আল-মু'মিন আয়াত ১৪
فَادْعُوا اللّٰهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكٰفِرُوْنَ ( غافر: ١٤ )
Fad'ul laaha mukhliseena lahud deena wa law karihal kaafiroon (Ghāfir ৪০:১৪)
English Sahih:
So invoke Allah, [being] sincere to Him in religion, although the disbelievers dislike it. (Ghafir [40] : 14)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
কাজেই আল্লাহকে ডাক আনুগত্যকে একমাত্র তাঁরই জন্য নিদিষ্ট করো, যদিও কাফিরগণ তা অপছন্দ করে। (আল-মু'মিন [৪০] : ১৪)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
সুতরাং আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে তাঁকে ডাক, যদিও অবিশ্বাসীগণ এ অপছন্দ করে।[১]
[১] অর্থাৎ, যখন সবকিছু এক আল্লাহই করেন, তখন কাফেরদের নিকট যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন, কেবলমাত্র সেই এক আল্লাহকেই ডাক তাঁর জন্য ইবাদত ও আনুগত্যকে নিষ্ঠাপূর্ণ করে।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ডাক তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে। যদিও কাফিররা অপছন্দ করে।
3 Tafsir Bayaan Foundation
সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ডাক, তাঁর উদ্দেশ্যে দীনকে একনিষ্ঠভাবে নিবেদিত করে। যদিও কাফিররা অপছন্দ করে।
4 Muhiuddin Khan
অতএব, তোমরা আল্লাহকে খাঁটি বিশ্বাস সহকারে ডাক, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে।
5 Zohurul Hoque
সুতরাং আল্লাহ্কেই আহ্বান করো তাঁর প্রতি ধর্মে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে, যদিও অবিশ্বাসীরা বিরূপ হয়।
6 Mufti Taqi Usmani
সুতরাং (হে মানুষ!) তোমরা আল্লাহকে ডাক তার জন্য আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে, তা কাফেরদের পক্ষে যতই অপ্রীতিকর হোক।
7 Mujibur Rahman
সুতরাং আল্লাহকে ডাক তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে, যদিও কাফিরেরা এটা অপছন্দ করে।
8 Tafsir Fathul Mazid
১০-১৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
কাফির-মুশরিকরা যখন জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করবে এবং এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যাবে যে, তাদের ঠিকানা জাহান্নাম তখন তারা নিজেদের প্রতি খুব ক্ষোভ ও ক্রোধ প্রকাশ করবে। এমন সময় তাদেরকে ডেকে বলা হবে, তোমাদের নিজেদের প্রতি তোমাদের ক্ষোভ অপেক্ষা আল্লাহ তা‘আলার ক্ষোভ ছিল অধিক। কারণ যখন তোমাদেরকে এক আল্লাহ তা‘আলার ওপর ঈমান আনতে বলা হয়েছিল তখন তোমরা অস্বীকার করেছিলে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(إِنَّا كَذٰلِكَ نَفْعَلُ بِالْمُجْرِمِيْنَ إِنَّهُمْ كَانُوْآ إِذَا قِيْلَ لَهُمْ لَآ إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ يَسْتَكْبِرُوْنَ)
“আমি অপরাধীদের সাথে এরূপই করে থাকি। যখন তাদেরকে বলা হত, আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই, তখন তারা অহংকার করত।” (সূরা সাফফাত ৩৭ : ৩৫)
কাফিররা তখন তাদের অপরাধের কথা স্বীকার করবে এবং জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ/মুক্তি পাবার রাস্তা অšে¦ষণ করবে, কিন্তু সেখান থেকে বের হবার কোনই রাস্তা থাকবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَلَوْ تَرٰٓي إِذِ الْمُجْرِمُوْنَ نٰكِسُوْا رُؤُوْسِهِمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ ط رَبَّنَآ أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا إِنَّا مُوْقِنُوْنَ)
