আন-নাবা আয়াত ৩০
فَذُوْقُوْا فَلَنْ نَّزِيْدَكُمْ اِلَّا عَذَابًا ࣖ ( النبإ: ٣٠ )
Fa zooqoo falan-nazee dakum ill-laa azaaba (an-Nabaʾ ৭৮:৩০)
English Sahih:
"So taste [the penalty], and never will We increase you except in torment." (An-Naba [78] : 30)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
অতএব এখন স্বাদ গ্রহণ কর, আমি তোমাদের জন্য কেবল শাস্তিই বৃদ্ধি করব (অন্য আর কিছু নয়)। (আন-নাবা [৭৮] : ৩০)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
সুতরাং তোমরা আস্বাদন কর, এখন তো আমি শুধু তোমাদের শাস্তিই বৃদ্ধি করতে থাকব। [১]
[১] আযাব বৃদ্ধি করার অর্থ হল যে, এখন থেকে এই আযাব চিরস্থায়ী। যখনই তাদের চামড়া গলে যাবে, তখনই ওর স্থলে নুতন চামড়া সৃষ্টি করা হবে। (সূরা নিসা ৪;৫৬ আয়াত) যখনই আগুন নিভে যাবে, তখনই পুনরায় তা প্রজ্বলিত করা হবে। (সূরা বানী ইস্রাঈল ১৭;৯৭ আয়াত)
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
অতঃপর তোমরা আস্বাদ গ্রহণ কর, আমরা তো তোমাদের শাস্তিই শুধু বৃদ্ধি করব।
3 Tafsir Bayaan Foundation
সুতরাং তোমরা স্বাদ গ্রহণ কর। আর আমি তো কেবল তোমাদের আযাবই বৃদ্ধি করব।
4 Muhiuddin Khan
অতএব, তোমরা আস্বাদন কর, আমি কেবল তোমাদের শাস্তিই বৃদ্ধি করব।
5 Zohurul Hoque
সুতরাং স্বাদ গ্রহণ করো, আমরা তোমাদের বাড়িয়ে দেবো না শাস্তি ব্যতীত।
6 Mufti Taqi Usmani
সুতরাং তোমরা মজা ভোগ কর! আমি তোমাদের কেবল শাস্তিই বৃদ্ধি করব।
7 Mujibur Rahman
অতঃপর তোমরা আস্বাদ গ্রহণ কর, এখন আমিতো তোমাদের যাতনাই শুধু বৃদ্ধি করতে থাকব।
8 Tafsir Fathul Mazid
১৭-৩০ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
সূরা শুরু করা হয়েছে ‘মহাসংবাদ’ দিয়ে। এক্ষণে তা সংঘটিত হওয়ার সময়কাল, সংঘটিত হওয়ার সময়ের অবস্থা ইত্যাদির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সৃষ্টি ও লালন-পালন শেষে পৃথিবী ধ্বংস ও প্রলয়কাল সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : কিয়ামতের জন্য একটি নির্ধারিত দিন রয়েছে। এ সুনির্দিষ্ট দিন বা তারিখ আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ জানে না। (সূরা মূলক ৬৭ : ২৬) যদিও বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন মত ব্যক্ত করে থাকে যে, ৫০০ বছর পর পৃথিবী আলোহীন হয়ে যাবে ইত্যাদি তা নিছক ধারণা মাত্র, প্রকৃত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার কাছে, তিনি ছাড়া কেউ তা জানে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَلَا يَزَالُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِيْ مِرْيَةٍ مِّنْهُ حَتّٰي تَأْتِيَهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً أَوْ يَأْتِيَهُمْ عَذَابُ يَوْمٍ عَقِيْمٍ )
“যারা কুফরী করেছে তারা তাতে সন্দেহ পোষণ করা হতে বিরত হবে না, যতক্ষণ না তাদের নিকট কিয়ামত এসে পড়বে আকস্মিকভাবে, অথবা এসে পড়বে এক বন্ধ্যা দিনের শাস্তি।” (সূরা হজ্জ ২২: ৫৫)
(يَوْمَ الْفَصْلِ)
অর্থ ফায়সালার দিন, আর তা হল কিয়ামতের দিন। এ দিনে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার ভাল-মন্দ কর্মের ফায়সালা করবেন। (كَانَ مِيْقَاتًا) অর্থ
كان وقتا وميعادا محددا الأولين والأخرين
পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য তার সময় ও প্রতিশ্রুত সময় নির্ধারিত। যা কোনরূপ কমবেশি হবে না। এ সম্পর্কে কাফিররা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَمَا نُؤَخِّرُھ۫ٓ اِلَّا لِاَجَلٍ مَّعْدُوْدٍ)
“এবং আমি নির্দিষ্ট কিছু কালের জন্য সেটা স্থগিত রেখেছি মাত্র।” (সূরা হূদ ১১: ১০৪) এখানে সরাসরি বা কিয়ামতের দিন বলে বা ফায়সালার দিন বলার মাধ্যমে বুঝাতে চাচ্ছেন কিয়ামতের মূল উদ্দেশ্য বান্দার কর্মের হিসাব-নিকাশ নেওয়া এবং তার যথাযথ বিচার ফায়সালা করা।
أَفْوَاجًا অর্থ হলো দলে দলে। ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন : প্রত্যেক জাতি তাদের রাসূলদের সাথে কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(يَوْمَ نَدْعُوْا كُلَّ أُنَاسٍ ۭبِإِمَامِهِمْ)
“স্মরণ কর, সে দিনকে যখন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের নেতা-সহ আহ্বান করব।” (সূরা ইসরা ১৭: ৭১)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : দুবার শিংগায় ফুঁ দেয়ার মাঝে সময় হলো চল্লিশ। সাহাবীগণ বললেন : চল্লিশ দিন? তিনি বললেন : আমি বলতে পারি না। তারা আবার বললেন : চল্লিশ মাস কি? তিনি বললেন : আমি বলতে পারি না। পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন : চল্লিশ বছর কি? তিনি বললেন : বলতে পারি না। অতঃপর তিনি বললেন : আল্লাহ তা‘আলা আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ফলে মানুষ (মাটি থেকে) উঠবে যেমন উদ্ভিদ গজায়। মানুষের মেরুদণ্ডের শেষাংশের হাড় ব্যতীত দেহের সব কিছু মাটিতে বিনষ্ট হয়ে যাবে। ঐ হাড় দ্বারা কিয়ামতের দিন সমস্ত সৃষ্টিকে পুনরায় গঠন করা হবে। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৩৫)
এ আয়াতে বর্ণিত ফুঁক দ্বিতীয় বারের ফুঁক। প্রথম ফুঁতে সবকিছু ধ্বংস হবে। আর দ্বিতীয় ফুঁতে মানুষ কবর থেকে উঠবে।
أَبْوَابًا শব্দটি باب এর বহুবচন, অর্থ দরজাসমূহ, অনেক পথ। কিয়ামতের দিন ফেরেশতা অবতরণের জন্য আকাশে অনেক রাস্তা হয়ে যাবে। আকাশ অত্যন্ত সুরক্ষিত যা ভেদ করে যে কেউ ওপরে উঠতে পারে না। প্রত্যেক আকাশের দরজা রয়েছে এবং সেখানে দ্বাররক্ষী ফেরেশতা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে মি‘রাজের রাতে আকাশের দিকে নিয়ে যাওয়া হলে জিবরীল (আঃ) প্রত্যেক দরজায় প্রবেশের পূর্বে দ্বাররক্ষী ফেরেশতার অনুমতি নিয়েছিলেন। (সহীহ বুখারী হা. ৩৪৯, সহীহ মুসলিম হা. ১৬৩)
দ্বিতীয় ফুঁৎকারের পর আকাশ-জমিন পুনরায় বহাল হয়ে যাবে এবং নতুন আকাশ ও জমিন সৃষ্টি হবে ও সকল মানুষ আল্লাহ তা‘আলার সম্মুখে উপস্থিত হবে। নতুন সে পৃথিবী সমতল হবে, তাতে কোনরূপ বক্রতা বা উঁচু-নিচু থাকবে না।
سَرَابًا অর্থ : মরীচিকা। এমন ধু-ধু মরুভূমি যা রোদের তাপে দূর থেকে মনে হয় পানি দ্বারা ভরপুর। কিয়ামতের পূর্বে পাহাড়গুলোকে-
প্রথমত:
চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَّحُمِلَتِ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً وَّاحِدَةً)
“আর পৃথিবী ও পর্বতমালাকে উত্তোলন করা হবে এবং একই ধাক্কায় চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেওয়া হবে।” (সূরা হাক্কাহ ৬৮: ১৪)
দ্বিতীয়ত:
তা ধূনিত রঙ্গিন পশমের মত হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَتَكُوْنُ الْـجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوْشِ)
“এবং পর্বতমালা হবে ধূনিত রঙিন পশমের মত।” (সূরা কারিয়াহ ১০১ : ৫)
তৃতীয়ত:
তা উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণার মত হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَکَانَتْ ھَبَا۬ئً مُّنْۭبَثًّا)
“তখন তা উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত হবে।” (সূরা ওয়াকিয়াহ ৫৬: ৬)
চতুর্থত:
পাহাড়গুলোকে উড়িয়ে দেয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَيَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنْسِفُهَا رَبِّيْ نَسْفًا)
“তারা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল: ‘আমার প্রতিপালক তাদেরকেসমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দেবেন।” (সূরা ত্বহা ২০: ১০৫)
আর পঞ্চম অবস্থায় তা মরীচিকার মত অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে। (ফাতহুল কাদীর) এসব আলোচনার পর জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের অবস্থা প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
مِرْصَادًا অর্থ হলো ঘাঁটি। যেখানে আত্মগোপন করে শক্রর অপেক্ষা করা হয়। সুযোগ পেলেই হামলা চালাবে। অনুরূপভাবে জাহান্নামের প্রহরীরা সুযোগ পেলেই কাফিরদেরকে শাস্তি দেবে।
أَحْقَابًا শব্দটি حقب এর বহুবচন। এর অর্থ হলো যুগ বা জামানা। উদ্দেশ্য হলো যুগযুগ ধরে অনন্তকাল কাফিররা জাহান্নামে থাকবে। কখনও সেখান থেকে বের হতে পারবে না। জাহান্নামে প্রবেশ করার পর তারা এমন কোন কিছু পাবে না যা অন্তর ও দেহ ঠান্ডা করে যন্ত্রণা নিবারণ করাবে। তবে পাবে ফুটন্ত গরম পানি ও তাদের দেহ নির্গত পুঁজ। এসব তাদের তৃষ্ণা নিবারণে কোন উপকারে আসবে না, বরং অর্ধগলা পর্যন্ত গিয়ে আটকে থাকবে যা মৃত্যুযন্ত্রণা আরো বৃদ্ধি করবে। এসব তাদের কৃত আমলের পূর্ণ পরিণাম। কারণ তারা আখিরাতে বিশ্বাসী ছিল না এবং আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কিয়ামতের জন্য দিন নির্ধারিত হয়ে আছে।
২. কিয়ামতের পূর্বে দুনিয়ার কী অবস্থা হবে তা জানতে পারলাম।
৩. কাফিররা যে শাস্তি পাবে তার বিবরণ জানলাম।
9 Fozlur Rahman
অতএব, তোমরা (শাস্তির) স্বাদ গ্রহণ করো; আমি কেবল তোমাদের শাস্তিই বাড়িয়ে দেব।
10 Mokhtasar Bangla
৩০. সুতরাং হে অবাধ্যরা! তোমরা এখন স্থায়ী শাস্তি আস্বাদন করো। আমি তোমাদের শাস্তির উপর কেবল শাস্তিই বৃদ্ধি করবো।
11 Tafsir Ibn Kathir
১৭-৩০ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা يَوْمَ الْفَصْلِ অর্থাৎ কিয়ামতের দিন সম্পর্কে বলেন যে, ওটা একটা নির্ধারিত দিন। এটা পূর্বেও আসবে না এবং পরেও আসবে না, বরং ঠিক নির্ধারিত সময়েই আসবে। কিন্তু কখন আসবে তার সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা'আলারই রয়েছে। তিনি ছাড়া আর কারো এর জ্ঞান নেই। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَ مَا نُؤَخِّرُهٗۤ اِلَّا لِاَجَلٍ مَّعْدُوْدٍ
অর্থাৎ “আমি ওটাকে শুধু নির্ধারিত সময়ের জন্যেই বিলম্বিত করছি।” (১১:১০৪)
ইরশাদ হচ্ছে সেই দিন শিংগায় ফুত্তার দেয়া হবে এবং তোমরা দলে দলে সমাগত হবে। প্রত্যেক উম্মত নিজ নিজ নবীর সাথে পৃথক পৃথক থাকবে। যেমন আহ অলি বলেনঃ
یَوْمَ نَدْعُوْا كُلَّ اُنَاسٍۭ بِاِمَامِهِمْ
অর্থাৎ “যেই দিন আমি সমস্ত মানুষকে তাদের ইমামদের সাথে আহ্বান করব।" (১৭:৭১)।
