নামকরণ :
প্রত্যেকটি সূরার নামকরণের পেছনে একটি কারণ থাকে। যে নামে নামকরণ করা হয় হয়তো সে সম্পর্কে উক্ত সূরাতে আলোচনা করা হয়েছে নতুবা ঐ শব্দটি ঐ সূরাতে ব্যবহার হয়েছে। এ সূরার শুরুতেই সোয়াদ শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। ফলে একে সোয়াদ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
অত্র সূরায় পূর্ববর্তী কয়েকটি অবাধ্য জাতির ধ্বংসের বিবরণ, সকল বাতিল মা‘বূদ বর্জন করত এক আল্লাহর ইবাদত করাটা কাফিরদের কাছে আর্শ্চযের মনে হওয়া, পূর্বের নাবীদের মত নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ, দাঊদ (আঃ) ও তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট একটি বিচারের ঘটনা, সুলাইমান (আঃ) ও তাঁর পরীক্ষার কথা, আইয়ুব (আঃ), ইবরাহীম, ইসহাক, ইয়া‘কূব, ইয়াসা‘ ও যুলকিফালসহ অনেক নাবীর বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সূরার শেষে মানব জাতির পিতা আদম (আঃ)-কে সকল ফেরেশতা দ্বারা সিজদা করার নির্দেশ ও ইবলিসের অমান্য করা প্রসঙ্গ আলোচনা করা হয়েছে।
১-৩ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
صٓ (সোয়াদ)- এ জাতীয় “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষর সম্পর্কে পূর্বে সূরা বাকারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। এগুলোর আসল উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।
আল্লাহ তা‘আলা এখানে কুরআনের শপথ করে বলছেন : কুরআন উপদেশে পরিপূর্ণ। এতে তোমাদের জন্য সর্বপ্রকার নসীহত ও এমন কথা আলোচনা করা হয়েছে যার দ্বারা তোমাদের ইহকাল ও পরকাল উভয়ই শুধরে যাবে।
আবার কেউ ذي الذكر-এর অর্থ বলেছেন : কুরআন মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের অধিকারী। ইমাম ইবনু কাসীর বলেন, দু’টি অর্থই ঠিক। কারণ কুরআন মর্যাদারও অধিকারী এবং মু’মিন ও মুত্তাক্বীদের জন্য উপদেশ ও শিক্ষণীয় গ্রন্থও বটে। আল্লাহর বাণী :
(لَقَدْ أَنْزَلْنَآ إِلَيْكُمْ كِتٰبًا فِيْهِ ذِكْرُكُمْ ط أَفَلَا تَعْقِلُوْنَ)
“আমি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছি কিতাব যাতে আছে তোমাদের জন্য উপদেশ, তবুও কি তোমরা বুঝবে না?” (সূরা ‘আম্বিয়া ২১ : ১০)
আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যে শপথ করেছেন তার উত্তর হলো যে, মক্কার কাফিররা বলে যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাদুকর, কবি, পাগল এবং মিথ্যুক, তা সঠিক নয়। বরং তিনি আল্লাহ তা‘আলার সত্য রাসূল; তাঁর ওপর এ মর্যাদাপূর্ণ কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।
(فِيْ عِزَّةٍ وَّشِقَاقٍ)
‘অহঙ্কার ও বিরোধিতায় লিপ্ত’ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা কুরআনকে উপদেশপূর্ণ করার পরেও কাফিররা তা হতে উপদেশ গ্রহণ করতে অহঙ্কার করছে ও ঈমান আনা হতে বিমুখ রয়েছে এবং সত্যকে বাতিল করার জন্য বিবাদে নিমজ্জিত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَإِذَا قِيْلَ لَهَااِتَّقِ اللّٰهَ أَخَذَتْهُ الْعِزَّةُ بِالْإِثْمِ فَحَسْبُهُ جَهَنَّمُ ط وَلَبِئْسَ الْمِهَادُ)
“আর যখন তাকে বলা হয়, তুমি আল্লাহকে ভয় কর, তখন তার সম্মানের গরীমা তাকে অনাচারে লিপ্ত করে। অতএব জাহান্নামই তার জন্য যথেষ্ট, আর তা কতইনা নিকৃষ্ট বাসস্থান!” (সূরা বাকারাহ ২ : ২০৬)
(كَمْ أَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِمْ) ‘তাদের পূর্বে আমি বহু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি; অর্থাৎ পূর্ববর্তী জাতির মধ্যে যারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল তাদেরকে তিনি ধবংস করেছিলেন। তারা যখন আযাব প্রত্যক্ষ করেছিল তখন আল্লাহ তা‘আলার কাছে সাহায্য কামনা করেছিল, কিন্তু তাদের এ কামনা কোন উপকারে আসেনি। অতএব যে-কেউ তাদের মত আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের সাথে এরূপ আচরণ করে তাহলে তারাও শাস্তির সম্মুখিন হবে।
لات শব্দটি মূলত لا, এখানে ت অক্ষরটি অতিরিক্ত যুক্ত হয়েছে। যেমন ثم-তে ثمت এবং رب-তে ربت বলা হয়ে থাকে। এগুলোতেও ت অক্ষরটি অতিরিক্ত।
مناص-এর অর্থ হলো, পলায়ন করা, পিছু হটা ইত্যাদি। সুতরাং পূর্ববর্তী জাতিদের ইতিহাস অধ্যয়ন করত আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত যে, আমরা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের নাফরমান হব না বরং একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করব এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রেখে যাওয়া পন্থার অবলম্বন করব।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. কুরআন একটি উপদেশ বাণী।
২. অহঙ্কার করা, কুরআন সুন্নাহর বিরোধিতা করা কাফির-মুশরিকদের কাজ।
৩. দুনিয়ার কোন শক্তিশালীর শক্তি আল্লাহ তা‘আলার শাস্তির বিপরীতে কোন কাজে আসবে না।