هُوَ الَّذِيْٓ اَخْرَجَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ اَهْلِ الْكِتٰبِ مِنْ دِيَارِهِمْ لِاَوَّلِ الْحَشْرِۗ مَا ظَنَنْتُمْ اَنْ يَّخْرُجُوْا وَظَنُّوْٓا اَنَّهُمْ مَّانِعَتُهُمْ حُصُوْنُهُمْ مِّنَ اللّٰهِ فَاَتٰىهُمُ اللّٰهُ مِنْ حَيْثُ لَمْ يَحْتَسِبُوْا وَقَذَفَ فِيْ قُلُوْبِهِمُ الرُّعْبَ يُخْرِبُوْنَ بُيُوْتَهُمْ بِاَيْدِيْهِمْ وَاَيْدِى الْمُؤْمِنِيْنَۙ فَاعْتَبِرُوْا يٰٓاُولِى الْاَبْصَارِ ( الحشر: ٢ )
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
কিতাবধারীদের অন্তর্ভুক্ত কাফিরদেরকে আক্রমণের প্রথম ধাপেই তিনিই তাদের বাড়ী থেকে বের ক’রে দিলেন। তোমরা ধারণাও করনি যে, তারা বের হবে। আর তারা মনে করেছিল যে, তাদের দূর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহ (’র কবল) থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে এমন দিক থেকে পাকড়াও করলেন যা তারা ভাবতেও পারেনি। তিনি তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করলেন। তারা তাদের নিজেদের হাত দিয়েই নিজেদের ঘরবাড়ী ধ্বংস করল, আর মু’মিনদের হাতেও (ধ্বংস করাল)। অতএব হে দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষেরা! তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।
English Sahih:
It is He who expelled the ones who disbelieved among the People of the Scripture from their homes at the first gathering. You did not think they would leave, and they thought that their fortresses would protect them from Allah; but [the decree of] Allah came upon them from where they had not expected, and He cast terror into their hearts [so] they destroyed their houses by their [own] hands and the hands of the believers. So take warning, O people of vision.
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
তিনিই আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা অবিশ্বাসী, তাদেরকে প্রথম সমাবেশেই তাদের আবাসভূমি হতে বিতাড়িত করেছেন।[১] তোমরা কল্পনাও করনি যে, তারা নির্বাসিত হবে এবং তারা মনে করেছিল যে, তাদের দুর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহ (এর শাস্তি) হতে রক্ষা করবে;[২] কিন্তু আল্লাহ (এর শাস্তি) তাদের এমন এক দিক হতে এল, যা ছিল তাদের ধারণার বাইরে[৩] এবং তাদের অন্তরে তা ত্রাসের সঞ্চার করল।[৪] তারা তাদের বাড়ী-ঘর ধ্বংস করছিল নিজেদের হাতে[৫] এবং মুমিনদের হাতেও।[৬] অতএব হে চক্ষুষমান ব্যক্তিগণ! তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। [৭]
[১] মদীনার উপকণ্ঠে ইয়াহুদীদের তিনটি গোত্র বসবাস করত। বানু-নায্বীর, বানু-কুরাইযা এবং বানু-ক্বাইনুক্বা। মদীনায় হিজরতের পর নবী (সাঃ) এদের সাথে সন্ধিচুক্তিও করেছিলেন। কিন্তু এরা গোপনে ষড়যন্ত্র করত এবং মক্কার কাফেরদের সাথেও তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সম্পর্ক রেখেছিল। এমনকি, একদা যখন নবী (সাঃ) তাদের কাছে গিয়েছিলেন, বানু-নাযবীর গোত্রের লোকেরা উপর থেকে রসূল (সাঃ)-এর উপর একটি ভারী পাথর ফেলে তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে রেখেছিল। যথা সময়ে অহীর মাধ্যমে এ ব্যাপারে তাঁকে অবহিত করে দেওয়া হয়। তিনি নিরাপদে সেখান থেকে চলে আসেন এবং তাদের চুক্তি