আল হাশর আয়াত ১৭
فَكَانَ عَاقِبَتَهُمَآ اَنَّهُمَا فِى النَّارِ خَالِدَيْنِ فِيْهَاۗ وَذٰلِكَ جَزٰۤؤُا الظّٰلِمِيْنَ ࣖ ( الحشر: ١٧ )
Fakaana 'aaqibatahumaaa annahumaa fin naari khaalidaini feehaa; wa zaalika jazaaa'uz zaalimeen (al-Ḥašr ৫৯:১৭)
English Sahih:
So the outcome for both of them is that they will be in the Fire, abiding eternally therein. And that is the recompense of the wrongdoers. (Al-Hashr [59] : 17)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
কাজেই তাদের উভয়ের পরিণাম হবে এই যে, তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে, আর যালিমদের এটাই প্রতিফল। (আল হাশর [৫৯] : ১৭)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
ফলে উভয়ের পরিণাম হবে জাহান্নাম। সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং এটাই সীমালংঘনকারীদের কর্মফল। [১]
[১] অর্থাৎ, خلود في النار জাহান্নামের চিরন্তন শাস্তি।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
ফলে তাদের দু'জনের পরিণাম এই যে, তারা দু’জনই জাহান্নামী হবে। সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং এটাই যালিমদের প্রতিদান।
3 Tafsir Bayaan Foundation
তাদের দু’জনের পরিণতি ছিল এই যে, তারা দু’জনেই জাহান্নামী হবে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে; আর এটাই যালিমদের প্রতিদান।
4 Muhiuddin Khan
অতঃপর উভয়ের পরিণতি হবে এই যে, তারা জাহান্নামে যাবে এবং চিরকাল তথায় বসবাস করবে। এটাই জালেমদের শাস্তি।
5 Zohurul Hoque
সুতরাং তাদের উভয়ের পরিণাম এই যে উভয়েই থাকবে আগুনে, তারা সেখানে দীর্ঘকাল অবস্থান করবে। আর এই হচ্ছে অন্যায়াচারীদের প্রতিফল।
6 Mufti Taqi Usmani
সুতরাং তাদের উভয়ের পরিণাম এই যে, তারা জাহান্নামবাসী হবে, যাতে তারা স্থায়ী হয়ে থাকবে। এটাই জালেমদের শাস্তি।
7 Mujibur Rahman
ফলে উভয়ের পরিণাম হবে জাহান্নাম। সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং এটাই যালিমদের কর্মফল।
8 Tafsir Fathul Mazid
১১-১৭ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ বিন উবাই বনু নাযীর গোত্রের লোকদের আশ্বাস দিয়েছিল দু হাজার সৈন্য দ্বারা সহযোগিতা করবে। আল্লাহ তা‘আলা এসব মুনাফিকদের সম্পর্কে বলছেন : এরা মিথ্যা বলছে, তারা কখনো তাদেরকে সহযোগিতা করবে না। তারা যুদ্ধে বের হলে এরা পলায়ন করবে। সত্যি তাই-ই হল। সাহাবীগণ যখন বনু নাযীর গোত্রে আক্রমণ করলেন তখন কেউ সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসেনি। এরূপ কিয়ামত অবধি মুনাফিকরা মুসলিমদের সাথে প্রতারণা করে অমুসলিমদেরকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেবে। এরা যতই প্রতিশ্রুতি প্রদান করুক যে, তারা কাফিরদেরকে সৈন্য দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করবে কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবে না। কারণ যখন মুসলিমরা সর্বাত্মক জিহাদ শুরু করবে আর কাফিরদেরকে হত্যা করবে তখন তারা পশ্চাদপদ বরণ করবে। যারা মুসিলমদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে সহযোগিতা করে তারাও কাফির। ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রহঃ) ঈমান বিনষ্টের আট নম্বর কারণে বলেন : মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সাহায্য করা ঈমান বিনষ্টের অন্যতম কারণ। দলীল : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَمَنْ یَّتَوَلَّھُمْ مِّنْکُمْ فَاِنَّھ۫ مِنْھُمْﺚ اِنَّ اللہَ لَا یَھْدِی الْقَوْمَ الظّٰلِمِیْنَ)
তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে সে তাদেরই একজন গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা মায়িদা ৫ : ৫১)
(لَأَنْتُمْ أَشَدُّ رَهْبَةً)
‘তাদের অন্তরে আল্লাহ অপেক্ষা তোমরাই অধিকতর ভয়ঙ্কর’ অর্থাৎ তোমাদের ঐক্য ও যুদ্ধের ময়দানে দৃঢ়তা দেখে তারা তোমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার চেয়ে বেশি ভয় করে।
(فِيْ قُرَي ًمُّحَصَّنَةٍ)
‘শুধু সুরক্ষিত জনপদের অভ্যন্তরে’ অর্থাৎ প্রকাশ্যে সরাসরি তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার হিম্মত তাদের নেই। কেবল আকাশ থেকে বোমা বর্ষণ করে অথবা দূর থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে যুদ্ধ করবে।
(تَحْسَبُهُمْ جَمِيْعًا وَّقُلُوْبُهُمْ شَتّٰي)
‘তুমি মনে করছ তারা ঐক্যবদ্ধ; কিন্তু তাদের হৃদয় বিচ্ছিন্ন মিল নেই’ বাহ্যিকভাবে অমুসলিমদেরকে দেখা যাবে তারা সবাই মিলে তোমাদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে যুদ্ধ করছে; কিন্তু যদি তোমরা যুদ্ধ শুরু করে দাও তাহলে তাদের প্রকৃত অবস্থা দেখতে পাবে যে, তারা তাদের কেউ কাউকে সাহায্য করবে না। অতএব তাদের বাহ্যিক ঐক্য দেখে ভয় করো না, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাও।
(كَمَثَلِ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ)
‘এরা তাদের ন্যায়, যারা নিকট অতীতে নিজেদের কৃতকর্মের পরিণাম আস্বাদন করেছে’ এখানে বনু নাযীর গোত্রের সদ্য পূর্ব ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি বলতে কাদের বুঝানো হয়েছে-এ ব্যাপারে মুজাহিদ বলেন : বদরের যুদ্ধে কুরাইশরা যেমন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : বনু কাইনুকার ইয়াহূদীদেরকে বুঝানো হয়েছে, আর এটাই সঠিক। কারণ বনু কাইনুকার ইয়াহূদীদেরকে এদের পূর্বে নির্বাসনে দেওয়া হয়েছে। (ইবনু কাসীর)
(كَمَثَلِ الشَّيْطٰنِ)
অর্থাৎ শয়তান যেমন মানুষকে কাফির বানিয়ে চলে যায় তেমনি এ সকল মুনাফিকরা অন্যদেরকে উস্কানি ও বিভিন্ন আশা-ভরসা দিয়ে সংঘাত ও বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেরা গা-ঢাকা দেয়।
(فَكَانَ عَاقِبَتَهُمَآ)
অর্থাৎ যারা কুফরীর নির্দেশ দেয় আর যারা কুফরী করে উভয়ে জাহান্নামী।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. মুনাফিক ও কাফিরদের প্রতিশ্রুতি ছলনা মাত্র।
২. মুসলিমদের ঐক্য, সাহস ও ঈমানী দৃঢ়তাকে অমুসলিমরা ভীষণ ভয় পায়।
৩. অমুসলিমদেরকে বাহ্যিকভাবে একতাবদ্ধ দেখা গেলেও মূলত তারা বিচ্ছিন্ন।
৪. যারা কুফরী করে আর যারা কুফরীর পথ দেখায় সবাই জাহান্নামী।
৫. মুসলিমদের বিরুদ্ধে অমুসলিমদেরকে সহযোগিতা করা কুফরী।
9 Fozlur Rahman
