মারইয়াম আয়াত ৮৭
لَا يَمْلِكُوْنَ الشَّفَاعَةَ اِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمٰنِ عَهْدًا ۘ ( مريم: ٨٧ )
Laa yamlikoonash shafaa'ta illaa manittakhaza 'indar Rahmaani 'ahdaa (Maryam ১৯:৮৭)
English Sahih:
None will have [power of] intercession except he who had taken from the Most Merciful a covenant. (Maryam [19] : 87)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
দয়াময়ের নিকট যে প্রতিশ্রুতি লাভ করেছে সে ছাড়া অন্য কারো সুপারিশ করার অধিকার থাকবে না। (মারইয়াম [১৯] : ৮৭)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
যে পরম দয়াময়ের নিকট প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে, সে ছাড়া অন্য কারো সুপারিশ করবার ক্ষমতা থাকবে না। [১]
[১] প্রতিশ্রুতির অর্থঃ ঈমান ও আল্লাহর ভয়। অর্থাৎ ঈমানদার ও আল্লাহ-ভীরু বান্দাদের মধ্যে যাঁদেরকে আল্লাহ সুপারিশ করার অনুমতি প্রদান করবেন তাঁরা ব্যতীত আর কেউ সুপারিশ করার অনুমতিই পাবে না।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
যারা দয়াময়ের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছে , তারা ছাড়া কেউ সুপারিশ করার মালিক হবে না [১]।
[১] عهد অর্থ অঙ্গীকার আদায় করা। বলা হয়ে থাকে, বাদশাহ এ অঙ্গীকার নামা অমুকের জন্য দিয়েছেন। [ফাতহুল কাদীর] যেটাকে সহজ ভাষায় পরোয়ানা বলা যেতে পারে। অর্থাৎ যে পরোয়ানা হাসিল করে নিয়েছে তার পক্ষেই সুপারিশ হবে এবং যে পরোয়ানা পেয়েছে সে-ই সুপারিশ করতে পারবে। আয়াতের শব্দগুলো দু’দিকেই সমানভাবে আলোকপাত করে। সুপারিশ কেবলমাত্র তার পক্ষেই হতে পারবে যে রহমান থেকে পরোয়ানা হাসিল করে নিয়েছে, একথার অর্থ হচ্ছে এই যে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ নেই। এ সাক্ষ্য দিয়েছে এবং সেটার হক আদায় করেছে। ইবন আব্বাস বলেন, পরোয়ানা হচ্ছে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আর আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে কোন প্রকার শক্তি-সামৰ্থ ও উপায় তালাশ না করা, আল্লাহ ব্যতীত কারও কাছে। আশা না করা। [ইবন কাসীর]
3 Tafsir Bayaan Foundation
যারা পরম করুণাময়ের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছে তারা ছাড়া অন্য কেউ সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখবে না।
4 Muhiuddin Khan
যে দয়াময় আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে, সে ব্যতীত আর কেউ সুপারিশ করার অধিকারী হবে না।
5 Zohurul Hoque
পরম করুণাময়ের নিকট থেকে যে কোনো কড়ার লাভ করেছে সে ব্যতীত কারোর সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না।
6 Mufti Taqi Usmani
মানুষ কারও জন্য সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখবে না, তারা ছাড়া, যারা দয়াময় (আল্লাহ)-এর নিকট থেকে অনুমতি লাভ করেছে।
7 Mujibur Rahman
যে দয়াময়ের নিকট প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে সে ব্যতীত অন্য কারও সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবেনা।
8 Tafsir Fathul Mazid
