আল বাকারা আয়াত ২৩৯
فَاِنْ خِفْتُمْ فَرِجَالًا اَوْ رُكْبَانًا ۚ فَاِذَآ اَمِنْتُمْ فَاذْكُرُوا اللّٰهَ كَمَا عَلَّمَكُمْ مَّا لَمْ تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَ ( البقرة: ٢٣٩ )
Fa in khiftum farijaalan aw rukbaanan fa izaaa amintum fazkurul laaha kamaa 'allamakum maa lam takoonoo ta'lamoon (al-Baq̈arah ২:২৩৯)
English Sahih:
And if you fear [an enemy, then pray] on foot or riding. But when you are secure, then remember Allah [in prayer], as He has taught you that which you did not [previously] know. (Al-Baqarah [2] : 239)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
যদি তোমরা ভয় কর, তবে পদচারী কিংবা আরোহী অবস্থায়ই নামায আদায় করবে। যখন নিরুদ্বেগ হবে, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা তোমরা জানতে না। (আল বাকারা [২] : ২৩৯)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
যদি তোমরা(শত্রুর) আশংকা কর, তবে পথচারী অথবা আরোহী অবস্থায়, (নামায পড়ে নাও)। অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হও, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর; যেভাবে তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা তোমরা জানতে না। [১]
[১] অর্থাৎ, শত্রুর ভয়ের সময় যেভাবে সম্ভব; হাঁটতে হাঁটতে অথবা বাহনের উপর বসে নামায পড়ে নাও। অতঃপর যখন ভয়ের অবস্থা দূর হয়ে যাবে, তখন পুনরায় সেইভাবে নামায পড়, যেভাবে তোমাদেরকে শিখানো হয়েছে।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
অতঃপর তোমরা যদি বিপদাশংকা কর, তবে পথচারি অথবা আরোহী অবস্থায় সালাত আদায় করবে [১]। অতঃপর তোমরা যখন নিরাপদ বোধ কর তখন আল্লাহ্কে স্মরণ করবে, জেভাবে তিনি তমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যা তোমরা জানতে না।
[১] সালেহ বিন খাওয়াত ঐ ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ‘যাতুর রিকা’র যুদ্ধে সালাতুল খাওফ বা ভীতির সালাতে অংশ গ্রহণ করেছিলেন তার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ (সাহাবাগণের) একদল সালাত আদায়ের জন্য তাঁর (রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) সাথে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালেন এবং আরেক দল শক্রর মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকলেন। তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথমোক্ত দলের সাথে এক রাকাআত সালাত আদায় করে দাঁড়িয়ে থাকলেন। মোক্তাদীগণ একা একা দ্বিতীয় রাকাআত পড়ে ফিরে গেলেন এবং শক্রর মুখোমুখী হয়ে দাঁড়ালেন। এবার অপর দলটি এসে দাঁড়ালে তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে সাথে নিয়ে অবশিষ্ট (এক) রাকাআত আদায় করে বসে থাকলেন। (দ্বিতীয় দলের) মুক্তাদীগণ নিজে নিজে দ্বিতীয় রাকাআত শেষ করে বসলে তিনি তাদেরকে সংগে নিয়ে সালাম ফিরালেন। [বুখারীঃ ৪১২৯]
3 Tafsir Bayaan Foundation
কিন্তু যদি তোমরা ভয় কর, তবে হেঁটে কিংবা আরোহণ করে (আদায় করে নাও)। এরপর যখন নিরাপদ হবে তখন আল্লাহকে স্মরণ কর, যেভাবে তিনি তোমাদেরকে শিখিয়েছেন, যা তোমরা জানতে না।
4 Muhiuddin Khan
অতঃপর যদি তোমাদের কারো ব্যাপারে ভয় থাকে, তাহলে পদচারী অবস্থাতেই পড়ে নাও অথবা সওয়ারীর উপরে। তারপর যখন তোমরা নিরাপত্তা পাবে, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর, যেভাবে তোমাদের শেখানো হয়েছে, যা তোমরা ইতিপূর্বে জানতে না।
5 Zohurul Hoque
কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা কর তবে পায়ে চলে বা ঘোড়ায় চড়ে, কিন্তু যখন তোমরা নিরাপত্তা বোধ কর তখন আল্লাহ্কে স্মরণ করো যে ভাবে তিনি তোমাদের শিখিয়েছেন -- যা তোমরা ইতিপূর্বে জানতে না।
6 Mufti Taqi Usmani
তোমরা যদি (শত্রুর) ভয় কর, তবে দাঁড়িয়ে বা আরোহী অবস্থায় (নামায পড়ে নিয়ো)। অতঃপর তোমরা যখন নিরাপদ অবস্থা লাভ কর, তখন আল্লাহর যিকির সেইভাবে কর যেভাবে তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, যে সম্পর্কে তোমরা অনবগত ছিলে।
7 Mujibur Rahman
তবে তোমরা যদি আশংকা কর, সেই অবস্থায় পদব্রজে বা যানবাহনের উপর সালাত সমাপন করে নিবে, পরে যখন নিরাপদ হও তখন তোমাদেরকে যেভাবে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে সেইভাবে আল্লাহর প্রশংসা কর যা তোমরা ইতোপূর্বে জানতেনা।
8 Tafsir Fathul Mazid
২৩৮ ও ২৩৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তালাক ও সংশ্লিষ্ট বিধান সম্পর্কে আলোচনা করার পর এখানে সালাতের সংরক্ষণ ও তার প্রতি গুরুত্বারোপের আলোচনা করা হয়েছে।
শানে নুযূল:
