ثُمَّ শব্দটি خَبَر এখানে خَبَر-এর উপর -এর সংযোগ স্থাপনের জন্যে এসেছে, যেন শৃংখলা বজায় থাকে। আরাফায় অবস্থানকারীদেরকে যেন নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, তারা এখান থেকে মুযদালিফায় যাবে, যেন মাশআরে হারামের নিকট আল্লাহ তা'আলাকে স্মরণ করতে পারে। এটাও তাদেরকে বলা হচ্ছে যে, তারা সমস্ত লোকের সাথে আরাফাতে অবস্থান করবে, যেমন সর্বসাধারণ এখানে অবস্থান করতো। তবে অবশ্যই কুরাইশরা তাদের গৌরব ও আভিজাত্য প্রকাশের জন্যে এই অবস্থান করে থাকতো। তারা হারাম শরীফের সীমা হতে বাইরে যেতো না এবং ‘হারামে’র শেষ সীমায় অবস্থান করতো এবং বলতো: ‘আমরা আল্লাহর ভক্ত এবং তাঁরই শহরের আমরা নেতা ও তারই ঘরের খাদেম।'
সহীহ বুখারী শরীফে রয়েছে যে, কুরাইশ ও তাদের মতানুসারী লোকেরা মুযদালিফাতেই থেমে যেতো এবং নিজেদের নাম حَمَس রাখতো। অবশিষ্ট সমস্ত আরববাসী আরাফায় গিয়ে অবস্থান করতো এবং ওখান হতে ফিরে আসতো। এজন্যেই ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে যে, সর্বসাধারণ যেখান হতে প্রত্যাবর্তন করতো, তোমরা সেখান হতে প্রত্যাবর্তন কর। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রাঃ), হযরত আতা (রঃ), হযরত কাতাদাহ (রঃ), হযরত সুদ্দী (রঃ) প্রভৃতি মনীষীও এটাই বলেন। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)ও এই তাফসীরই পছন্দ করেছেন এবং বলেছেন যে, এর উপর ইজমা রয়েছে। মুসনাদ-ই-আহমাদের মধ্যে রয়েছে যে, হযরত যুবাইর বিন মুতইম (রাঃ) বলেনঃ “আমার উট আরাফায় হারিয়ে যায়, আমি উটটি খুঁজতে বের হই। তথায় আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে অবস্থানরত অবস্থায় দেখতে পাই। আমি বলি- এটা কেমন কথা যে, ইনি হচ্ছে حَمَس অথচ হারাম শরীফের বাইরে এসে অবস্থান করছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এখানে اِفَاضَة শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে প্রস্তর নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে মুযদালিফা হতে মিনায় যাওয়া।আর اَلنَّاسُ শব্দ দ্বারা হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে ‘ইমাম'। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, যদি এর বিপরীত ইজমা হওয়ার প্রমাণ না থাকতো তবে এই উক্তিটির প্রাধান্য হতো।
অতঃপর ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, যার নির্দেশ সাধারণতঃ ইবাদতের পরে দেয়া হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ফরয নামায সমাপ্ত করার পর তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন (সহীহ মুসলিম)। তিনি জনসাধারণকে সুবহানাল্লাহি ‘আল হামদুলিল্লাহি’ এবং আল্লাহু আকবার’ তেত্রিশ বার করে পড়ার নির্দেশ দিতেন (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)। এটাও বর্ণিত আছে যে, আরাফার দিন (৯ই যিলহজ্ব) সন্ধ্যার সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর উম্মতের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন (তাফসীর-ই-ইবনে জারীর)। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এই ইরশাদও বর্ণিত হয়েছে যে, সমুদয় ক্ষমা প্রার্থনার নেতা হচ্ছে নিম্নের এই প্রার্থনাটিঃ اَللّٰهُمَّ اَنْتَ رَبِّيْ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ، خَلَقْتَنِىْ وَاَنَا عَبْدُكَ، وَاَنَا عَلٰى عَهْدِكَ، وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، اَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، اَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ، وَاَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْ لِىْ فَاِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রভু। আপনি ছাড়া কেউ উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার দাস। আমি সাধ্যানুসারে আপনার আহাদ ও অঙ্গীকারের উপর রয়েছি ।"আমি যে অন্যায় করেছি তা হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমার উপর যে আপনার নিয়ামত রয়েছে তা আমি স্বীকার করছি এবং আমার পাপকেও আমি স্বীকার করছি। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি ছাড়া আর কেউ ক্ষমা করতে পারে না।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন যে, যে ব্যক্তি এই দু'আটি রাত্রে পড়ে নেবে, যদি সে সেই রাত্রেই মারা যায় তবে সে অবশ্যই বেহেশতী হবে। আর যে ব্যক্তি এটা দিনে পড়বে, যদি ঐ দিনেই সে মৃত্যুবরণ করে তবে অবশ্যই সে জান্নাতী হবে (সহীহ বুখারী)। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) একদা বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে কোন একটি দু'আ শিখিয়ে দিন যা আমি নামাযে পাঠ করবো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আপনি বলুনঃ اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ ظَلَمْتُ نَفْسِىْ ظُلْمًا كَثِيرًا، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ. فَاغْفِرْ لِىْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِىْ اِنَّكَ اَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আমার জীবনের উপরে বড়ই অত্যাচার করেছি এবং আপনি ছাড়া কেউ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং আপনি আমাকে আপনার নিকট হতে ক্ষমা করে দিন এবং আমার প্রতি করুণা বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, করুণাময়।