৩-৬ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতে বস্তুবাদী নাস্তিকদের বিশ্বাসে কুঠারাঘাত করে তাদের বিশ্বাসের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। তাদের বিশ্বাসন আমরা দুনিয়াতে আছি, মারা যাব, পরে আর কিছু হবে না। কিসের কিয়ামত কিসের হাশর-নাশর। তাই তাদের ভাষাটা যেন এমন যে, খাও-দাও ফূর্তি কর, গরীবদের ওপর জুলুম কর। এসব কঠিন বেঈমানদের কঠিন উত্তর দেয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর রবের শপথ করে বলতে বললেন বল: আমার রবের শপথ কিয়ামত অবশ্যই সংঘঠিত হবে। কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার নিশ্চয়তার ব্যাপারে এরকম আরো দু’জায়গায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আল্লাহ তা‘আলা তা’আলা তাঁর নিজ সত্ত্বার নামে শপথ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَيَسْتَنْۭبِئُوْنَكَ أَحَقٌّ هُوَ ط ل قُلْ إِيْ وَرَبِّيْٓ إِنَّه۫ لَحَقٌّ ط ل وَمَآ أَنْتُمْ بِمُعْجِزِيْنَ)
“তারা তোমার নিকট (কিয়ামতের আযাব সম্পর্কে) জানতে চায়, ‘তা কি সত্য?’ বল: ‘হ্যাঁ, আমার প্রতিপালকের শপথ! তা অবশ্যই সত্য। এবং তোমরা এটা ব্যর্থ করতে পারবে না।’ (সূরা ইউনুস ১০:৫৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
(زَعَمَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْآ أَنْ لَّنْ يُّبْعَثُوْا ط قُلْ بَلٰي وَ رَبِّيْ لَتُبْعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلْتُمْ ط وَذٰلِكَ عَلَي اللّٰهِ يَسِيْرٌ)
“কাফিররা ধারণা করে যে, তারা কখনো পুনরুত্থিত হবে না। বল: নিশ্চয়ই হবে, আমার প্রতিপালকের শপথ! তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমরা যা করতে তোমাদেরকে সে সম্বন্ধে অবশ্যই অবহিত করা হবে। এটা আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ।” (সূরা তাগাবুন ৬৪:৭)
সুতরাং কিয়ামত দিবসকে অস্বীকার করার কিছুই নেই। এটা অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। আর তখন কেউই এটা প্রতিহত করতে পারবে না।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তিনি হলেন, আলিমুল গাইব। তিনি সমস্ত অদৃশ্যের খবর জানেন। আকাশে ও জমিনে ছোট-বড়, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এমন কোন জিনিস নেই যা তিনি জানেন না। তিনি প্রত্যেক জিনিসের যথাযথ খবর রাখেন। তাঁর দৃষ্টিকে ফাঁকি দিবে এমন কিছুই নেই।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার হিকমত বর্ণনা করছেন যে, দুনিয়াতে মানুষ ভাল কাজ করে কিন্তু সবাই তার যথার্থ মূল্যায়ন পায় না। আর অনেক অপরাধী অপরাধ করে, তাকে কেউ শাস্তি দিতে পারে না। তাই ভাল আমলকারীদের যথাযথ প্রতিদান ও অপরাধীদের জন্য উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার জন্য কিয়ামত বা বিচার ব্যবস্থার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। সে জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যেন তিনি পুরস্কৃত করেন তাদেরকে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে।’
সুতরাং কিয়ামত সংঘটনের মাধ্যমে ভাল ও মন্দের বিচার করা হবে এবং তাদেরকে তাদের প্রতিদান দেয়া হবে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞানী লোকদের মর্যাদা বর্ণনা করছেন যে, তারা তাদের সঠিক জ্ঞান ার্জনের দ্বারা সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলে বুঝতে পেরেছে এবং এ সঠিক জ্ঞানের কারণে তারা সৎ ‘আমাল করতে সক্ষম হয়েছে এবং তারা কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ওপর পূর্ণ বিশ্বাসী। ফলে তারা কিয়ামতের দিন বলবেন (هٰذَا مَا وَعَدَ الرَّحْمٰنُ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُوْنَ) “দয়াময় আল্লাহ তো এরই ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং রাসূলগণ সত্যই বলেছিলেন।” (সূরা ইয়াসীন ৩৬:৫২) আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তারা আরো বলবে,
(وَقَالَ الَّذِيْنَ أُوْتُوا الْعِلْمَ وَالْإِيْمَانَ لَقَدْ لَبِثْتُمْ فِيْ كِتٰبِ اللّٰهِ إِلٰي يَوْمِ الْبَعْثِ ز فَهٰذَا يَوْمُ الْبَعْثِ وَلٰكِنَّكُمْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ)
“কিন্তু যাদেরকে জ্ঞান ও ঈমান দেয়া হয়েছে তারা বলবে: তোমরা তো আল্লাহর নির্ধারিত দিবস অনুযায়ী অবস্থান করেছ; এটাই হল পুনরুত্থান দিবস, কিন্তু তোমরা জানতে না।” (সূরা রূম ৩০:৫৬)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে, তা অস্বীকার করার কোনই সুযোগ নেই।
২. কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার হিকমত সম্পর্কে জানতে পারলাম।
৩. সৎ লোকেরা জান্নাতে এবং অসৎ লোকেরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
৫. যারা কুরআন ও হাদীসের সঠিক জ্ঞান অর্জন করে তাদের মর্যাদা সম্পর্কে জানতে পারলাম।