জায়েদ বিন সাবেত (রাঃ) হতে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বিপ্রহরে যোহরের সালাত আদায় করতেন। যা তুলনামূলক সাহাবীদের জন্য অধিক কষ্টদায়ক ছিল। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। এর পূর্বেও দু’টি সালাত রয়েছে, পরেও দু’টি সালাত রয়েছে। (আবূ দাঊদ হা: আসরের সলাতের সময় অধ্যায়, সহীহ)
حَافِظُوْا ‘তোমরা সংরক্ষণ কর’এর অর্থ হল: যন্তসহকারে সালাতের রুকন, আরকান ও আহকাম অর্থাৎ বিধিবিধানসহ যথাসময়ে অর্থাৎ প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায় করা।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, কোন্ আমল সবচেয়ে উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন:
الصَّلَاةُ لِوَقْتِهَا، وَبِرُّ الوَالِدَيْنِ، ثُمَّ الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللّٰهِ
যথাযথ সময়ে সালাত আদায় করা, পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা ও আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদ করা। (সহীহ বুখারী হা: ৭৫৩৪, সহীহ মুসলিম হা: ১৩৭)
তিরমিযীর বর্ণনায় রয়েছে: প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায় করা। (তিরমিযী হা: ১৭০, সহীহ)
(وَالصَّلٰوةِ الْوُسْطٰی)
‘মধ্যবর্তী সালাত’হল আসরের সালাত। যদিও এ ব্যাপারে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়, তবে সঠিক কথা হল এটাই।
যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
الصَّلَاةُ الْوُسْطَي صَلَاةُ الْعَصْرِ
মধ্যবর্তী সালাত হল সালাতুল আসর। (তিরমিযী হা: ১৭৪৩, সহীহ)
(وَقُوْمُوْا لِلهِ قٰنِتِيْنَ)
শানে নুযূল:
জায়েদ বিন আরকাম (রহঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে আমরা সালাতে একজন অন্য জনের সাথে কথা বলতাম। সালাতে আমাদের কেউ তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির সাথে কথা বলত, ফলে এ আয়াতাংশ অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা: ১২০০, সহীহ মুসলিম হা: ৫৩৯)
তারপরের আয়াতে সালাতুল খাওফ বা ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় সালাত আদায়ের পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হচ্ছে। ঐ অবস্থায় দাঁড়িয়ে, হাঁটতে হাঁটতে বা বাহনের ওপর আরোহণ করে যেভাবে সম্ভব সালাত আদায় করে নেবে। সূরা নিসার ১০২ নং আয়াতে এর বিস্তারিত বিবরণ আসবে ইনশাআল্লাহ।
আর যদি ভয়ের অবস্থা চলে যায় তাহলে যেভাবে সাধারণ নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেভাবে সালাত আদায় করবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সালাতকে হিফাযত করা বিশেষ করে আসরের সালাত।
২. সালাতের মাঝে কথা বলা নিষেধ।
৩. ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়ও সালাত আদায় করতে হবে।
৪. মু’মিনরা সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করে, কখনো আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ থেকে গাফেল হয় না।
9 Fozlur Rahman
আর যদি তোমাদের (শত্রুর) ভয় থাকে তাহলে হাঁটতে হাঁটতে অথবা আরোহী অবস্থায় (নামায আদায় করবে)। অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন আল্লাহকে সেভাবেই স্মরণ করবে যেভাবে তিনি তোমাদের শিখিয়েছেন, যা তোমরা (আগে) জানতে না।
10 Mokhtasar Bangla
২৩৯. তোমরা যদি শত্রæ ইত্যাদির ভয় করে তা পরিপূর্ণভাবে আদায় করতে না পারো তাহলে তোমরা পায়ে হেঁটে অথবা উট, ঘোড়া ইত্যাদির উপর সাওয়ার হয়ে কিংবা যেভাবেই পারো তা পড়ে নাও। তবে যখন ভয় কেটে যাবে তখন তোমরা সেভাবেই আল্লাহকে স্মরণ করো যেভাবে করতে তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। পরিপূর্ণ নামাযে তাঁকে স্মরণ করো। তোমরা তাঁকে আরো স্মরণ করো এ জন্য যে, তিনি তোমাদেরকে এমন নূর ও হিদায়েতের শিক্ষা দিয়েছেন যা তোমরা ইতিপূর্বে জানতে না।
11 Tafsir Ibn Kathir
২৩৮-২৩৯ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা'আলার নির্দেশ হচ্ছে-‘তোমরা নামাযসমূহের সময়ের হিফাযত কর,তাঁর সীমাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কর এবং সময়ের প্রথম অংশে নামায আদায় করতে থাকো।' হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কোন্ আমল উত্তম:' তিনি বলেনঃ নামাযকে সময়মত আদায় করা।' তিনি আবার জিজ্ঞেস করেনঃ ‘তার পরে কোনটি:' তিনি বলেনঃ “আল্লাহর পথে জিহাদ করা।' তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেনঃ “তার পরে কোনটি:' তিনি বলেনঃ পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ যদি আমি আরও কিছু জিজ্ঞেস করতাম তবে তিনি আরও উত্তর দিতেন (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।
