আল ফজর আয়াত ২০
وَّتُحِبُّوْنَ الْمَالَ حُبًّا جَمًّاۗ ( الفجر: ٢٠ )
Wa tuhibboonal maala hubban jammaa (al-Fajr ৮৯:২০)
English Sahih:
And you love wealth with immense love. (Al-Fajr [89] : 20)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আর তোমরা ধনসম্পদকে অতিরিক্ত ভালবাস। (আল ফজর [৮৯] : ২০)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
এবং তোমরা ধন-সম্পদকে অত্যধিক ভালোবেসে থাক। [১]
[১] جَمّا অর্থ হল كَثِيرًا অর্থাৎ, অত্যধিক।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর তোমরা ধন-সম্পদ খুবই ভালবাস [১] ;
[১] এখানে চতুর্থ মন্দ অভ্যাস বর্ণনা করা হয়েছে যে, তোমরা ধন-সম্পদকে অত্যাধিক ভালবাস। [ইবন কাসীর]
3 Tafsir Bayaan Foundation
আর তোমরা ধন-সম্পদকে অতিশয় ভালবাস।
4 Muhiuddin Khan
এবং তোমরা ধন-সম্পদকে প্রাণভরে ভালবাস।
5 Zohurul Hoque
আর তোমরা ধনসম্পত্তি ভালবাস গভীর ভালবাসায়।
6 Mufti Taqi Usmani
এবং ধন-সম্পদকে সীমাতিরিক্ত ভালোবাস।
7 Mujibur Rahman
এবং তোমরা ধন-সম্পদকে অত্যধিক ভালবেসে থাক,
8 Tafsir Fathul Mazid
১৫-২০ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
আলোচ্য আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের একটি চিরাচরিত স্বভাবের কথা তুলে ধরেছেন যে, মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা যখন সুখ-সাচ্ছন্দ্য দান করেন তখন আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে সে ভাল ধারণা করে, পক্ষান্তরে মানুষ দুঃখ কষ্টে পতিত হলে আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করে। মানুষকে যখন আল্লাহ তা‘আলা ধন-দৌলত ও সুখ-সাচ্ছন্দ্য দান করেন তখন মনে করে সে একজন আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যশীল বান্দা যার কারণে দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাকে এসব দান করে সম্মানিত করেছেন। আবার দরিদ্রতায় পতিত হলে মনে মনে খারাপ ধারণা পোষণ করে, আসলে প্রকৃত ব্যাপার তা নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَيَحْسَبُوْنَ أَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِه۪ مِنْ مَّالٍ وَّبَنِيْنَ لا نُسَارِعُ لَهُمْ فِي الْخَيْرَاتِ ط بَلْ لَّا يَشْعُرُوْنَ)
“তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সাহায্য করি। তাদের জন্য সকল প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, তারা বুঝে না।” (সূরা মু’মিনূন ২৩ : ৫৫-৫৬)
মূলত সুখ-সাচ্ছন্দ্য, বালা-মসিবত ইত্যাদি দেওয়া হয় পরীক্ষা করার জন্য, কে অসচ্ছল অবস্থাতেও ঈমান নিয়ে অবিচল থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ ط وَنَبْلُوْكُمْ بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً ط وَإِلَيْنَا تُرْجَعُوْنَ)
“জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।” (সূরা আম্বিয়া ২১ : ৩৫)
যদি মানুষ মু’মিন হয় তাহলে তার সুঃখ-দুখ সর্বাবস্থায়ই কল্যাণকর। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : মু’মিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তাদের প্রত্যেক কাজ কল্যাণ কর। যদি ভাল কিছু পায় তাহলে আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায় করে, এটা তার জন্য কল্যাণকর। আর যদি কোন বিপদে পতিত হয় তাহলে ধৈর্য ধারণ করেÑএটাও তার জন্য কল্যাণকর। (সহীহ মুসলিম হা. ২৯৯৯) আর যদি মু’মিন না হয় তাহলে দুনিয়ার সুখ-সাচ্ছন্দ্য তার জন্য ক্ষণিকের জন্য অবকাশ মাত্র, অতঃপর তাকে কঠিন আযাবে পতিত হতে হবে।
(كَلَّا بَلْ لَّا......)
অর্থাৎ তোমরা যেমন ধারণা করছ বিষয়টি তেমন না যে, ধন-সম্পদ পেলে সম্মানিত হয়ে গেলাম আর না পেলে অপমানিত হলাম। না, বরং তোমরা ইয়াতীমদের সাথে সদাচরণ কর না, তাদের হক আদায় কর না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: সে ঘর সর্বোত্তম যে ঘরে ইয়াতীমদের সাথে ভাল ব্যবহার করা হয়। আর সে ঘর সবচেয়ে খারাপ যে ঘরে ইয়াতীমদের সাথে অসদাচরণ করা হয়। অতঃপর নাবী (সাঃ) দুই আঙ্গুল একত্র করে বললেন: আমি ও ইয়াতিমের দায়িত্বশীল ব্যক্তি জান্নাতে এভাবে পাশাপাশি থাকব। (সহীহ বুখারী হা. ৫৩০৪)
(وَتَأْكُلُوْنَ التُّرَاثَ....)
