আল মা'আরিজ আয়াত ৪৪
خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ ۗذٰلِكَ الْيَوْمُ الَّذِيْ كَانُوْا يُوْعَدُوْنَ ࣖ ( المعارج: ٤٤ )
Khaashi'atan absaaruhum tarhaquhum zillah; zaalikal yawmul lazee kaanoo yoo'adoon (al-Maʿārij ৭০:৪৪)
English Sahih:
Their eyes humbled, humiliation will cover them. That is the Day which they had been promised. (Al-Ma'arij [70] : 44)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তাদের দৃষ্টি হবে অবনমিত, লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। এটাই হল সেই দিন যার ও‘য়াদা তাদেরকে দেয়া হচ্ছিল। (আল মা'আরিজ [৭০] : ৪৪)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
অবনত নেত্রে;[১] হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে।[২] এটাই সেই দিন, যার বিষয়ে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।[৩]
[১] যেমনভাবে অপরাধীদের দৃষ্টি অবনত থাকে। কারণ, তারা তাদের অপরাধ সম্পর্কে অবগত থাকে।
[২] অর্থাৎ, কঠিন লাঞ্ছনা তাদেরকে ঘিরে ধরবে এবং তাদের চেহারা ভয়ে কালো হয়ে যাবে।
[৩] অর্থাৎ, রসূলগণের জবান এবং আসমানী কিতাবসমূহের মাধ্যমে।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
অবনত নেত্রে; হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে; এটাই সে দিন, যার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল তাদেরকে।
3 Tafsir Bayaan Foundation
অবনত চোখে। লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে! এটিই সেদিন যার ওয়াদা তাদেরকে দেয়া হয়েছিল।
4 Muhiuddin Khan
তাদের দৃষ্টি থাকবে অবনমিত; তারা হবে হীনতাগ্রস্ত। এটাই সেইদিন, যার ওয়াদা তাদেরকে দেয়া হত।
5 Zohurul Hoque
তাদের চোখ হবে অবনত, হীনতা তাদের আচ্ছন্ন করবে। এমনটাই সেইদিন যার বিষয়ে তাদের ওয়াদা করা হয়েছিল।
6 Mufti Taqi Usmani
তাদের দৃষ্টি থাকবে অবনত। হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখবে। এটাই সেই দিন, যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে।
7 Mujibur Rahman
অবনত নেত্রে; হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে; এটাই সেদিন, যে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল তাদেরকে।
8 Tafsir Fathul Mazid
৩৬-৪৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগের যে সকল কাফিররা তাঁকে পেয়েও এবং বহুসংখ্যক মু‘জিযাহ দেখার পরেও ঈমান না এনে জান্নাতে যাওয়ার আশা করে তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তিরস্কার করছেন।
مُهْطِعِيْنَ অর্থ : হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন : منطلقين বা দ্রুত আগমন করে। অর্থাৎ কাফিররা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে দ্রুত ছুটে আসে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য নয়, বরং তিনি কী বলেন তা নিয়ে ঠাট্টা করার জন্য।
عِزِيْنَ শব্দটি عزة এর বহুবচন। অর্থ : متفرفين বা দলে দলে।
(أَيَطْمَعُ كُلُّ امْرِئٍ ....كَـلَّا)
অর্থাৎ তারা কি এ কুফরী অবস্থায় অটল থেকে জান্নাতে যাওয়ার আশা করে? কখনো সম্ভব নয়, কেবল মু’মিনরাই জান্নাতে যাবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :
لَا يَدْخُلُ الجَنَّةَ إِلَّا نَفْسٌ مُؤْمِنَةٌ
মু’মিন ব্যক্তি ছাড়া কেউ জান্নাতে যাবে না। (তিরমিযী হা. ৩০৯২, সহীহ)
(إِنَّا خَلَقْنٰهُمْ مِّمَّا يَعْلَمُوْنَ)