হযরত উম্মে ফারওয়াহ (রাঃ) যিনি বায়আত গ্রহণকারিণীদের অন্যতম ছিলেন, বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আমি শুনেছি, তিনি আমলসমূহের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। ঐ প্রসঙ্গেই তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা'আলার নিকট সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় কাজ হচ্ছে নামাযকে সময়ের প্রথম অংশে আদায় করার জন্যে তাড়াতাড়ি করা (মুসনাদ-ই-আহমাদ)।' এই হাদীসের একজন বর্ণনাকরী উমরীকে ইমাম তিরমিযী (রঃ) নির্ভরযোগ্য বলেন না। অতঃপর মধ্যবর্তী নামাযের প্রতি অত্যাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। صَلٰوةِ وُسْطٰى কোন নামাযের নাম এই ব্যাপারে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মনীষীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। হযরত আলী (রাঃ), হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রভৃতি মনীষীর উক্তি এই যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে ফজরের নামায।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) একদা ফজরের নামায পড়ছিলেন। সেই নামাযে তিনি হাত উঠিয়ে কুনুতও পড়েছিলেন এবং বলেছিলেনঃ “এটা ঐ মধ্যবর্তী নামায যাতে কুনুত পড়ার নির্দেশ রয়েছে। দ্বিতীয় বর্ণনায় রয়েছে যে, এটা ছিল বসরার মসজিদের ঘটনা এবং তথায় তিনি রুকুর পূর্বে কুনুত পড়েছিলেন। হযরত আবুল আলিয়া (রঃ) বলেনঃ “একদা বসরার মসজিদে আমি হযরত আবদুল্লাহ বিন কায়েসের (রঃ) পিছনে ফজরের নামায আদায় করি। অতঃপর একজন সাহাবীকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করিঃ মধ্যবর্তী নামায কোনটি: তখন তিনি বলেনঃ “এই ফজরের নামাযই।
আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, বহু সাহাবা-ই-কেরাম এই সভাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং সবাই এই উত্তরই দিয়েছিলেন। হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহও (রাঃ) একথাই বলেন এবং আরও বহু সাহাবী (রাঃ) ও তাবেঈ (রঃ)-এরও এটাই মাযহাব। ইমাম শাফিঈ (রঃ) এ কথাই বলেন। কেননা, তাঁদের মতে ফজরের নামাযেই কুনুত রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে মাগরিবের নামায। কেননা, এর পূর্বে চার রাকআত বিশিষ্ট নামায রয়েছে এবং পরেও রয়েছে। সফরে এগুলোর কসর পড়তে হয় কিন্তু মাগরিব পুরোই পড়তে হয়। আর একটি কারণ এই যে, এর পরে রাত্রির দুটি নামায রয়েছে অর্থাৎ এশা ও ফজর। এই দুই নামাযে কিরআত উচ্চৈঃস্বরে পড়তে হয়। আবার এই নামাযের পূর্বে দিনের বেলায় দুটি নামায রয়েছে। অর্থাৎ যুহর ও আসর। এই দুই নামাযে কিরআত ধীরে ধীরে পড়তে হয়। কেউ কেউ বলেন যে, এই নামায হচ্ছে যুহরের নামায। একদা কতকগুলো লোক হযরত যায়েদ বিন সাবিতের (রঃ) সভায় উপবিষ্ট ছিলেন। তথায় এই জিজ্ঞাস্য বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল। জনগণ হযরত উসামার (রাঃ) নিকট এর ফায়সালা নেয়ার জন্যে লোক পাঠালে তিনি বলেনঃ “এটা যুহরের নামায যা রাসূলুল্লাহ (সঃ) সময়ের প্রথমাংশে আদায় করতেন (তায়ালেসীর হাদীস)।
হযরত যায়েদ বিন সাবিত (রাঃ) বলেনঃ সাহাবীগণের (রাঃ) উপর এর চেয়ে ভারী নামায আর একটিও ছিল না। এ জন্যেই এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। এর পূর্বেও দু'টি নামায রয়েছে এবং পরেও দু’টি রয়েছে। হযরত যায়েদ বিন সাবিত (রাঃ) হতেই এও বর্ণিত আছে যে,কুরাইশদের প্রেরিত দু'টি লোক তাঁকে এই প্রশ্নই করেছিলেন এবং তিনি উত্তরে ‘আসর বলেছিলেন। পুনরায় আর দু’টি লোক তাঁকে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেল তিনি যুহর’ বলেছিলেন। অতঃপর ঐ দু'জন লোক হযরত উসামাকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করলে তিনি যুহর' বলেছিলেন। তিনি এটাই বলেছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই নামাযকে সূর্য পশ্চিম দিকে একটু হেলে গেলেই আদায় করতেন। খুব কষ্ট করে দু'এক সারির লোক উপস্থিত হতেন। কেউ ঘুমিয়ে থাকতেন এবং কেউ ব্যবসায়ে লিপ্ত থাকতেন। তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ ‘হয় জনগণ এই অভ্যাস থেকে বিরত থাকবে না হয় আমি তাদের ঘর জ্বালিয়ে দেবো।' কিন্তু এর বর্ণনাকারী যীরকান সাহাবীর (রাঃ) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেনি। তবে হযরত যায়েদ (রাঃ) হতে অন্যান্য বর্ণনা দ্বারাও সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি মধ্যবর্তী নামাযের ভাবার্থ যুহরই বলতেন। একটি মারফু হাদীসেও এটা রয়েছে। হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হযরত আবু সাঈদ (রাঃ), হযরত আয়েশা (রাঃ) প্রভৃতি হতেও এটাই বর্ণিত আছে। ইমাম আবু হানীফা (রঃ) হতেও এটারই একটি বর্ণনা রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে আসরের নামায। অধিকাংশ উলামা, সাহাবা প্রভৃতি মনীষীর এটাই উক্তি। জমহ্র তাবেঈনেরও উক্তি এটাই।
