২২-২৩ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) বলেন যে, হযরত আদম (আঃ) খেজুরবৃক্ষের ন্যায় দীর্ঘাকৃতির লোক ছিলেন। তার মাথার চুল ছিল ঘন ও লম্বা। যখন তিনি ভুল করে বসলেন তখন তার দেহাবরণ খুলে গেল। এর পূর্বে তিনি স্বীয় গুপ্তাঙ্গের প্রতি লক্ষ্য করতেন না। এখন তিনি ব্যাকুল হয়ে জান্নাতের মধ্যে এদিক ওদিক ফিরতে লাগলেন। জান্নাতের এক গাছের সঙ্গে তার মাথার চুল জড়িয়ে পড়লো। তিনি বলতে লাগলেনঃ হে গাছ! আমাকে ছেড়ে দাও! গাছ বলে উঠলোঃ “আমি আপনাকে ছাড়বো না।” তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাকে ডাক দিয়ে বললেনঃ “তুমি কি আমার নিকট থেকে পালিয়ে যাচ্ছ?” আদম (আঃ) উত্তরে বললেনঃ “হে আমার প্রভু! আমি আপনার কাছে লজ্জা বোধ করছি। কেননা, আমার দেহাবরণ খুলে গেছে।”
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আদম (আঃ)-কে যে গাছের ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছিল তা ছিল গমের শীষ। যখন আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) ওটা খেয়ে ফেলেন তখন তাদের গুপ্তাঙ্গ প্রকাশিত হয়ে পড়ে। এখন তারা গাছের পাতা দ্বারা দেহ আবৃত করতে থাকেন এবং একটিকে অপরটির সাথে জোড়া দিয়ে শরীরের উপর লাগাতে থাকেন। আল্লাহ তাআলা তাঁদের সম্বোধন করে বলেনঃ “হে আদম (আঃ)! আমি তোমাদেরকে জান্নাত দান করেছিলাম এবং তথাকার সব জিনিসই তোমাদের জন্যে বৈধ করে দিয়েছিলাম। একমাত্র একটি গাছ তোমাদের জন্যে অবৈধ করেছিলাম এবং ওর ফল খেতে নিষেধ করেছিলাম, এটা কি সত্য নয়?” আদম (আঃ) উত্তরে বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! হ্যা এটা সত্য বটে, তবে আপনার মর্যাদার শপথ! আমার এটা ধারণাও ছিল না যে, আপনার নামে কসম খেয়ে কেউ মিথ্যা কথা বলতে পারে!” যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ وَ قَاسَمَهُمَاۤ اِنِّیْ لَكُمَا لَمِنَ النّٰصِحِیْنَ অর্থাৎ “আমি কসম খেয়ে বলছি যে আমি তোমাদের শুভাকাংখী।” (৭:২১)। এরপর আল্লাহ তাআলা আদম (আঃ)-কে বলেনঃ “ আমিও স্বীয় মর্যাদার শপথ করে বলছি যে, আমি তোমাদেরকে যমীনে পাঠিয়ে দেবো। সেখানে তোমাদেরকে পরিশ্রম করতে হবে ও বিপদ আপদে পড়তে হবে এবং সেখানে তোমরা কোন শান্তি পাবে না।” অতঃপর আল্লাহ পাক বলেনঃ “তোমরা জান্নাত থেকে বেরিয়ে নীচে নেমে যাও। জান্নাতে তোমরা সর্বপ্রকারের নিয়ামত ভোগ করছিলে, কিন্তু এখন খাদ্য ও পানীয়ের কোন সুস্বাদু নিয়ামত তোমরা প্রাপ্ত হবে না।” মহান আল্লাহ দুনিয়ায় আদম (আঃ)-এর লোহার উপকারিতা সম্পর্কে শিক্ষা দান করলেন এবং তাঁকে কৃষিকার্য শিক্ষা দিলেন। হযরত আদম (আঃ) কৃষিকার্য শুরু করে দিলেন। ক্ষেতে পানি সেচন করলেন। শস্য পেকে উঠলে তিনি তা কেটে নিলেন এবং ওটা মাড়াই করে দানা বের করলেন। তারপর তা পেষণ করলেন এবং ওটা ঠাসলেন। এরপর রুটি পাকিয়ে তা খেয়ে নিলেন। যে কষ্ট তাদের ভাগ্যে লিখা ছিল তা আল্লাহ পাকের ইচ্ছা অনুযায়ীই লিখিত হয়েছিল।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আদম (আঃ) জান্নাতের ডুমুরের পাতাকে পোশাকের আকারে দেহে জড়িয়েছিলেন। অহাব। ইবনে মুনাব্বাহ্ বলেন যে, হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ)-এর নূরানী পোশাক ছিল, ফলে একে অপরকে উলঙ্গরূপে দেখতে পেতেন না। যখন তাদের উলঙ্গরূপ প্রকাশ পেয়ে গেল তখন তা আবৃত করার খেয়াল তাদের অন্তরে প্রকৃতিগতভাবে জেগে উঠলো। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, হযরত আদম (আঃ) বলেছিলেন-“হে আমার প্রতিপালক! আমার তাওবা ও ক্ষমাপ্রার্থনা করার কোন উপায় আছে কি?” উত্তরে আল্লাহ পাক বলেনঃ হ্যাঁ, আছে। ঐ অবস্থায় আমি তোমাদেরকে পুনরায় জান্নাতে প্রবিষ্ট করবো। কিন্তু ইবলীস তাওবার অনুমতি চাওয়ার পরিবর্তে কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকার অনুমতি চাইলো। আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে দু'জনকেই তাদের প্রার্থিত জিনিস দান করা হলো।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন হযরত আদম (আঃ) গম খেয়ে নিলেন তখন আল্লাহ তা'আলা তাঁকে বললেনঃ “আমি তোমাকে এ গাছ থেকে নিষেধ করা সত্ত্বেও তুমি এর ফল খেলে কেন?” তখন তিনি জবাবে বললেনঃ “হাওয়া আমাকে এটা খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল।” আল্লাহ পাক তখন বললেনঃ “আমি হাওয়াকে এ শাস্তি দিলাম যে, গর্ভবতী থাকা অবস্থায় সে ব্যথা ও কষ্ট পাবে এবং সন্তান প্রসবের সময়ও তাকে কষ্ট দেয়া হবে।” এ কথা শুনে হযরত হাওয়া (আঃ) কাঁদতে লাগলেন। আল্লাহ তা'আলা আরও বললেনঃ “যখন তুমি সন্তান প্রসব করবে তখন তুমি ও তোমার সন্তান উভয়েই কাঁদবে।” হযরত আদম (আঃ) তাঁর প্রতিপালকের নিকট থেকে ক্ষমা চাওয়ার জন্যে যে কথাগুলো শিখেছিলেন তা হচ্ছে নিম্নরূপঃ
رَبَّنَا ظَلَمْنَاۤ اَنْفُسَنَا وَ اِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَ تَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ অর্থাৎ “ হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন, তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বো।”