৮১-৮৭ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতগুলোতে বলা হচ্ছে, কাফির-মুশিরকরা আল্লাহ তা‘আলাকে ব্যতীত যাদের উপাসনা করে এ মনে করে যে, ঐ মা‘বূদরা তাদের সাহায্য করবে। যেমন সূরা যুমারের ৩ নং আয়াত ও সূরা ইউনুসের ১৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে তাদের এ ভ্রান্ত ধারণার জবাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা সাহায্য করার পরিবর্তে তাদের ইবাদত অস্বীকার করবে এবং তারা তাদের শত্র“ হয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَّدْعُوْا مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ مَنْ لَّا يَسْتَجِيْبُ لَه۫ٓ إِلٰي يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَا۬ئِهِمْ غٰفِلُوْنَ، وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوْا لَهُمْ أَعْدَا۬ءً وَّكَانُوْا بِعِبَادَتِهِمْ كٰفِرِيْنَ)
“সে ব্যক্তির চেয়ে বেশি গোমরাহ আর কে হতে পারে, যে আল্ল¬াহকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে ডাকে, যে কিয়ামতের দিন পর্যন্তও সাড়া দেবে না। বরং তারা তাদের আহ্বান সম্পর্কে গাফেল। (হাশরের ময়দানে) যখন সব মানুষকে একত্রিত করা হবে তখন তারা যাদেরকে ডাকত তারা তাদের দুশমন হয়ে যাবে এবং তাদের ইবাদতকে অস্বীকার করবে ।”(সূরা আহকাফ ৪৬:৫-৬)
আর আল্লাহ তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জাহান্নামের শাস্তি। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(نُمَتِّعُهُمْ قَلِيْلًا ثُمَّ نَضْطَرُّهُمْ إِلٰي عَذَابٍ غَلِيْظٍ)
“আমি অল্প সময়ের জন্য তাদেরকে সুখ-সম্ভোগ দেব, পুনরায় তাদেরকে বাধ্য করব কঠিন শাস্তি ভোগ করতে।” (সূরা লুক্বমান ৩১:২৪)
সেদিন কেউ কারো কোন উপকার করতে পারবে না এবং কেউ কারো জন্য কোন সুপারিশও করতে পারবে না। তবে আল্লাহ তা‘আলা যাকে অনুমতি দান করবেন সে ব্যতীত। সুতরাং সেদিন কোন ভ্রান্ত মা‘বূদ আল্লাহ তা‘আলার দরবারে কোন কিছুই করতে পারবে না। বরং তারা আরো ঐ ভক্তদের কথা তথায় অস্বীকার করবে। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত দুনিয়াতে ব্যক্তিপূজা পরিহার করে, কেবল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দেখানো পদ্ধতিতে আল্লাহ তা‘আলার জন্য আমল করা। কোন ইমাম, ওলী-আওলীয়ার পথ নির্দেশ অনুসরণ করে ইবাদত করা যাবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সেদিন কেউ কারো কোন উপকার করতে পারবে না।
২. শয়তান মানুষের মন্দকর্ম সুন্দর করে দেখায় যার ফলে মানুষ ঐ মন্দ কর্মটিকে ভাল মনে করে করে থাকে। কিন্তু সে বুঝে না।
৩. মুত্তাকীদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তথায় সম্মানের সাথে উপস্থিত করবেন।
৪. জাহান্নামীরা সেখানে পিপাসার্ত হবে।
৫. তথায় কেউ আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি ছাড়া কারো জন্য কোন শাফায়াত করতে পারবে না।
9 Fozlur Rahman
তারা কেউ (কারো জন্য) সুপারিশ করার অধিকারী হবে না; কেবল সে ছাড়া যে করুণাময়ের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে।
10 Mokhtasar Bangla