হাফিয আবু মুহাম্মদ আব্দুল মু'মিন জিমইয়াতী (রঃ) এ সম্বন্ধে একটি পৃথক পুস্তিকা রচনা করেছেন যার নাম তিনি كَشْفُ الْغِطَا فِىْ تِبْيِيْنِ الصَّلٰوةِ الْوُسْطٰى দিয়েছেন। এর মধ্যে এই ফায়সালাই রয়েছে যে, صَلٰوةِ وُسْطٰى হচ্ছে আসরের নামায। হযরত উমার (রাঃ), হযরত আলী (রাঃ), হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হযরত আবু আইয়ুব (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ), হযরত সুমরা বিন জুনদব (রাঃ), হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ), হযরত আবু সাঈদ (রাঃ), হযরত হাফসা (রাঃ), হযরত উম্মে হাবীবা (রাঃ), হযরত উম্মে সালমা (রাঃ), হযরত ইবনে উমার (রাঃ), হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং হযরত আয়েশা (রাঃ) প্রভৃতি উঁচু পর্যায়ের আদম সন্তানেরও উক্তি এটাই। তারা এটা বর্ণনাও করেছেন। বহু তাবেঈ (রাঃ) হতেও এটা নকল করা হয়েছে। ইমাম আহমাদ (রঃ) এবং ইমাম শাফিঈ (রঃ)-এরও এটাই মাযহাব। ইমাম আবু হানীফারও (রঃ) সহীহ মাযহাব এটাই। ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ (রঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। ইবনে হাবীব মালিকীও (রঃ) এই কথাই বলেন।
এই উক্তির দলীল এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) খন্দকের যুদ্ধে বলেছিলেন “আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের অন্তর ও তাদের ঘরগুলো আগুন দ্বারা পূর্ণ করুন। তারা صَلٰوةِ وُسْطٰى অর্থাৎ আসরের নামায হতে বিরত রেখেছে। (মুসনাদ-ই-আহমাদ)।” হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “আমরা এর ভাবার্থ নিতাম ফজর অথবা আসরের নামায। অবশেষে খন্দকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুখে আমি একথা শুনতে পাই। সমাধিগুলোকেও আগুন দিয়ে ভরে দেয়ার কথা এসেছে।' মুসনাদ-ই-আহমাদের মধ্যে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই আয়াতটি পাঠ করেন এবং বলেন যে, এটা আসরের নামায। এই হাদীসটির বহু পন্থা রয়েছে এবং বহু কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবু হুরাইরাকে (রাঃ) এর সম্বন্ধে একবার জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যেও একবার মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল। তখন আবু হাশিম বিন উবা (রাঃ) মজলিস থেকে উঠে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বাড়ী চলে যান এবং অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন এবং তাঁর নিকটে জেনে বাইরে এসে আমাদেরকে বলেন যে, এটা আসরের নামায (তাফসীর-ই-ইবনে জারীর)।
একবার আবদুল আযীয বিন মারওয়ানের (রঃ) মজলিসেও এই জিজ্ঞাস্য বিষয়টি সম্বন্ধে কথা উঠে। তিনি তখন বলেনঃ “যাও, অমুক সাহাবীর (রাঃ) নিকট গিয়ে এটা জিজ্ঞেস করে এসো।” একথা শুনে এক ব্যক্তি বলেনঃ “এটা আমার নিকট শুনুন। আমার বাল্যাবস্থায় হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত উমার (রাঃ) এই মাসআলাটিই জিজ্ঞেস করার জন্যে আমাকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট প্রেরণ করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার কনিষ্ঠাঙ্গুলিটি ধরে বলেনঃ “দেখ, এটা ফজরের নামায। তারপরে ওর পার্শ্বেকার অঙ্গুলি ধরে বলেন, এটা যুহরের নামায। অতঃপর বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরে বলেন, এটা মাগরিবের নামায। অতঃপর শাহাদাত অঙ্গুলি ধরে বলেন, এটা হলো এশার নামায। এরপর আমাকে বলেন-“এখন আমাকে বলতো তোমার কোন্ অঙ্গুলিটি অবশিষ্ট রয়েছে: আমি বলি-মধ্যকারটি। তারপরে বলেন- আচ্ছা, এখন কোন্ নামায অবশিষ্ট রয়েছে: আমি বলি- আসরের নামায। তখন তিনি বলেন- “এটাই صَلٰوةِ وُسْطٰى (তাফসীর-ই-ইবনে জারীর)।” কিন্তু এ বর্ণনাটি খুবই গারীব। মোট কথা صَلٰوةِ وُسْطٰى-এর ভাবার্থ আসরের নামায হওয়া সম্বন্ধে বহু হাদীস এসেছে যেগুলোর মধ্যে কোনটি হাসান, কোনটি সহীহ এবং কোনটি দুর্বল। জামেউত্ তিরমিযী, সহীহ মুসলিম প্রভৃতির মধ্যেও এ হাদীসগুলো রয়েছে। তাছাড়া এই নামাযের উপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন এবং যারা এর প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করেছে তাদের প্রতি কঠোর বাণী উচ্চারণ করেছেন।