یَّوْمَ یُنْفَخُ فِی الصُّوْرِ فَتَاْتُوْنَ اَفْوَاجًا এই আয়াতের তাফসীরে সহীহ বুখারীতে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “উভয় শিংগার মধ্যবর্তী সময় হবে চল্লিশ।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “চল্লিশ দিন?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “আমি বলতে পারি না। তারা আবার প্রশ্ন করলেনঃ “চল্লিশ মাস কি?” তিনি জবাব দিলেনঃ “তা আমি বলতে পারবো। তারা পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ “চল্লিশ বছর?" তিনি উত্তরে বললেনঃ “আমি এটাও বলতে অস্বীকার করছি। তিনি বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ তা'আলা আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। ফলে যেভাবে উদ্ভিদ মাটি হতে অঙ্কুরিত হয়। দ্রুপ মানুষ ভূ-পৃষ্ঠ হতে উথিত হতে থাকবে। মানুষের সারা দেহ পচে গলে যায়। শুধুমাত্র একটি জিনিস বাকী থাকে। তা হলো কোমরের মেরুদণ্ডের অস্থি। ঐ অস্থি থেকেই কিয়ামতের দিন মাখলুককে পুনর্গঠন করা হবে।
“আকাশ উন্মুক্ত করা হবে, ফলে ওটা হবে বহু দ্বার বিশিষ্ট।” অর্থাৎ আকাশকে খুলে দেয়া হবে এবং তাতে ফেরেশতামণ্ডলীর অবতরণের পথ ও দরজা হয়ে যাবে।
“আর চলমান করা হবে পর্বতসমূহকে, ফলে সেগুলো হয়ে যাবে মরীচিকা।” যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ
وَ تَرَى الْجِبَالَ تَحْسَبُهَا جَامِدَةً وَّ هِیَ تَمُرُّ مَرَّ السَّحَابِ
অর্থাৎ “তুমি পর্বতসমূহ দেখছো ও ওগুলোকে জমাট বলে ধারণা করছো, অথচ ওগুলো কিয়ামতের দিন মেঘের ন্যায় চলতে থাকবে।” (২৭:৮৮) অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ
وَ تَكُوْنُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوْشِ
অর্থাৎ “পর্বতসমূহ হবে ধূনিত রংগিন পশমের মত।" (১০১:৫)
এখানে আল্লাহ পাক বলেন যে, পর্বতগুলো হয়ে যাবে মরীচিকা। দর্শকরা মনে করবে যে, ওটা নিশ্চয়ই একটা কিছু, আসলে কিন্তু কিছুই নয়। শেষে ওটা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত ও ধ্বংস হয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَ یَسْئَلُوْنَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ یَنْسِفُهَا رَبِّیْ نَسْفًا ـ فَیَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا ـ لَّا تَرٰى فِیْهَا عِوَجًا وَّ لَاۤ اَمْتًا
অর্থাৎ “তারা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তুমি বলঃ আমার প্রতিপালক ওগুলোকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন। অতঃপর তিনি ওকে পরিণত করবেন মসৃণ সমতল ময়দানে। যাতে তুমি বক্রতা ও উচ্চতা দেবেন।” (২০:১০৫-১০৭) আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَ یَوْمَ نُسَیِّرُ الْجِبَالَ وَ تَرَى الْاَرْضَ بَارِزَةً
অর্থাৎ “স্মরণ কর, যেদিন আমি পৰ্বতকে করবো সঞ্চালিত এবং তুমি পৃথিবীকে দেখবে উন্মুক্ত প্রান্তর।” (১৮:৪৭)
আল্লাহ তা'আলার উক্তিঃ “নিশ্চয়ই জাহান্নাম ওঁৎ পেতে রয়েছে; (ওটা হবে) সীমালংঘনকারীদের প্রত্যাবর্তন স্থল।” যারা হলো উদ্ধত, নাফরমান ও রাসূল (সঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণকারী। জাহান্নামই তাদের প্রত্যাবর্তন ও অবস্থান স্থল। হযরত হাসান (রঃ) ও হযরত কাতাদাহ (রঃ)-এর অর্থ এও করেছেন যে, কোন ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যে পর্যন্ত না জাহান্নামের উপর দিয়ে গমন করবে। যদি আমল ভাল হয় তবে মুক্তি পেয়ে যাবে, আর যদি আমল খারাপ হয় তবে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। হযরত সুফইয়ান সাওরী (রঃ) বলেন যে, ওর উপর তিনটি পুল বা সেতু রয়েছে।
এপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ‘সেথায় তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে।
اَحْقَاب শব্দটি حَقْب শব্দের বহুবচন। দীর্ঘ যুগকে حَقْب বলা হয়। কেউ কেউ বলেন যে আশি বহরে এক حَقْب হয়। বারো মাসে হয় এক বছর। ত্রিশ দিনে এক মাস হয় এবং প্রতিটি দিন হাজার বছরের হবে। বহু সাহাবী এবং তাবেয়ী হতে এটা বর্ণিত আছে। কারো কারো মতে সত্তর বছরে এক حَقْب হয়। আবার কেউ কেউ বলেন যে, এক حَقْب এ হয় চল্লিশ বছর। বছরগুলোর প্রতিটি দিন হাজার বছরের। বাশীর ইবনে কাব (রঃ) তো বলেন যে, এক একটি দিন এরূপ বড় এবং এরূপ তিনশ বছরে এক হকব। একটি মারফু হাদীসে আছে যে, حَقْب-এর মাসগুলো ত্রিশ দিনের, বছরগুলো বারো মাসের, বছরগুলোর দিনের সংখ্যা তিনশ ষাট এবং প্রতিটি দিন দুনিয়ার গণনা হিসেবে এক হাজার বছরের হবে। (এ হাদীসটি মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে হযরত আবু উমামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। কিন্তু এ হাদীসটি অত্যন্ত মুনকার। এর একজন বর্ণনাকারী রয়েছে জাবির ইবনে যুরায়েরের পুত্র কাসেম এবং তার থেকে বর্ণনা করেছে জাফর ইবনে যুবায়ের। দুই জনই পরিত্যাজ্য)
অন্য একটি বিওয়াইয়াতে আছে যে, আবু মুসলিম ইবনে আ’লা (রঃ) সুলাইমান ভাইমী (রঃ) কে জিজ্ঞেস করেনঃ “জাহান্নাম হতে কেউ বের হবে।
কি?” সুলাইমান তাইমী (রঃ) উত্তরে বলেনঃ “আমি নাফে' (রঃ) হতে শুনেছি এবং তিনি শুনেছেন হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর কসম! জাহান্নামে সুদীর্ঘকাল অবস্থান ব্যতীত কেউই জাহান্নাম হতে বের হবে না। তারপর বলেনঃ “আশির উপর কিছু বেশী বছরে এক حَقْب হয়। প্রতি বছরে তিনশ ষাট দিন রয়েছে তোমরা গণনা করে থাকো।”
সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, জাহান্নামীরা জাহান্নামে সাতশ’ ‘হকব’ পর্যন্ত থাকবে। প্রতিটি হকবে’ সত্তর বছর রয়েছে, প্রতিটি বছরের দিনের সংখ্যা হলো তিনশ ষাট এবং প্রতিটি দিন দুনিয়ার হাজার বছরের সমান।
হযরত মুকাতিল ইবনে হিব্বান (রঃ) বলেন যে, এই আয়াতটি فَذُوْقُوْا فَلَنْ نَّزِیْدَكُمْ اِلَّا عَذَابًا-এই আয়াত দ্বারা মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে।
হযরত খালিদ ইবনে মা’দান (রঃ) বলেন যে, এই আয়াতটি এবং اِلَّا مَا شَاءَ رَبُّكَ (অর্থাৎ জাহান্নামীরা জাহান্নামে থাকবে আল্লাহ যতদিন ইচ্ছা করবেন) এই আয়াতটি একত্ববাদীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।
ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেনঃ ‘এও হতে পারে যে, لَابِثِيْنَ فِيْهَآ اَحْقَابًا সম্পর্কযুক্ত হবে حَمِيْمًا وَّ غَسَّاقًا এর সাথে অর্থাৎ ফুটন্ত পানি ও পুঁজ’ এই। একই শাস্তি যুগ যুগ ধরে হতে থাকবে। তারপর অন্য প্রকারের শাস্তি শুরু হবে। কিন্তু সঠিক কথা এই যে, জাহান্নামে অবস্থানকালের পরিসমাপ্তিই নেই।
