৮২-৮৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা পূর্ববর্তী উম্মতদের খবর দিচ্ছেন যারা ইতিপূর্বে তাদের রাসূলদেরকে অবিশ্বাস করেছিল। সাথে সাথে তিনি তাদের পরিণামে শাস্তি ভোগ করার কথাও বলেছেন। অথচ তারা এদের চাইতে বহুগুণে শক্তিশালী ছিল। ভূ-পৃষ্ঠে তারা বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণ করেছিল এবং তারা ছিল প্রচুর ধন-মালের অধিকারী। কিন্তু এগুলোর কোন কিছুই তাদের কোন উপকারে আসেনি। এগুলো তাদের শাস্তি না পেরেছে দূর করতে এবং না পেরেছে হ্রাস করতে। তারা ধ্বংস হওয়ারই যোগ্য ছিল। কেননা, তাদের কাছে যখন রাসূলগণ সুস্পষ্ট দলীলসমূহ সহ আগমন করেছিলেন এবং তাদের কাছে এনেছিলেন মু'জিযা ও পবিত্র তা’লীম, তখন তারা তাদের দিকে চোখ তুলেও দেখেনি, গর্বভরে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল এবং রাসূলদের শিক্ষার প্রতি তারা ঘৃণা প্রদর্শন করেছিল। তারা বলেছিল যে, তারাই বড় আলেম বা বিদ্বান। তাদের মধ্যে বিদ্যার কোন অভাব নেই। হিসাব-নিকাশ এবং শাস্তি ও সওয়াব এগুলো কিছুই নয়। এভাবে নিজেদের অজ্ঞতাকে তারা জ্ঞান মনে করে নিয়েছিল। অতঃপর তাদের উপর এমন শাস্তি এসে পড়ে যা তারা মিথ্যা বলে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে উড়িয়ে দিতো। ঐ শাস্তি তাদেরকে তচনচ করে দেয়। তারা সমূলে ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহর শাস্তি আসতে দেখে তারা ঈমান আনয়নের কথা স্বীকার করে এবং একত্ববাদে বিশ্বাসী হয় এবং গায়রুল্লাহকে স্পষ্টভাবে অস্বীকারও করে। কিন্তু ঐ সময়ের তাওবা, ঈমান আনয়ন এবং আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ সবই বৃথা হয়। ফিরাউনও সমুদ্রে নিমজ্জিত হবার সময় বলেছিলঃ
اٰمَنْتُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا الَّذِیْۤ اٰمَنَتْ بِهٖ بَنُوْۤا اِسْرَآءِیْلَ وَ اَنَا مِنَ الْمُسْلِمِیْنَ
অর্থাৎ “আমি ঈমান আনলাম যে, তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই যার উপর বানু ইসরাঈল ঈমান এনেছে এবং আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হলাম।" (১০:৯০) তখন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ
آٰ لْئٰنَ وَ قَدْ عَصَیْتَ قَبْلُ وَ كُنْتَ مِنَ الْمُفْسِدِیْنَ
অর্থাৎ “এখন? অথচ ইতিপূর্বে তুমি অবাধ্যাচরণ করে এসেছে এবং তুমি বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।” (১০:৯১) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তার ঈমান কবুল করলেন না। কেননা, তার নবী হযরত মূসা (আঃ) তাদের বিরুদ্ধে যে বদ দু'আ করেছিলেন তা তিনি ককূল করে নিয়েছিলেন। হযরত মূসা (আঃ) ফিরাউন ও তার কওমের বিরুদ্ধে বদ দুআ করেছিলেনঃ
وَ اشْدُدْ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ فَلَا یُؤْمِنُوْا حَتّٰى یَرَوُا الْعَذَابَ الْاَلِیْمَ
অর্থাৎ “তাদের অন্তরকে কঠিন করে দিন, সুতরাং তারা যেন ঈমান আনয়ন করে যে পর্যন্ত না তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অবলোকন করে।" (১০:৮৮) অনুরূপভাবে এখানেও আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “তারা যখন আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করলো তখন তাদের ঈমান তাদের কোন উপকারে আসলো না। আল্লাহর এই বিধান পূর্ব হতেই চলে আসছে।” অর্থাৎ এটাই আল্লাহর বিধান যে, যে কেউই শাস্তি প্রত্যক্ষ করার পর তাওবা করবে তার তাওবা গৃহীত হবে না। এজন্যেই হাদীসে এসেছেঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবা কবূল করে থাকেন যে পর্যন্ত না তার ঘড়ঘড়ি শুরু হয়ে যায়। (অর্থাৎ যে পর্যন্ত না প্রাণ কষ্ঠাগত হয়)।” যখন প্রাণ কণ্ঠাগত হয়ে যায় তখন তার তাওবা কবূল হয় না। এজন্যেই আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “সেই ক্ষেত্রে কাফিররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”