্বীকার করে নেবেন। তারপর আল্লাহ পাক তাঁকে জিজ্ঞেস করবেনঃ তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে- তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাকে ও আমার মাতাকে মা'বুদ বানিয়ে নাও? তখন তিনি তা অস্বীকার করবেন। অতঃপর নাসারাদেরকে আনয়ন করা হবে এবং তাদেরকে ঐ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। তারা তখন বলবেঃ ‘হ্যা, তিনি আমাদেরকে এ আদেশই করেছিলেন। এই কথা শুনে হযরত ঈসা (আঃ)-এর মাথা ও দেহের লোম ভয়ে খাড়া হয়ে যাবে। ফেরেশতাগণ তখন তার চুলগুলো ধরে রাখবেন। আর এই নাসারাদেরকে আল্লাহর সামনে এক হাজার বছর পর্যন্ত জোড় পায়ে বসিয়ে রাখা হবে। অবশেষে তাদের উপর হুজ্জত কায়েম হয়ে যাবে এবং সত্য তাদের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়বে। আর তাদের জন্যে ক্রুশ উঠানো হবে। অতঃপর তাদেরকে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। (হাফিয ইবনে আসাকির এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং ইবনে কাসীর একে গারীব ও আযীয বলেছেন)
سُبْحٰنَكَ مَا یَكُوْنُ لِیْۤ اَنْ اَقُوْلَ مَا لَیْسَ لِیْ بِحَقٍّ এ জবাবে হযরত ঈসা (আঃ)-কে উত্তম ভদ্রতার কতইনা তাওফীক দান করা হয়েছিল এবং তার অন্তরে কতইনা সুন্দর দলীল ভরে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন-হে আল্লাহ! যে কথা বলার আমার কোন অধিকার নেই সে কথা আমি কিরূপে বলতে পারি? যদি আমি এ কথা বলেও থাকি তবে অবশ্যই সেটা আপনি ভাল রূপেই জানেন। কেননা, আপনার কাছে তো কোন কিছুই গোপন থাকে না। আপনি আমার অন্তরের কথা অবগত আছেন, কিন্তু আমি আপনার ইচ্ছা সম্পর্কে মোটেই অবগত নই। আপনি আমাকে যা নির্দেশ দিয়েছিলেন আমি তার একটি অক্ষরও বেশী করিনি। আমি তো শুধু এ কথাই বলেছিলাম- তোমরা আল্লাহরই ইবাদত করবে যিনি আমারও প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। আমি যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন তাদের কার্যাবলী তদারক করেছি। অতঃপর যখন থেকে আপনি আমাকে উঠিয়ে নিয়েছেন তখন থেকে আপনিই তাদের কার্যাবলী তদারক করেছেন। আর আপনি প্রত্যেক কাজ সম্বন্ধেই পূর্ণ অবগত।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের মধ্যে খুত্ব দিতে গিয়ে বলেনঃ হে লোক সকল! কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে উলঙ্গ মাথা, উলঙ্গ দেহ এবং উলঙ্গ পা অবস্থায় উঠানো হবে, যেমন তোমরা তোমাদের জন্মের দিন ছিলে। সর্বপ্রথম হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে পোশাক পরানো হবে। এরপর আমার উম্মতের মধ্য হতে কতক লোককে আনয়ন করা হবে যাদেরকে জাহান্নামের নিদর্শন হিসেবে বাম দিকে রাখা হবে। তখন আমি বলবো- এরা তো আমারই উম্মত। সেই সময় বলা হবে- তুমি জান না যে, এরা তোমার (ইন্তেকালের) পরে তোমার সুন্নাতকে পরিত্যাগ করেছিল এবং বিদআত চালু করে দিয়েছিল। আমি একজন সৎ বান্দার মত ঐ কথাই বলবো যে কথা হযরত ঈসা (আঃ) বলেছিলেন। (এ আয়াতের তাফসীরে ইমাম বুখারী (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন) তাহলে اِنْ تُعَذِّبْهُمْ আল্লাহ পাকের এই কালাম তাঁরই ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তিনি যা চাইবেন তাই করবেন। তিনি সবারই কৈফিয়ত তলব করতে পারেন, কিন্তু তার কাছে কেউই কোন কৈফিয়ত তলব করতে পারে না। তা ছাড়া এই কালাম নাসারাদের উপর তার অসন্তুষ্টি প্রকাশকারী, যারা হযরত ঈসা (আঃ) -কে তাঁর শরীক ও পুত্র এবং মারইয়াম (আঃ)-কে তাঁর স্ত্রী (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক) সাব্যস্ত করেছিল। এ আয়াতের বড়ই মাহাত্ম্য রয়েছে। হদীসে আছে যে, নবী (সঃ) এক রাত্রে সকাল পর্যন্ত নামাযে এ আয়াতটিই পড়তে থাকেন।
ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আবু যার (রাঃ) বলেন, একদা রাত্রে নবী (সঃ) اِنْ تُعَذِّبْهُمْ এ আয়াতটি নামাযে পাঠ করতে থাকেন এবং এর মাধ্যমেই তিনি রুকূ ও সিজদা করেন। আর এভাবেই সকাল হয়ে যায়। সকালে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! রাত্রে নামাযে আপনি এ আয়াতটিই পড়তে থাকলেন এবং এর মাধ্যমেই রুকু ও সিজদা করতে রইলেন, শেষ পর্যন্ত সকাল হয়ে গেল, এর কারণ কি? তিনি উত্তরে বললেনঃ “আমি মহিমান্বিত আল্লাহর কাছে আমার উম্মতের জন্যে সুপারিশের প্রার্থনা করছিলাম। তখন তিনি তার সাথে অংশী স্থাপন করেছে এরূপ লোক ছাড়া সকলকেই ক্ষমা করে দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন।” ইবনে আবি হাতিম (রঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে। আমর ইবনে আস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সঃ) হযরত ঈসা (আঃ)-এর اِنْ تُعَذِّبْهُمْ -এ উক্তিটি পাঠ করেন। অতঃপর তিনি স্বীয় হস্তদ্বয় উত্তোলন করেন এবং বলেনঃ “হে আল্লাহ! আমার উম্মত (অর্থাৎ আমার উম্মতকে ক্ষমা করুন)।' এ বলে তিনি কাঁদতে শুরু করেন। আল্লাহ তা'আলা তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ)-কে তাঁর নিকট পাঠিয়ে দেন। হযরত জিবরাঈল (আঃ) এসে তাঁকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি তাঁকে যা উত্তর দেয়ার ছিল তাই দেন। তখন মহান আল্লাহ হযরত জিবরাঈল (আঃ)-কে বলেনঃ “হে জিবরাঈল (আঃ)! তুমি মুহাম্মাদ (সঃ)-এর কাছে গিয়ে বল যে, আল্লাহ তাঁকে তাঁর উম্মতের ব্যাপারে সন্তুষ্ট করবেন, দুঃখিত করবেন না।” ইমাম আহমাদ (রঃ) হযরত হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের নিকট অনুপস্থিত থাকলেন, বের হলেন না, এমনকি আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি কখনই বের হবেন না। অতঃপর তিনি বের হলেন এবং এমনভাবে সিজদায় পড়ে গেলেন যে, তাঁর প্রাণবায়ু নির্গত হয়ে গেছে বলে আমাদের ধারণা হলো। তারপর তিনি মাথা উঠিয়ে বললেনঃ আমার প্রতিপালক আমার নিকট আমার উম্মতের ব্যাপারে কি করা যায় সেই পরামর্শ চেয়েছিলেন। আমি বললাম, হে আমার প্রভু! এরা তো আপনারই মাখলুক ও আপনারই বান্দা! দ্বিতীয় বার তিনি আমার নিকট পরামর্শ চাইলে আমি ঐ কথাই বললাম। তখন তিনি আমাকে বললেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তোমার উম্মতের ব্যাপারে আমি তোমাকে অপদস্থ করবো না। আর তিনি আমাকে এই সুসংবাদ দিলেন যে, আমার সঙ্গে আমার উম্মতের যে প্রথম দলটি জান্নাতে যাবে তাদের সংখ্যা হবে সত্তর হাজার এবং এরূপ প্রত্যেক হাজারের সঙ্গে আরও সত্তর হাজার করে থাকবে। এরা সবাই বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারপর আল্লাহ তা'আলা জিবরাঈল (আঃ)-এর মাধ্যমে আমাকে বললেনঃ তুমি প্রার্থনা কর, তা কবুল করা হবে এবং চাও, তা দেয়া হবে। আমি জিবরাঈল (আঃ)-কে বললাম, আল্লাহ কি আমার প্রার্থনা মঞ্জুর করার ইচ্ছা করেছেন? জিবরাঈল (আঃ) উত্তরে বললেনঃ হ্যা, আল্লাহ আমাকে আপনার নিকট এই উদ্দেশ্যেই পাঠিয়েছেন। আল্লাহ আমাকে সব কিছুই প্রদান করেছেন। আমি এ জন্যে অহংকার করছি না। আর আমার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে এবং আমি ভূ-পৃষ্ঠে সুস্থ শরীরে বিচরণ করছি। আমাকে এই বিশেষত্ব দেয়া হয়েছে যে, আমার উম্মত দুর্ভিক্ষে মারা যাবে না এবং তারা পরাজিত হবে না। আল্লাহ আমাকে কাওসার দান করেছেন। এটা হচ্ছে জান্নাতের একটি নহরের নাম যা আমার হাওযে বয়ে আসবে। আর আমাকে মর্যাদা, সাহায্য এবং রুউব বা ভক্তি প্রযুক্ত ভীতি প্রদান করা হয়েছে, যা আমার উম্মতের সামনে জনগণের উপর এক মাসের পথের ব্যবধান হতে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। আমি সকল নবীর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবো। আমার উম্মতের জন্যে গনীমত বা যুদ্ধলব্ধ মাল হালাল করা হয়েছে এবং আরও এমন কতক জিনিস আমার উম্মতের জন্যে হালাল করা হয়েছে যেগুলো আমার পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতের উপর হালাল ছিল না। আর মাযহাব হিসেবে আমার ধর্মে কোন কাঠিন্য রাখা হয়নি। (সনদের দিক দিয়ে এই হাদীসটি দুর্বল হলেও সাফাআতের হাদীসগুলো এর দুর্বলতা দূর করে দিয়েছে)