অর্থাৎ ইয়াতীমদের মীরাস অন্যায়ভাবে সম্পূর্ণ তোমরা ভক্ষণ করে থাক। আয়াতে ইয়াতীমদের মীরাসের কথা উল্লেখ থাকলেও সকল প্রকার উত্তরাধিকার এতে শামিল। যারা ওয়ারীসদারের প্রাপ্য ওয়ারিস থেকে বঞ্চিত করে তাদের জন্যও এ ধমক। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: যে ব্যক্তি কারো এক বিঘত জমিন অন্যায়ভাবে দখল করল কিয়ামতের দিন তাকে সাত তবক জমিনের বেড়ী পরানো হবে। (সহীহ বুখারী হা. ৩১৯৮, সহীহ মুসলিম হা. ১৬১০)
অর্থ প্রসিদ্ধ তাবেয়ী সুদ্দী (রহঃ) বলেন : أكلا شديدا বা দারুনভাবে ভোগ করা। ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : হারাম-হালাল যেকোন পন্থায় হোক হাসিল করা।
جَمًّا শব্দটি كثير বা অত্যধিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ প্রাচুর্যের লালসা তাদেরকে এমন বানিয়ে নিয়েছে যে, তারা সম্পদ থাকা-না থাকাই সম্মানের কারণ হিসাবে বিবেচনা করছে। রাসূলুল্লাহ বলেছেন : আদম সন্তানের যদি একটি পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকে তাহলে তারা চাইবে যদি এরূপ দুটি স্বর্ণের পাহাড় হত। মূলত তাদের মুখ মাটি ছাড়া কিছুই ভরতে পারবে না। (সহীহ বুখারী হা. ৬৪৩৯)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মানুষের চিরাচরিত স্বভাবের কথা জানতে পারলাম যা অব্যশ্যই বর্জনীয়।
২. ইয়াতিমদের দেখাশুনার গুরুত্ব ও ফযীলত জানতে পারলাম।
৩. সম্পদের প্রতি মানুষের মোহ কত বেশি তাও জানতে পারলাম।
9 Fozlur Rahman
এবং সম্পদকে অধিক ভালবাস।
10 Mokhtasar Bangla
২০. তোমরা সম্পদকে কঠিনভাবে ভালোবাসো। ফলে এর প্রতি লোভের বশীভূত হয়ে তা ব্যয় করতে কার্পণ্য করো।
11 Tafsir Ibn Kathir
১৫-২০ নং আয়াতের তাফসীর
ভাবার্থ হচ্ছেঃ যে সব লোকে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য এবং প্রশস্ততা পেয়ে মনে করে যে, আল্লাহ তা'আলা তাদের সম্মান করেছেন, তারা ভুল মনে করে। বরং এটা তাদের প্রতি একটা পরীক্ষা বৈ কিছু নয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
اَیَحْسَبُوْنَ اَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِهٖ مِنْ مَّالٍ وَّ بَنِیْنَ ـ نُسَارِعُ لَهُمْ فِی الْخَیْرٰتِ بَلْ لَّا یَشْعُرُوْنَ
অর্থাৎ “আমি যে তাদের ধন-মাল ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি করছি, এতে কি তারা ধারণা করছে যে, আমি তাদের কল্যাণ সাধন করছি? (না, তা কখনও নয়) বরং তারা বুঝে না।" (২৩:৫৫-৫৬) এটা তাদের জন্যে তাদের প্রতিপালকের দেয়া সম্মান, কল্যাণ ও পুরস্কার নয়। বরং এটা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে তাদের উপর একটা পরীক্ষা।
আবার যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালক পরীক্ষা করেন এবং তাদের রিক সংকুচিত করে দেন তখন তারা বলেঃ আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে হীন করেছেন। অথচ এসব আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তাদের উপর পরীক্ষা ছাড়া কিছুই নয়। এ কারণেই كَلَّا দ্বারা উপরোক্ত উভয় ধারণাকে খণ্ডন করা হয়েছে। এটা প্রকৃত ব্যাপার নয় যে, আল্লাহ যার মাল ধনে প্রশস্ততা দান করেছেন তার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট এবং যার ধন সম্পদ সংকুচিত করে দিয়েছেন তার প্রতি তিনি অসন্তুষ্ট। বরং এই উভয় অবস্থায় স্বীয় চরিত্র ঠিক রেখে কাজ করে যাওয়াই তার সন্তুষ্টি লাভের একমাত্র উপায়। ধনী হয়ে আল্লাহ তাআলার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং দরিদ্র হয়ে ধৈর্য ধারণ করাই বরং আল্লাহর প্রেমিকের পরিচয়। আল্লাহ তা'আলা উভয় প্রকারেই তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করে থাকেন।
অতঃপর ইয়াতীমদেরকে সম্মান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন হাদীস শরীফে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃ “যে ঘরে ইয়াতীম রয়েছে এবং তাকে উত্তমরূপে প্রতিপালন করা হচ্ছে সেই ঘর সবচেয়ে উত্তম ঘর। আর যে ঘরে ইয়াতীম রয়েছে এবং তার সাথে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে সেই ঘর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঘর।” অতঃপর নবী করীম (সঃ) স্বীয় আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে বললেনঃ “আমি এবং ইয়াতীমের লালন পালনকারী এই ভাবে জান্নাতে অবস্থান করবো।” সুনানে আবি দাউদে হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি এবং ইয়াতীমদের লালন পালনকারী এভাবে জান্নাতে থাকবো। ঐ সময় তিনি তাঁর শাহাদাত ও মধ্যমা অঙ্গুলিকে মিলিত করে ইশারা করলেন।
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ বরং তোমরা ইয়াতীমকে সম্মান ও আদর যত্ন কর না এবং অভাব গ্রস্তদেরকে খাদ্যদানে পরস্পরকে উৎসাহিত কর না এবং তোমরা উত্তরাধিকারীদের প্রাপ্য সম্পদ সম্পূর্ণরূপে ভক্ষণ করে থাকো আর তোমরা ধন-দৌলতের প্রতি অতিমাত্রায় ভালবাসা রাখ (কিন্তু এটা মোটেই উচিত নয়)।