৬৮-৭০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা এখানে ঐ সমস্ত মুশরিকদের কথা খণ্ডন করছেন যারা বলে যে, আল্লাহ তা‘আলার সন্তান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের কথার জবাবে প্রথমেই নিজের পবিত্রতা বর্ণনা করে বলছেন, তারা যে কথা বলে তা থেকে তিনি পবিত্র। তারপর তিনি বলছেন, তিনি অমুখাপেক্ষী, কারো সাহায্য সহযোগিতার প্রয়োজন হয় না। যদি তিনি অমুখাপেক্ষী হন তাহলে তার সন্তানের কী প্রয়োজন? তারপর তিনি বলছেন, তোমরা যে আল্লাহ তা‘আলার জন্য সন্তান সাব্যস্ত করছ; আকাশ ও জমিনে যারা আছে সবাই তো আল্লাহ তা‘আলার কৃর্তত্ব, নেতৃত্ব ও পরিচালনাধীন। সবাই আল্লাহ তা‘আলার মাখলুক ও দাস। কিয়ামতের দিন সবই দাস হয়ে আল্লাহ তা‘আলার সামনে উপস্থিত হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنْ كُلُّ مَنْ فِي السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ إِلَّآ اٰتِي الرَّحْمٰنِ عَبْدًا)
“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের নিকট বান্দারূপে উপস্থিত হবে না।” (সূরা মারইয়াম ১৯:৯৩)
তাহলে কেউ আল্লাহ তা‘আলার সন্তান হবে বা থাকবে এ সুযোগটা কোথায়? কারণ সন্তান হল পিতার জাতের অংশ, সে মাখলুক হবে না এবং দাসও হবে না। সুতরাং কেউ আল্লাহ তা‘আলার সন্তান হতে পারে না।
এরপরেও আল্লাহ তা‘আলা বললেন: তোমরা যে বললে আল্লাহ তা‘আলার সন্তান রয়েছে এ ব্যাপারে কি কোন প্রমাণ আছে? যদি প্রমাণ থাকে তাহলে নিয়ে আসো? কিন্তু কোন প্রমাণ দেখাতে পারবে না। সুতরাং তোমরা যা কিছু বলছ তার সবই আল্লাহ তা‘আলার ওপর মিথ্যারোপ ছাড়া কিছুই নয়। তোমাদের এসব মিথ্যার কারণে আকাশ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(تَكَادُ السَّمٰوٰتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنْشَقُّ الْأَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ هَدًّا - أَنْ دَعَوْا لِلرَّحْمٰنِ وَلَدًا)
“যাতে আকাশমণ্ডলী বিদীর্ণ হবে, পৃথিবী খণ্ড-বিখণ্ড হবে ও পর্বতগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পতিত হবে, যেহেতু তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে।” (সূরা মারইয়াম ১৯:৯০-৯১)
সুতরাং হে নাবী! আপনি বলে দিন এসব মিথ্যুকরা যারা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি অপবাদ দিয়ে থাকে তারা কোন দিন সফলকাম হবে না। এখানে সফলকাম দ্বারা আখিরাতের সফলকামকে বুঝানো হয়েছে। যদিও কিছু কিছু মানুষ ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণ করে থাকে যে, যারা অস্বীকারকারী, তারা দুনিয়াতে মুসলিমদের তুলনায় বেশি সুখ-সম্ভোগে বসবাস করছে। কিন্তু এখানে দুনিয়ার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে বুঝানো হয়নি; বরং আখিরাতের সফলতাকে বুঝানো হয়েছে যে, তারা আখিরাতে কঠিন শাস্তি ভোগ করবে। যা আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী আয়াতে বলেন যে, দুনিয়ার সুখ আখিরাতের তুলনায় খুবই নগণ্য যা গণনা করার নয়। তারা মৃত্যুর পর আমার নিকট ফিরে আসবে, আমি তাদেরকে তাদের অপরাধের কারণে কঠিন শাস্তি আস্বাদন করাব।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলার কোন সন্তান নেই।
২. যারা আল্লাহ তা‘আলার সন্তান দাবী করবে তারা র্শিক করবে।
৩. সন্তান বা অন্য কোন সহযোগী প্রয়োজন হয় তার যিনি অন্যের মুখাপেক্ষী, আল্লাহ তা‘আলা তো কারো মুখাপেক্ষী নন।
৪. অস্বীকারকারীরা আখিরাতে সফলকাম হবে না।
৫. পার্থিব জীবন আখিরাতের তুলনায় খুবই নগণ্য।