যেমন একটি হাদীসে রয়েছে : যার আসরের নামায ছুটে গেল তার যেন পরিবারবর্গ ও ধনসম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল।' অন্য হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘মেঘের দিনে তোমরা আসরের নামায সময়ের পূর্বভাগেই পড়ে নাও। জেনে রেখো যে, যে ব্যক্তি আসরের নামায ছেড়ে দেয় তার আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যায়। একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) গেফার গোত্রের ‘হামিস নামক উপত্যকায় আসরের নামায আদায় করেন। অতঃপর বলেনঃ “এই নামাযই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপরও পেশ করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তা নষ্ট করে দিয়েছিল। জেনে রেখো যে, যে ব্যক্তি এই নামায প্রতিষ্ঠিত করে থাকে তাকে দ্বিগুণ পুণ্য দেয়া হয়। এরপরে কোন নামায নেই যে পর্যন্ত না তোমরা তারকা দেখতে পাও (মুসনাদ-ই-আহমাদ)।
হযরত আয়েশা (রাঃ) তার আযাদকৃত গোলাম আবূ ইউনুস (রাঃ)-কে বলেনঃ তুমি আমার জন্যে একটা করে কুরআন মাজীদ লিপিবদ্ধ কর এবং যখন তুমি حٰفِظُوْا عَلَى الصَّلَوٰتِ وَ الصَّلٰوةِ الْوُسْطٰى (২:২৩৮) পর্যন্ত পৌঁছবে তখন আমাকে জানাবে। অতঃপর তাকে জানানো হলে তিনি আবু ইউনুসের (রাঃ) দ্বারা صَلٰوةِ وُسْطٰى -এর পরে وَالصَّلٰوةُ الْعَصْر লিখিয়ে নেন এবং বলেনঃ এটা স্বয়ং আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুখে শুনেছি (মুসনাদ-ই-আহমাদ)।' অন্য এক বর্ণনায় وَهِىَ صَلٰوةُ الْعَصْرِ শব্দটিও রয়েছে (তাফসীর-ই-ইবনে জারীর)।
রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সহধর্মিণী হযরত হাফসা (রাঃ) তাঁর কুরআন লেখক হযরত আমর বিন রাফে'র দ্বারা এই আয়াতটি এভাবে লিখিয়ে নিয়েছিলেন। (মুআত্তা-ই-ইমাম মালিক)। এই হাদীসটিরও বহু ধারা রয়েছে এবং কয়েকটি গ্রন্থে বর্ণিত আছে। একটি বর্ণনায় এও রয়েছে যে, হযরত হাফসা (রাঃ) বলেছিলেন : ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে এ শব্দগুলো শুনেছি।' হযরত নাফে (রাঃ) বলেনঃ “আমি এই কুরআন মাজীদ স্বচক্ষে দেখেছি, এই শব্দই وَاؤ-এর সঙ্গে ছিল।' হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও হযরত উবায়েদ বিন উমায়েরের (রাঃ) কিরআতও এরূপই। এই বর্ণনাগুলো সামনে রেখে কয়েকজন মনীষী বলেন যে, যেহেতু وَاؤ অক্ষরটি عَطْف-এর জন্যে এসে থাকে এবং مَعْطُوْف ও مَعْطُوْفٌ عَلَيْه -এর মধ্যে مَغَائِرَتْ অর্থাৎ বিরোধ হয়ে থাকে, সেহেতু বুঝা যাচ্ছে صَلٰوةُ الْوُسْطٰى এক জিনিস এবং صَلٰوةُ الْعَصْرِ অন্য জিনিস। কিন্তু এর উত্তর এই যে, যদি ওটাকে হাদীস হিসেবে স্বীকার করা হয় তবে হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটিই অধিকতর বিশুদ্ধ এবং তাতে স্পষ্টভাবেই বিদ্যমান রয়েছে। এখন বাকি থাকলো وَاؤ সম্বন্ধে কথা। তা হলে হতে পারে যে, এই وَاؤ টি وَاؤ عَاطِفه নয়, বরং এটা وَاؤ زَائِدَه বা অতিরিক্ত وَاؤ হবে। যেমন কুরআন মাজীদে রয়েছে وَكَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ وَلِتَسْتَبِيْنَ سَبِيْلُ الْمُجْرِمِيْنَ-এর মধ্যকার টি وَاؤ অতিরিক্ত। অন্য জায়গায় রয়েছে وَ كَذٰلِكَ نُرِیْۤ اِبْرٰهِیْمَ مَلَكُوْتَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ لِیَكُوْنَ مِنَ الْمُوْقِنِیْنَ (৬৭:৫)-এর মধ্যকার وَاؤ টি অতিরিক্ত। কিংবা হয়তো এই وَاؤ টি عَطْف صِفَت-এর জন্যে এসেছে عَطْف ذَات এর জন্য নয়। যেমন : وَ لٰكِنْ رَّسُوْلَ اللّٰهِ وَ خَاتَمَ النَّبِیّٖنَ (৩৩:৪০)-এর মধ্যে রয়েছে। অন্য জায়গায় রয়েছে'। سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْاَعْلَى ـ الَّذِیْ خَلَقَ فَسَوّٰى ـ وَ الَّذِیْ قَدَّرَ فَهَدٰى ـ وَ الَّذِیْۤ اَخْرَ جَ الْمَرْعٰى (৮৭:১-৪)
এসব স্থলে وَاؤ টি বিশেষণের সংযোগের জন্যে এসেছে مَعْطُوْف ও مَعْطُوْف عَلَيْه-কে পৃথক করণের জন্যে নয়। এ ধরনের আরও বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। কবিদের কবিতার মধ্যেও এর দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। নাহবীদের ইমাম সিবওয়াই বলেন যে, مَرَرْتُ بِاَخِيْكَ وَصَاحِبِكَ এটা বলা শুদ্ধ হবে। অথচ এখানে اَخْ ও صَاحِبْ একই ব্যক্তি। আর যদি এই শব্দগুলোকে কুরআনী শব্দ হিসেবে মেনে নেয়া হয় তবে তো এটা স্পষ্ট কথা যে, خَبَرِ وَاحِدْ দ্বারা কুরআন মাজীদের পঠন সাব্যস্ত হয় না , যে পর্যন্ত না تَوَاتُر বা ক্রমপরম্পরা দ্বারা তা সাব্যস্ত হয়। এজন্যেই হযরত উসমান (রাঃ) তাঁর কুরআনে এই কিরআত গ্রহণ করেননি। সপ্তকারীর পঠনেও এই শব্দগুলো নেই বা অন্য কোন বিশ্বস্ত কারীর পঠনেও নেই। তাছাড়া অন্য একটি হাদীস রয়েছে যার দ্বারা এই কিরআতের রহিত হয়ে যাওয়া সাব্যস্ত হয়েছে।