অর্থাৎ দুর্বল বীর্য থেকে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(فَلْيَنْظُرِ الْإِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ ط خُلِقَ مِنْ مَّا۬ءٍ دَافِقٍ لا يَّخْرُجُ مِنْمبَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَآئِبِ)
“সুতরাং মানুষের লক্ষ্য করা উচিত যে, তাকে কিসের দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রবল বেগে নির্গত পানি হতে, যা বের হয় পিঠ ও বুকের হাড়ের মধ্য হতে।” (সূরা তারেক ৮৬ : ৫-৭)
(رَبِّ الْمَشٰرِقِ وَالْمَغٰرِبِ)
এ সম্পর্কে সূরা আর-রহমানে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
(إِنَّا لَقٰدِرُوْنَ عَلٰٓي أَنْ نُّبَدِّلَ خَيْرًا مِّنْهُمْ)
ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা মানুষের শারীরিক গঠন দুনিয়ার চেয়ে উত্তম রূপে নিয়ে আসতে সক্ষম। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(أَيَحْسَبُ الْإِنْسَانُ أَلَّنْ نَّجْمَعَ عِظَامَه۫ ط بَلٰي قَادِرِيْنَ عَلٰٓي أَنْ نُّسَوِّيَ بَنَانَه)
“মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার হাড়গুলো কোনক্রমে একত্র করতে পারব না। হ্যাঁ, অবশ্যই আমি তার অঙ্গুলীর অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।” (সূরা কিয়ামাহ ৭৫ : ৩-৪)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(نَحْنُ قَدَّرْنَا بَيْنَكُمُ الْمَوْتَ وَمَا نَحْنُ بِمَسْبُوْقِيْنَ عَلٰٓي أَنْ نُّبَدِّلَ أَمْثَالَكُمْ وَنُنْشِئَكُمْ فِيْ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ)
“আমি তোমাদের জন্য মৃত্যু নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই এ ব্যাপারে যে, আমি তোমাদের মত (অন্যকে) পরিবর্তন করে নিয়ে আসব এবং তৈরি করব তোমাদেরকে এমন (আকৃতিতে) যা তোমরা জান না।” (সূরা ওয়াকিয়াহ ৫৬ : ৬০-৬১)
ইমাম ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন : আল্লাহ তা‘আলা এ জাতিকে ধ্বংস করে অন্য জাতি নিয়ে আসতে সক্ষম যারা আল্লাহর আনুগত্য করবে এবং তাঁর অবাধ্য হবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَإِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ لا ثُمَّ لَا يَكُوْنُوْآ أَمْثَالَكُمْ)
“যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে রাখ তাহলে আল্লাহ তোমাদের বদলে অন্য কাওমকে নিয়ে আসবেন। আর তারা তোমাদের মত হবে না।” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ : ৩৮)
(فَذَرْهُمْ يَخُوْضُوْا)
অর্থাৎ হে নাবী! তাদেরকে অবকাশ দিন। তারা তাদের বাতিল চিন্তা-চেতনা নিয়ে মত্ত থাকুক। যখন কিয়ামত চলে আসবে তখন তারা বুঝতে পারবে সঠিক ধর্ম বর্জন করার ফলাফল কী?
الْأَجْدَاثِ শব্দটি جدث এর বহুবচন। অর্থ হল : কবর। فصب অর্থ হল : থান, বেদী-যেখানে মূর্তির নামে পশু জবাই করা হয়। এটি মূর্তি অর্থেও ব্যবহৃত হয়। কেউ কেউ علم বা পতাকা বা নিদর্শন অর্থে প্রয়োগ করেছেন। যেভাবে যুদ্ধের ময়দানে সৈন্যরা নিজেদের পতাকার দিকে দৌড়ায় তেমনি কিয়ামতের দিন কবর থেকে উঠে মানুষ দ্রুত হাশরের দিকে দৌড়াবে।
خَاشِعَةً অর্থ ذليلة خاضعة বা অপদস্থ ও অবনত হয়ে থাকবে। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন মানুষ লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারবে না। সকলে হীন ও মাথা নত অবস্থায় থাকবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে কাফিরদের যে অবস্থা ছিল তা জানতে পারলাম।