৮৭. এ কাফিররা তাদের কারো জন্য সুপরিশের মালিক হবে না। তবে যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনে তাঁর সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে তার কথা ভিন্ন।
11 Tafsir Ibn Kathir
৮৫-৮৭ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা তার সংযমী বন্ধু বান্দাদের সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, যারা আল্লাহর কথার উপর ঈমান এনেছে, নবীদের সত্যতা স্বীকার করেছে,
আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলেছে, পাপকার্য থেকে দূরে রয়েছে এবং অন্তরে আল্লাহর ভয় রেখেছে তারা আল্লাহর সামনে সম্মানিত মেহমানরূপে। হাজির হবে। তারা জ্যোতির্ময় উষ্ট্রীয় সওয়ারীর উপর আরোহণ করে আসবে এবং আল্লাহর অতিথিশালায় সম্মানের সাথে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে আল্লাহর অবাধ্য, পাপী ও রাসূলদের শত্রুদেরকে উল্টো মুখে টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামের পার্শ্বে নিয়ে আসা হবে। ঐ সময় সে পিপাসায় কাতর হয়ে থাকবে। এখন বলতো, মর্যাদা সম্পন্ন কে এবং উত্তম সঙ্গী বিশিষ্ট কে? মুমিন তার কবর। হতে মুখ উঠিয়ে দেখবে যে, তার সামনে একজন সুদর্শন লোক পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন ও পবিত্র পোষাক পরিহিত হয়ে এবং সুগন্ধ ছড়িয়ে উজ্জ্বল চেহারা নিয়ে পঁড়িয়ে রয়েছে। সে জিজ্ঞেস করবেঃ “আপনি কে?” উত্তরে সে বলবেঃ “আমাকে চিনতে পারছেন না? আমি তো আপনার সৎ আমলেরই দেহাকৃতি। আপনার আমল ছিল জ্যোতির্ময়, সুন্দর ও সুগন্ধযুক্ত। আসুন, এখন আপনাকে আমি আমার কাঁধে উঠিয়ে সসম্মানে হাশরের মাঠে নিয়ে যাবো। কেননা, পার্থিব জীবনে আমি আপনার উপর সওয়ার হয়ে ছিলাম।” সুতরাং মু'মিন আল্লাহ তাআলার নিকট সওয়ারীর উপর সওয়ার হয়ে যাবে। তার সওয়ারীর জন্যে উজ্জ্বল উটও প্রস্তুত থাকবে। এসব মুমিন আনন্দের সাথে ও সসম্মানে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “প্রতিনিধিদের জন্যে এই নিয়মই নেই যে, তারা পদব্রজে আসবে। এই খোদাভীরু লোকেরা এমন জ্যোতির্ময় উস্ত্রীর উপর সওয়ার হয়ে আসবে যে, সৃষ্টজীবের চোখে এর চেয়ে সুন্দর ও উত্তম সওয়ারী কখনও পড়ে নাই। ওগুলির জিন হবে সোনার। এই লোকগুলি জান্নাতের দরজা পর্যন্ত এই সওয়ারীগুলিরই উপর আরোহণ করে পৌঁছবে। ঐ উষ্ট্রীগুলির লাগাম হবে পোকরাজ পান্নার। (এটা একটি মারফু রিওয়াইয়াত। কিন্তু হাদীসটি খুবই গরীব বা দুর্বল)
হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “একদা আমি রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট বসে ছিলাম। তার সামনে আমি یَوْمَ نَحْشُرُ الْمُتَّقِیْنَ اِلَى الرَّحْمٰنِ وَفْدًا এই আয়াতটি তিলাওয়াত করি এবং বলিঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! প্রতিনিধি তো সওয়ারীর উপর সওয়ার হয়ে এসে থাকে। তিনি বললেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তার শপথ! যখন তারা তাদের কবর থেকে বের হবে তখন সাদা রঙ-এর জ্যোতির্ময় উষ্ট্রীগুলির উপর সোনার জিন থাকবে। ওগুলির পা হতে জ্যোতি উপরের দিকে উথিত হতে থাকবে। ঐ উষ্ট্রীগুলির এক একটি কদম এতো দূরের ব্যবধানে থাকবে যতদূরে দৃষ্টি যাবে। তারা ওগুলির উপর