“আর যদি তুমি দেখতে, যখন পাপীরা তাদের প্রতিপালকের সামনে স্বীয় মাথা নীচু করে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম, (এখন) তুমি আমাদেরকে পুনরায় (পৃথিবীতে) প্রেরণ কর; আমরা নেক কাজ করব। আমরা তো দৃঢ় বিশ্বাসী হয়েছি।” (সূরা আস্ সাজদাহ্ ৩২ : ১২)
এভাবে কাফিররা জাহান্নাম থেকে বের হবার চেষ্টা করেও কোনই পথ পাবে না। কাফিররা দ্বিতীয়বার দুনিয়াতে আসার ফরিয়াদ করলেও তাদের সে সুযোগ দেয়া হবে না । কারণ যদিও তারা বলে দ্বিতীয়বার আসার সুযোগ দেয়া হলে সৎ আমল করে নেক্কারদের মধ্যে শামিল হয়ে মৃত্যু বরণ করবে কিন্তু এগুলো তাদের মুখের কথা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَلَوْ رُدُّوْا لَعَادُوْا لِمَا نُهُوْا عَنْهُ وَإِنَّهُمْ لَكٰذِبُوْنَ)
“এবং তারা প্রত্যাবর্তিত হলেও যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল পুনরায় তারা তাই করত এবং নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী।” (সূরা আন‘আম ৬ : ২৮)
(أَمَتَّنَا اثْنَتَيْنِ وَأَحْيَيْتَنَا اثْنَتَيْنِ)
‘আপনি আমাদেরকে মৃত অবস্থায় দুবার রেখেছেন এবং দু’বার আমাদেরকে প্রাণ দিয়েছেন’ অধিকাংশ মুফাসসিরদের মতে, প্রথম মৃত্যু হলো যখন বীর্য অবস্থায় পিতার পৃষ্ঠদেশে থাকে। অর্থাৎ অস্তিত্বের পূর্বে তার অস্তিত্বহীনতাকে মৃত্যু বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় মৃত্যু হলো, যা মানুষ তার দুনিয়ার জীবন অতিবাহিত করার পর বরণ করে।
পক্ষান্তরে দুটি জীবন বলতে, একটি হলো এ পার্থিব জীবন, যার আরম্ভ হয় জন্ম থেকে এবং শেষ হয় মৃত্যুর দ্বারা। আর দ্বিতীয় জীবন হলো- সে জীবন, যা কিয়ামতের দিন কবর থেকে ওঠার পর লাভ করবে। এ দুটি মৃত্যু ও দুটি জীবনের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
(كَيْفَ تَكْفُرُوْنَ بِاللّٰهِ وَكُنْتُمْ أَمْوَاتًا فَأَحْيَاكُمْ ج ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيْكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ)
“কিভাবে তোমরা আল্লাহকে অস্বীকার করছ? অথচ তোমরা নির্জীব ছিলে, পরে তিনিই তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন, এরপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, পরে আবার জীবিত করবেন, অবশেষে তোমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে।” (সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৮)
(وَإِنْ يُّشْرَكْ بِه۪ تُؤْمِنُوْا)
‘এবং আল্লাহর শরীক স্থির করা হলে তোমরা তা মেনে নিতে’ অর্থাৎ জাহান্নাম থেকে নিস্কৃতি না পাওয়ার কারণ হলো : দুনিয়াতে তারা আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদকে বর্জন করেছিল আর সর্বদা শির্কে লিপ্ত ছিল। তাই আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন।
(هُوَ الَّذِيْ يُرِيْكُمْ اٰيٰتِه)