সহীহ মুসলিম শরীফে একটি হাদীস রয়েছে, হযরত বারা বিন আজিব (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ حٰفِظُوْا عَلَى الصَّلَوٰتِ وَالصَّلٰوةِ الْعَصْرِ অবতীর্ণ হয় এবং আমরা কিছু দিন ধরে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে এটা পড়তে থাকি। অতঃপর আল্লাহ তাআলা এটা রহিত করে দেন এবং حٰفِظُوْا عَلَى الصَّلَوٰتِ وَالصَّلٰوةِ الْوُسْطٰى অবতীর্ণ করেন। এর উপর ভিত্তি করে হযরত আয়েশা (রাঃ) ও হযরত হাফসা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত পঠন শব্দ হিসেবে রহিত হয়ে যাবে। আর যদি وَاؤ অক্ষরটিকে مَغَائِرَه রূপে স্বীকার করা হয় তবে শব্দ ও অর্থ উভয় দিক দিয়েই রহিত হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে মাগরিবের নামায। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতেও এটা বর্ণিত আছে। কিন্তু এর সনদে সমালোচনা রয়েছে। অন্য আরও কয়েকজন মনীষীরও এই উক্তি রয়েছে। এর একটি কারণ এই বর্ণনা করা হয়েছে যে, অন্যান্য নামায চার রাকআত বিশিষ্ট বা দই রাকআত বিশিষ্ট। কিন্তু এই নামায় (মাগরিব) তিন রাকআত বিশিষ্ট। সুতরাং এ দিক দিয়ে এটা মধ্যবর্তী নামায। দ্বিতীয় কারণ এই যে, ফরয নামাযের মধ্যে এটা বে নামায। তৃতীয় কারণ এই যে, এ নামাযের ফযীলতের বহু হাদীস এসেছে। কেউ কেউ এর ভাবার্থ এশার নামাযও বলেছেন। আবার কেউ কেউ বলেন যে, এর ভাবার্থ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মধ্যে এক ওয়াক্ত নামায।
কিন্তু সেটা কোন ওয়াক্তের নামায তা আমরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারি না। এটা আমাদের নিকট অজ্ঞাত। যেমন লাইলাতুল কাদর’ সারা বছরের মধ্যে বা রমযান শরীফের পূর্ণ মাসের মধ্যে অথবা উক্ত মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে লুকায়িত রয়েছে। কিন্তু তা আমাদের নিকট অজ্ঞাত। কোন কোন মনীষী এটাও বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সমষ্টি। আবার কেউ কেউ বলেন যে, এটা হচ্ছে এশা এবং ফজরের নামায। কারো কারো মতে এটাই হচ্ছে জুমআর নামায। কেউ কেউ বলেন যে, এটা হচ্ছে ভয়ের নামায। আবার কারও মতে এটা হচ্ছে ঈদের নামায। কেউ কেউ এটাকে চাশতের নামায বলেছেন। কেউ কেউ বলেনঃ “আমরা এ সম্বন্ধে নীরবতা অবলম্বন করি এবং কোন একটি মতই পোষণ করি না। কেননা, বিভিন্ন দলীল রয়েছে এবং কোন একটিকে প্রাধান্য দেয়ার কারণ আমাদের জানা নেই। কোন একটি উক্তির উপর ইজমাও হয়নি এবং সাহাবীদের (রাঃ) যুগ হতে আজ পর্যন্ত এ সম্বন্ধে মতানৈক্য চলে আসছে। যেমন হযরত সাঈদ বিন মুসাইয়াব (রঃ) বলেন যে, এ ব্যাপারে সাহাবীগণ (রাঃ) এরূপ বিভিন্ন মতাবলম্বী ছিলেন-অতঃপর তিনি অঙ্গুলির উপর অঙ্গুলি রেখে দেখিয়ে দেন। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, শেষের উক্তিগুলো সবই দুর্বল। মতানৈক্য রয়েছে শুধু ফজর ও আসর নিয়ে।
বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ দ্বারা আসরের নামায صَلٰوةِ وُسْطٰى হওয়া সাব্যস্ত হয়েছে। সমস্ত উক্তি ছেড়ে দিয়ে এই বিশ্বাস রাখাই উচিত যে, صَلٰوةِ وُسْطٰى হচ্ছে আসরের নামায। ইমাম আবু মুহাম্মদ আবদুর রহমান বিন আবু হাতীম রাযী (রঃ) স্বীয় গ্রন্থ ফাযায়েল-ই-শাফিঈ (রঃ)-এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম শাফিঈ (রঃ) বলতেন: كُلُّ مَا قُلْتُ فَكَانَ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِخِلَافِ قَوْلِىْ مِمَّا يَصِحُّ فَحَدِيْثُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوْلٰى وَلَا تُقَلِّدُوْنِىْ অর্থাৎ আমার যে কোন কথার বিপরীত বিশুদ্ধ হাদীস বর্ণিত হয় তখন নবী (সঃ)-এর হাদীসই উত্তম। খবরদার! তোমরা আমাকে অন্ধভাবে অনুসরণ করো না। ইমাম শাফিঈর (রঃ) এই উক্তি ইমাম রাবী' (রঃ), ইমাম যাফরানী (রঃ) এবং ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রঃ) বর্ণনা করেছেন। হযরত মূসা আবুল ওয়ালিদ বিন জারূদ (রঃ) ইমাম শাফিঈ (রঃ) হতে নকল করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ اِذَا صَحَّ الْحَدِيْثُ وَقُلْتُ قَوْلًا فَاَنَا رَاجِعٌ عَنْ قَوْلِىْ وَقَائِلَ بِذٰلِكَ অর্থাৎ আমার যে উক্তি হাদীসের উল্টো হয় তখন আমি আমার উক্তি হতে প্রত্যাবর্তন করি এবং স্পষ্টভাবে বলি যে, ওটাই আমার মাযহাব যা হাদীসে রয়েছে। এটা ইমাম সাহেবের বিশ্বস্ততা ও নেতৃত্বে এবং মাননীয় ইমামদের প্রত্যেকেই তারই মত একথাই বলেছেন যে, তাঁদের উক্তিকে যেন ধর্ম মনে করাহয়। এজন্যেই কাযী মাওয়ারদী (রঃ) বলেনঃ صَلٰوة وُسْطٰى-এর ব্যাপারে ইমাম শাফিঈরও (রঃ) এই মাযহাব মনে করা উচিত যে, ওটা আসরের নামায। যদিও তাঁর নতুন উক্তি এই যে, ওটা আসর নয়, তথাপি আমি তার নির্দেশক্রমে তাঁর উক্তিকে বিশুদ্ধ হাদীসের বিপরীত পাওয়ার কারণে ওটা পরিত্যাগ করলাম।
শাফিঈ মাযহাবের অনুসারী আরও বহু মুহাদ্দিসও একথাই বলেছেন। শাফিঈ মাযহাবের কয়েকজন ফিকাহ শাস্ত্রবিদ বলেন যে, ইমাম শাফিঈর (রঃ) একটি মাত্র উক্তি যে, ওটা হচ্ছে ফজরের নামায। কিন্তু তাফসীরের মধ্যে এইসব কথা আলোচনা করা উচিত নয়। পৃথকভাবে আমি ওগুলো বর্ণনা করেছি।
অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেন- তোমরা বিনয় ও দারিদ্রের সাথে আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হও। এর মধ্যে এটা অবশ্যই রয়েছে যে, নামাযের মধ্যে মানব সম্বন্ধীয় কোন কথা থাকবে না। এ জন্যেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) নামাযের মধ্যে হযরত ইবনে মাসউদের (রাঃ) সালামের উত্তর দেননি এবং নামায শেষে তাকে বলেনঃ নামায হচ্ছে নিমগ্নতার কাজ।' হযরত মুআবিয়া বিন হাকাম (রাঃ) নামাযের অবস্থায় কথা বললে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেছিলেন ও নামাযের মধ্যে মানবীয় কোন কথা বলা উচিত নয়। এতো হচ্ছে শুধুমাত্র আল্লাহর পবিত্রতা ও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করার কাজ (সহীহ মুসলিম)।
মুসনাদ-ই-আহমাদ প্রভৃতির মধ্যে রয়েছে, হযরত যায়েদ বিন আরকাম (রাঃ) বলেনঃ এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে মানুষ নামাযের মধ্যে প্রয়োজনীয় কথাগুলোও বলে ফেলতো। অতঃপর এই আয়াতটি অবতীর্ণ হলে মানুষকে নামাযের মধ্যে নীরব থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু এই হাদীসের মধ্যে একটা সমস্যা এই রয়েছে যে, নামাযের মধ্যে কথাবার্তা বলার নিষিদ্ধতার নির্দেশ আবিসিনিয়ায় হিজরতের পরে ও মদীনায় হিজরতের পূর্বে মক্কা শরীফেই অবতীর্ণ হয়েছিল। সহীহ মুসলিমের মধ্যে রয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “আবিসিনিয়ায় হিজরতের পূর্বে আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে তাঁর নামাযের অবস্থায় সালাম দিতাম এবং তিনি নামাযের মধ্যেই উত্তর দিতেন। আবিসিনিয়া হতে ফিরে এসে আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে তাঁর নামাযের অবস্থাতেই সালাম দেই। কিন্তু তিনি উত্তর দেননি। এতে আমার দুঃখের সীমা ছিল না। নামায শেষে তিনি আমাকে বলেনঃ “হে আবদুল্লাহ! অন্য কোন কথা নেই। আমি নামাযে ছিলাম বলেই তোমার সালামের উত্তর দেইনি। আল্লাহ যে নির্দেশ দিতে চান তাই দিয়ে থাকেন। তিনি এটা নতুন নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা নামাযের মধ্যে কথা বলো না। অথচ এই আয়াতটি মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছিল।
এখন হযরত যায়েদ বিন আরকামের (রাঃ) মানুষ নামাযের মধ্যে প্রয়োজনে তার ভাই-এর সাথে কথা বলতো”-এই কথার ভাবার্থ আলেমগণ এই বলেন যে, এটা কথার শ্রেণী বিশেষ এবং নিষিদ্ধতা হিসেবে এই আয়াতকে দলীলরূপে গ্রহণ করাও হচ্ছে তাঁর নিজস্ব অনুভূতি মাত্র। আবার কেউ কেউ বলেন যে, সম্ভবতঃ নামাযের মধ্যে দু'বার বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং দু'বার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই অধিকতর স্পষ্ট। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটি যা হাফিয আবু ইয়ালা (রঃ) বর্ণনা করেছেন তাতে রয়েছে যে, হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার সালামের উত্তর না দেয়ায় আমার এই ভয় ছিল যে, সম্ভবতঃ আমার সম্বন্ধে কোন ওয়াহী অবতীর্ণ হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) নামায শেষে আমাকে সম্বোধন করে বলেনঃ وَعَلَيْكَ السَّلَامُ اَيُّهَا الْمُسْلِمُ وَرَحْمَةُ اللهِ অর্থাৎ “হে মুসলমান ব্যক্তি। তোমার উপর শান্তি ও আল্লাহর করুণা বর্ষিত হোক। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা যে নির্দেশ দিতে চান তাই দিয়ে থাকেন। সুতরাং যখন তোমরা নামাযে থাকবে তখন বিনয় প্রকাশ করবে ও নীরব থাকবে। ইতিপূর্বে য়েহেতু নামাযের পুরোপুরি সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল সেহেতু এখানে ঐ অবস্থার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যেখানে পুরোপুরিভাবে নামাযের মর্যাদা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। যেমন, যুদ্ধের মাঠে যখন শত্রু সৈন্য সম্মুখে দণ্ডায়মান থাকে সেই সময়ের জন্যে নির্দেশ হচ্ছে‘যেভাবে সম্ভব হয় সেভাবেই তোমরা নামায আদায় কর। অর্থাৎ তোমরা সোয়ারীর উপরই থাক বা পদব্রজেই চল, কিবলার দিকে মুখ করতে পার আর নাই পার, তোমাদের সুবিধামত নামায আদায় কর।
হযরত ইবনে উমার (রাঃ) এই আয়াতের ভাবার্থ এটাই বর্ণনা করেছেন। এমনকি হযরত নাফে' (রঃ) বলেনঃ “আমি তো জানি যে, এটা মারফু হাদীস। সহীহ মুসলিম শরীফে রয়েছে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ 'কঠিন ভয়ের সময় তোমরা সোয়ারীর উপর আরূঢ় থাকলেও ইঙ্গিতে নামায পড়ে নাও।' হযরত আবদুল্লাহ বিন আনাস (রাঃ)-কে যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) খালিদ বিন সুফইয়ানকে হত্যা করার জন্যে প্রেরণ করেন তখন তিনি এভাবেই ইঙ্গিতে আসরের নামায আদায় করেছিলেন। (সুনান-ই-আবু দাউদ)।
