৩৪-৩৬ নং আয়াতের তাফসীর:
মুশরিকদের বাতিল মা‘বূদের অপারগতা ও দুর্বলতা এবং তাদেরকে মা‘বূদ হিসেবে গুণান্বিত করা হয় তা যে উপযুক্ত নয় তার বিবরণ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে নাবী! তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর তোমাদের শরীকদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে, যে সৃষ্টির কোন কিছুর সূচনা করছে অতঃপর তা ফিরিয়ে আনতে পারবে? তাদের কোন জবাব থাকবে না, এসব কেউ করেনি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া। আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টির সূচনা করেছেন এবং পূনরায় তা সৃষ্টি করবেন। এতে তাঁর কোন অংশীদার লাগবে না, কোন সাহায্যকারী লাগবে না, বরং তিনি প্রথমবার যেমন একাই সৃষ্টি করেছেন শেষবারে তিনিই একা সৃষ্টি করবেন। সুতরাং এ সত্য মা‘বূদের ইবাদত করা থেকে কোন্ দিকে ফিরে যাচ্ছো?
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِه۪ٓ اٰلِهَةً لَّا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَّهُمْ يُخْلَقُوْنَ وَلَا يَمْلِكُوْنَ لِأَنْفُسِهِمْ ضَرًّا وَّلَا نَفْعًا وَّلَا يَمْلِكُوْنَ مَوْتًا وَّلَا حَيٰوةً وَّلَا نُشُوْرًا)
“আর তারা তাঁর পরিবর্তে মা‘বূদরূপে গ্রহণ করেছে অন্যদেরকে, যারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট এবং তারা নিজেদের অপকার অথবা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না এবং মৃত্যু, জীবন ও পুরুত্থানের ওপরও কোন ক্ষমতা রাখে না।” (সূরা ফুরকান ২৫:৩)
এ ছাড়াও সূরা রূমের ৪০ নং আয়াতে, সূরা ফাতিরের ৩ নং আয়াতে, সূরা নাহলের ১৭ নং আয়াতে সূরা আনকাবুতের ১৭ নং আয়াতে এ সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে।
পরের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের কাছে আরো সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরছেন, হে মুশরিকরা! তোমাদের এমন কোন শরীক আছে কি, যে সত্য পথের সন্ধান দিতে পারে? তাদের কাছে এমন কোন কিতাব বা পথ প্রদর্শক আছে কি? কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা সঠিক পথের সন্ধান দিয়ে থাকেন। তিনি মানুষদেরকে সঠিক পথের দিশা দিতে যুগে যুগে নাবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং কিতাব দিয়েছেন। সুতরাং কে অনুসরণের যোগ্য? যিনি সঠিক পথের দিশা দিতে পারেন তিনি, নাকি যাকে পথ না দেখালে পথ দেখে না সে? আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِذْ قَالَ لِأَبِيْهِ يٰٓأَبَتِ لِمَ تَعْبُدُ مَا لَا يَسْمَعُ وَلَا يُبْصِرُ وَلَا يُغْنِيْ عَنْكَ شَيْئًا)
যখন তার পিতাকে বলেছিল: হে আমার পিতা! তুমি কেন এমন বস্তুর ইবাদত কর যা শোনে না দেখে না আর তোমার কোন কাজে আসে না। (সূরা মারইয়াম ১৯:৪২)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(قَالَ اَتَعْبُدُوْنَ مَا تَنْحِتُوْنَﮮﺫوَاللہُ خَلَقَکُمْ وَمَا تَعْمَلُوْنَﮯ)
“সে (ইবরাহীম) বলল: তোমরা কি তাদেরই উপাসনা কর, যাদেরকে তোমরা নিজেরাই নির্মাণ কর? অথচ আল্লাহ তা‘আলাই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমরা যা কর তা-ও।” (সূরা সফফাত ৩৭:৯৫-৯৬)
অতএব সতর্ক হওয়া উচিত কিভাবে আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে অন্যের ইবাদত করছো এবং কিভাবে আল্লাহ তা‘আলার সাথে শরীক স্থাপন করছো। এরূপ ফায়সালা কখনো ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না।
মূলত যারা মুশরিক তাদের অধিকাংশই ধারণার অনুসরণ করে থাকে। তাদের মা‘বূদদের ব্যাপারে তাদের ধারণা এরা আল্লাহ তা‘আলার ওলী, এরা অনেক কিছু করতে পারে, এদের কাছে চাইলে আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে এনে দিতে পারবে। আমরা যে পাপ করছি তাতে আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাইলে আল্লাহ তা‘আলা নাও দিতে পারেন। সুতরাং তাদের নৈকট্য অর্জন করার জন্য মাঝে মাঝে তাদের কাছে বিভিন্ন কুরবানী, হাদীয়া ও দান এবং উপহার নিয়ে যাওয়া ভাল কাজ। এ ধারণা করে কবরে শায়িত ওলীর কবরে টাকা, কবরে সিজদা ও চুমা খাওয়া ইত্যাদি কাজ করে থাকে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, সত্যের কাছে ধারণা কোন উপকারে আসতে পারে না। সত্য হল কুরআন, সত্য হল হাদীস। কুরআন ও হাদীসে আল্লাহ তা‘আলা সঠিক পথ বর্ণনা করে দিয়েছেন। সুতরাং কুরআন ও সুন্নাহ বাদ দিয়ে নিজের ধারণা ও খেয়াল-খুশি মতো চললে কোন দিন সফলকাম হওয়া যাবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কেউ কিছু সৃষ্টি করেনি এবং সৃষ্টি করতেও পারবে না।
২. আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া বাতিল মা‘বূদেরা কোন কিছুর ক্ষমতা রাখে না।
৩. ধারণাপ্রসূত আমল অধিকাংশই মিথ্যা।
৪. আল্লাহ তা‘আলাকে তার সৃষ্টির সাথে সমান মনে করা যাবে না।