يٰٓاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْٓا اِذَا جَاۤءَكُمُ الْمُؤْمِنٰتُ مُهٰجِرٰتٍ فَامْتَحِنُوْهُنَّۗ اَللّٰهُ اَعْلَمُ بِاِيْمَانِهِنَّ فَاِنْ عَلِمْتُمُوْهُنَّ مُؤْمِنٰتٍ فَلَا تَرْجِعُوْهُنَّ اِلَى الْكُفَّارِۗ لَا هُنَّ حِلٌّ لَّهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّوْنَ لَهُنَّۗ وَاٰتُوْهُمْ مَّآ اَنْفَقُوْاۗ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ اَنْ تَنْكِحُوْهُنَّ اِذَآ اٰتَيْتُمُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّۗ وَلَا تُمْسِكُوْا بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ وَسْـَٔلُوْا مَآ اَنْفَقْتُمْ وَلْيَسْـَٔلُوْا مَآ اَنْفَقُوْاۗ ذٰلِكُمْ حُكْمُ اللّٰهِ ۗيَحْكُمُ بَيْنَكُمْۗ وَاللّٰهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ ( الممتحنة: ١٠ )
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
হে মু’মিনগণ! ঈমানদার নারীরা যখন তোমাদের কাছে হিজরাত করে আসে তখন তাদেরকে পরখ করে দেখ (তারা সত্যিই ঈমান এনেছে কি না)। তাদের ঈমান সম্বন্ধে আল্লাহ খুব ভালভাবেই জানেন। অতঃপর তোমরা যদি জানতে পার যে, তারা মু’মিনা, তাহলে তাদেরকে কাফিরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। মু’মিনা নারীরা কাফিরদের জন্য হালাল নয়, আর কাফিররাও মু’মিনা নারীদের জন্য হালাল নয়। কাফির স্বামীরা (মোহর স্বরূপ) যা তাদের জন্য খরচ করেছিল তা কাফিরদেরকে ফেরত দিয়ে দাও। অতঃপর তোমরা তাদেরকে মোহর প্রদান করতঃ বিয়ে করলে তাতে তোমাদের কোন অপরাধ হবে না। তোমরা কাফির নারীদেরকে (বিবাহের) বন্ধনে আটকে রেখ না। তোমরা (তাদের মোহর স্বরূপ) যা ব্যয় করেছ তা ফেরত চেয়ে নাও, আর কাফিররাও ফেরত চেয়ে নিবে যা তারা ব্যয় করেছে (তাদের মু’মিনা স্ত্রীদের মোহর স্বরূপ)। এটা আল্লাহর নির্দেশ। তিনি তোমাদের মাঝে ফয়সালা করে দেন। আল্লাহ সর্ব জ্ঞানের অধিকারী, মহা বিজ্ঞানী।
English Sahih:
O you who have believed, when the believing women come to you as emigrants, examine [i.e., test] them. Allah is most knowing as to their faith. And if you know them to be believers, then do not return them to the disbelievers; they are not lawful [wives] for them, nor are they lawful [husbands] for them. But give them [i.e., the disbelievers] what they have spent. And there is no blame upon you if you marry them when you have given them their due compensation [i.e., mahr]. And hold not to marriage bonds with disbelieving women, but ask for what you have spent and let them [i.e., the disbelievers] ask for what they have spent. That is the judgement of Allah; He judges between you. And Allah is Knowing and Wise.
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের নিকট বিশ্বাসী নারীরা দেশত্যাগ করে আসলে, তোমরা তাদেরকে পরীক্ষা কর। [১] আল্লাহ তাদের ঈমান (বিশ্বাস) সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা বিশ্বাসীনী,[২] তবে তাদেরকে অবিশ্বাসীদের নিকট ফেরত পাঠিয়ে দিয়ো না। বিশ্বাসী নারীরা অবিশ্বাসীদের জন্য বৈধ নয় এবং অবিশ্বাসীরা বিশ্বাসী নারীদের জন্য বৈধ নয়।[৩] অবিশ্বাসীরা যা ব্যয় করেছে, তা তাদেরকে ফিরিয়ে দাও।[৪] অতঃপর তোমরা তাদেরকে বিবাহ করলে তোমাদের কোন অপরাধ হবে না;[৫] যদি তোমরা তাদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও। তোমরা অবিশ্বাসী নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না।[৬] তোমরা যা ব্যয় করেছ,[৭] তা ফেরত চেয়ে নাও এবং অবিশ্বাসীরা ফেরত চেয়ে নিক, যা তারা ব্যয় করেছে।[৮] এটাই আল্লাহর ফায়সালা। তিনি তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করছেন।[৯] আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
[১] হুদাইবিয়ার সন্ধিপত্রে একটি শর্ত এও ছিল যে, মক্কা থেকে কোন ব্যক্তি মুসলিমদের নিকট চলে গেলে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু তাতে পুরুষ বা মহিলা বলে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ ছিল না। তবে বাহ্যিকভাবে (أَحَدٌ) এর মধ্যে উভয়েই শামিল। কিছু দিন পর কোন কোন মহিলা মক্কা থেকে হিজরত করে মুসলমানদের কাছে চলে গেলে কাফেররা তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী করে। ফলে এই আয়াতে মহান আল্লাহ মুসলমানদের পথ প্রদর্শন করলেন এবং এই নির্দেশ দিলেন। পরীক্ষা করার অর্থ, এ ব্যাপারে যাচাই করে নাও যে, হিজরত করে আগমনকারিণী যে মহিলারা ঈমান আনার কথা প্রকাশ করছে, তারা তাদের স্বামীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে অথবা কোন মুসলিমের প্রেমে পড়ে কিংবা অন্য কোন স্বার্থের কারণে তো চলে আসেনি? কেবল আশ্রয় গ্রহণের জন্য ঈমান আনার দাবী করছে না তো?
