৩১-৪১ নং আয়াতের তাফসীর:
পূর্বের আয়াতগুলোতে নূহ (عليه السلام) ও তাঁর জাতি এবং যারা অবাধ্য ছিল তাদেরকে যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে সে সম্পর্কে আলোচনার পর এখানে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, ‘অতঃপর তাদের পরে অন্য এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছিলাম’। নূহ (عليه السلام)-এর জাতিকে ধ্বংস করার পর অন্য যে জাতি সৃষ্টি করা হয়েছিল তারা হল সামূদ জাতি, যাদের কাছে সালেহ (عليه السلام)-কে প্রেরণ করা হয়েছিল। কারণ এ ঘটনা তাদের ঘটনার সাথে সাদৃশপূর্ণ। কেউ বলেছেন, তারা হল আদ জাতি। আল্লাহ তা‘আলা তাদের কাছে নাবী হিসেবে শু‘আইব (عليه السلام)-কে প্রেরণ করলেন। পূর্বের নাবীর মত তিনিও তাওহীদের দিকে দাওয়াত দিলেন। কিন্তু জাতির যারা নেতৃস্থানীয় এবং ক্ষমতাসীন তারা কুফরী করল এবং আখিরাতকে অস্বীকার করল। যেমন পূর্বের অন্যান্য জাতির নেতৃস্থানীয় লোকেরা কুফরী করেছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল যিনি রাসূল হবেন তিনি আমাদের মত খাওয়া, পান করা থেকে অমুখাপেক্ষী হবেন, তিনি আমাদের থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হবেন। তাই তারা তাদের মত খায়, পান করে এমন রাসূলকে মেনে নিতে পারল না। এখানে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে যায় পূর্বের যুগের কাফিররাও জানত যে, যাকে তাদের কাছে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে তিনি আমাদের মত রক্ত মাংসের মাটির তৈরি একজন মানুষ, খাওয়া-পান করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের সমাজে একশ্রেণির মুসলিম রয়েছে যারা আমাদের রাসূলকে মাটির তৈরি বিশ্বাস করতে চায় না। অথচ সকল নাবীকে মানুষের মধ্য হতেই প্রেরণ করা হয়েছে। তাছাড়া কুরআনে অনেক দলীল রয়েছে যা প্রমাণ করে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মত মাটির তৈরি রক্ত মাংসের মানুষ।
(وَأَتْرَفْنٰهُمْ فِي الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا)
অর্থাৎ আখিরাতে বিশ্বাস না করা ও পার্থিব সুখ-বিলাসের আতিশয্য... এ দুটি ছিল রাসূলের প্রতি ঈমান না আনার মূল কারণ। আজও বাতিলপন্থীরা উক্ত দু’কারণে হক পন্থীদের বিরোধিতা ও সত্যের দাওয়াত থেকে বিমুখ হয়।
সুতরাং সালেহ (عليه السلام)-এর জাতিরা বলল, তোমরা যদি তোমাদের মত একজন মানুষের অনুসরণ কর তাহলে তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ মানুষ মানুষকে হিদায়াত দিতে পারে না, সে জন্য তার সাথে কোন ফেরেশতা থাকবে বা বড় কোন নিদর্শন থাকবে।
هَيْهَاتَ هَيْهَاتَ
অর্থাৎ তোমাদেরকে মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত করা হবে বলে সে যে প্রতিশ্র“তি দিচ্ছে তা অসম্ভব, কোন দিনও তা হতে পারে না। বরং আমাদের যে দুনিয়ার জীবন এ জীবনই শেষ, জীবিত আছি, মারা যাব, আমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে না। এ ব্যক্তি তোমাদেরকে যে পুনরুত্থানের প্রতিশ্র“তি প্রদান করছে, মূলত সে এ কথা বলে আল্লাহ তা‘আলার ওপর মিথ্যারোপ করছে।
এভাবে সালেহ (عليه السلام)-কে মিথ্যারোপ করলে নূহ (عليه السلام)-এর মত তিনিও আল্লাহর কাছে দু‘আ করলেনন ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য করুন; কারণ তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে।’
(قَالَ رَبِّ انْصُرْنِيْ)
অর্থাৎ সালেহ (عليه السلام)-এর দু‘আ কবূল করে আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দিলেনন অচিরেই তারা অনুতপ্ত হবে কিন্তু সে অনুতাপ কোন কাজে আসবে না। অতঃপর তাদেরকে বিকট আওয়াজ পাকড়াও করল এবং তারাও ধ্বংস হলো। এ সম্পর্কে সূরা হূদসহ অন্যন্য সূরাতে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক জাতির কাছে রাসূল প্রেরণ করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই তাওহীদের দিকে স্বজাতিকে আহ্বান করেছেন।
২. প্রত্যেক যুগের নেতৃস্থানীয় ও ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরাই সত্যের বিরোধিতা করেছে এবং রাসূলদের সাথে বেআদবী করেছে।
৩. পৃথিবীর সকল বস্তুবাদীদের জন্য এখানে শিক্ষা রয়েছে যে, পূর্বের যুগের মানুষেরা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করত ফলে তাদের পরিণাম ভাল হয়নি।