অতএব, (মোনাফেক ও ইহুদি কাফের) উভয়ের পরিণতি এই যে, তারা জাহান্নামে যাবে; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই জালেমদের শাস্তি।
10 Mokhtasar Bangla
১৭. ফলে শয়তান ও তার অনুসারীর শেষ পরিণতি এ হলো যে, অনুসরণীয় শয়তান ও তার অনুসারী মানুষ উভয়ে কিয়ামত দিবসে আগুনে থাকবে। তারা তথায় চিরকাল অবস্থান করবে। বস্তুতঃ তাদের এ প্রতীক্ষিত শাস্তি হলো ওই সকল জালিমের শাস্তি যারা আল্লাহর সীমালঙ্ঘনপূর্বক নিজেদের উপর অবিচার করেছে।
11 Tafsir Ibn Kathir
১১-১৭ নং আয়াতের তাফসীর:
আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এবং তার মত অন্যান্য মুনাফিকদের প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, তারা ইয়াহূদী বানী নাযীরের সাথে মিথ্যা ওয়াদা করে তাদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দেয়। তারা তাদের সাথে ওয়াদা ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে বলেঃ “আমরা তোমাদের সঙ্গেই রয়েছি। প্রয়োজনে আমরা তোমাদেরকে সাহায্য করবে। যদি তোমরা পরাজিত হয়ে যাও এবং তোমাদেরকে মদীনা হতে বহিষ্কার করে দেয়া হয় তবে আমরাও তোমাদের সাথে এই শহর ছেড়ে চলে যাবো ।কিন্তু আসলে এই ওয়াদা করার সময় তা পূরণের নিয়তই তাদের ছিল না। তাদের এই মনোবলই ছিল না যে, তারা এরূপ করতে পারে, যুদ্ধে তাদেরকে সাহায্য করতে পারে এবং বিপদের সময় তাদের সাথে থাকে। বদনামের ভয়ে যদি তারা তাদের সাথে যোগও দেয়, কিন্তু তখনো তারা। যুদ্ধক্ষেত্রে স্থির থাকতে পারবে না, বরং কাপুরুষতা প্রদর্শন করে পালিয়ে যাবে। অতঃপর তারা কোন সাহায্যই পাবে না। এটা ভবিষ্যতের জন্যে শুভ সংবাদ।
এরপর আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ প্রকৃতপক্ষে এই মুনাফিকদের অন্তরে আল্লাহ্ অপেক্ষা তোমরাই অধিকতর ভয়ংকর। অর্থাৎ হে মুসলমানগণ! এদের অন্তরে আল্লাহর ভয় অপেক্ষা তোমাদেরই ভয় বেশী আছে। যেমন আল্লাহ্ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ
اِذَا فَرِیْقٌ مِّنْهُمْ یَخْشَوْنَ النَّاسَ كَخَشْیَةِ اللّٰهِ اَوْ اَشَدَّ خَشْیَةً
অর্থাৎ তাদের একটি দল আল্লাহর ভয়ের মত মানুষকে ভয় করে অথবা আরো বেশী ভয় (অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করার চেয়েও বেশী মানুষকে ভয় করে)।” (৪:৭৭)
এ জন্যেই এখানে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ এটা এই জন্যে যে, এরা এক নির্বোধ সম্প্রদায়।
তাদের ভীরুতা ও কাপুরুষতার অবস্থা এই যে, তারা মুসলমানদের সাথে। সামনা-সামনি কখনো যুদ্ধ করার সাহস রাখে না। হ্যাঁ, যদি সুরক্ষিত দূর্গের মধ্যে বসে থেকে কিংবা মরিচার (পরিখার) মধ্যে লুকিয়ে থেকে কিছু করার সুযোগে পায় তবে তারা ঐ সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়ে বীরত্ব প্রদর্শন করা তাদের জন্যে সুদূর পরাহত। তারা পরস্পরই একে অপরের শত্রু। তাদের পরস্পরের মধ্যে কঠিন শক্রতা বিদ্যমান। যেমন আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
وَیُذِیْقَ بَعْضَكُمْ بَاْسَ بَعْضٍ
অর্থাৎ “তোমাদের কাউকেও তিনি কারো যুদ্ধের স্বাদ আস্বাদন করিয়ে থাকেন।” (৬:৬৫)
মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি মনে কর যে, তারা ঐক্যবদ্ধ, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ঐক্যবদ্ধ নয়, বরং বিচ্ছিন্ন। তাদের মনের মিল নেই। মুনাফিকরা এক জায়গায় রয়েছে এবং কিতাবীরা অন্য জায়গায় রয়েছে। তারা একে অপরের শক্র। কারণ এই যে, এরা এক নির্বোধ সম্প্রদায়।
মহান আল্লাহ বলেনঃ এদের তুলনা— এদের অব্যবহিত পূর্বে যারা নিজেদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করেছে তারা। এর দ্বারা উদ্দেশ্য কুরায়েশ কাফিররাও হতে পারে যে, বদরের যুদ্ধের দিন তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয় এবং তারা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অথবা এর দ্বারা ইয়াহদী বানী কাইনুকাকে বুঝানো হয়েছে। তারাও দুষ্কর্যে ও ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে তাদের উপর জয়যুক্ত করেন। নবী (সঃ) তাদেরকে মদীনা হতে বিতাড়িত করেন। এ দুটিই নিকট অতীতের ঘটনা। এতে এদের জন্যে উপদেশ ও শিক্ষা রয়েছে। তবে এখানে বানী কাইনুকার ঘটনাটি উদ্দেশ্য হওয়াই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত। কেননা, এর পূর্বেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) বানী কাইনুকা নামক ইয়াহূদী গোত্রটিকে নির্বাসিত করেছিলেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
আল্লাহ্ তা'আলার উক্তিঃ এদের (মুনাফিকদের) তুলনা শয়তান- যে মানুষকে বলেঃ কুফরী কর, অতঃপর যখন সে কুফরী করে তখন শয়তান বলেঃ ‘তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ মুনাফিকদের অঙ্গীকারের ভিত্তিতে এই ইয়াহূদীদের মুসলমানদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত হওয়া ও তাদের সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করা, অতঃপর সুযোগেমত এই মুনাফিকদের ঐ ইয়াহূদীদের কাজে না আসা, যুদ্ধের সময় তাদেরকে সাহায্য না করা এবং তাদের নির্বাসনের সময় ঐ মুনাফিকদের তাদের সঙ্গী না হওয়া, একটি দৃষ্টান্তের দ্বারা আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বুঝাচ্ছেনঃ দেখো, শয়তান এই ভাবেই মানুষকে কুফরী করতে উত্তেজিত করে। অতঃপর যখন সে কুফরী করে বসে তখন সে নিজেই তাকে তিরস্কার করতে শুরু করে এবং নিজেকে আল্লাহ্ ওয়ালা বলে প্রকাশ করে। ঐ সময় সে বলেঃ নিশ্চয়ই আমি জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরকে ভয় করি।
এখানে এই দৃষ্টান্তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বানী ইসরাঈলের একজন আবেদের একটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে নাহীক (রাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, বানী ইসরাঈলের মধ্যে একজন আবেদ ছিলেন। তিনি ষাট বছর আল্লাহ্ তা'আলার ইবাদতে কাটিয়ে দিয়েছিলেন। শয়তান তাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু তার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। অবশেষে সে একজন মহিলার মাধ্যমে উদ্দেশ্য সিদ্ধির চেষ্টা করে। সে তার উপর এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করে যে, তাকে যেন জ্বিনে ধরেছে এই লক্ষণ প্রকাশ পায়। এদিকে ঐ মহিলাটির ভাইদেরকে