[২] অর্থাৎ, যাচাই করার পর যখন তোমরা এই ফলাফলে পৌঁছবে এবং প্রবল ধারণা এই সৃষ্টি হবে যে, বাস্তবিকই এ মু'মিনা।
[৩] এটা হল তাদেরকে তাদের কাফের স্বামীদের নিকট ফিরিয়ে না পাঠানোর কারণ। আর তা হল, এখন আর কোন মু'মিন মহিলা কোন কাফেরের জন্য হালাল নয়, যেমন ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে এটা জায়েয ছিল। তাই তো নবী করীম (সাঃ)-এর কন্যা যায়নাব (রায্বিয়াল্লাহু আনহার) বিবাহ আবূল আ'স ইবনে রাবী'র সাথে হয়েছিল, অথচ সে মুসলিম ছিল না। আয়াতে আগামীতে এ রকম করতে নিষেধ করা হল। আর এই কারণেই এখানে বলা হল যে, তারা একে অপরের জন্য হালাল নয়। সুতরাং তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফিরিয়ে দিও না। হ্যাঁ, স্বামীও যদি মুসলিম হয়ে যায়, তবে তাদের বিবাহ বন্ধন প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে, যদিও স্বামী তার স্ত্রীর পরে (ইদ্দতের মধ্যে) হিজরত করে আসে।
[৪] অর্থাৎ, তাদের কাফের স্বামীরা তাদেরকে যে মোহর দিয়েছিল, তা তোমরা তাদেরকে ফিরিয়ে দাও।
[৫] এ কথা মুসলিমদেরকে বলা হচ্ছে যে, যে নারীরা ঈমানের কারণে তাদের কাফের স্বামীদেরকে ত্যাগ করে তোমাদের কাছে এসে গেছে, তোমরা তাদেরকে বিবাহ করতে পার। তবে শর্ত হল, তাদের প্রাপ্য মোহর তাদেরকে দিয়ে দেবে। তবে এ বিয়েও যথানিয়মে হবে। অর্থাৎ, প্রথমতঃ ইদ্দত পূরণ হওয়ার পর হবে। দ্বিতীয়তঃ এতে অভিভাবকের সম্মতি ও অনুমতি ও দু'জন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষীর উপস্থিতিও আবশ্যক। অবশ্য যে মহিলার সাথে তার স্বামীর কোন সম্পর্ক (মিলন) হয়নি, তার সাথে ইদ্দত ছাড়াই সত্বর বিবাহ জায়েয।
[৬] عِصَمٌ হল, عِصْمَةٌ এর বহুবচন। এখানে এর অর্থ, দাম্পত্য সম্পর্ক। অর্থাৎ, যদি স্বামী মুসলিম হয়ে যায় এবং স্ত্রী কাফের ও মুশরিক রয়ে যায়, তাহলে এ রকম মুশরিক মহিলাকে স্বীয় বিবাহ বন্ধনে রাখা বৈধ নয়। স্বামী তাকে সত্বর তালাক দিয়ে নিজের কাছ থেকে পৃথক করে দেবে। সুতরাং এই নির্দেশের পর উমার (রাঃ) তাঁর দু'জন মুশরিক স্ত্রীকে এবং ত্বালহা ইবনে উবায়দুল্লাহও তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেন। (ইবনে কাসীর) তবে স্ত্রী যদি কিতাবিয়া (ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান) হয়, তাহলে তাকে তালাক দেওয়া জরুরী নয়। কেননা, তাদের সাথে বিবাহ বৈধ। কাজেই সে (ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান স্ত্রী) যদি প্রথম থেকেই স্ত্রীরূপে স্বামীর কাছে থেকে থাকে, তবে ইসলাম কবুল করার পর তাকে বিচ্ছিন্ন করার কোন প্রয়োজন নেই।
[৭] অর্থাৎ, সেই মহিলাদের উপর, যারা কুফরীতে অবিচল থাকার কারণে কাফেরদের নিকট চলে গেছে।
[৮] অর্থাৎ, সেই মহিলাদের উপর, যারা মুসলিম হয়ে হিজরত করে মদীনায় চলে এসেছে।
[৯] অর্থাৎ, উভয়েরই একে অপরকে মোহরের পাওনা আদায় করার, বরং চেয়ে নেওয়ার উল্লিখিত বিধান হল আল্লাহর বিধান। ইমাম ক্বুরত্বুবী বলেন, এ বিধান সেই যুগের সাথেই সীমাবদ্ধ ছিল। এ ব্যাপারে সকল মুসলিমের ঐকমত্য রয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর) আর এর কারণ হল সেই চুক্তি, যা সেই সময় উভয় দলের মাঝে হয়েছিল। এই ধরনের চুক্তির পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ভবিষ্যতেও উক্ত বিধানের উপর আমল করা জরুরী হবে। অন্যথা হবে না।