৮১-৮২ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে বর্ণনা দেয়া হচ্ছে- হযরত আদম (আঃ) থেকে নিয়ে হযরত ঈসা (আঃ) পর্যন্ত সমস্ত নবী (আঃ)-এর নিকট আল্লাহ তা'আলা এই অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, কোন সময় যখন তাদের মধ্যে কাউকে আল্লাহ পাক গ্রন্থ ও জ্ঞান-বিজ্ঞান দান করবেন এবং তিনি উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবেন, তখন যদি তার যুগেই অন্য কোন নবী এসে যান তবে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তাকে সাহায্য করা এ নবীর অবশ্য কর্তব্য। এই নয় যে, স্বীয় জ্ঞান ও নবুওয়াতের প্রতি লক্ষ্য করতঃ তিনি তাঁর পরবর্তী নবী (আঃ)-এর অনুসরণ ও সাহায্য হতে বিরত থাকবেন। অতঃপর তিনি নবীদেরকে বলেনঃ “তোমরা কি এটা স্বীকার করলে এবং আমার সাথে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকার করলে?' তারা তখন বললেনঃ আমরা স্বীকার করলাম। তখন আল্লাহ তা'আলা বললেনঃ তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও সাক্ষী থাকলাম। অতঃপর যে কেউ এই অঙ্গীকার হতে ফিরে যাবে সে নিশ্চিতরূপে দুষ্কার্যকারী।
হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক নবী (আঃ)-এর নিকট এই অঙ্গীকার নেন যে, যদি তিনি তাঁর যুগে হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে প্রেরণ করেন তবে তাঁর অবশ্যকর্তব্য হবে তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তাঁকে সাহায্য করা, আর স্বীয় উম্মতকেও উপদেশ দেয়া যে, তারাও যেন তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতঃ তাঁর আনুগত্য স্বীকার করতে থাকে। হযরত তাউস (রঃ), হযরত হাসান বসরী (রঃ) এবং হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা নবীদের (আঃ) নিকট অঙ্গীকার নেন যে, তারা যেন একে অপরের সত্যতা প্রতিপাদন করেন। কেউ যেন এটা মনে না করেন যে, এ তাফসীর উপরের তাফসীরের বিপরীত বরং এটা ওরই পষ্ঠপোষক। এ জন্যেই হযরত আলী (রাঃ) ও হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত বর্ণনার মতই হযরত তাউস (রঃ) হতে তার পূর্বের বর্ণনাও বর্ণিত আছে।
মুসনাদ-ই-আহমাদের বর্ণনায় রয়েছে যে, হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি আমার এক কুরাইযী ইয়াহূদী বন্ধুকে বলেছিলাম যে, সে যেন আমাকে তাওরাতের সমস্ত কথা লিখে দেয়। আপনার অনুমতি হলে আমি ঐগুলো পেশ করি।' একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চেহারা মুবারক পরিবর্তিত হয়ে যায়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সাবিত (রাঃ) তখন হযরত উমার (রাঃ)-কে বলেনঃ “আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুখমণ্ডলের অবস্থা লক্ষ্য করছেন না?' তখন হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহকে প্রভুরূপে, মুহাম্মাদ (সঃ)-কে রাসূলরূপে এবং ইসলামকে ধর্মরূপে আমি সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিচ্ছি। এর ফলে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ক্রোধ বিদূরিত হয় এবং তিনি বলেনঃ “যে আল্লাহর অধিকারে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! যদি হযরত মূসা (আঃ) তোমাদের মধ্যে আগমন করেন এবং তোমরা আমাকে ছেড়ে তার অনুসরণ কর তবে তোমরা সবাই পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। সমস্ত উম্মতের মধ্যে আমার অংশের উম্মত তোমরাই এবং সমস্ত নবী (আঃ)-এর মধ্যে তোমাদের অংশের নবী আমি।'
মুসনাদ-ই-আবু ইয়ালার মধ্যে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ তোমরা কিতাব ধারীদেরকে কিছুই জিজ্ঞেস করো না। তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট, সুতরাং তোমাদেরকে কিরূপে তারা সুপথ প্রদর্শন করবে? বরং সম্ভবতঃ তোমরা কোন মিথ্যার সত্যতা প্রতিপাদন করবে এবং কোন সত্যকে মিথ্যা বলে দেবে। আল্লাহর শপথ! যদি হযরত মূসা (আঃ) তোমাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকতেন তবে তার জন্যে আমার আনুগত্য ছাড়া অন্য কিছু বৈধ হতো না। কোন কোন হাদীসে রয়েছেঃ যদি হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত ঈসা (আঃ) জীবিত থাকতেন তবে তাঁদেরও আমার আনুগত্য ছাড়া কোন উপায় ছিল না। সুতরাং সাব্যস্ত হলো যে, আমাদের রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নবীদের (আঃ) সমাপ্তকারী এবং সবচেয়ে বড় ইমাম। যে কোন যুগে তিনি নবী হয়ে আসলে তার আনুগত্য স্বীকার করা সবারই জন্যে অবশ্য কর্তব্য হতো। আর সেই যুগের সমস্ত নবী (আঃ)-এর আনুগত্যের উপর তার আনুগত্য অগ্রগণ্য হতো। এ কারণেই মিরাজের রাত্রে বায়তুল মুকাদ্দাসে তাঁকেই সমস্ত নবী (আঃ)-এর ইমাম নিযুক্ত করা হয়েছি। অনুরূপভাবে হাশরের মাঠেও আল্লাহ তাআলার নিকট একমাত্র সুপারিশকারী তিনিই হবেন। এটাই ঐ মাকাম-ই-মাহমুদ’ যা তিনি ছাড়া আর কারও জন্যে উপযুক্ত নয়। সমস্ত নবী এবং প্রত্যেক রাসূল সেদিন এ কাজ হতে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। অবশেষে তিনিই বিশেষভাবে এ স্থানে দণ্ডয়ামান হবেন। কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা সদা-সর্বদার জন্য তাঁর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন। আমীন।