ইয়াসীন আয়াত ২১
اتَّبِعُوْا مَنْ لَّا يَسْـَٔلُكُمْ اَجْرًا وَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ ۔ ( يس: ٢١ )
Ittabi'oo mal-laa yas'alukum ajranw-wa hum muhtadoon (Yāʾ Sīn ৩৬:২১)
English Sahih:
Follow those who do not ask of you [any] payment, and they are [rightly] guided. (Ya-Sin [36] : 21)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তোমরা মান্য কর এদেরকে- যারা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চায় না। উপরন্তু তারা সঠিক পথে পরিচালিত। (ইয়াসীন [৩৬] : ২১)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
অনুসরণ কর তাদের যারা তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চায় না এবং যারা সৎপথপ্রাপ্ত।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
'অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চায় না [১] যারা সৎপথপ্রাপ্ত।
[১] কাতাদাহ বলেন, সে ব্যক্তি যখন রাসূলদের কাছে এসে পৌঁছলেন তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি তোমাদের এ কাজের বিনিময়ে কোন পারিশ্রমিক চাও? তারা বলল, না। তখন সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলদের অনুসরণ কর। অনুসরণ করা তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চান না, আর তারা তো সৎপথপ্ৰাপ্ত। [তাবারী]
3 Tafsir Bayaan Foundation
‘তোমরা তাদের অনুসরণ কর যারা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চায় না আর তারা সৎপথপ্রাপ্ত’।
4 Muhiuddin Khan
অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত।
5 Zohurul Hoque
''অনুসরণ করো তাঁদের যারা তোমাদের কাছ থেকে কোনো পারিশ্রমিকের সওয়াল করেন না, আর তাঁরা হচ্ছেন সৎপথে চালিত।’’
6 Mufti Taqi Usmani
অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চায় না এবং যারা সঠিক পথে আছে।
7 Mujibur Rahman
অনুসরণ কর তাদের যারা তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চায়না এবং তারা সৎ পথপ্রাপ্ত।
8 Tafsir Fathul Mazid
১৩-২১ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একটি জনবসতির ঘটনা বর্ণনার নির্দেশ দিচ্ছেন, যে জনবসতির নিকট দু’জন রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু সে বসতির লোকেরা দু’জন রাসূলকেই মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। তৎক্ষণাৎ তাদের দু’জনের শক্তি বৃদ্ধি কল্পে তৃতীয় আরেকজনকে নাবী হিসেবে পাঠানো হয়েছিল এবং নাবীগণ বললেন যে, আমরা তোমাদের নিকট দয়াময় আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছি, আমরা মিথ্যাবাদী না। নাবীগণের এ কথার উত্তরে জনবসতির অধিবাসীগণ বলল : তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ, সুতরাং দয়াময় আল্লাহ তা‘আলা কোন মানুষকে রাসূল করে পাঠাতে পারেন না। বরং তোমরা এ ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলছ। যেমন তাদের উক্তি :
(ذٰلِكَ بِأَنَّه۫ كَانَتْ تَّأْتِيْهِمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنٰتِ فَقَالُوْآ أَبَشَرٌ يَّهْدُوْنَنَا ز فَكَفَرُوْا وَتَوَلَّوْا وَّاسْتَغْنَي اللّٰهُ ط وَاللّٰهُ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ)
“তা এ জন্য যে, তাদের নিকট তাদের রাসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শনাবলীসহ আসতেন। তখন তারা বলত : মানুষই কি আমাদেরকে পথের সন্ধান দিবে? অতঃপর তারা কুফরী করল ও মুখ ফিরিয়ে নিলো; কিন্তু এতে আল্লাহর কিছু যায় আসে না। আর আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত।” (সূরা তাগাবুন ৬৪ : ৬)
জনবসতির কথার প্রত্যুত্তরে নাবীগণ তাদেরকে বললেন যে, আমাদের দায়িত্ব শুধু তোমাদের নিকট স্পষ্টভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী পৌঁছে দেয়া আর এ ব্যাপারে আমাদের প্রতিপালক অবগত আছেন যে, আমরা তোমাদের নিকট তাঁর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল। তিনিই আমাদের ব্যাপারে সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী :
(قُلْ كَفٰي بِاللّٰهِ بَيْنِيْ وَبَيْنَكُمْ شَهِيْدًا)
“বল : ‘আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।” (সূরা আনকাবুত ২৯ : ৫২) উপরোক্ত আলোচনা থেকে কয়েকটি বিষয় জানা যায় :
১. পূর্ববর্তী উম্মাতের কাছে যারা রাসূল হিসেবে এসেছেন তারা সবাই মানুষ ছিলেন এবং যাদের কাছে এসেছিলেন তারাও জানত যে, এরা আমাদের মত মানুষ। অতএব কেন আমরা এরূপ মানুষের কথা মানব। যেমন সূরা ইসরার ৯৪ নম্বর আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এক শ্রেণির মানুষ রয়েছে যারা নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেয় কিন্তু তারা নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাটির মানুষ বিশ্বাস করতে চায় না। এ আয়াত থেকে তাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
২. তারা যখন দু’জন রাসূলকে সাধারণভাবে অস্বীকার করল তখন আল্লাহ তা‘আলা তৃতীয় আরেকজনকে প্রেরণ করলেন এবং তারা বললেন : নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের কাছে প্রেরিত রাসূল। তারপরেও যখন অস্বীকার করল, তখন রাসূলগণ বললেন : আল্লাহ তা‘আলা জানেন, অবশ্যই আমরা তোমাদের কাছে নিশ্চিত প্রেরিত রাসূল। অর্থাৎ তাদের অস্বীকার যত বাড়ল রাসূলদের কথার গুরুত্বও তত বাড়ল।
উক্ত গ্রাম কোথায় ও তিনজন প্রেরিত রাসূল কারা ছিলেন তা নিয়ে কোন নির্ভরযোগ্য বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে কোন কোন মুফাসসিরদের ধারণা, সে গ্রামটি ছিল আন্তাকিয়া। যেমন ইবনু আব্বাস, কা‘ব ও ওহাব বিন মুনাব্বাহ (রাঃ) বলেছেন। মু’জামুল বুলদানের বর্ণনানুযায়ী ‘আন্তাকিয়া’ শাম দেশের একটি প্রাচীন নগরী। যা তার সমৃদ্ধি ও স্থাপত্যের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এ নগরীর দুর্গ ও নগর প্রাচীন দর্শনীয় বস্তু ছিল। এতে খ্রিস্টানদের বড় বড় স্বর্ণ-রৌপ্যের কারুকার্য খচিত সুশোভিত গির্জা অবস্থিত রয়েছে। এটি একটি উপকূলীয় নগরী। ইসলামী আমলে শামবিজয়ী সাহাবী আবূ ওবায়দা ইবনুল জাররাহ (রাঃ) এ শহরটি জয় করেছিলেন। নাবী তিনজন ছিলেন- সাদেক, সাদুক ও শামুল। (ইবনু কাসীর)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ এলাকাবাসীর ঘটনা বর্ণনা করার নির্দেশ দেয়ার কারণ হলো যাতে মক্কাবাসীসহ পৃথিবীর মানুষ জানতে পারে মুহাম্মাদ কোন নতুন নাবী নন, পূর্বে অনেক নাবী এসেছেন এবং এটাও যেন জানতে পারে, রাসূল গায়েব জানেন না বরং ওয়াহী মারফত পূর্ববর্তীদের এসব ঘটনা জেনেছেন। রাসূলগণ যে দাওয়াত নিয়ে এসেছেন তা বর্জন করলে ধ্বংস অনিবার্য এ কথাও যাতে জেনে নিতে পারে।
(إِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْ) تطير
অর্থ কুলক্ষণ গ্রহণ করা। অর্থাৎ তারা রাসূলগণকে বলল, তোমাদের আগমনে আমরা অকল্যাণকর ও আমাদের জন্য অশুভ মনে করছি। যদি তোমরা চলে না যাও তাহলে পাথর মেরে হত্যা করব এবং আমাদের থেকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে।
(قَالُوْا طَآئِرُكُمْ مَّعَكُمْ)
অর্থাৎ তাদের কথার উত্তরে রাসূলগণ বললেন : তোমাদের অকল্যাণ তোমাদের সাথেই, কেননা তোমরা এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। যেমন সালেহ (আঃ)-এর সম্প্রদায় বলেছিল :
(قَالُوا اطَّيَّرْنَا بِكَ وَبِمَنْ مَّعَكَ ط قَالَ طَآئِرُكُمْ عِنْدَ اللّٰهِ بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ تُفْتَنُوْنَ)
“তারা বলল : ‘তোমাকে ও তোমার সঙ্গে যারা আছে তাদেরকে আমরা অমঙ্গলের কারণ মনে করি।’ সে বলল : ‘তোমাদের অকল্যাণ আল্লাহর ইখতিয়ারে, বস্তুত তোমরা এমন এক সম্প্রদায় যাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে।’’ (সূরা নামল ২৭ : ৪৭) এমনকি তারা সত্যের দা‘ওয়াত গ্রহণ করা থেকে বিরতই থাকল এবং রাসূলগণকে হত্যা করার পরিকল্পনা করল।
