বলুন, ‘যদি তাঁর সাথে আরও ইলাহ থাকতো যেমন তারা বলে, তবে তারা ‘আরশ-অধিপতির (নৈকট্য লাভের) উপায় খুঁজে বেড়াত [১]। ’
[১] এ আয়াতের দু'টি অর্থ করা হয়ে থাকেঃ
এক, যদি আল্লাহর সাথে আরো অনেক ইলাহ থাকত। তবে তারা আরাশের অধিপতির প্রতিদ্বন্দ্বিতীয় লিপ্ত হতো। যেমনিভাবে দুনিয়ার রাজা-বাদশারা করে থাকে। [ফাতহুল কাদীর] এ অর্থট ইমাম শাওকানী প্রাধান্য দিয়েছেন।
দুই, আয়াতের আরেকটি অর্থ হলো, যদি আল্লাহর সাথে আরও ইলাহ থাকত, তবে তারা তাদের অক্ষমতা জেনে আরাশের অধিপতি সত্যিকারের ইলাহ আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় ব্যস্ত হয়ে পড়ত। [ইবন কাসীর] এ শেষোক্ত অর্থটিই সঠিক। ইমাম ইবন কাসীর এটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এটি শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা ও ইবনুল কাইয়্যেমও প্রাধান্য দিয়েছেন। দেখুন, আল-ফাতাওয়া আল-হামাওয়িয়্যাহ; মাজমু ফাতাওয়া; ১৬/১২২-১২৪, ৫৭৭; ইবনুল কাইয়্যেম, আল-জাওয়াবুল কাফী; ২০৩; আস-সাওয়া’য়িকুল মুরসালাহ; ২/৪৬২] কারণ প্রথমত, এখানে اِلٰي ذِي الْعَرْشِ আরাশের অধিপতির দিকে বলা হয়েছে,
عَلٰي ذِي الْعَرْشِ
আরশের অধিপতির বিপক্ষে বলা হয়নি। আর আরবী ভাষায় إلي শব্দটি নৈকট্যের অর্থেই ব্যবহার হয়। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
[সূরা আল-মায়িদাহঃ ৩৫] পক্ষান্তরে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য - শব্দটি ব্যবহার হয়। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে,
ۖ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا ۗ
[সূরা আন-নিসাঃ ৩৪] দ্বিতীয়ত, এ অর্থের সমর্থনে এ সূরারই ৫৭ নং আয়াত প্রমাণবহ। সেখানে বলা হয়েছে, “তারা যাদেরকে ডাকে তারাই তো তাদের রবের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে কত নিকটতর হতে পারে, তার দয়া প্রত্যাশা করে ও তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয়ই আপনার রবের শাস্তি ভয়াবহ।” এতে করে বুঝা গেল যে, এখানে এ আয়াতের অর্থ হবে এই যে, যদি তারা যেভাবে বলে সেভাবে সেখানে আরো ইলাহ থাকত। তবে সে বানানো ইলাহগুলো নিজেদের অক্ষমতা সম্যক বুঝতে পেরে প্রকৃত ইলাহ রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তা'আলার প্রতি নৈকট্য লাভের আশায় ধাবিত হতো। এ অর্থের সমর্থনে তৃতীয় আরেকটি প্রমাণ আমরা পাই এ কথা থেকেও যে কাফেরগণ কখনও এ কথা দাবী করেনি যে, তাদের ইলাহাগণ আল্লাহ তা'আলার প্রতিদ্বন্দ্বী বরং তারা সবসময় বলে আসছে যে, “আমরা তো কেবল তাদেরকে আল্লাহর কাছে নৈকট্য লাভে সুপারিশকারী হিসেবেই ইবাদত করে থাকি”। [সূরা আয-যুমারঃ ৩] এখানেও আয়াতে বলা হয়েছে, “যেমনটি তারা বলে”। আর তারা কখনো তাদের মা’বুদাদেরকে আল্লাহর প্রতিদ্বন্দ্বী বলে ঘোষণা করেনি। এ দ্বিতীয় তাফসীরটি প্রখ্যাত তাফসীরবিদ কাতাদা রাহে মাহুল্লাহ থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে।