৮-১০ নং আয়াতের তাফসীরঃ
ঈমানের ছয়টি রুকনের অন্যতম একটি হল আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন। আখিরাতে যা কিছু হবে তার মধ্যে একটি হল মিযান তথা দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে যাতে মানুষের আমলসমূহ ওজন করা হবে। তার প্রমাণ অত্র আয়াত। কিয়ামতের দিনে সঠিকভাবে আমলসমূহ ওজন করা হবে। কারো প্রতি কোন জুলুম করা হবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيٰمَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا ط وَإِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا ط وَكَفٰي بِنَا حٰسِبِيْنَ)
“এবং কিয়ামত দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায় বিচারের মানদণ্ড। সুতরাং কারও প্রতি কোন অবিচার করা হবে না এবং কর্ম যদি সরিষার দানা পরিমাণ ওজনেরও হয় তবুও সেটা আমি উপস্থিত করব; হিসেব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট।” (সূরা আম্বিয়া ২১:৪৭)
হাদীসেও মিযান বা দাঁড়িপাল্লার বর্ণনা এসেছে। সুতরাং এর প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব। কিয়ামতের দিন যে দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে তা প্রকৃত দাঁড়িপাল্লা। তার দু’টি পাল্লা থাকবে, যেমন হাদীসে এসেছে: সাত আকাশ ও তাতে আমি ছাড়া যা কিছু আছে এবং সাত জমিনকে যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর অন্য পাল্লায় যদি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” রাখা হয় তাহলে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর পাল্লা ভারী হবে। (ইবনু হিব্বান হা: ২৩২৪, মুসতাদরাক হাকেম ১/৫২৮, সহীহ)
এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আকীদাহ-বিশ্বাস। আর যারা দাঁড়িপাল্লাকে রূপক অর্থে ব্যবহার করে ন্যায়বিচারকে বুঝে থাকেন তাদের বিশ্বাস সঠিক নয়। (আকীদাহ তাহাবীয়াহ পৃ: ৫৪১)
দাঁড়িপাল্লায় তিনটি জিনিস ওজন করা হবে:
১. আমলকারী মানুষকে ওজন করা হবে- যেমন হাদীসে এসেছে: যখন সাহাবীরা ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর পায়ের হালকা পেণ্ডলী দেখে হাসতে ছিল, তখন নাবী (সাঃ) বললেন: তোমরা কেন হাসছ? তারা বললেন: তার পায়ের হালকা পেণ্ডলী দেখে। নাবী (সাঃ) বললেন: সে সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, তার পা দু’টি মিযানের পাল্লায় ওহুদ পাহাড়ের চেয়ে বেশি ভারী হবে। (মুসনাদ আহমাদ হা: ৩৯৯১, ইবনু শায়বাহ ১২/১১৩, তাবরানী কাবীর হা: ৮৪৫২, সহীহ)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أُولٰ۬ئِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيٰتِ رَبِّهِمْ وَلِقَا۬ئِه۪ فَحَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا)
‘তারাই অস্বীকার করে তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী ও তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হবে; সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোন ব্যবস্থা রাখব না।’ (সূরা কাহফ ১৮:১০৫)
২. আমল ওজন করা হবে, এক পাল্লায় সৎ আমল, অন্য পাল্লায় খারাপ আমল। ইমাম বুখারী সহীহ বুখারীতে সর্বশেষ অধ্যায় বেঁধেছেন,
بَابُ قَوْلِ اللّٰهِ تَعَالَي: (وَنَضَعُ المَوَازِيْنَ القِسْطَ لِيَوْمِ القِيَامَةِ) [الأنبياء: ৪৭] ، وَأَنَّ أَعْمَالَ بَنِيْ اٰدَمَ وَقَوْلَهُمْ يُوْزَنُ
‘অধ্যায় আল্লাহ তা‘আলার বাণী “এবং কিয়ামত দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায়বিচারের মানদণ্ড।” আদম সন্তানের কর্ম ও কথা ওজন করা হবে।’
বানী আদমের আমল ও কথা ওজন করা হবে। প্রমাণস্বরূপ হাদীস এসেছে: নাবী (সাঃ) বলেন: দু’টি কথা যা দয়াময় আল্লাহ তা‘আলার কাছে খুবই প্রিয়, উচ্চারণে হালকা ও মিযানের পাল্লায় ভারী তা হল:
سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللّٰهِ الْعَظِيْمِ
(সহীহ বুখারী হা: ৭৫৬৩)
৩. আমলনামা ওজন করা হবে, যে আমলনামায় আমলসমূহ লেখা হয়েছে। (আকীদাহ তাহাবীয়াহ হা: ৫৪১)
যাদের পুণ্যের আমলনামা ভারী হবে তারা সফলকাম হবে আর যাদের পাপের আমলনামা ভারী হবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেমন হাদীসে বিতাকা। যেখানে বলা হয়েছে- নিরানব্বইটি পাপের খাতা এক পাল্লায় থাকবে আর শাহাদাতের একটি কার্ড অন্য পাল্লায় থাকবে। তখন শাহাদাতের কার্ডটি বেশি ভারী হবে। (তিরমিযী হা: ২৬৩৯, ইবনু মাযাহ হা: ৪৩০০, সহীহ)
সুতরাং বেশি বেশি নেক আমল করে নেকীর পাল্লা ভারী করার জন্য প্রতিটি মু’মিনের চেষ্টা করা উচিত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কিয়ামত দিবসে মিযান বা পাল্লায় মানুষের কৃতকর্ম ওজন করা হবে- এর প্রতি ঈমান আনা আবশ্যক।
২. আমলকারী, আমল ও আমলনামা তিনটি জিনিসকেই ওজন করা হবে।
৪. আল্লাহ তা‘আলা কারো প্রতি জুলুম করবেন না বরং সকলেই স্বীয় কর্মের যথাযথ প্রতিদান লাভ করবে।