হযরত হাসান (রঃ)-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ ‘আহকাব’ এর অর্থ হলো জাহান্নামে চিরকাল অবস্থান করা। কিন্তু حَقْب বলা হয় সত্তর বছরকে যার প্রতিটি দিন দুনিয়ার এক হাজার বছরের সমান। হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, আহকাব কখনো শেষ হবার নয়। এক হাকব শেষ হলে অন্য হাকব শুরু হয়ে যাবে। এই আহকাবের সঠিক সময়ের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা'আলারই রয়েছে। তবে মানুষকে শুধু এতোটুকু জানানো হয়েছে যে, আশি বছরে এক حَقْب হয়। এক বছরের মধ্যে রয়েছে তিনশ ষাট দিন এবং প্রতিটি দিন দুনিয়ার এক হাজার বছরের সমান।
এরপর মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ সেথায় তারা আস্বাদন করবে না শৈত্য, না কোন পানীয়। অর্থাৎ জাহান্নামীদেরকে এমন ঠাণ্ডা জিনিস দেয়া হবে না যার ফলে তাদের কলিজা ঠাণ্ডা হতে পারে এবং ঠাণ্ডা পানীয় পান করতে দেয়া হবে না। বরং এর পরিবর্তে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি ও রক্ত পুঁজ।
حَمِيْم এমন কঠিন পমকে বলা হয় যার পরে গরম বা উষ্ণতার আর কোন স্তর নেই। আর غَسَّاق বলে জাহান্নামীদের ক্ষতস্থান হতে নির্গত রক্ত পুঁজ ইত্যাদিকে। ই গরমের মুকাবিলায় এমন শৈত্য দেয়া হবে যে, তা স্বয়ং যেন একটা আবাৰ এবং তাতে থাকবে অসহনীয় দুর্গন্ধ। সূরায়ে সাদ’ -এর মধ্যে غَسَّاق- তাফসীর গত হয়েছে। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তির কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তা'আলা তার অশেষ রহমতের বদৌলতে আমাদেরকে তার সর্বপ্রকারের শাস্তি হতে রক্ষা করুন! আমীন!
কেউ কেউ بَرْد শব্দের অর্থ ঘুমও বলেছেন। আরব কবিদের কবিতায়ও برد শব্দটি ঘুমের অর্থে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।
এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ ‘এটাই উপযুক্ত প্রতিফল। এখানে তাদের দুষ্কৃতি লক্ষ্যণীয়। তাদের বিশ্বাস ছিল যে, হিসাব-নিকাশের কোন ক্ষণ আসবেই না। আল্লাহ যেসব দলীল প্রমাণ তাঁর নবীদের উপর অবতীর্ণ করেছেন, তারা এ সব কিছুকেই একেবারে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিতো।
كِذَّابًا শব্দটি মাসদার’ বা ক্রিয়ামূল। এই ওজনে আরো মাসদার রয়েছে।
আল্লাহ তাআলার উক্তিঃ সব কিছুই আমি সংরক্ষণ করেছি লিখিতভাবে। অs আমি আমার বান্দাদের সমস্ত আমল অবগত রয়েছি এবং ওগুলোকে লিখে রেখেছি। সবগুলোরই আমি প্রতিফল প্রদান করবো। ভাল কাজ হলে ভাল প্রতিফল এবং মন্দ কাজ হলে মন্দ প্রতিফল।
জাহান্নামীদেরকে বলা হবেঃ এখন তোমরা শান্তির স্বাদ গ্রহণ কর। এরকমই এবং এর চেয়েও নিকৃষ্ট শাস্তি বৃদ্ধি করা হবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বলেন যে, জাহান্নামীদের জন্যে এর চেয়ে কঠিন ও নৈরাশ্যজনক কোন আয়াত আর নেই। তাদের শাস্তি সদা বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। হযরত হাসান (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি হযরত অ হ আসলামী (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলামঃ জাহান্নামীদের জন্যে কঠিনতম আয়াত কোনটি? তিনি উত্তরে বললেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে فَذُوْقُوْا فَلَنْ نَّزِیْدَكُمْ ـ ـ ـ এ আয়াতটি পাঠ করার পর নিম্নের বাক্যটি বলতে শুনেছিঃ “কওমকে তাদের মহামহিমান্বিত আল্লাহর অবাধ্যাচরণ ধ্বংস করে দিয়েছে। (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (কঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এর একজন বর্ণনাকারী জাসর ইবনে ফারকাদ অত্যন্ত দুর্বল)