২. জান্নাতে কেবল মু’মিনরাই প্রবেশ করবে অন্য কোন ব্যক্তি না।
৩. কবর ও পুনরুত্থানের প্রমাণ পেলাম।
9 Fozlur Rahman
এমন অবস্থায় যে তাদের দৃষ্টি অবনত থাকবে ও লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। এটাই সেই দিন, যার ওয়াদা তাদের সাথে করা হত।
10 Mokhtasar Bangla
৪৪. চোখ নিচু করে। সেগুলোকে তখন লাঞ্ছনা ঘিরে রাখবে। এ হলো সে দিন যে দিনের ব্যাপারে তাদের সাথে অঙ্গীকার করা হয়েছে। অথচ তারা এ ব্যাপারে কোন পরওয়াই করতো না।
11 Tafsir Ibn Kathir
৩৬-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর
মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ ঐ কাফিরদের উপর অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন যারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যুগে বিদ্যমান ছিল, স্বয়ং তাঁকে দেখতে পাচ্ছিল এবং তিনি যে হিদায়াত নিয়ে এসেছিলেন তা তাদের সামনেই ছিল। এতদসত্ত্বেও তারা তার নিকট হতে পালিয়ে যাচ্ছিল এবং তাঁকে বিদ্রুপ করার উদ্দেশ্যে ডান ও বাম দিক হতে দলে দলে তার দিকে ছুটে আসছিল। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
فَمَا لَهُمْ عَنِ التَّذْكِرَةِ مُعْرِضِیْنَ ـ كَاَنَّهُمْ حُمُرٌ مُّسْتَنْفِرَةٌ ـ فَرَّتْ مِنْ قَسْوَرَةٍ
অর্থাৎ “তাদের কি হয়েছে যে, তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় উপদেশ হতে? তারা যেন ভীত এস্ত গর্দভ- যা সিংহের সম্মুখ হতে পলায়নপর।”(৭৪:৪৯-৫১) অনুরূপভাবে এখানেও বলেনঃ এই কাফিরদের কি হলো যে, তারা ঘৃণা ভরে তোমার নিকট হতে সরে যাচ্ছে? কেন তারা ডানে বামে ছুটে চলছে? তারা বিচ্ছিন্নভাবে এদিক-ওদিক চলে যাচ্ছে এর কারণ কি? হযরত ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) প্রবৃত্তির উপর আমলকারীদের সম্পর্কে এ কথাই বলেন যে, তারা আল্লাহর কিতাবের বিরুদ্ধাচরণকারী হয়ে থাকে এবং তারা পরস্পরও একে অপরের বিরোধী হয়ে থাকে। হ্যাঁ, তবে কিতাবুল্লাহর বিরোধিতায় তারা সব একমত থাকে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে আওফীক (রঃ)-এর রিওয়াইয়াতে বর্ণিত আছে যে, এর ভাবার্থ হলোঃ তারা বেপরোয়া ভাবে ডানে-বামে হয়ে তোমাকে বিদ্রুপ ও উপহাস করে। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, অর্থ হলোঃ তারা ডানে-বামে হয়ে গিয়ে প্রশ্ন করেঃ এ লোকটি কি বলেছে? হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, তারা দলবদ্ধভাবে ডানে-বামে হয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চতুর্দিকে ফিরতে থাকে। না তাদের কিতাবুল্লাহর উপর চাহিদা আছে, না রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর প্রতি কোন আগ্রহ আছে।
হযরত জাবির ইবনে সামরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) জনগণকে বিচ্ছিন্নভাবে দলে দলে আসতে দেখে বলেনঃ “আমার কি হলো যে, আমি তোমাদেরকে এভাবে দলে দলে আসতে দেখছি?” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম আবূ দাউদ (রঃ), ইমাম নাসাঈ (রঃ) এবং ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তাদের প্রত্যেকে কি এই প্রত্যাশা করে যে, তাকে দাখিল করা হবে প্রাচুর্যময় জান্নাতে? না, তা হবে না। অর্থাৎ তাদের অবস্থা যখন এই যে, তারা আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল (সঃ) হতে ডানে-বামে বক্র হয়ে চলছে তখন তাদের এ চাহিদা কখনো পুরো হতে পারে না। বরং তারা জাহান্নামী দল।
