তোমরা তোমাদের প্রিয়বস্তু খরচ না করা পর্যন্ত কক্ষনো পুণ্য লাভ করবে না, যা কিছু তোমরা খরচ কর-নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে খুব ভালভাবেই অবগত।
English Sahih:
Never will you attain the good [reward] until you spend [in the way of Allah] from that which you love. And whatever you spend – indeed, Allah is Knowing of it.
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
তোমরা কখনও পুণ্য[১] লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস হতে আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।[২]
[১] 'পুণ্য' বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে, সৎকাজ অথবা জান্নাত। (ফাতহুল ক্বাদীর) হাদীসে বর্ণিত যে, যখন এই আয়াত নাযিল হয়, তখন আবূ ত্বালহা আনসারী (রাঃ) --যিনি মদীনার বিশিষ্ট সাহাবীদের একজন -- নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! বাইরুহা বাগানটি হল আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু। সেটাকে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সাদাকা করছি। রসূল (সাঃ) বললেন, "সে তো বড়ই উপকারী সম্পদ। আমার মত হল, ওটাকে তুমি তোমার আত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দাও।" তাই রসূল (সাঃ)-এর পরামর্শ অনুযায়ী সেটাকে তিনি স্বীয় আত্মীয়-স্বজন এবং চাচাতো ভাইদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। (মুসনাদ আহমাদ) এইভাবে আরো অনেক সাহাবী তাঁদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করেছেন। مِمَّا تُحِبُّوْنَ এ 'মিন' (হতে) শব্দ 'তাবঈয' তথা কিয়দংশ বুঝানোর অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ, পছন্দনীয় ও প্রিয় জিনিসের সবটাকেই ব্যয় করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বরং তা থেকে কিয়দংশকে ব্যয় করতে বলা হয়েছে। কাজেই সাদাকা করলে ভাল জিনিসই করা উচিত। এটা হল সর্বশ্রেষ্ঠ ও পরিপূর্ণ মর্যাদা লাভ করার তরীকা। তবে এর অর্থ এও নয় যে, নিম্নমানের জিনিস অথবা স্বীয় প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস কিংবা ব্যবহূত পুরাতন জিনিস সাদাকা করা যাবে না বা তার নেকী পাওয়া যাবে না। এই ধরনের জিনিসও সাদাকা করা জায়েয এবং তাতে নেকী অবশ্যই পাওয়া যাবে। তবে বেশী ফযীলত ও পূর্ণতা রয়েছে প্রিয় বস্তু ব্যয় করার মধ্যে।
[২] ভাল ও মন্দ যে জিনিসই তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন সেই অনুযায়ী প্রতিদানও তিনি দিবেন।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো সওয়াব অর্জন করবে না। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবগত [১]।
দশম রুকূ‘
[১] সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন কুরআনী নির্দেশের প্রথম সম্বোধিত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রত্যক্ষ সঙ্গী। কুরআনী নির্দেশ পালনের জন্য তারা ছিলেন উম্মুখ। আলোচ্য আয়াত নাযিল হওয়ার পর তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ সহায় সম্পত্তির প্রতি লক্ষ্য করলেন যে, কোনটি তাদের নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয়। এরপর আল্লাহ্র পথে তা ব্যয় করার জন্যে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আবেদন করতে লাগলেন। মদীনার আনসারগণের মধ্যে আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বেশ ধনী ছিলেন। মসজিদে নববী সংলগ্ন বিপরীত দিকে তার একটি বাগান ছিল, যাতে ‘বীরাহা’ নামে একটি কূপ ছিল। বর্তমানে মাসজিদের নববীর বাব আল-মাজীদীর বাদশাহ ফাহদ গেট দিয়ে ভিতরে মসজিদে ঢুকার পর পরই সামান্য বাম পার্শ্বে এ স্থানটি পড়ে। পরিচিতির সুবিধার্থে দুই থামের মাঝখানের তিনটি গোল চক্কর দিয়ে তার স্থান নির্দেশ করা আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝে মাঝে এ বাগানে পদার্পণ করতেন এবং বীরহা কূপের পানি পান করতেন। এ কুপের পানি তিনি পছন্দও করতেন। আবু তালহার এ বাগান অত্যন্ত মূল্যবান, উর্বর এবং তার বিষয়-সম্পত্তির মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রিয় ছিল। আলোচ্য আয়াত নাযিল হওয়ার পর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে বললেনঃ আমার সব বিষয়-সম্পত্তির মধ্যে বীরহা আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয়। আমি এটি আল্লাহ্র পথে ব্যয় করতে চাই। আপনি যে কাজে পছন্দ করেন, এটি তাতেই খরচ করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বিরাট মুনাফার এ বাগানটি আমার মতে তুমি স্বীয় আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বন্টন করে দাও। আবু তালহা এ পরামর্শ গ্রহণ করেন৷ [বুখারীঃ ১৪৬১, মুসলিমঃ ৯৯৮]
এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, শুধু ফকীর-মিসকীনকে দিলেই পুণ্য হয় না -পরিবার-পরিজন ও আত্নীয়-স্বজনকে দান করাও বিরাট পুণ্য ও সওয়াবের কাজ।
3 Tafsir Bayaan Foundation
তোমরা কখনো সওয়াব অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষণ না ব্যয় করবে তা থেকে, যা তোমরা ভালবাস। আর যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।
4 Muhiuddin Khan
কস্মিণকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না কর। আর তোমরা যদি কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন।
5 Zohurul Hoque
তোমরা কখনো ধর্মনিষ্ঠ হতে পারবে না যে পর্যন্ত না তোমরা ব্যয় করো যা তোমরা ভালোবাস তা থেকে। আর তোমরা যে বস্তুই খরচ করবে, নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সে-সন্বন্ধে সর্বজ্ঞাতা।