৭৫-৭৬ নং আয়াতের তাফসীর:
رسل শব্দটি رسول এর বহুবচন। অর্থন বার্তাবাহক, প্রেরিত রাসূল। অর্থাৎ ফেরেশতা ও মানুষের মধ্য হতে যাকে ইচ্ছা আল্লাহ তা‘আলা বার্তাবাহক হিসেবে চয়ন করেন। বার্তাবাহক হিসেবে ফেরেশতাদের কাজ হল নাবীদের কাছে ওয়াহী পৌঁছে দেয়া, এ কাজগুলো করত জিবরীল (عليه السلام)। আর বার্তাবাহক হিসেবে নাবীদের কাজ হল তাদের ওপর আগত ওয়াহী অনুসারে মানুষদেরকে দাওয়াত দেয়া, ওয়াহীর বাণী পৌঁছে দেয়া। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা রাসূল হিসেবে চয়ন করবেন তাতে কারো কোন মন্তব্য করার সুযোগ নেই। অতএব যারা বলতে চায়ন জিবরীল (عليه السلام) আলী (রাঃ)-এর কাছে ওয়াহী না নিয়ে ভুল করে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসেছে, তাদের এ কথা মিথ্যা, ভিত্তিহীন। কারণ আল্লাহ তা‘আলা আলী (রাঃ)-কে নাবী বানাতে চাইলে বাধা দেয়ার কে আছে? যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَللّٰهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَه)
“আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রিসালাতের ভার কার ওপর অর্পণ করবেন তা তিনিই ভাল জানেন।” (সূরা আন‘আম ৬:১২৪)
সুতরাং তিনি তাঁর ইচ্ছা অনুসারে যাকে খুশি ফেরেশতাদের মধ্য থেকে বাণীবাহক হিসেবে পাঠান আর মানুষের মধ্য থেকে যাকে খুশি রাসূল হিসেবে নিযুক্ত করেন। তিনি কারো ইচ্ছার ওপর নির্ভর করেন না। তাঁর ইচ্ছা অনুসারেই তিনি তা করে থাকেন।
এরপর এ কথা বলা হচ্ছে যে, আল্লাহ তা‘আলা রাসূলগণের সামনের ও পিছনের খবর রাখেন। তাদের কাছে তিনি কী পৌঁছালেন এবং তারা কী পৌঁছিয়ে দিল এসব কিছু তাঁর নিকট দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। সুতরাং জিবরীল (عليه السلام) ভুল করে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ আল্লাহ তো সব দেখছেন, শুনছেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(عٰلِمُ الْغَیْبِ فَلَا یُظْھِرُ عَلٰی غَیْبِھ۪ٓ اَحَدًاﭩﺫ اِلَّا مَنِ ارْتَضٰی مِنْ رَّسُوْلٍ فَاِنَّھ۫ یَسْلُکُ مِنْۭ بَیْنِ یَدَیْھِ وَمِنْ خَلْفِھ۪ رَصَدًاﭪﺫ لِّیَعْلَمَ اَنْ قَدْ اَبْلَغُوْا رِسٰلٰتِ رَبِّھِمْ وَاَحَاطَ بِمَا لَدَیْھِمْ وَاَحْصٰی کُلَّ شَیْءٍ عَدَدًاﭫﺟ)
“তিনি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো নিকট প্রকাশ করেন না তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। নিশ্চয়ই তিনি তার সামনে এবং পিছনে প্রহরী নিয়োজিত করেন। তাঁরা তাদের প্রতিপালকের রিসালাত পৌঁছে দিয়েছে কি না তা জানার জন্য; রাসূলদের নিকট যা আছে তা তিনি বেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি সবকিছুর বিস্তারিত হিসাব রাখেন।” (সূরা জিন ৭২:২৬-২৮)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. রাসূল প্রেরণ করা বা রিসালাতের জন্য লোক নির্ধারিত করা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাধীন।
২. আল্লাহ তা‘আলা সকলের পূর্ব-পশ্চাতের সমস্ত কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত।
৩. সকলের প্রত্যাবর্তন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার নিকট।