ঐ জনবসতির একজন মু’মিন ব্যক্তি ছিল যে শহরের শেষ প্রান্তে বসবাস করত। সে তাদের নিকট ছুটে আসলো ও বলল : হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা প্রেরিত ব্যক্তি (রাসূলগণ)-দের অনুসরণ করো। অনুসরণ করো তাদের যারা তোমাদের নিকট কোনই পারিশ্রমিক চায় না। তাঁদের স্বার্থের জন্য নয়, বরং তোমাদের কল্যাণার্থেই তাঁরা তোমাদেরকে সৎ পথের দিকে আহ্বান করছেন। সুতরাং তাঁদের আহ্বানে তোমাদের সাড়া দেয়া উচিত এবং তাঁদের আনুগত্য করা কর্তব্য। এতদসত্ত্বেও তারা ঈমান আনল না, রাসূলগণকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল এবং তাঁদেরকে অকল্যাণের কারণ মনে করল। এ লোকটির নাম কী ছিল তা নিয়ে অনেক মতামত পাওয়া যায়। তবে অনেকে বলেছেন : তার নাম ইয়াসিন হাবীব।
বিঃদ্রঃ কুরআন যে সকল ব্যক্তি, বস্তু বা স্থানের নাম বা অন্য কিছু অস্পষ্ট করে ছেড়ে দিয়েছে এবং সহীহ হাদীসে তার কোন বর্ণনা নেই তা জানা কোন জরুরী বিষয় নয়। বরং এগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ধর্মকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করার শামিল।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. রাসূলগণের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে তাদের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া। কাউকে মানার জন্য বাধ্য করা নয়। বর্তমানে ‘আলিম সমাজের দায়িত্বও তা-ই। তারা মানুষকে হক্বের পথে দা‘ওয়াত দিবে।
২. দা‘ওয়াতী কাজ করে বিনিময় গ্রহণ না করাটাই উত্তম। যেমন নাবী-রাসূলগণ বিনিময় গ্রহণ করেননি। তবে যদি এর জন্য এমন সময় ব্যয় হয় যে কারণে পরিবারের ব্যয়-ভার উপার্জন করতে সময় পাওয়া যায় না তাহলে উপযুক্ত পরিমাণ বিনিময় নেওয়া যেতে পারে।
৩. রাসূলগণ মানুষ, তাদেরকে রিসালাত দেয়া হয়েছে মানুষকে সঠিক পথের দিকে আহ্বান করার জন্য।
৪. যা জানলে কোন উপকারে আসবে না তা থেকে বিরত থাকাই উত্তম।
9 Fozlur Rahman
যারা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চায় না এবং নিজেরা হেদায়েতপ্রাপ্ত তাদের কথা মেনে নাও।”
10 Mokhtasar Bangla
২১. হে আমার জাতি! যারা তোমাদের নিকট আনিত বাণী পৌঁছানের উপর কোন প্রতিদান চায় না।বরং তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত যে ওহী পৌঁছায় তাতে হেদায়ত প্রাপ্ত। বস্তুতঃ যার অবস্থা এমনটি হয় সে অনুসরণযোগ্য।
11 Tafsir Ibn Kathir
২০-২১ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত, কাবুল আহ্বার (রঃ) এবং হযরত অহাব ইবনে মুনাব্বাহ্ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ঐ গ্রামবাসীরা শেষ পর্যন্ত ঐ নবীদেরকে হত্যা করে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। একজন মুসলমান ছিল যে ঐ গ্রামেরই শেষ প্রান্তে বসবাস করতো। তার নাম ছিল হাবীব, সে রেশমের কাজ করতো এবং কুষ্ঠরোগী ছিল। সে ছিল খুব দানশীল। সে যা উপার্জন করতো তার অর্ধেক আল্লাহর পথে দান করে দিতো। তার হৃদয় ছিল খুবই কোমল এবং স্বভাব ছিল খুবই উত্তম। সে জনগণ হতে পৃথক থাকতো। একটি গুহায় বসে আল্লাহর ইবাদত করতো। যখন সে কোন প্রকারে তার কওমের ঘৃণ্য চক্রান্তের কথা জানতে পারলো তখন সে আর ধৈর্য ধারণ করতে পারলো না। সে দৌড়াতে দৌড়াতে চলে আসলো। কেউ কেউ বলেন যে, সে ছুতার ছিল। একটি উক্তি আছে যে, সে ছিল ধোপা। উমার ইবনে হাকাম (রঃ) বলেন যে, সে জুতা সেলাই করতো। আল্লাহ তার প্রতি রহমত নাযিল করুন! সে এসে তার কওমকে বুঝাতে লাগলো। সে তাদেরকে বললোঃ “তোমরা এই রাসূলদের অনুসরণ কর। তাঁদের কথা মেনে চল। তাদের পথে চল। দেখো, তারা নিজেদের উপকারের জন্যে কোন কাজ করছেন না। তারা যে তোমাদের কাছে আল্লাহ তা'আলার বাণী পৌঁছিয়ে দিচ্ছেন এ জন্যে তোমাদের কাছে তার কোন বিনিময় প্রার্থনা করছেন না। তারা যে তোমাদের মঙ্গল কামনা করছেন এর কোন পুরস্কার তারা তোমাদের কাছে চাচ্ছেন না। আন্তরিকতার সাথে তারা তোমাদেরকে আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহ্বান করছেন! তোমাদেরকে তারা সঠিক ও সরল পথ প্রদর্শন করছেন! তারা নিজেরাও ঐ পথেই চলছেন! সুতরাং তোমাদের অবশ্যই তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়া উচিত ও তাদের আনুগত্য করা কর্তব্য।” কিন্তু তাঁর কওম তার কথা মোটেই মানলো না, বরং তাকে তারা শহীদ করে দিলো ।। আল্লাহ্ তা'আলা তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন!