১৯-২০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা বলছেনঃ “যেমনভাবে আমি তাদেরকে আমার পূর্ণ ক্ষমতার মাধ্যমে নিদ্রিত করে ছিলাম, তেমনিভাবেই ঐ ক্ষমতার বলেই তাদেরকে জাগ্রত করলাম। তারা তিনশ’ ন বছর ধরে ঘুমিয়েছিল। কিন্তু যখন জেগে ওঠে, তখন ঠিক ঐরূপই ছিল যেইরূপ ছিল ঘুমাবার সময়। দেহ, চুল, চামড়া সবই ঐ আসল অবস্থাতেই ছিল, যেমন শোবার সময় ছিল। মোট কথা, তাদের মধ্যে কোন প্রকারেরই পার্থক্য সৃষ্টি হয় নাই।” তারা পরস্পর বলাবলি করেঃ “আচ্ছা বলতো, আমরা কতকাল ঘুমিয়ে ছিলাম?” উত্তরে বলা হয়ঃ “একদিন বা একদিনেরও কিছু কম। কেননা, সকালে তাঁরা ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন, আর যখন জেগে ওঠেন তখন ছিল সন্ধ্যাকাল। এজন্যে তাঁদের ধারণা এটাই হয়। তারপর তাদের নিজেদের মনে ধারণা জন্মে যে, এরূপ তো নয়। এজন্যে তারা আর মস্তিষ্ক চালনা না করে মীমাংসিত কথা বলে দেন যে, এর সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তাআলারই আছে। তাদের ক্ষুধার উদ্রেক হয়েছিল বলে তারা বাজার হতে সওদা আনয়নের পরামর্শ করেন। তাঁদের কাছে টাকা পয়সা ছিল। পথে কিছু খরচ করেছিলেন এবং কিছু তাদের সাথেই ছিল। তারা একে অপরকে বললেনঃ “কাউকে মূল্য দিয়ে এই শহরে পাঠিয়ে দাও। সেখান থেকে সে কিছু উত্তম খাদ্য ক্রয় করে আনুক অর্থাৎ উত্তম ও পবিত্র জিনিস।” যেমন অন্য এক আয়াতে রয়েছেঃ وَ لَوْ لَا فَضْلُ اللّٰهِ عَلَیْكُمْ وَ رَحْمَتُهٗ مَا زَكٰى مِنْكُمْ مِّنْ اَحَدٍ اَبَدًا অর্থাৎ “যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা না হতো তবে তোমাদের কেউই পাক হতো না।" (২৪:২১) আর এক আয়াতে আছেঃ قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى অর্থাৎ “সফলকাম হয়েছে ঐ ব্যক্তি, যে পবিত্রতা লাভ করছে।" (৮৭ঃ১৪). যাকাতকে যাকাত এ কারণেই বলা হয়ে থাকে যে, ওটা মালকে পাক পবিত্র করে থাকে। দ্বিতীয় উক্তি এই যে, এর দ্বারা অনেক খাদ্য আনয়ন বুঝানো। হয়েছে। যেমন শস্যক্ষেত্র বেড়ে যাওয়ার সময় আরববাসী বলে থাকে? زَكَا الزَّرْعُ অর্থাৎ শস্যক্ষেত্র বৃদ্ধি পেয়েছে। কবির কবিতাতেও রয়েছেঃ
قَبَاءِ لُنَا سَبْعٌ وَّاَنْتُمْ ثَلَاثَةٌ ـ وَالسَّبْعُ اَزْكٰى مِنْ ثَلَاثٍ وَّاَطْيَبُ
অর্থাৎ “আমাদের গোত্র সাত এবং তোমরা তিন, আর সাত তিন হতে বেশী ও উত্তম।” সুতরাং এখানেও اَزْكٰى শব্দটি ‘বেশী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই সঠিকতর। কেননা, গুহাবাসীদের এর দ্বারা। উদ্দেশ্য ছিল হালাল ও পবিত্র জিনিস আনয়ন। তা বেশী হোক, আর কমই হোক। তাঁরা বলেনঃ “খাদ্য আনয়নকারীকে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যতদূর সম্ব জনগণের দৃষ্টি এড়িয়ে চলতে হবে, যাতে কেউ আমাদের খবর জানতে না পারে। যদি তারা কোন রকমে জেনে ফেলে, তবে মঙ্গলের কোনই আশা নেই। দাইয়ান্স বাদশাহর লোকেরা যদি আমাদের এই জায়গার খবর পেয়ে যায় তবে তারা আমাদেরকে নানা প্রকারের কঠিন শাস্তি দেবে। অথবা হয়তো আমরা তাদের ভয়ে এই সত্য দ্বীনকে ছেড়ে দিয়ে পুনরায় কাফির হয়ে যাবে। অথবা তারা হয়তো আমাদেরকে একেবারে হত্যা করেই ফেলবে। যদি আমরা তাদের ধর্মে ফিরে যাই, তবে আমাদের মুক্তির কোন আশা নেই। আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের পরিত্রাণ লাভ অসম্ব। হয়ে পড়বে।”