৯১ ও ৯২ নং আয়াতের তাফসীর:
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে ইয়াহূদীদেরকে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করার কথা বলা হলে তারা বলে, আমাদের ওপর যে তাওরাত ও ইঞ্জিল নাযিল হয়েছে তাই যথেষ্ট। অথচ তারা জানে যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য নাবী এবং তার প্রতি যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে তাও সত্য, এমনকি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাদের নিজেদের সন্তানের চেয়েও বেশি চেনে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَلَّذِیْنَ اٰتَیْنٰھُمُ الْکِتٰبَ یَعْرِفُوْنَھ۫ کَمَا یَعْرِفُوْنَ اَبْنَا۬ءَھُمْ)
যাদেরকে আমি কিতাব প্রদান করেছি, তারা রাসূলুল্লাহকে (মুহাম্মাদ [(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)]-কে) এরূপ চেনে যেমন চিনে নিজেদের পুত্রকে। (সরা বাকারাহ ২:১৪৬, সূরা আন‘আম ৬:২০) এরপরেও অহংকার ও হঠকারিতা তাদেরকে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ঈমান আনতে বাধা দেয়।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের মিথ্যা দাবির প্রতিবাদ করে বলেন, যদি তোমরা প্রকৃতপক্ষে তাওরাত ও ইঞ্জিলের প্রতি ঈমান এনে থাক তাহলে তাওরাত ও ইঞ্জিলের সত্যায়নকারী নাবী-রাসূলগণকে কেন হত্যা করেছ? মূলত তারা হিংসার বশীভূত হয়ে এ সমস্ত ঘৃণিত কাজে জড়িত হয়েছে। যা এ সূরার ৮৭ নং আয়াতে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
(وَلَقَدْ جَا۬ءَكُمْ مُّوْسٰي بِالْبَيِّنٰتِ)
‘এবং নিশ্চয়ই মূসা উজ্জ্বল নিদর্শনাবলীসহ তোমাদের নিকট উপস্থিত হয়েছিলেন’আল্লাহ তা‘আলা মূসাকে যে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী দিয়েছিলেন সে সম্পর্কে অন্যত্র বলেন:
(وَلَقَدْ اٰتَیْنَا مُوْسٰی تِسْعَ اٰیٰتٍۭ بَیِّنٰتٍ فَسْئَلْ بَنِیْٓ اِسْرَا۬ءِیْلَ اِذْ جَا۬ءَھُمْ فَقَالَ لَھ۫ فِرْعَوْنُ اِنِّیْ لَاَظُنُّکَ یٰمُوْسٰی مَسْحُوْرًا)
“তুমি বানী ইস্রাঈলকে জিজ্ঞাসা করে দেখ, আমি মূসাকে নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম; যখন সে তাদের নিকট এসেছিল, ফির‘আউন তাকে বলেছিল, ‘হে মূসা! আমি মনে করি তুমি জাদুগ্রস্ত।”(সূরা ইসরা ১৭:১০১)
উক্ত নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন হল- তুফান, ফড়িং, ব্যাঙ, রক্ত, উকুন, লাঠি, হাত চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল হওয়া, পাথর হতে নদী বা ঝর্ণা প্রবাহিত হওয়া ইত্যাদি। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الطُّوْفَانَ وَالْجَرَادَ وَالْقُمَّلَ وَالضَّفَادِعَ وَالدَّمَ اٰيٰتٍ مُّفَصَّلٰتٍ)
“অতঃপর আমি তাদেরকে প্লাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্তের বিপদ পাঠিয়েছিলাম। এগুলো স্পষ্ট নিদর্শন।”(সূরা আ‘রাফ ৭:১৩০)
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(فَاَلْقٰی عَصَاھُ فَاِذَا ھِیَ ثُعْبَانٌ مُّبِیْنٌ﮺ﺊوَّنَزَعَ یَدَھ۫ فَاِذَا ھِیَ بَیْضَا۬ئُ لِلنّٰظِرِیْنَ)
অতঃপর মূসা তার লাঠি নিক্ষেপ করল এবং তৎক্ষণাৎ সেটা এক সাক্ষাত অজগর হল। এবং সে তার হাত বের করল আর তৎক্ষণাৎ সেটা দর্শকদের দৃষ্টিতে শুভ্র উজ্জ্বল প্রতিভাত হল। (সূরা আ‘রাফ ৭:১০৭-১০৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(فَاَوْحَیْنَآ اِلٰی مُوْسٰٓی اَنِ اضْرِبْ بِّعَصَاکَ الْبَحْرَﺚ فَانْفَلَقَ)
অতঃপর মূসার প্রতি ওয়াহী করলাম, ‘তোমার লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত করো।’(সূরা শুআরা ২৬:৬৩)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অপরাধীদেরকে অপরাধের কারণে তিরস্কার করা শরীয়তসম্মত।
২. শরয়ী বিধানকে খুব মজবুত ও দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ করতে হবে।
৩. প্রকৃত ঈমান কখনো ঈমানদারকে খারাপ কাজের দিকে নির্দেশ করে না।