মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে তবে তাকে আশ্রয় দাও যাতে সে আল্লাহর বাণী শোনার সুযোগ পায়; তারপর তাকে তার নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দাও। এটা এজন্য করতে হবে যে, এরা এমন এক সম্প্রদায় যারা (ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে) অজ্ঞ।
English Sahih:
And if any one of the polytheists seeks your protection, then grant him protection so that he may hear the words of Allah [i.e., the Quran]. Then deliver him to his place of safety. That is because they are a people who do not know.
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
আর অংশীবাদীদের মধ্যে কেউ তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে, তুমি তাকে আশ্রয় দাও যাতে সে আল্লাহর বাণী শুনতে পায়। অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দাও।[১] তা এ জন্য যে, তারা অজ্ঞ লোক। [২]
[১] এই আয়াতে পূর্বোক্ত জঙ্গী কাফেরদের ব্যাপারে এক অনুমতি দেওয়া হয়েছে যে, যদি কোন কাফের আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাহলে তাকে আশ্রয় দাও। অর্থাৎ, তাকে নিজেদের হিফাযত ও নিরাপত্তায় রাখ; যাতে কোন মুসলিম তাকে হত্যা করতে না পারে। আর যাতে সে আল্লাহর বাণী শোনা ও ইসলাম সম্পর্কে জানার অবকাশ পায়। সম্ভবতঃ এইভাবে তার তাওবাহ ও ইসলাম কবুল করার পথ বেরিয়ে আসবে। অতঃপর যদি সে আল্লাহর বাণী শোনা সত্ত্বেও ইসলাম গ্রহণ না করে, তাহলে তাকে তার নিজ নিরাপদ জায়গায় পৌঁঁছে দাও। উদ্দেশ্য এই যে, নিজেদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত পালন করতে হবে; যতক্ষণ না সে নিজের গন্তব্যস্থলে নির্বিঘ্নে পৌঁছে যায়। যেহেতু তার প্রাণ রক্ষা করা তোমাদের দায়িত্ব।
[২] অর্থাৎ, আশ্রয়প্রার্থী (শরণার্থী)-দেরকে আশ্রয় দেওয়ার অনুমতি এই জন্য দেওয়া হয়েছে যে, এরা হল অজ্ঞ লোক। সম্ভবতঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা তাদের কানে এলে এবং মুসলিমদের আখলাক-চরিত্র দেখলে সে ইসলামের সত্যতার বিশ্বাসী হয়ে যাবে এবং ইসলাম গ্রহণ করে আখেরাতের আযাব থেকে বেঁচে যাবে। যেমন হুদাইবিয়ার চুক্তির পর বহু সংখ্যক কাফের নিরাপত্তা চেয়ে মদীনায় আসা-যাওয়া করত। যার ফলে মুসলিমদের চরিত্র ও আচরণ প্রত্যক্ষ করে ইসলাম বুঝা তাদের জন্য সহজ হল। অতঃপর তাদের মধ্যে বহু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করল।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর মুশরিকদের মধ্যে কেউ আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আপনি তাকে আশ্রয় দিন; যাতে সে আল্লাহ্র বাণী শুনতে পায় [১] তারপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌছিয়ে দিন [২]; কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা জানে না।
[১] আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোন বিধর্মী যদি ইসলামের সত্যতার দলীল জানতে চায়, তবে প্রমাণপঞ্জী সহকারে তার সামনে ইসলামকে পেশ করা মুসলিমদের কর্তব্য। অনুরূপভাবে কোন বিধমী ইসলামের সম্যক তথ্য ও তত্ত্বাবলী হাসিলের জন্যে যদি আমাদের কাছে আসে, তবে এর অনুমতি দান ও তার নিরাপত্তা বিধান আমাদের পক্ষে ওয়াজিব। তাকে বিব্রত করা বা তার ক্ষতিসাধন অবৈধ। তারপর তাকে তার নিরাপদ স্থান যেখান থেকে সে এসেছে সেখানে পৌছে দেয়াও মুসলিমের দায়িত্ব। [তাবারী] এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, কুরআন আল্লাহর কালাম, তিনি স্বয়ং এ বাণীর প্রবক্তা। সুতরাং কুরআন সৃষ্ট নয়, যেমনটি কোনও কোনও বিদআতপন্থীরা মনে করে থাকে।
[২] এ সহনশীলতা প্রদর্শনের কারণ হলো, কাফের মুশরিকদেরকে আল্লাহর কালাম শুনে এবং মুসলিমদের বাস্তব অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দেয়া। হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় মুশরিকগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ও রাসূলের প্রতি সাহাবাদের ভালবাসা দেখার পরে তাদের মধ্যে প্রচণ্ড ভাবান্তর সৃষ্টি হয়েছিল যা তাদের ঈমান গ্রহণে সহযোগিতা করেছিল। [ইবন কাসীর] তাছাড়া এমনও হতে পারে যে, তারা মূর্খতা বা অজ্ঞতা বশত; বিরোধিতায় লিপ্ত। আল্লাহর কালাম শোনার পর তাদের মধ্যে ভাবান্তর হবে এবং ইসলাম গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ হবে। [সা'দী]
3 Tafsir Bayaan Foundation
আর যদি মুশরিকদের কেউ তোমার কাছে আশ্রয় চায়, তাহলে তাকে আশ্রয় দাও, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনে, অতঃপর তাকে পৌঁছিয়ে দাও তার নিরাপদ স্থানে। তা এই জন্য যে, তারা এমন এক কওম, যারা জানে না।
4 Muhiuddin Khan
আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌছে দেবে। এটি এজন্যে যে এরা জ্ঞান রাখে না।
5 Zohurul Hoque
আর যদি মুশরিকদের কোনো একজন তোমার কাছে আশ্রয় চায় তবে তাকে আশ্রয় দাও যেন সে আল্লাহ্র বাণী শোনে, তারপর তাকে তার নিরাপদ যায়গায় পৌঁছে দিয়ো। এটি এই জন্য যে তারা হচ্ছে এমন এক সম্প্রদায় যারা জানে না।