৭১-৭৫ নং আয়াতের তাফসীর:
প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম ও লূত (عليه السلام)-কে ইরাকের এ জালিম সম্প্রদায়ের কবল থেকে উদ্ধার করে এমন ভূমিতে নিয়ে গেলেন যেথায় বিশ্ববাসীর জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর তা হল সিরিয়া। কারণ ইবরাহীম (عليه السلام)-এর প্রতি কেবল লূত (عليه السلام) ঈমান এনেছিল, তিনি ইবরাহীম (عليه السلام)-এর চাচাতো ভাই ছিলেন। যেমন বলেন:
(فَاٰمَنَ لَھ۫ لُوْطٌﺭ وَقَالَ اِنِّیْ مُھَاجِرٌ اِلٰی رَبِّیْﺚ اِنَّھ۫ ھُوَ الْعَزِیْزُ الْحَکِیْمُ)
“লূত তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল। লূত বলল: ‘আমি আমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করছি, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’’ (সূরা আনকাবুত ২৯:২৬) অনুরূপভাবে ইবরাহীম (عليه السلام) বলেছিলেন:
(وَقَالَ إِنِّيْ ذَاهِبٌ إِلٰي رَبِّيْ سَيَهْدِيْنِ)
“আর সে (ইবরাহীম) বলল: আমি আমার প্রতিপালকের দিকে চললাম, তিনিই আমাকে সৎ পথে পরিচালিত করবেন।” (সূরা স্বফ্ফাত ৩৭:৯৯)
ইবরাহীম (عليه السلام) ইরাক ছেড়ে সিরিয়াতে চলে আসার পর আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে ইসহাক ও পৌত্ররূপে ইয়া‘কূব (عليه السلام)-কে দান করলেন। نَافِلَةً অর্থ অতিরিক্ত, অর্থাৎ ইবরাহীম (عليه السلام) শুধু পুত্রের জন্য দু‘আ করেছিলেন কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে বিনা দু‘আয় অতিরিক্ত হিসেবে পৌত্র তথা নাতি ইয়াকুব (عليه السلام)-কে দান করলেন যিনি ইসহাকের পুত্র। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(فَبَشَّرْنَاهَا بِإِسْحَاقَ وَمِنْ وَّرَا۬ءِ إِسْحَاقَ يَعْقُوبَ)
“অতঃপর আমি তাকে ইস্হাকের ও ইস্হাকের পরবর্তী ইয়া‘কূবের সুসংবাদ দিলাম।” (সূরা হূদ ১১:৭১) ইবরাহীম (عليه السلام)-এর পুত্র ইসহাক, ইসহাকের পুত্র ইয়া‘কূব, ইয়া‘কূবের পুত্র ইউসুফ। ইয়া‘কূব (عليه السلام)-এর বংশধরকে বানী ইসরাঈল বলা হয়। এদের উম্মাত অনেক বেশি, এদের মধ্যে অনেক নাবী আগমন করেছেন। ইবরাহীম (عليه السلام)-এর অপর পুত্র ইসমাঈল, তাঁর বংশধর হল আরবরা, এ বংশেই নাবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগমন।
(وَكُلًّا جَعَلْنَا صٰلِحِيْنَ)
অর্থাৎ ইবরাহীম ও ইসহাক উভয়ে আল্লাহ তা‘আলার সৎ বান্দা ছিলেন এবং তাদের প্রত্যেককে আল্লাহ তা‘আলা ইমাম তথা ধর্মীয় নেতা বানিয়েছিলেন, ভাল ও আনুগত্যমূলক কাজে মানুষ তাদের অনুসরণ করত। তারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশক্রমে মানুষকে হিদায়াতের পথ দেখাতেন। আর তাদের প্রতি ওয়াহী করেছেন যেন তারা ভাল কাজ করে, মানুষকেও ভাল কাজের নির্দেশ দেয়, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে। তারা সবাই আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতগুজার বান্দা ছিলেন, আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করতেন।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা লূত (عليه السلام) সম্পর্কে আলোচনা নিয়ে এসেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে حُكْمًا তথা নবুওয়াত দান করেছিলেন এবং عِلْمًا তথা বিবাদ মীমাংসা করার জ্ঞান দান করেছিলেন। তিনি যে এলাকার নাবী ছিলেন তার নাম সাদূম। এটি ফিলিস্তিন ও মৃতসাগর পার্শ্ববর্তী জর্ডানের নিকটতম একটি শস্য-শ্যামল এলাকা ছিল। যার বড় অংশ এখন সমুদ্রের গর্ভে। তাঁর জাতি সমকামিতার মত জঘন্য অপরাধ, রাস্তায় বসে পথচারীদের প্রতি কটূক্তি করা, তাদেরকে কষ্ট দেয়া ইত্যাদি অপকর্মে লিপ্ত ছিল। লূত (عليه السلام) তাদেরকে এসব খারাপ কাজ থেকে বারণ করলেন। কিন্তু তারা কিছুতেই বিরত থাকল না। অবশেষে আল্লাহ তা‘আলা তাদের এলাকা উল্টিয়ে দিয়ে ধ্বংস করে দেন।
আল্লাহ তা‘আলা লূত (عليه السلام) ও তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে শাস্তি থেকে নাজাত দিয়েছিলেন। এ সম্পর্কে সূরা হিজর এ আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১। মুসলিম সমাজের নেতাদের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য থাকবে তারা নিজেরা সৎ আমল করবে, অন্যদেরকে সেদিকে দাওয়াত দিবে।
২. যারা আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন।
৩. কোন এলাকায় দীন রক্ষা না করতে পারলে সে এলাকা ছেড়ে যেথায় যথাযথভাবে দীন রক্ষা করা যাবে সেখানে হিজরত করতে হবে।