‘তিনিই তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলী দেখান’ আল্লাহ তাঁর নিদর্শনাবলী মানুষকে প্রতিনিয়ত দেখাচ্ছেন কিন্তু মানুষ তা দেখেও শিক্ষা নেয় না বরং উপলব্ধী করার চেষ্টাও করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(إِنَّ فِي السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ لَاٰيٰتٍ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ وَفِيْ خَلْقِكُمْ وَمَا يَبُثُّ مِنْ دَا۬بَّةٍ اٰيٰتٌ لِّقَوْمٍ يُّوْقِنُوْنَ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَمَآ أَنْزَلَ اللّٰهُ مِنَ السَّمَا۬ءِ مِنْ رِّزْقٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَتَصْرِيْفِ الرِّيٰحِ اٰيٰتٌ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ)
“নিশ্চয়ই আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে অনেক নিদর্শন রয়েছে মু’মিনদের জন্য। তোমাদের সৃষ্টিতে এবং জীবজন্তুর বিস্তারে নিদর্শনাবলী রয়েছে দৃঢ় বিশ্বাসীদের জন্য। রাত ও দিনের পরিবর্তনে, আল্লাহ আকাশ হতে যে পানি বর্ষণ দ্বারা পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য।” (সূরা জাসিয়া ৪৫ : ৩-৫) এরূপ আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
(وَيُنَزِّلُ لَكُمْ مِّنَ السَّمَا۬ءِ رِزْقًا)
তিনি আকাশ হতে রিযিক তথা বৃষ্টি বর্ষণ করেন যার দ্বারা সর্বপ্রকার শস্য, নানা রং ও স্বাদের ফল-মূল উৎপাদিত হয়ে থাকে। পানি ও জমিন এক হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে উৎপাদিত বিভিন্ন ফলের স্বাদ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সুতরাং যে আল্লাহ তা‘আলা এতসব দান করেছেন একমাত্র তাঁর জন্যই ইবাদত করব। কে খুশী হল আর কে রাগ করল তা দেখার বিষয় নয়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. মানুষের দুটি জীবন ও দুটি মৃত্যু হয় এ কথা জানতে পারলাম।
২. রিযিক দাতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, অন্য কেউ নয়।
৩. একনিষ্ঠভাবে কেবল আল্লাহ তা‘আলারই ইবাদত করতে হবে।
৪. কর্তৃত্ব চলবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার, অন্য কারো নয়, যিনি একক ও অদ্বিতীয়।
৫. আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশী স্থাপন করলে তিনি তা সহ্য করেন না।
9 Fozlur Rahman
অতএব, দ্বীনকে কেবল তাঁর জন্য নিবেদিত করে তোমরা আল্লাহকে ডাক, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে।
10 Mokhtasar Bangla
১৪. তাই হে মুমিন সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহকে শিরকমুক্ত হয়ে এককভাবে খাঁটি মনে মান্য করো ও তাঁকে আহŸান করো যদিও বা তাতে মুশরিকরা অসন্তুষ্ট ও রাগান্বিত হয়।
11 Tafsir Ibn Kathir
১০-১৪ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা কাফিরদের সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, কিয়ামতের দিন যখন তারা আগুনের কূপে থাকবে এবং আল্লাহর আযাব দেখে নিবে এবং যেসব শাস্তি হবে সবই চোখের সামনে থাকবে, তখন তারা নিজেদের প্রাণের শত্রু হয়ে যাবে এবং কঠিন শত্রু হবে। কেননা, নিজেদের মন্দ কর্মের কারণে তাদেরকে জাহান্নামে যেতে হচ্ছে। ঐ সময় ফেরেশতারা তাদেরকে উচ্চ কণ্ঠে বলবেনঃ আজ তোমাদের নিজেদের প্রতি তোমাদের ক্ষোভ অপেক্ষা দুনিয়ায় তোমাদের উপর আল্লাহর অপ্রসন্নতা ছিল অধিক, যখন তোমাদেরকে ঈমানের প্রতি আহ্বান করা হয়েছিল আর তোমরা তা অস্বীকার করেছিলে।
মহান আল্লাহর قَالُوْا رَبَّنَاۤ اَمَتَّنَا اثْنَتَیْنِ ـ ـ ـ -এই উক্তিটি তাঁর নিম্নের উক্তিটির মতইঃ
كَیْفَ تَكْفُرُوْنَ بِاللّٰهِ وَ كُنْتُمْ اَمْوَاتًا فَاَحْیَاكُمْ ثُمَّ یُمِیْتُكُمْ ثُمَّ یُحْیِیْكُمْ ثُمَّ اِلَیْهِ تُرْجَعُوْنَ
অর্থাৎ “তোমরা কিরূপে আল্লাহকে অস্বীকার কর? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদেরকে জীবন্ত করেছেন, আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন ও পুনরায় জীবন্ত করবেন, পরিণামে তার দিকেই তোমরা ফিরে যাবে।” (২:২৮)
সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, তাদেরকে দুনিয়ায় একবার মৃত্যু দান করা হয়, তারপর কবরে একবার জীবিত করা হয়, এরপর সওয়াল-জবাব শেষ করে আবার মৃত্যু ঘটান হয় এবং কিয়ামতের দিন পুনরায় জীবিত করা হবে। দুইবার মৃত্যু দান ও দুইবার জীবন দানের অর্থ এটাই। ইবনে যায়েদ (রঃ) বলেন যে, হযরত আদম (আঃ)-এর পৃষ্ঠদেশ হতে অঙ্গীকার গ্রহণের দিন জীবিত করা হয়, এরপর মায়ের পেটের মধ্যে রূহ ফুকে দেয়া হয়, তারপর মৃত্যু দান করা হয় এবং এরপর কিয়ামতের দিন আবার জীবন দান করা হবে। কিন্তু এ উক্তি দু’টি ঠিক নয়। কেননা, এটা অর্থ হলে তিনবার মৃত্যু দান ও তিনবার জীবন দান অপরিহার্য হচ্ছে, অথচ আয়াতে দু’বার মৃত্যু দান ও দু’বার জীবন দানের উল্লেখ রয়েছে। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ), হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং তাঁদের সঙ্গী সাথীদের উক্তিটিই সঠিক। অর্থাৎ মায়ের পেট হতে ভূমিষ্ট হওয়া একটি জীবন ও কিয়ামতের দিনের জীবন হলো দ্বিতীয় জীবন। আর দুনিয়ায় সৃষ্ট হওয়ার পূর্বের অবস্থা হলো একটি মৃত্যু এবং দুনিয়া হতে বিদায় গ্রহণ হচ্ছে আর একটি মৃত্যু। আয়াতে এ দুই মত্য ও এ দুই জীবনই উদ্দেশ্য। ঐ দিন কাফিররা কিয়ামতের মাঠে আল্লাহ তা'আলার নিকট আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করবে যে, তাঁদেরকে যদি আর একবার দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হতো! যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَ لَوْ تَرٰۤى اِذِ الْمُجْرِمُوْنَ نَاكِسُوْا رُءُوْسِهِمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ رَبَّنَاۤ اَبْصَرْنَا وَ سَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا اِنَّا مُوْقِنُوْنَ
অর্থাৎ “এবং হায়, তুমি যদি দেখতে! যখন অপরাধীরা তাদের প্রতিপালকের সম্মুখে অধোবদন হয়ে বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা প্রত্যক্ষ করলাম ও শ্রবণ করলাম; এখন আপনি আমাদেরকে পুনরায় প্রেরণ করুন, আমরা সকার্য করবো, আমরা তো দৃঢ় বিশ্বাসী।” (৩২:১২) কিন্তু তাদের এ আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করা হবে না। অতঃপর যখন তারা জাহান্নাম এবং ওর আগুন দেখবে এবং তাদেরকে জাহান্নামের ধারে পৌছিয়ে দেয়া হবে তখন দ্বিতীয়বার তারা ঐ আবেদন করবে এবং প্রথমবারের চেয়ে বেশী জোর দিয়ে বলবে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ
وَ لَوْ تَرٰۤى اِذْ وُقِفُوْا عَلَى النَّارِ فَقَالُوْا یٰلَیْتَنَا نُرَدُّ وَ لَا نُكَذِّبَ بِاٰیٰتِ رَبِّنَا وَ نَكُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ ـ بَلْ بَدَا لَهُمْ مَّا كَانُوْا یُخْفُوْنَ مِنْ قَبْلُ١ؕ وَ لَوْ رُدُّوْا لَعَادُوْا لِمَا نُهُوْا عَنْهُ وَ اِنَّهُمْ لَكٰذِبُوْنَ