এখন তারা যেটাকে অসম্ভব মনে করছে তার সর্বোত্তম প্রমাণ তাদের নিজেদেরই অবগতি ও স্বীকারুক্তি দ্বারা বর্ণনা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছেঃ আমি তাদেরকে যা হতে সৃষ্টি করেছি তা তারা জানে। তা এই যে, আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি দুর্বল পানি হতে। তাহলে তিনি কি তাদেরকে পুনর্বার সৃষ্টি করতে পারবেন না? যেমন তিনি বলেনঃ
اَلَمْ نَخْلُقْكُّمْ مِّنْ مَّآءٍ مَّهِیْنٍ
অর্থাৎ “আমি কি তোমাদেরকে নিকৃষ্ট পানি হতে সৃষ্টি করিনি?” (৭৭:২০) আর এক জায়গায় বলেনঃ
یَّخْرُجُ مِنْۢ بَیْنِ الصُّلْبِ وَ التَّرَآئِبِ ـ اِنَّهٗ عَلٰى رَجْعِهٖ لَقَادِرٌ ـ یَوْمَ تُبْلَى السَّرَآئِرُ ـ فَمَا لَهٗ مِنْ قُوَّةٍ وَّ لَا نَاصِرٍ
অর্থাৎ “সুতরাং মানুষ প্রণিধান করুক যে, তাকে কি হতে সৃষ্টি করা হয়েছে! তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি হতে। এটা নির্গত হয় মেরুদণ্ড ও পঞ্জরাস্থির মধ্য হতে। নিশ্চয়ই তিনি তার প্রত্যানয়নে ক্ষমতাবান। যেই দিন গোপন বিষয় পরীক্ষিত হবে সেই দিন তার কোন সামর্থ্য থাকবে না এবং সাহায্যকারীও না।” (৮৬:৭-১০)
এখানে মহান আল্লাহ্ বলেনঃ শপথ ঐ সত্তার যিনি যমীন ও আসমান সৃষ্টি করেছেন, পূর্ব ও পশ্চিম নির্ধারণ করেছেন এবং তারকারাজির গোপন হওয়ার ও প্রকাশিত হওয়ার স্থান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন! ভাবার্থ হচ্ছেঃ হে কাফির সম্প্রদায়! তোমরা যা ধারণা করছো ব্যাপার তা নয় যে, হিসাব-কিতাব হবে না এবং হাশর-নশরও হবে না। এসব অবশ্যই সংঘটিত হবে। এজন্যেই কসমের পূর্বে তাদের বাতিল ধারণাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেন এবং এটাকে এমনভাবে সাব্যস্ত করেন যে, নিজের পূর্ণ শক্তির বিভিন্ন নমুনা তাদের সামনে পেশ করেন। যেমন আসমান ও যমীনের প্রাথমিক সৃষ্টি এবং এই দু'টির মধ্যে প্রাণীসমূহ, জড় পদার্থ এবং বিভিন্ন নিয়ামতের বিদ্যমানতা। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ
لَخَلْقُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ اَكْبَرُ مِنْ خَلْقِ النَّاسِ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْنَ
অর্থাৎ “অবশ্যই মানব সৃষ্টি অপেক্ষা আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করাই বড় ব্যাপার, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই জানে না।”(৪০:৫৭)।
ভাবার্থ এই যে, আল্লাহ্ তা'আলা যখন বৃহৎ হতে বৃহত্তম জিনিস সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন তখন তিনি ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতম জিনিস সৃষ্টি করতে কেন সক্ষম হবেন না? অবশ্যই তিনি সক্ষম হবেন। যেমন তিনি এক জায়গায় বলেনঃ
اَوَ لَمْ یَرَوْا اَنَّ اللّٰهَ الَّذِیْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ وَ لَمْ یَعْیَ بِخَلْقِهِنَّ بِقٰدِرٍ عَلٰۤى اَنْ یُّحْیَِۧ الْمَوْتٰى بَلٰۤى اِنَّهٗ عَلٰى كُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ
অর্থাৎ “তারা কি দেখে না যে, আল্লাহ, যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং ওগুলো সৃষ্টি করতে ক্লান্ত হননি, তিনি কি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম হবেন না? হ্যাঁ অবশ্যই তিনি সব কিছুরই উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।" (৪৬:৩৩)
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
اَوَ لَیْسَ الَّذِیْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ بِقٰدِرٍ عَلٰۤى اَنْ یَّخْلُقَ مِثْلَهُمْ بَلٰى وَ هُوَ الْخَلّٰقُ الْعَلِیْمُ ـ اِنَّمَاۤ اَمْرُهٗۤ اِذَاۤ اَرَادَ شَیْئًا اَنْ یَّقُوْلَ لَهٗ كُنْ فَیَكُوْنُ
অর্থাৎ “যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি কি ওগুলোর অনুরূপ সৃষ্টি করতে সমর্থ নন? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ। তার ব্যাপার শুধু এই যে, তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন তিনি ওকে বলেনঃ 'হও', ফলে তা হয়ে যায়।”(৩৬:৮১-৮২)
এখানে মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি শপথ করছি উদয়াচল ও অস্তাচলের অধিপতির- নিশ্চয়ই আমি তাদের এই দেহকে, যেমন এখন এটা রয়েছে, এর চেয়েও উত্তম আকারে পরিবর্তিত করতে পূর্ণমাত্রায় ক্ষমতাবান কোন জিনিস, কোন ব্যক্তি এবং কোন কাজ আমাকে অপারগ ও অক্ষম করতে পারে না। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
اَیَحْسَبُ الْاِنْسَانُ اَلَّنْ نَّجْمَعَ عِظَامَهٗ ـ بَلٰى قٰدِرِیْنَ عَلٰۤى اَنْ نُّسَوِّیَ بَنَانَهٗ
অর্থাৎ “মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করতে পারবো না? বস্তুতঃ আমি তার অঙ্গুলীর অগ্রভাগ পর্যন্ত পূনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।” (৭৫:৩-৪) আরো বলেনঃ
نَحْنُ قَدَّرْنَا بَیْنَكُمُ الْمَوْتَ وَ مَا نَحْنُ بِمَسْبُوْقِیْنَ ـ عَلٰۤى اَنْ نُّبَدِّلَ اَمْثَالَكُمْ وَ نُنْشِئَكُمْ فِیْ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
অর্থাৎ “আমি তোমাদের জন্যে মৃত্যু নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই তোমার স্থলে তোমাদের সদৃশ আনয়ন করতে এবং তোমাদেরকে এমন এক আকৃতি দান করতে যা তোমরা জান না।” (৫৬:৬০-৬১)।
সুতরাং عَلٰۤى اَنْ نُّبَدِّلَ خَيْرًا مِّنْهُمْ-এর একটি ভাবার্থ তো এটাই যা উপরে বর্ণিত হলো। আর দ্বিতীয় ভাবার্থ, যা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন তা হলোঃ নিশ্চয়ই আমি সক্ষম তাদের অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর মানব গোষ্ঠীকে তাদের স্থলবর্তী করতে, যারা হবে আমার পূর্ণ অনুগত, যারা আমার অবধাচরণ করবে না। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ
وَ اِنْ تَتَوَلَّوْا یَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَیْرَكُمْ ثُمَّ لَا یَكُوْنُوْۤا اَمْثَالَكُمْ
অর্থাৎ “যদি তোমরা বিমুখ হও, তবে তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন; তারা তোমাদের মত হবে না।”(৪৭:৩৮) তবে প্রথম ভাবার্থটিই বেশী প্রকাশমান। কেননা এর পরবর্তী আয়াতগুলোতে এ লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে। এসব ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ হে নবী (সঃ) ! তুমি তাদেরকে বাক-বিতণ্ডা ও ক্রীড়া-কৌতুকে মত্ত থাকতে দাও, যে দিবস সম্পর্কে তাদের সতর্ক করা হয়েছিল, তার সম্মুখীন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। সেদিন তারা কবর হতে বের হবে দ্রুত বেগে, মনে হবে যে, তারা কোন একটি লক্ষ্যস্থলের দিকে ধাবিত হচ্ছে অবনত নেত্রে। হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। এটাই সেই দিন, যার বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল। এটা হলো দুনিয়ায় আল্লাহর আনুগত্য হতে সরে পড়া ও ঔদ্ধত্য প্রকাশ করার ফল। আর এটা হলো ঐ দিন যা সংঘটিত হওয়াকে অসম্ভব মনে করা হচ্ছে এবং নবী (সঃ)-কে, শরীয়তকে ও আল্লাহর কালামকে তুচ্ছ জ্ঞান করে উপহাসের ছলে বলা হচ্ছেঃ কিয়ামত কেন সংঘটিত হচ্ছে না? আর কেনই বা আমাদের উপর শাস্তি আপতিত হয় না?