সে এই কুমন্ত্রণা দেয় যে, ঐ আবেদের কাছেই এর চিকিৎসা হতে পারে। তারা মহিলাটিকে ঐ আবেদের কাছে নিয়ে গেল। আবেদ লোকটি তখন তার চিকিৎসা অর্থাৎ ঝাড়-ফুক, দু'আ-তাবী ইত্যাদি শুরু করে দিলেন। মহিলাটি তার ওখানেই থাকতে লাগলো। একদিন আবেদ মহিলাটির পার্শ্বেই ছিলেন এমন সময় শয়তান তার মনে কুচিন্তার উদ্রেক করলো। শেষ পর্যন্ত তিনি মহিলাটির সাথে ব্যভিচার করে বসলেন। মহিলাটি গর্ভবতী হয়ে গেল। এখন এই লজ্জা নিবারণের পন্থা ঐ শয়তান এই বাতলিয়ে দিলো যে, তিনি যেন মহিলাটিকে মেরে ফেলেন, অন্যথায় রহস্য খুলে যাবে। সুতরাং ঐ আবেদ মহিলাটিকে হত্যা করে ফেললেন। ওদিকে শয়তান মহিলাটির ভাইদের মনে আবেদের উপর সন্দেহ জাগিয়ে তুললো। তারা আবেদের আশ্রমের দিকে অগ্রসর হলো। এদিকে শয়তান আবেদের কাছে এসে বললোঃ “মহিলাটির লোকেরা আপনার কাছে আসছে। এখন আপনার মান-সম্মানও যাবে এবং প্রাণও যাবে। সুতরাং এখন যদি আপনি আমাকে সন্তুষ্ট করেন এবং আমি যা বলি তা মেনে নেন তবে আপনার মান-সম্মান ও প্রাণ বেঁচে যেতে পারে।” আবেদ বললেনঃ “ঠিক আছে, তুমি যা বলবে আমি তাই করতে প্রস্তুত আছি।” শয়তান তখন বললোঃ “আমাকে সিজদাহ্ করুন!” তিনি সিজদাহ্ করলেন। শয়তান তখন বললোঃ “হে হতভাগ্য! ধিক্ আপনাকে। আপনার সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।” (এ ঘটনাটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, একটি স্ত্রীলোক বকরী চরাতো এবং একজন পাদরীর আশ্রমের নীচে রাত্রি যাপন করতো। তার চারটি ভাই ছিল। একদিন শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে পাদরী ঐ স্ত্রীলোকটির সাথে ব্যভিচার করে বসলেন। স্ত্রী লোকটি গর্ভবতী হয়ে গেল। শয়তান পাদরীর কাছে এসে বললোঃ “এটা তো বড়ই লজ্জার কথা। সুতরাং উত্তম পন্থা এটাই যে, মহিলাটিকে হত্যা করে কোন জায়গায় পুঁতে ফেলুন। আপনার সম্পর্কে মানুষের মনে কোন ধারণাই আসবে না। কেননা, আপনার পবিত্রতা সম্বন্ধে তারা পূর্ণ ওয়াকিফহাল। আর যদি আপনাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করাও হয় তবে মিথ্যা কিছু একটা বলে দিবেন। কে এমন আছে যে, আপনার কথা বিশ্বাস করবে না?” এক রাত্রে সুযোগে পেয়ে শয়তানের কথামত তিনি মহিলাটিকে হত্যা করে দিলেন এবং এক জন-মানব হীন জঙ্গলে পুঁতে ফেললেন। তখন শয়তান মহিলাটির চার ভাই এর নিকট গমন করলো এবং স্বপ্নে প্রত্যেককে ঘটনাটি শুনিয়ে দিলো। তাকে পুঁতে ফেলার জায়গাটির কথাও বলে দিলো। সকালে জেগে ওঠে তাদের একজন বললোঃ “আজ রাত্রে আমি এক বিস্ময়কর স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু আমার সাহস হয় না যে, আপনাদের সামনে এটা বর্ণনা করি!” তার ভাইয়েরা বললোঃ “না, অবশ্যই তোমাকে বলতে হবে।” তখন সে বলতে শুরু করলো যে, এই ভাবে অমুক আবেদ তাদের বোনের সাথে কুকাজ করেছিল। ফলে সে গর্ভবতী হয়েছিল, তাই সে তাকে হত্যা করেছে এবং অমুক জায়গায় তার মৃতদেহ পুঁতে রেখেছে। তার এ স্বপ্নের কথা শুনে ঐ তিন ভাইয়ের প্রত্যেকে বললোঃ “আমিও এই স্বপ্নই দেখেছি।” এখন সবারই দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে গেল যে, এ স্বপ্ন সত্য। সুতরাং তারা এ খবর সরকারকে দিয়ে দিলো। বাদশাহর হুকুমে আবেদকে পাকড়াও