১৫-১৬ নং আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়::
এখানে বর্ণনা করা হচ্ছে, যদি কোন ব্যক্তি আমল করে আর সে আমলের বিনিময়ে দুনিয়া হাসিল করা বা দুনিয়ার সুনাম ও সুখ-সাচ্ছন্দ্য পাওয়ার উদ্দেশ্য থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দুনিয়াতেই তার কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দিয়ে দেবেন, তাতে কম করে দেয়া হবে না। কিন্তু আখিরাতে তাদের জন্য জাহান্নাম ছাড়া কিছুই থাকবে না, তারা দুনিয়াতে যা আমল করেছে সব বাতিল হয়ে যাবে, আখিরাতে কোন উপকারে আসবে না।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مَنْ كَانَ يُرِيْدُ حَرْثَ الْاٰخِرَةِ نَزِدْ لَه۫ فِيْ حَرْثِه۪ ج وَمَنْ كَانَ يُرِيْدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِه۪ مِنْهَا لا وَمَا لَه۫ فِي الْاٰخِرَةِ مِنْ نَّصِيْبٍ)
“যে আখিরাতের ফসল কামনা করে তার জন্য আমি তার ফসল বর্ধিত করে দেই এবং যে দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমি তাকে এরই কিছু দেই, তবে আখিরাতে তার জন্য কিছুই থাকবে না।” (সূরা শূরা ৪২:২০)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
(مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَه۫ فِيْهَا مَا نَشَا۬ءُ لِمَنْ نُّرِيْدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَه۫ جَهَنَّمَ ج يَصْلَاهَا مَذْمُوْمًا مَّدْحُوْرًا)
“কেউ পার্থিব সুখ-সম্ভোগ কামনা করলে আমি যাকে যা ইচ্ছা এখানেই সত্বর দিয়ে থাকি; পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি যেথায় সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে দূরীকৃত অবস্থায়।” (সূরা ইসরা ১৭:১৮)
উক্ত আয়াত দুটি সম্পর্কে অনেকের ধারণা যে, তাতে যাদের কথা বর্ণনা করা হয়েছে তারা হল রিয়াকারী। অর্থাৎ লোক দেখানো আমলকারী। অনেকে বলেন: এরা হল ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান। আবার কেউ কেউ বলেন, এরা হল যারা দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে আমল করে থাকে ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাদের বিনিময় দুনিয়াতেই দিয়ে দেন এবং আখিরাতে তারা জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়। কারণ তাদের আমলের বিনিময় তাদেরকে দুনিয়াতেই দিয়ে দেয়া হয়েছে। আখিরাতে দেয়ার মত আর কিছুই থাকবে না।
যাই হোক, যারা কোন সৎ আমল করবে কিন্তু সে সৎ আমল মানুষকে দেখানোর জন্য করুক, আর প্রশংসা পাওয়ার জন্য করুক, বা দুনিয়া হাসিলের জন্য করুক তা গ্রহণ করা হবে না। যে ব্যক্তি এমন আমল করবে সে শির্কে লিপ্ত হবে। তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। যেমন অনেকে সালাত আদায় করে মানুষকে দেখানোর জন্য, অনেকে দান করে প্রশংসা পাওয়ার জন্য, অনেকে জিহাদ করে বীরত্ব প্রকাশ করার জন্য। হাদীসে এসেছে: কিয়ামতের দিন তিনজন ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, তাদের একজন হল এমন ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা‘আলা অনেক সম্পদ দান করেছেন, তাকে নিয়ে আসা হবে। তাকে যেসকল নেয়ামত দান করা হয়েছিল তা স্বরণ করিয়ে দেয়া হবে, সে স্মরণ করতে পারবে। তাকে বলা হবে, কী আমল করেছ? সে বলবে, এমন কোন পথ নেই যা আপনি পছন্দ করেন সে পথে ব্যয় করিনি। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি এজন্য দান করেছ যাতে তোমাকে দানবীর বলা হয়। তা দুনিয়াতে বলা হয়েছে, তারপর নির্দেশ দেয়া হবে তাকে চেহারার ওপর ছেঁচড়িয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার।
সুতরাং আমল করতে হবে আল্লাহ তা‘আলাকে খুশি করার জন্য, কারো প্রশংসা পাওয়া কিংবাা কাউকে দেখানোর জন্য নয়। তাহলেই সৎ আমল আখিরাতে কাজে আসবে অন্যথায় নয়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যারা দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে আমল করবে তারা জাহান্নামে যাবে।
২. দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে শরীয়তের আমল করা শির্ক।
৩. আখিরাতে তারা ভাল কোন প্রতিদান পাবে না।