৯৪-৯৬ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতগুলোতে অধিকাংশ মানুষের ঈমান না আনার কারণ এবং মানুষের মধ্য হতে রাসূল প্রেরণের হিকমত বর্ণনা করা হয়েছে। অধিকাংশ মানুষ রাসূলদের প্রতি ঈমান আনেনি। কারণ হল তাদের মত একজন রক্ত-মাংসে গড়া মানুষকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের কথা হল একজন রাসূল আমাদের মত হতে পারে না। রাসূল একজন ফেরেশতা হবেন অথবা তাদের সাথে কোন ফেরেশতা থাকবে। অতএব আমরা যদি একজন মানুষের অনুসরণ করি তাহলে অবশ্যই পথভ্রষ্ট হব, ক্ষতিগ্রস্থ হব। এ সম্পর্কে সূরা ইবরাহীমের ১০ নং, সূরা মু’মিনূনের ৪৭ নং, সূরা কামারের ২৪ নং এবং সূরা তাগাবুনের ৬ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
মানুষের মধ্য হতে রাসূল প্রেরণ করার হিকমত বর্ণনা ও তাদের প্রশ্নের জবাব দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘ফেরেশতাগণ যদি নিশ্চিন্ত হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করত তবে আমি আকাশ হতে তাদের নিকট অবশ্যই ফেরেশ্তা রাসূল করে পাঠাতাম।’ যেহেতু পৃথিবীতে মানুষ বাস করে সেহেতু আমি মানুষকেই রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছি। রাসূল মানুষ না হলে রিসালাতের দায়িত্ব্ পালন করতে পারবে না এবং যাদের কাছে প্রেরণ করবেন তারাও কোন উপকৃত হতো না। সুতরাং মানুষের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার দয়া যে, মানুষের মধ্য হতেই রাসূল প্রেরণ করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(لَقَدْ مَنَّ اللہُ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ بَعَثَ فِیْھِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِھِمْ یَتْلُوْا عَلَیْھِمْ اٰیٰتِھ۪ وَیُزَکِّیْھِمْ وَیُعَلِّمُھُمُ الْکِتٰبَ وَالْحِکْمَةَﺆ وَاِنْ کَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাসীর প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের নিজেরদেরই মধ্য হতে একজন রাসূল তাদের কাছে প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের নিকট তাঁর নিদর্শনাবলী (আয়াতসমূহ) পাঠ করেন ও তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও বিজ্ঞান শিক্ষা দান করেন যদিও তারা এর পূর্বে প্রকাশ্য ভ্রান্তির মধ্যে ছিল।” (সূরা আলি ইমরান ৩:১৬৪)
অতঃপর তাদের আচরণে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উত্তর কী হবে তা বলে দিচ্ছেন যে, তুমি বল, তোমরা আমাকে মানুষ বলে প্রত্যাখ্যান করছ; জেনে রেখ, আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সকল কাজকর্ম প্রত্যক্ষ করছেন ও খবর রাখেন। তিনি সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট, তিনিই আমাদের মাঝে ফায়সালা করবেন। সুতরাং মানুষের মধ্য থেকে রাসূল প্রেরণ করা এটা মানুষের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার একটি অনুগ্রহ। নাবীরা আমাদের মত রক্ত-মাংসের মানুষ এ কথা পূর্বের জাতিরাও জানত। কিন্তু আমাদের সমাজে একশ্রেণির মুসলিম দাবীদার রয়েছে যারা আমাদের নাবীকে মাটির মানুষ বলতে চায় না। তারা বলে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাকি নূরের তৈরী। এদেরকে পূর্ববর্তী জাতিদের থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাধারণ মানুষের মতই একজন মানুষ, কোন ফেরেশতা বা জিন নন, পার্থক্য হল তাঁকে রিসালাত দিয়ে রাসূলের মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
২. মানুষ মানুষের দুঃখ-বেদনা, সমস্যা ইত্যাদি বুঝে। কোন ফেরেশতা বা জিন মানুষের সমস্যা বুঝবে না, তাই মানুষকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করাই যুক্তিযুক্ত।