১৮১-১৮৬ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা‘আলা এমন একটি উম্মাতের কথা বলছেন যারা নিজেরা হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত, এবং হকের দিকে আহ্বান জানায় এবং এর দ্বারা বিচার ফায়সালা করে। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمِنْ قَوْمِ مُوْسٰٓي أُمَّةٌ يَّهْدُوْنَ بِالْحَقِّ وَبِه۪ يَعْدِلُوْنَ)
“মূসার সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন দল রয়েছে যারা অন্যকে ন্যায়ভাবে পথ দেখায় ও সে মতেই বিচার করে।” (সূরা আ‘রাফ ৭:১৫৯)
রবী‘ বিন আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: নিশ্চয়ই আমার উম্মতের মধ্যে একটি জাতি রয়েছে যারা ঈসা (আঃ) যতদিন আগমন না করবেন ততদিন পর্যন্ত হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। (দুররুল মানসুর ৩/১৪৯)
আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন: এরা উম্মাতে মুহাম্মাদীর অন্তর্ভুক্ত। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: আমার উম্মাতের মধ্যে একটি দল কিয়ামত অবধি সত্যের ওপর জয়ী থাকবে। যারা তাদের বিরুদ্ধাচরণ করবে তারা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (সহীহ বুখারী হা: ৭৪৬০)
অন্য বর্ণনায় এসেছে: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, তারা কারা? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: আমি ও আমার সাহাবীগণ যে পথের (আকীদাহ ও আমল) ওপর প্রতিষ্ঠিত আছি। (তিরমিযী হা: ২৬৪১, সহীহ)
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রাঃ) বলেন: তারা যদি আহলুল হাদীস না হন, তাহলে তারা কারা তা আমি জানি না।
(سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُوْنَ)
‘আমি তাদেরকে এমনভাবে ক্রমে ক্রমে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাই যে, তারা জানতেও পারে না।’ অর্থাৎ যারা কাফির আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়ার সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ও আরাম আয়েশের মাধ্যমে অবকাশ দেন তবে আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
ইবনু কাসীর (রাঃ) বলেন, এর অর্থ হল তাদের জন্য জীবিকার দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং পার্থিব সুখ সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত এর দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং ধারণা করে যে, তাদের এ অবস্থা চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَلَمَّا نَسُوْا مَا ذُكِّرُوْا بِه۪ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍ ط حَتّٰي إِذَا فَرِحُوْا بِمَآ أُوْتُوْآ أَخَذْنٰهُمْ بَغْتَةً فَإِذَا هُمْ مُّبْلِسُوْنَ فَقُطِعَ دَابِرُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا ط وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ)
“তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা বিস্মৃত হল তখন আমি তাদের জন্য সমস্ত কিছুর (নেয়ামতের) দ্বার উন্মুক্ত করে দিলাম; অবেশেষে তাদেরকে যা দেয়া হল যখন তারা তাতে উল্লসিত হল তখন অকস্মাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম; ফলে তখনি তারা নিরাশ হল। অতঃপর জালিম সম্প্রদায়ের মূলোচ্ছেদ করা হল এবং সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।” (সূরা আন‘আম ৬:৪৪-৪৫)। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
(مَا بِصَاحِبِهِمْ مِنْ جِنَّةٍ)
‘তাদের সঙ্গী তো উন্মাদ নয়’ এখানে সঙ্গী বলতে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। মুশরিকরা নাবী (সাঃ)-কে কখনো জাদুকর, কখনো পাগল ইত্যাদি বলত। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে হুশিয়ার করে অন্যত্র বলেন,
(قُلْ إِنَّمَآ أَعِظُكُمْ بِوَاحِدَةٍ ج أَنْ تَقُوْمُوْا لِلّٰهِ مَثْنٰي وَفُرَادٰي ثُمَّ تَتَفَكَّرُوْا قف مَا بِصَاحِبِكُمْ مِّنْ جِنَّةٍ ط إِنْ هُوَ إِلَّا نَذِيْرٌ لَّكُمْ بَيْنَ يَدَيْ عَذَابٍ شَدِيْدٍ)
“বল, আমি তোমাদেরকে শুধু একটি উপদেশ দিচ্ছি যে, তোমরা আল্লাহ তা‘আলারই জন্য দাঁড়াও দু’ দু’ জন করে ও এক এক জন করে; তারপর তোমরা চিন্তা কর (দেখতে পাবে), তোমাদের সঙ্গীটির মধ্যে কোন মস্তিষ্ক বিকৃতি নেই। সে তো কঠিন ‘আযাব আসার পূর্বে তোমাদের একজন সতর্ককারী মাত্র।” (সূরা সাবা ৩৪:৪৬) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَمَا صَاحِبُكُمْ بِمَجْنُوْنٍ)
“এবং তোমাদের সাথী (মুহাম্মদ) পাগল নয়।” (সূরা তাকভীর ৮১:২২)
সুতরাং কাফিরদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ ইত্যাদি দেখে আশ্চর্যের কিছুই নেই। কারণ দুনিয়াতে এসব তাদেরকে অবকাশস্বরূপ দেয়া হয়েছে, পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ফিরকা নাজিয়া তথা মুক্তি প্রাপ্ত দল হল তারাই যারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবীদের আকীদাহ ও আমলের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
২. কাফিরদের দুনিয়ার সুখ সাচ্ছন্দ প্রদানের কারণ জানলাম।
৩. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে কাফির মুশরিকরা বিভিন্নভাবে গালিগালাজ করে কষ্ট দিত।