ভঙ্গের কারণে রসূল (সাঃ) তাদের উপর সসৈন্যে আক্রমণ করেন। এরা কিছু দিন তাদের দুর্গে অবরুদ্ধ থেকে অবশেষে প্রাণভিক্ষা স্বরূপ দেশত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। আর রসূল (সাঃ) তা গ্রহণ করেন। এ ঘটনাকে أَوَّل الحَشْر (প্রথম সমাবেশ) বলে এই জন্য আখ্যায়িত করা হয়েছে যে, এটা ছিল তাদের নির্বাসন। আর এটা হয়েছিল মদীনা থেকে। এখান থেকে তারা খায়বারে গিয়ে বসতি স্থাপন করেছিল। এখান হতে উমার (রাঃ) তাদেরকে পুনরায় বহিষ্কার করে শাম (সিরিয়ার) দিকে বিতাড়িত করেন। যার ব্যাপারে বলা হয় যে, এখানেই প্রত্যেক মানুষের সর্বশেষ হাশর (সমাবেশ তথা কিয়ামত-কোর্ট) হবে।
[২] কারণ, তারা অতি মজবুত দুর্গ নির্মাণ করে রেখেছিল। আর এ নিয়ে তাদের গর্বও ছিল এবং মুসলিমরাও মনে করতেন যে, অতি সহজে এ দুর্গ জয় করা সম্ভব হবে না।
[৩] আর তা এই ছিল যে, রসূল (সাঃ) তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলেছিলেন যা তাদের ধারণা ও চিন্তার বাইরে ছিল।
[৪] এই ত্রাস ও ভীতির কারণেই তারা বহিষ্কার হতে প্রস্তুত হয়েছিল। তা না হলে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই (মুনাফিকদের সর্দার) এবং অন্যান্য লোকেরা তাদের কাছে বার্তা পাঠিয়ে ছিল যে, তোমরা মুসলিমদের সামনে নতি স্বীকার করবে না, আমরা তোমাদের সাথে আছি। এ ছাড়া মহান আল্লাহ নবী করীম (সাঃ)-কে এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য দান করেছিলেন যে, এক মাসের দূরত্বে অবস্থিত শত্রুর মধ্যেও তাঁর ভীতি সঞ্চারিত হয়ে যেত। ফলে তাদের মধ্যে কঠিন আতঙ্ক ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়ে গেল এবং সব রকমের উপায়-উপকরণ থাকা সত্ত্বেও তারা অস্ত্র ফেলে দিয়ে কেবল এই শর্তটা মুসলিমদেরকে মেনে নিতে বলল যে, যতটা পরিমাণ জিনিসপত্র তারা বয়ে নিয়ে যেতে পারবে, ততটা পরিমাণ জিনিসপত্র তাদেরকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। সুতরাং এই অনুমতি পাওয়ার পর বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা নিজেদের বাড়ীর দরজা পর্যন্ত তুলে ফেলে!
[৫] অর্থাৎ, যখন তারা নিশ্চিত হয়ে গেল যে, দেশ থেকে বহিষ্কার হতেই হবে, তখন তারা অবরোধ অবস্থায় ভিতর থেকেই নিজেদের বাড়ীগুলোকে ধ্বংস করতে শুরু করে দিল। যাতে তা মুসলমানদেরও যেন কোন কাজে না আসে। অথবা অর্থ হল, আসবাব-পত্র নিয়ে যাওয়ার অনুমতি থেকে পূর্ণরূপে উপকৃত হওয়ার জন্য নিজেদের উটগুলোতে সাধ্যমত আসবাব বোঝাই করার জন্য নিজেদের ঘরগুলোকেও ভেঙ্গে-চুরে যা নেওয়ার তা নিয়ে উটের উপর রেখে নিল।
[৬] বাইরে থেকে মুসলিমরাও তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করার কাজে লেগে ছিলেন, যাতে তাদেরকে গ্রেফতার করা সহজ হয়। অথবা অর্থ হল, তাদের ভাঙ্গা-চোরা ঘরগুলো থেকে অবশিষ্ট আসবাব বের করার এবং তা সংগ্রহ করার জন্য মুসলিমদেরকে আরো অনেক কিছুই নষ্ট করতে হয়।
[৭] এ থেকে যে, কিভাবে আল্লাহ তাদের অন্তরে মুসলিমদের ভয় ঢুকিয়ে দেন। অথচ তারা এক শক্তিশালী এবং বহু উপায়-উপকরণের অধিকারী (রণকুশল) গোত্র ছিল। কিন্তু যখন মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত অবকাশ শেষ হয়ে গেল এবং তিনি তাদেরকে নিজ পাকড়াও-এর পঞ্জার মধ্যে করার চূড়ান্ত ফায়সালা করে নিলেন, তখন না তাদের শক্তি-সামর্থ্য এবং উপায়-উপকরণ কোন কাজে এল, আর না অন্য কোন সাহায্যকারীরা তাদের কোন সাহায্য করতে পারল।