অর্থাৎ “হায়, তুমি যদি দেখতে! যখন তাদেরকে জাহান্নামের পার্শ্বে দাড় করানো হবে তখন তারা বলবেঃ যদি আমাদেরকে দুনিয়ায় ফিরিয়ে দেয়া হতো তাহলে আমরা আমাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহকে অবিশ্বাস করতাম না এবং আমরা ঈমানদার হতাম! বরং ইতিপূর্বে তারা যা গোপন করতো তা তাদের জন্যে প্রকাশ হয়ে পড়েছে, যদি তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়াও হয় তবে আবার তারা ওটাই করবে যা হতে তাদেরকে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী।” (৬:২৭-২৮)
এর পরে যখন তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে দেয়া হবে এবং তাদের আযাব শুরু হয়ে যাবে তখন তারা আরো জোর ভাষায় এই আকাঙ্ক্ষাই প্রকাশ করবে। ঐ সময় তারা অত্যন্ত চীৎকার করে বলবেঃ
رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا غَیْرَ الَّذِیْ كُنَّا نَعْمَلُ اَوَ لَمْ نُعَمِّرْكُمْ مَّا یَتَذَكَّرُ فِیْهِ مَنْ تَذَكَّرَ وَ جَآءَكُمُ النَّذِیْرُ فَذُوْقُوْا فَمَا لِلظّٰلِمِیْنَ مِنْ نَّصِیْرٍ
অর্থাৎ “হে আমাদের প্রতিপালক! এখান হতে আমাদেরকে বের করে নিন, আমরা ভাল কাজ করবো, ঐ কাজ করবো না যা ইতিপূর্বে করতাম। (উত্তরে বলা হবেঃ) আমি কি তোমাদেরকে এমন বয়স দেইনি যে, যে উপদেশ গ্রহণের ইচ্ছা করতো সে উপদেশ গ্রহণ করতে পারতো? আর তোমাদের কাছে তো সতর্ককারী এসেছিল? সুতরাং তোমরা (শাস্তির) স্বাদ গ্রহণ কর, যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।” (৩৫:৩৭) তারা আরো বলবেঃ
رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا مِنْهَا فَاِنْ عُدْنَا فَاِنَّا ظٰلِمُوْنَ ـ قَالَ اخْسَئُوْا فِیْهَا وَ لَا تُكَلِّمُوْنِ
অর্থাৎ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এখান হতে বের করে নিন, এর পরেও যদি আমরা ঐ কাজই করি তবে তো আমরা নিশ্চিতরূপে যালিম হিসেবে পরিগণিত হবো। আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ দূর হয়ে যাও, এর মধ্যেই তোমরা পড়ে থাকে এবং আমার সাথে কথা বলো না।" (২৩:১০৭-১০৮)
এই আয়াতে ঐ লোকগুলো নিজেদের প্রশ্নের বা আবেদনের পূর্বে একটি মুকদ্দমা কায়েম করে আবেদনের মধ্যে এই ধরনের নমনীয়তা সৃষ্টি করেছে। তারা আল্লাহ তা'আলার ব্যাপক শক্তির বর্ণনা দিয়েছে যে, তারা মৃত ছিল, তিনি তাদেরকে জীবন দান করেছিলেন। তারপর আবার তাদের মৃত্যু ঘটিয়েছিলেন এবং পুনরায় জীবন দান করেছেন। সুতরাং আল্লাহ সব কিছুর উপরই পূর্ণ। ক্ষমতাবান। তিনি যা চান তাই করতে পারেন। তাই তারা বলেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের পাপ ও অপরাধ স্বীকার করছি। নিশ্চয়ই আমরা নিজেদের উপর যুলুম করেছি ও সীমালংঘন করেছি। এখন আমাদের পরিত্রাণের কোন উপায় আছে কি? অর্থাৎ আপনি আমাদের পরিত্রাণের উপায় বের করে দিন এবং আমাদেরকে পুনরায় দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিন, যার ক্ষমতা আপনার রয়েছে। এবার দুনিয়ায় গিয়ে আমরা ভাল কাজ করবো এবং এটা হবে আমাদের পূর্বের কৃতকর্মের সম্পূর্ণ বিপরীত। এবার দুনিয়ায় গিয়েও যদি আমরা পূর্বের কর্মের পুনরাবৃত্তি করি তবে তো আমরা অবশ্যই যালিম বলে গণ্য হবো।” তাদেরকে জবাবে বলা হবেঃ “এখন দ্বিতীয়বার দুনিয়ায় ফিরে যাওয়ার কোন পথ নেই। কেননা, যদি তোমাদেরকে আবার ফিরিয়ে দেয়াও হয় তবুও তোমরা পূর্বে যা করতে তাই করবে। তোমরা আসলে নিজেদের অন্তর বক্র করে ফেলেছে। এখনো তোমরা সত্যকে কবুল করবে না, বরং বিপরীতই করবে। তোমাদের অবস্থা তো এই ছিল যে, যখন এক আল্লাহকে ডাকা হতো তখন তোমরা তাঁকে অস্বীকার করতে এবং আল্লাহর শরীক স্থাপন করা হলে তোমরা তা বিশ্বাস করতে। এই