সুতরাং মহান আল্লাহ এর দ্বারা স্বীয় বান্দাদের উপর কর্তব্য খুবই সহজ করে দিয়েছেন এবং তাদের বোঝা হালকা করেছেন। ভয়ের নামায এক রাকআত পড়ার কথাও এসেছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা তোমাদের নবীর (সঃ) ভাষায় তোমাদের বাড়ীতে অবস্থানের সময় তোমাদের উপর চার রাকআত নামায ফরয করেছেন এবং সফরের অবস্থায় দু'রাকআত ও ভয়ের অবস্থায় এক রাকআত নামায ফরয করেছেন (সহীহ মুসলিম)। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল বলেন যে, এটা অতিরিক্ত ভয়ের সময় প্রযোজ্য। হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) এবং আরও বহু মনীষী ভয়ের নামায এক রাকআত বলেছেন। ইমাম বুখারী (রঃ) সহীহ বুখারীর মধ্যে দূর্গ বিজয়ের সময় ও শক্ত সৈন্যের সম্মুখীন হওয়ার সময় নামায আদায় করা নামে একটি অধ্যায়। রেখেছেন। ইমাম আওযায়ী (রঃ) বলেন যে, যদি বিজয় লাভ আসন্ন হয়ে যায়। এবং নামায আদায় করার সাধ্য না হয় তবে প্রত্যেক লোক তার শক্তি অনুসারে ইশারায় নামায পড়ে নেবে। যদি এটুকু সময় পাওয়া না যায় তবে বিলম্ব করবে যে পর্যন্ত না যুদ্ধ শেষ হয়। আর যদি নিরাপত্তা লাভ হয় তবে দু'রাকআত পড়বে নচেৎ এক রাকআতই যথেষ্ট। কিন্তু শুধু তাকবীর পাঠ করা যথেষ্ট নয় বরং বিলম্ব করবে যে পর্যন্ত না নিরাপদ হয়। মাকহুলও (রঃ) এটাই বলেন।
হযরত আনাস বিন মালিক (রাঃ) বলেনঃ ‘তাসতার দূর্গের যুদ্ধে সেনাবাহিনীর মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। সুবেহ সাদিকের সময় ভীষণ যুদ্ধ চলছিল। নামায আদায় করার সময়ই আমরা পাইনি। অনেক বেলা হলে পরে আমরা সেদিন ফজরের নামায আদায় করি। ঐ নামাযের বিনিময়ে যদি আমি দুনিয়া ও ওর মধ্যে যা কিছু রয়েছে সবই পেয়ে যাই তবুও আমি সন্তুষ্ট নই। এটা সহীহ বুখারীর শব্দ। ইমাম বুখারী (রঃ) ঐ হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন যার মধ্যে রয়েছে যে, খন্দকের যুদ্ধে সূর্য পূর্ণ অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সঃ) আসরের নামায পড়তে পারেননি।
অন্য হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন সাহাবীগণকে (রাঃ) বানী কুরাইযার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন তখন তাদেরকে বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে কেউ যেন বানী কুরাইযার মধ্যে ছাড়া আসরের নামায না পড়ে। তখন আসরের সময় হয়ে গেলে কেউ কেউ তো সেখানেই নামায আদায় করেন এবং বলেনরাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উদ্দেশ্য ছিল এই যে, আমরা যেন খুব তাড়াতাড়ি চলি যাতে তথায় পৌছে আসরের সময় হয়। আবার কতকগুলো লোক নামায পড়েননি। অবশেষে সূর্য অস্তমিত হয়। বানী কুরাইযার নিকট গিয়ে তারা আসরের নামায আদায় করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এ সংবাদ জানতে পেরেও এদেরকে বা ওঁদেরকে ধমকের সুরে কিছুই বলেননি। সুতরাং এর দ্বারাই ইমাম বুখারী (রঃ) যুদ্ধ ক্ষেত্রে নামাযকে বিলম্ব করে পড়ার বৈধতার দলীল নিয়েছেন। কিন্তু জমহুর এর বিপরীত বলেছেন। তারা বলেন যে, সূরা-ই-নিসার মধ্যে যে صَلٰوة خَوْف-এর নির্দেশ রয়েছে এবং যে নামায শরীয়ত সম্মত হওয়ার কথা এবং যে নামাযের নিয়ম-কানুন হাদীসসমূহে এসেছে তা খন্দকের যুদ্ধের পরের ঘটনা। যেমন আবু সাঈদ (রাঃ) প্রভৃতি মনীষীর বর্ণনায় স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু ইমাম বুখারী (রঃ), ইমাম মাকহুল (রঃ) এবং ইমাম আওযায়ীর (রঃ) উত্তর এই যে, এটা পরে শরীয়ত সম্মত হওয়া এই বৈধতার উল্টো হতে পারে না যে, এটাও জায়েয এবং ওটাও নিয়ম। কেননা এরূপ অবস্থা খুবই বিরল। আর এরূপ অবস্থায় নামাযকে বিলম্বে পড়া জায়েয। যেহেতু স্বয়ং সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) হযরত ফারূকে আযমের যুগে ‘তাসতার বিজয়ের সময় এর উপর আমল করেন এবং কেউ কোন অস্বীকৃতিও জ্ঞাপন করেননি।
অতঃপর নির্দেশ হচ্ছে-“যখন তোমরা নিরাপত্তা লাভ কর তখন আল্লাহ তা'আলার নির্দেশ পুরোপুরিভাবে পালন করতে অবহেলা করো না। যেমন আমি তোমাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করেছি এবং অজ্ঞতার পরে জ্ঞান ও বিবেক দিয়েছি, তেমনই তোমাদের উচিত যে, তোমরা আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশরূপে শান্তভাবে আমাকে স্মরণ করবে। যেমন তিনি ভয়ের নামাযের বর্ণনা দেয়ার পর বলেনযখন তোমরা নিরাপদ হয়ে যাবে তখন নামাযকে উত্তমরূপে আদায় করবে। নামাযকে নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা মুমিনদের উপর ফরয। صَلٰة خَوْف-এর পূর্ণ বর্ণনা সূরা-ই-নিসার আয়াত وَاِذَا كُنْتَ فِيْهِمْ এর তাফসীরে ইনশাআল্লাহ আসবে।