৩৭-৪১ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে কুরআনুল কারীমের অলৌকিকত্ব তুলে ধরা হয়েছে। তা হল কুরআন আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো রচিত কিতাব নয় এবং তা কারো পক্ষে সম্ভবও নয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا تَنَزَّلَتْ بِهِ الشَّيٰطِيْنُ ﰡ ﺆ وَمَا يَنْۭـبَغِيْ لَهُمْ وَمَا يَسْتَطِيْعُوْنَ)
“শয়তানরা (এ কুরআন) তাসহ অবতীর্ণ হয়নি। তারা এ কাজের যোগ্য নয় এবং তারা এটার সামর্থ্যও রাখে না।” (সূরা শুআরা ২৬:২১০-২১১)
সারা পৃথিবীর মানুষ একত্র হলেও এ কুরআনের ন্যায় কুরআন বানিয়ে আনতে পারবে না। এমনকি একটি সূরা বা আয়াতও আনতে সক্ষম নয়। যেমন
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَإِنْ كُنْتُمْ فِيْ رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلٰي عَبْدِنَا فَأْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّنْ مِّثْلِه۪)
“এবং আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে তোমরা যদি সন্দিহান হও, তবে তার সমতুল্য একটি ‘সূরা’ তৈরি করে নিয়ে এসো।” (সূরা বাক্বারাহ ২:২৩)
এ সমস্ত দলিলগুলো প্রমাণ করছে যে, এ কুরআন মিথ্যা রচিত নয়; বরং সেই সত্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, যিনি পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহ অবতীর্ণ করেছেন। এ কিতাবে হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধ ইত্যাদির বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এই কিতাবের শিক্ষাতে বর্ণিত ইতিহাস ও কাহিনীতে এবং ভবিষ্যতে ঘটিতব্য ঘটনাবলীতে প্রমাণিত হয় যে, এই কিতাব আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(تَنْزِيْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعٰلَمِيْنَ)
“এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ।” (সূরা ওয়াকিয়াহ ৫৬:৮০)
এ সকল তথ্য ও প্রমাণাদির পরেও যদি মনে হয় যে, এই কিতাব মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রচিত গ্রন্থ, তবে তিনিও তোমাদের মত একজন মানুষ, তোমাদের ভাষাও তার মতই আরবী, তিনি একা। তোমরা যদি নিজেদের দাবীতে সত্যবাদী হও, তাহলে পৃথিবীর সকল সাহিত্যিক, ভাষাবিদ এবং শিক্ষিত জ্ঞানীদেরকে একত্রিত কর এবং অনুরূপ কিছু তৈরী করে নিয়ে এস। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(قُلْ لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلٰٓي أَنْ يَّأْتُوْا بِمِثْلِ هٰذَا الْقُرْاٰنِ لَا يَأْتُوْنَ بِمِثْلِه۪ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيْرًا)
“বল: ‘যদি কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনয়নের জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং যদি তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এটার অনুরূপ আনয়ন করতে পারবে না।” (সূরা ইসরা ১৭:৮৮)
এই চ্যালেঞ্জ আজও বিদ্যমান যার উত্তর পাওয়া যায়নি। এতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, এ কুরআন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত।
(بَلْ كَذَّبُوا بِمَا لَمْ)
কাফির ও মুশরিকদের মধ্যে কিছু লোক তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা না করেই তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে শুরু করেছে। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে কোনই দলিল নিয়ে আসতে পারেনি। এটা ছিল পূর্ববর্তী লোকদেরও অভ্যাস। তারা তার ব্যাখ্যা জানত না। যেমন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(هَلْ يَنْظُرُوْنَ إِلَّا تَأْوِيْلَه۫ ط يَوْمَ يَأْتِيْ تَأْوِيْلُه۫ يَقُوْلُ الَّذِيْنَ نَسُوْهُ مِنْ قَبْلُ قَدْ جَا۬ءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّ ج فَهَلْ لَّنَا مِنْ شُفَعَا۬ءَ فَيَشْفَعُوْا لَنَا)
“তারা কি শুধু তার পরিণামের প্রতীক্ষা করছে যেদিন তার পরিণাম প্রকাশ পাবে সেদিন যারা পূর্বে তার কথা ভুলে গিয়েছিল তারা বলবে, ‘আমাদের প্রতিপালকের রাসূলগণ তো সত্যবাণীই নিয়ে এসেছিল; আমাদের কি এমন কোন সুপারিশকারী আছে, যে আমাদের জন্য সুপারিশ করবে?” (সূরা আ‘রাফ ৭:৫৩)
সুতরাং তারা যদি এ কথাতেও বিশ্বাস না করে এবং তোমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তাহলে তাদেরকে বলে দাও: তোমরা তোমাদের আমল কর আর আমি আমার আমল করি।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(قُلْ یٰٓاَیُّھَا الْکٰفِرُوْنَﭐﺫ لَآ اَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَﭑﺫ وَلَآ اَنْتُمْ عٰبِدُوْنَ مَآ اَعْبُدُﭒﺆ وَلَآ اَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدْتُّمْﭓﺫوَلَآ اَنْتُمْ عٰبِدُوْنَ مَآ اَعْبُدُﭔﺚ لَکُمْ دِیْنُکُمْ وَلِیَ دِیْنِﭕﺟ)
“বল: হে কাফিরগণ! আমি তার ইবাদত করি না তোমরা যার ইবাদত কর। আর তোমরা তার ইবাদতকারী নও যার ইবাদত আমি করি। এবং আমি ইবাদতকারী নই তার যার ইবাদত তোমরা কর। আর তোমরা (তার) ইবাদতকারী নও যার ইবাদত আমি করি। তোমাদের দীন তোমাদের জন্য আর আমার দীন আমার জন্য।” (সূরা কাফিরুন ১০৯:১-৬)
আর আমি তোমাদের এ সমস্ত আমল থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(إِنَّا بُرَاٰ۬ءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ)
“তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর তার সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।” (সূরা মুমতাহিনা ৬০:৪)
সুতরাং এ কথা বলার কোন সুযোগ নেই যে, কুরআন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রচনা করেছেন, বরং কুরআন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ কিতাব। মক্কার মুশরিকরাও অনেক চেষ্টা করেছিল এ কুরআনের আয়াতের মত একটি আয়াত রচনা করতে কিন্তু তারা তা সক্ষম হয়নি।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ কিতাব।
২. এই কুরআনে যা কিছু রয়েছে সবকিছুই সত্য। এতে কোন মিথ্যা কাহিনী বর্ণনা করা হয়নি।
৩. এতে হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধ সকল জিনিস বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
৪. যারা একে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে তাদের কঠিন শাস্তি হবে।
৫. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কারো আমলের জন্য জিম্মাদারী হবেন না।
৬. মানুষের পক্ষে এরূপ কুরআন নিয়ে আসা অর্থাৎ রচনা করা সম্ভব নয়।