অবস্থাই তোমাদের পুনরায় হবে। দ্বিতীয়বার দুনিয়ায় গেলে তোমরা পুনরায় এই কাজই করবে। সুতরাং প্রকৃত হাকিম যার হুকুমে কোন প্রকারের। যুলুম নেই, বরং যার ফায়সালায় ন্যায় ও ইনসাফই রয়েছে তিনিই আল্লাহ। তিনি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন। যার উপর। ইচ্ছা তিনি রহম করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি প্রদান করেন। তার ফায়সালা ও ইনসাফের ব্যাপারে তার কোন শরীক নেই। ঐ আল্লাহ স্বীয় ক্ষমতা লোকদের উপর প্রকাশ করে থাকেন। যমীন ও আসমানে তাঁর তাওহীদের অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে। যার দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, সবারই সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রক্ষাকর্তা একমাত্র তিনিই। তিনি আকাশ হতে রূযী অর্থাৎ বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকেন যার দ্বারা সর্বপ্রকারের শস্য, নানা প্রকারের উত্তম স্বাদের, বিভিন্ন রং-এর এবং নানা আকারের ফল-ফুল উৎপন্ন হয়ে থাকে। অথচ পানিও এক এবং যমীনও এক। সুতরাং এর দ্বারা মহান আল্লাহর মাহাত্ম্য প্রকাশ পায়। সত্য তো এই যে, শিক্ষা ও উপদেশ এবং চিন্তা ও গবেষণার তাওফীক শুধু সেই লাভ করে যে আল্লাহ তা'আলার দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং তার দিকে প্রত্যাবর্তন করে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ সুতরাং আল্লাহকে ডাকো তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে, যদিও কাফিররা এটা অপছন্দ করে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) প্রত্যেক ফরয নামাযের সালামের পরে নিম্নের তাসবীহ পাঠ করতেনঃ
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ـ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللّٰهِ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ وَلَا نَعْبُدُ اِلَّا اِيَّاهُ لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ لَا اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
অর্থাৎ “আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই, রাজতু ও প্রশংসা তারই এবং তিনি প্রত্যেক জিনিসের উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহর তাওফীক ছাড়া গুনাহ হতে বেঁচে থাকার ও আল্লাহর ইবাদতে লেগে থাকার ক্ষমতা কারো নেই। আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই, আমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করি। নিয়ামত, অনুগ্রহ এবং উত্তম প্রশংসা তাঁরই। আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আল্লাহর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে আমরা শুধু তাকেই ডাকি, যদিও কাফিররা এটা অপছন্দ করে।” হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) বলতেন যে, রাসূলুল্লাহও (সঃ) প্রত্যেক নামাযের পরে এটা পাঠ করতেন।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে রয়েছে এবং এটা ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈও (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা আল্লাহর নিকট দু'আ করো এবং ককূল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস রেখো এবং জেনে রেখো যে, উদাসীন ও অমনোযোগী অন্তরের দু'আ আল্লাহ কবূল করেন না।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)