করা হলো এবং যে জায়গায় সে মহিলাটির মৃতদেহ পুঁতে রেখেছিল সেখানে যাওয়া হলো। তারপর ঐ জায়গা খনন করিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করা হলো। পূর্ণ প্রমাণের পর ঐ পাদরীকে শাহী দরবারে নিয়ে যাওয়া হলো। ঐ সময় শয়তান তার সামনে প্রকাশিত হয়ে বললোঃ “এসব আমিই করিয়েছি। এখনও যদি আপনি আমাকে সন্তুষ্ট করেন তবে আমি আপনার প্রাণ রক্ষা করতে পারি।” আবেদ বললোঃ “বল, কি বলবে?” উত্তরে শয়তান বললোঃ “আমাকে সিজদাহ্ করুন।” আবেদ তাকে সিজদাহ্ও করলো। এভাবে তাকে পূর্ণ বে-ঈমান বানিয়ে নিয়ে শয়তান তাকে বললোঃ “আপনার সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই। আমি তো বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।” অতঃপর বাদশাহর নির্দেশক্রমে পাদরীকে হত্যা করে দেয়া হলো।
এটা প্রসিদ্ধ হয়ে আছে যে, ঐ পাদরীর নাম ছিল বারসীমা। হযরত আলী (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ), হযরত তাউস (রাঃ), হযরত মুকাতিল ইবনে হাইয়ান (রঃ) প্রমুখ গুরুজন হতে এ ঘটনাটি বিভিন্ন শব্দে কিছু কম-বেশীর সাথে বর্ণিত আছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
এরই সম্পূর্ণ বিপরীত হলো হযরত জুরায়েজ (রঃ) নামক আবেদের ঘটনাটি। একজন ব্যভিচারিণী মহিলা তার উপর অপবাদ দেয় যে, তিনি তার সাথে ব্যভিচার করেছেন এবং এরই ফলে তার শিশুটি জন্মগ্রহণ করেছে। তার এই কথার উপর বিশ্বাস করে জনগণ তাঁর ইবাদতখানাটি ঘিরে নেয় এবং গালি দিতে দিতে অত্যন্ত বে-আদবীর সাথে তাঁকে তাঁর ইবাদতখানা হতে বের করে আনে। তারা তাঁর ইবাদতখানাটি ভেঙ্গে ফেলে। এই বেচারা হতবুদ্ধি হয়ে তাদেরকে বার বার বলতে থাকেনঃ “বল, ঘটনাটি কি?” কিন্তু কেউই তাঁর কথায় কর্ণপাত করলো না। অবশেষে তাদের একজন বললোঃ “ওরে ভণ্ড তাপস! তাপসের পোশাক পরে ভণ্ডামী করছো? তোমার দ্বারা এই শয়তানী কাজ সংঘটিত হলো? এই মহিলাটির সাথে তুমি ব্যভিচারে লিপ্ত হলে!” হযরত জুরায়েজ (রঃ) তখন বললেনঃ “আচ্ছা, থামো, ধৈর্য ধর। ঐ শিশুটিকে নিয়ে এসো।” অতঃপর দুধের ঐ শিশুটিকে নিয়ে আসা হলো। হযরত জুরায়েজ (রঃ) নিজের ইজ্জত রক্ষার জন্যে মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলেন। অতঃপর তিনি ঐ শিশুটিকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে শিশু! বলতো, তোমার পিতা কে?” নিজের ওলীর ইজ্জত রক্ষার্থে আল্লাহ্ রাব্বল আলামীন ঐ অবলা শিশুকে বাকশক্তি দান করলেন। সুতরাং শিশুটি সুন্দর ভাষায় উচ্চকণ্ঠে বলে উঠলোঃ “আমার পিতা হলো এক রাখাল।” শিশুর মুখে একথা শুনে তো বানী ইসরাঈলের লজ্জার কোন সীমা থাকলো না। ঐ বুযুর্গ ব্যক্তির সামনে তারা করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলো। তখন তিনি বললেনঃ “আচ্ছা, ঠিক আছে। এখন তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও।” জনগণ তাঁকে বললোঃ “আমরা সোনা দ্বারা আপনার ইবাদতখানাটি বানিয়ে দিচ্ছি।” তিনি উত্তরে বললেনঃ “না, বরং যেমন ছিল তেমনই বানিয়ে দাও।”
এরপর মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ ফলে কুফরীকারী ও কুফরীর হুকুমদাতা উভয়ের পরিণাম হবে জাহান্নাম। সেখানে তারা স্থায়ী হবে আর যালিমদের কর্মফল এটাই।