সওয়ার হয়ে একটি জান্নাতী বৃক্ষের নিকট পৌঁছবে। সেখান থেকে দুটি নহর প্রবাহিত হতে তারা দেখতে পাবে। তার একটির পানি পান করবে, যার ফলে তাদের অন্তরের সব কালিমা দূর হয়ে যাবে। দ্বিতীয়টিতে তারা গোসল করবে। এর ফলে তাদের দেহ আলোকময় হয়ে যাবে আর তাদের মাথার চুল পরিপাটি হয়ে যাবে। এরপরে তাদের চুল আর কখনো এলোমেলো ও অপরিষ্কার হবে না। তাদের চেহারা হয়ে যাবে আলোকোজ্জ্বল। তারপর তারা জান্নাতের দরজায় পৌছে যাবে। স্বর্ণের দরজার উপর লাল ইয়াকৃত বা মণি মাণিক্যের হলকা থাকবে। তাতে তার করাঘাত করবে। এর ফলে একটা সুমধুর স্বর বের হবে এবং হৃরেরা বুঝতে পারবে যে, তাদের স্বামীরা এসে গেছে। জান্নাতের রক্ষক আসবে এবং দরজা খুলে দেবে। তারা তার জ্যোতির্ময় ও পরিচ্ছন্ন চেহারা দেখে সিজদায় পতিত হওয়ার ইচ্ছা করবে, কিন্তু তৎক্ষণাৎ সে বলে উঠবেঃ “আমি তো আপনাদেরই অনুগত এবং আপনাদের আদেশ পালন করতে বাধ্য। তারা তখন তার সাথে চলতে থাকবে। তাদের হুরগুলি আর সহ্য করতে না পেরে তাবু থেকে বেরিয়ে পড়বে এবং তাদের সাথে কোলাকুলি করবে। অতঃপর তারা বলবেঃ “আপনারা তো আমাদের মাথার মুকুট। আপনারা আমাদের প্রেমিক এবং আমরা আপনাদের প্রেমিকা। আমরা চিরস্থায়ী জীবনের অধিকারিণী। আমাদের মৃত্যু নেই। আমরা শান্তি দায়িণী এবং এটা কখনো শেষ হবার নয়। আমরা সব সময় সন্তুষ্ট থাকবে এবং কখনো অসন্তুষ্ট হবে না। আমরা সদা এখানে অব স্থান করবো, কখনো বিচ্ছিন্ন হবো না। তারা ভিতরে প্রবেশ করে দেখবে যে, শত গজ উচু প্রাসাদ রয়েছে। ওর দেয়ালগুলি মণিমুক্তা এবং হলদে লাল ও সবুজ রঙ বিশিষ্ট সোনা দ্বারা নির্মিত। প্রত্যেকটি দেয়াল পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত। প্রত্যেক ঘরে রয়েছে সত্তরটি সিংহাসন, প্রতিটি সিংহাসনে রয়েছে সত্তরটি হাশিয়া, প্রতিটি হাশিয়ায় রয়েছে সত্তরটি হুর, প্রত্যেক জ্বরের উপর রয়েছে সত্তরটি জোড়া। তথাপি, তাদের পায়ের গোছার ঝলক দেখা যায়, তাদের সহবাসের পরিমাণ হবে দুনিয়ার পূর্ণ একটি রাত্রির সমান। সেখানে নির্মল পানি খাটি দুধের যা জন্তু হতে দোহনকৃত নয়, উত্তম, সুস্বাদু, ক্ষতিকারক নয়। এইরূপ পবিত্র মদের এবং মৌমাছির পেট হতে নির্গত নয় এইরূপ খুঁটি মধুর নহর প্রবাহিত হবে। ফল দানকারী বৃক্ষ ফলের ভরে ঝুঁকে পড়বে। ইচ্ছা হলে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফল ছিড়বে, ইচ্ছা হলে বসে বসে এবং ইচ্ছা হলে শুয়েশুয়ে ফল ছিড়ে নেবে। সবুজ ও সাদাপাখী উড়তে থাকবে।
যেটারই গোশত খাওয়ার ইচ্ছা হবে তা নিজে নিজেই হাজির হয়ে যাবে। যেখানকার গোশত খাওয়ার ইচ্ছা হবে তাই খেয়ে নিবে। তারপর ঐ পাখি মহান আল্লাহর ক্ষমতা বলে পুনরায় জীবিত হয়ে উড়ে যাবে। চতুর্দিক থেকে ফেরেশতাগণ আসতে থাকবেন এবং সালাম করবেন। আর তাদেরকে শুভ সংবাদ জানিয়ে বলবেনঃ “আপনাদের উপর সালাম বর্ষিত হোক। এটা ঐ জান্নাত যার শুভসংবাদ আপনাদেরকে দেয়া হতো। আজ আপনাদেরকেও ওর মালিক বানিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা হলো বিনিময় আপনাদের সেই ভাল কাজের যা আপনারা দুনিয়ায় করতেন। তাদের হুরসমূহের কোন একটি হৃরের একটি চুল যদি দুনিয়ায় প্রবেশ করে দেয়া হয়, তবে সূর্যের আলো অস্পষ্ট বিবর্ণ হয়ে পড়বে।" (এ হাদীসটি মার’রূপে বর্ণিত হয়েছে। তবে এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, এটা মাওকুফই হবে। যেমন হযরত আলীর (রাঃ) নিজের উক্তি দ্বারাও এটা বর্ণিত আছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন) ঠিক এর বিপরীত পাপী লোকেরা উল্টো মুখে শৃংখলে আবদ্ধ অবস্থায় জন্তুর মত ধাক্কা খেয়ে জাহান্নামের নিকট একত্রিত হবে। ঐ সময় পিপাসায় তাদের ওষ্ঠাগত প্রাণ হবে। তাদের জন্যে কোন সুপারিশকারী এবং তাদের পক্ষে একটা ভাল কথা উচ্চারণ করার কেউ থাকবে না। মুমিনরা তো একে অপরের জন্যে সুপারিশ করবে। কিন্তু এই হতভাগ্যরা এর থেকে বঞ্চিত থাকবে। তারা নিজেরাই বলবেঃ فَمَا لَنَا مِنْ شَافِعِیْنَ ـ وَ لَا صَدِیْقٍ حَمِیْمٍ অর্থাৎ “আমাদের জন্যে কোন সুপারিশকারী নেই এবং সুহৃদ বন্ধুও নেই।” (২৬:১০০-১০১)।
তবে যে দয়াময়ের নিকট প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে সে ব্যতীত। এটা ‘ইসতিসনা মনকাতা। এই প্রতিশ্রুতি দ্বারা আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্যদান এবং ওর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকাই উদ্দেশ্য। অর্থাৎ যারা শুধুমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করে, অন্যান্যদের ইবাদত হতে বেঁচে থাকে, তারই কাছে সাহায্যের আশা রাখে এবং তারই কাছে সমস্ত আশাপূর্ণ হওয়ার বিশ্বাস রাখে তাদেরকেই বুঝানো হয়েছে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ যে একত্ববাদীরা আল্লাহর ওয়াদা লাভ করেছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “যাদের সাথে আমার ওয়াদা রয়েছে তারা দাড়িয়ে যাক।" জনগণ বললোঃ “হে আবু অবিদির রহমান (রাঃ)! আমাদেরকে ওটা শিখিয়ে দিন।” তিনি বললেনঃ তোমরা বলঃ اَللّٰهُمَّ فَاطِرَ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ اِنِّىْ اَعْهَدُ اِلَيْكَ فِىْ هٖذِهِ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا اِنَّكَ اَنْ تَكِلْنِىْ اِلٰى عَمَلٍ يُقَرِّبْنِىْ مِنْ الشَّرِّ وَيُبَاعِدْنِىْ مِنْ الْخَيْرِ وَاِنِّىْ لَا اَثِقُ اِلَّا بِرَحْمَتِكَ فَاجْعَلْ لِّىْ عِنْدَكَ عَهْدًا تُؤَدِّيْهِ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ اِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيْعَادَ অন্য রিওয়াইয়াতে এর সাথে নিম্নের কথাগুলি রয়েছেঃ خَائِفًا مُسْتَجِيْرًا مُسْتَغْفِرًا رَّاهِبًا رَاغِبًا اِلَيْكَ অর্থাৎ “হে আল্লাহ! হে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা! হে অদৃশ্য ও দৃশ্যের খবরজ্ঞাতা! আমি আপনার নিকট এই পার্থিব জগতে প্রতিশ্রুতি নিচ্ছি যে, আপনি আমাকে আমার এমন কাজ হতে দূরে রাখবেন যা আমাকে মন্দের নিকটবর্তী করবে ও ভাল হতে আমাকে দূরে রাখবে। আমি আপনার র হমতের উপর ভরসা রাখি। সুতরাং আপনি আমার জন্যে আপনার নিকট অঙ্গীকার রাখুন যা আপনি কিয়ামতের দিন পূর্ণ করবেন, নিশ্চয় আপনি ওয়াদা খেলাফ করেন না।” “আমি আপনাকে ভয় করি, আপনার নিকট (শাস্তি হতে) রক্ষা পাওয়ার আবেদন জানাই, আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থী এবং আপনার প্রতিই আগ্রহ প্রকাশকারী।”