১৫০-১৫১ নং আয়াতের তাফসীর:
মূসা (আঃ) যখন আল্লাহ তা'আলার সাথে বাক্যালাপ করে স্বীয় কওমের নিকট ফিরে আসেন তখন তিনি ছিলেন অত্যন্ত রাগান্বিত ও ভারাক্রান্ত। অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয়ে তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ “তোমাদের নিকট থেকে আমার বিদায়ের পর বাছুর-পূজায় লিপ্ত হয়ে তোমরা বাস্তবিকই অত্যন্ত অন্যায় ও মন্দ কাজ করেছে। তোমরা কি অতি তাড়াতাড়ি আল্লাহর শাস্তি ডেকে আনার ইচ্ছা করেছিলে? আর আল্লাহর বাক্যালাপ থেকে সরিয়ে আমাকে সত্বর ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলে?” কিন্তু এটাই ছিল ভাগ্যের লিখন। কঠিন রাগের ভরে তিনি ফলকগুলো মাটিতে ছুঁড়ে ফেলেন এবং ভাই হারূন (আঃ)-এর মাথা ধরে নিজের দিকে সজোরে টেনে আনেন। কথিত আছে যে, এই ফলকগুলো মূল্যবান পাথর ও মণি-মানিক্য দ্বারা নির্মিত ছিল। এই ঘটনাটি নিম্নের হাদীসটিকে প্রমাণিত করছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ لَيْسَ الْخَبَرُ كَالْمُعَايَنَةِ অর্থাৎ “শ্রুত সংবাদ দৃশ্যের মত নয়।” আর প্রকাশ্য বচন হচ্ছে এই যে, হযরত মূসা (আঃ) ক্রোধান্বিত হয়ে ফলকগুলো কওমের সামনে নিক্ষেপ করেন। এটা হচ্ছে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুরুজনদের উক্তি। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, এই উক্তিটি গারীব বা দুর্বল। এর ইসনাদ বিশুদ্ধ নয়। অধিকাংশ আলিম বলেছেন যে, এটা প্রত্যাখ্যান করার যোগ্য। সম্ভবতঃ কোন আহলে কিতাবের যখীরা হতে কাতাদা (রঃ) এটা নকল করেছেন। আর আহলে কিতাবের মধ্যে তো মিথ্যাবাদী, বানানো কথার কথক এবং যিন্দীক বহু রয়েছে। হযরত মূসা (আঃ) যে স্বীয় ভ্রাতা হারূন (আঃ)-কে তাঁর মাথা ধরে টেনেছিলেন তার কারণ ছিল এই যে, তার ধারণায় হারূন (আঃ) জনগণকে বাছুর পূজায় বাধা দেয়ার ব্যাপারে। অবহেলা করেছিলেন। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছে- “হে হারূন (আঃ)! তুমি যখন দেখলে যে, জনগণ এই গুমরাহী অবলম্বন করেছে তখন তোমাকে আমার নির্দেশের উপর চলতে কিসে বাধা দিয়েছে। আমার হুকুম অমান্য করার সাহস তুমি পেলে কোথায়?" তখন হারূন (আঃ) বলেছিলেনঃ “হে আমার মায়ের পুত্র! আমার দাড়ি বা মাথার চুল ধরে টেনে না, আমার এ ভয় তো ছিলই যে, তুমি না জানি বলবে-তুমি আমার জন্যে কেন অপেক্ষা করনি এবং বানী ইসরাঈলকে বিচ্ছিন্নতার মধ্যে কেন নিক্ষেপ করেছো? হে আমার ভাই! এ লোকগুলো আমার কোনই পরওয়া করেনি। তারা আমাকে দুর্বল মনে করেছিল। এমন কি তারা আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। শত্রুদের সামনে তুমি আমাকে হাস্যস্পদ করো না এবং আমাকে এই অত্যাচারীদের মধ্যে গণ্য করো না।” “হে আমার মায়ের পুত্র’ হারূন (আঃ)-এর এ ভাষা প্রয়োগের উদ্দেশ্য ছিল হযরত মূসা (আঃ)-এর মনকে আকর্ষণ করা। যেন তাঁর প্রতি দয়ার উদ্রেক হয়। নচেৎ, তিনি পিতা ও মাতা উভয়ের দিক থেকেই তো মূসা (আঃ)-এর ভাই ছিলেন। যখন মূসা (আঃ)-এর কাছে তাঁর ভাই হারুন নির্দোষ প্রমাণিত হলেন তখন তিনি হারুন (আঃ)-কে ছেড়েছিলেন। ইরশাদ হয়েছে যে, হারূন পূর্বেই লোকদেরকে বলে দিয়েছিলেনঃ “হে লোকেরা! তোমরা ফিন্যায় পড়তে যাচ্ছ। তোমাদের মা’রূদ গো-বৎস নয়, বরং মা'বুদ হচ্ছেন রহমান (আল্লাহ)। তোমরা আমাকেই অনুসরণ কর এবং আমার কথা মেনে চল।" এ জন্যেই মূসা (আঃ) বলেছিলেনঃ “হে আমার প্রভু! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করে দিন। আমাদের উভয়কে আপনার রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দান করুন। আপনি হচ্ছেন সবচেয়ে বড় দয়ালু।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা মূসা (আঃ)-এর উপর দয়া করেন। দর্শকের কথা ও শ্রোতার কথা পৃথক হয়ে থাকে। মহা মহিমান্বিত আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে সংবাদ দিয়েছিলেন- “তোমার অনুপস্থিতির সুযোগে তোমার কওম শিকের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে।” একথা শুনে তিনি ফলকগুলো নিক্ষেপ করেননি। কিন্তু যখন তিনি স্বচক্ষে তাদেরকে শিরুকের মধ্যে জড়িয়ে পড়তে দেখলেন তখন তিনি ক্রোধভরে ফলকগুলো ছুঁড়ে ফেললেন।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে মরিফুরূপে বর্ণনা করেছেন)