নমল আয়াত ৭০

আর তাদের উপর আপনি দুঃখ করবেন না এবং তাদের ষড়যন্ত্রে মনঃক্ষুণ্ন হবেন না [১]।

[১] সব মানুষের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্নেহ, মমতা ও সহানুভূতির অন্ত ছিল না। তিনি সর্বদা চাইতেন যে, সবাইকে আল্লাহ্‌র বাণী শুনিয়ে জাহান্নাম থেকে বাঁচাবেন। কেউ তার কথা কবুল না করলে তিনি নিদারুন মর্মপিড়া অনুভব করতেন এবং এমন দুঃখিতও হতেন, যেমন কারও সন্তান তার কথা অমান্য করে আগুনে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছে। তাই আল্লাহ্‌ তা‘আলা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভংগিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। এ আয়াতটিও তাকে সান্ত্বনা দেয়ার উদ্দেশ্যে নাযিল করা হয়। বলা হচ্ছে যে, আপনি যা নিয়ে এসেছেন এর উপর মিথ্যারোপকারীদের নিয়ে আপনি দুঃখিত হবেন না। আর নিজেকে বিনাশ করে ফেলবেন না। তারা আপনার প্রতি যে ষড়যন্ত্র করছে তাতে আপনি মনঃক্ষুন্ন হবেন না; কারণ আল্লাহ্‌ আপনার হিফাযত করবেন, সাহায্য-সহযোগিতা করবেন, আপনার দ্বীনকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিরোধীদের উপর জয়ী করবেন। [ইবন কাসীর]

আর তাদের জন্য দুঃখ করো না এবং তারা যে ষড়যন্ত্র করে তাতে মনক্ষুণ্ণ হয়ো না।

তাদের কারণে আপনি দুঃখিত হবেন না এবং তারা যে চক্রান্ত করেছে এতে মনঃক্ষুন্ন হবেন না।

আর তাদের কারণে তুমি দুঃখ করো না, আর তারা যা ষড়যন্ত্র করছে সেজন্য তুমি মনঃক্ষুন্ন হয়ো না।

(হে নবী!) তুমি তাদের প্রতি দুঃখ করো না। আর তারা যে চক্রান্ত করছে, তার জন্য কুণ্ঠাবোধ করো না।

তাদের সম্পর্কে তুমি দুঃখ করনা এবং তাদের ষড়যন্ত্রে মনঃক্ষুন্ন হয়োনা।

৬৭-৭০ নং আয়াতের তাফসীর:

এখানে আল্লাহ তা‘আলা ঐ সকল কাফির-মুশরিকদের সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যারা মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে। তারা বলে, আমরা মারা যাওয়ার পর মাটি ও হাড্ডিতে পরিণত হয়ে যাব, তারপরও কি আমরা পুনরায় জীবিত হব? এমনকি তারা বলে, এগুলো হল পূর্ববর্তীদের উপকথা যা আমরা এবং আমাদের পূর্বপুরুষেরা শুধু শুনেই আসছি। এর কোন বাস্তবতা দেখছি না। বিভিন্ন টাল-বাহানার মাধ্যমে তারা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে। তাদের এ কথার উত্তরে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা যদি ঐ শাস্তিকে বা পুনরুত্থানকে অস্বীকার কর, তবে তোমরা জমিনে ভ্রমণ করে দেখ যারা এরূপ অস্বীকার করেছিল তাদের অবস্থা কিরূপ হয়েছিল। তাদেরকে কিরূপ শাস্তি পাকড়াও করেছিল। এগুলোই হল তার প্রমাণ। নাবী-রাসূলগণ যা বলে তা অবশ্যই সত্য। এতে অবশ্যই বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে আর যে সন্দেহ পোষণ করবে সে কাফির হয়ে যাবে। এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সান্ত্বনা প্রদান করে বলেন, তিনি যেন এ সকল কাফির মুশরিকদের কথায় মনঃক্ষুণ্ন না হন। বরং ধৈর্য ধারণ করেন। এ সম্পর্কে ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মৃত্যুর পর মানুষের মরদেহ মাটিতে ও হাড়ে পরিণত হয়ে যায়।
২. মানুষকে অবশ্যই মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করা হবে। আর এ পুনর্জীবনের প্রতি অবশ্যই বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। যে তা বিশ্বাস করবে না সে কাফির।
৩. পূর্ববর্তী যে সকল লোকদেরকে ধ্বংস করা হয়েছে তাদের সে সব ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।
৪. মানুষকে দাওয়াতী কাজ করতে গিয়ে কারো তিরস্কারমূলক কথায় মনঃক্ষুণœ হওয়া যাবে না।

আর তাদের জন্য দুঃখ করো না এবং তাদের ষড়যন্ত্রে মনঃক্ষুণ্ন হয়ো না।

৭০. আপনার দা’ওয়াত থেকে মুশরিকদের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার দরুন আপনি চিন্তিত হবেন না। তাদের ষড়যত্রের দরুন আপনার মন যেন খারাপ না হয়ে যায়। কারণ, আল্লাহ তা‘আলাই আপনাকে তাদের উপর জয়ী করবেন।

৬৭-৭০ নং আয়াতের তাফসীর

এখানে বর্ণনা করা হচ্ছে যে, যারা কিয়ামতকে অস্বীকার করে তাদেরকে যে তাদের মৃত্যু হওয়া ও সড়ে-পচে যাওয়া এবং মাটি ও ভস্ম হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় কিভাবে সৃষ্টি করা হবে এটা এখন পর্যন্ত তাদের বোধগম্যই হয় না। তারা এটাকে বড়ই বিস্ময়কর মনে করে। তারা বলেঃ “পূর্ব যুগ হতেই আমরা এটা শুনে আসছি, কিন্তু এ পর্যন্ত কাউকেও আমরা মৃত্যুর পর জীবিত হতে দেখিনি। এটা শুধু শোনা কথা। এক যুগের লোক তাদের পূর্বযুগীয় লোকদের হতে, তারা তাদের পূর্ব যুগের লোকদের হতে শুনেছে এবং এভাবে আমাদের যুগ পর্যন্ত পৌছে গেছে। কিন্তু এ সবকিছুই অযৌক্তিক ও বিবেক বুদ্ধি বহির্ভূত।” আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে জবাব বলে দিচ্ছেনঃ “তুমি বল-তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করে দেখো, যারা রাসূলদেরকে অবিশ্বাস করেছিল ও কিয়ামতকে অস্বীকার করেছিল তাদের পরিণাম কি হয়েছে! তারা সমূলে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। পক্ষান্তরে নবীদেরকে ও মুমিনদেরকে আল্লাহ তা'আলা রক্ষা করেছেন। এটা নবীদের সত্যবাদীতারই দলীল।”

অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে সান্ত্বনা দিচ্ছেনঃ “এই কাফির ও মুশরিকরা তোমাকে ও আমার কালামকে অবিশ্বাস করছে এ জন্যে তুমি দুঃখ করো না ও মনঃক্ষুন্ন হয়ো না। তারা তোমার ব্যাপারে যে ষড়যন্ত্র করছে তা আমার অজানা নেই। আমিই তোমার পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারী ।

সুতরাং তুমি নিশ্চিন্ত থাকো। আমি তোমাকে ও তোমার দ্বীনকে জয়যুক্ত রাখবো এবং দুনিয়ার এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত তোমাকে প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করবে।”