আল মুলক আয়াত ৫
وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاۤءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيْحَ وَجَعَلْنٰهَا رُجُوْمًا لِّلشَّيٰطِيْنِ وَاَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيْرِ ( الملك: ٥ )
Wa laqad zaiyannas samaaa'ad dunyaa bimasaa beeha wa ja'alnaahaa rujoomal lish shayaateeni wa a'tadnaa lahum 'azaabas sa'eer (al-Mulk ৬৭:৫)
English Sahih:
And We have certainly beautified the nearest heaven with lamps [i.e., stars] and have made [from] them what is thrown at the devils and have prepared for them the punishment of the Blaze. (Al-Mulk [67] : 5)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দিয়ে সুসজ্জিত করেছি আর শয়ত্বানকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য, এবং প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি। (আল মুলক [৬৭] : ৫)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং ওগুলোকে করেছি শয়তানদের প্রতি ক্ষেপণাস্ত্র স্বরূপ[১] এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত অগ্নির শাস্তি।
[১] এখানে নক্ষত্র সৃষ্টির দু'টি উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমতঃ আসমানের সৌন্দর্যবর্ধন। কেননা, তা প্রদীপের মত দীপ্তিমান সুন্দর দেখা যায়। দ্বিতীয়তঃ শয়তানদল যখন আসমানের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন একে উল্কারূপে তাদের উপর নিক্ষেপ করা হয়। এর তৃতীয় উদ্দেশ্য যেটাকে অন্যত্র বর্ণনা করা হয়েছে তা হল, তার দ্বারা সমুদ্রে ও স্থলে পথ ও দিক নির্ণয় করা হয়।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর অবশ্যই আমারা নিকটবর্তী আসমানকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা [১] এবং সেগুলোকে করেছি শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।
[১] مصابيح শব্দের অর্থ প্রদীপমালা। এখানে নক্ষত্ররাজি বোঝানো হয়েছে। [বাগভী; ফাতহুল কাদীর]
3 Tafsir Bayaan Foundation
আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপপুঞ্জ দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং সেগুলোকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের আযাব।
4 Muhiuddin Khan
আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জত করেছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্রবৎ করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্যে জলন্ত অগ্নির শাস্তি।
5 Zohurul Hoque
আর আমরা নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করে রেখেছি প্রদীপমালা দিয়ে, আর আমরা তাদের বানিয়েছি শয়তানদের জন্য ভাঁওতার বিষয়; আর আমরা তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।
6 Mufti Taqi Usmani
আমি নিকটবর্তী আকাশকে সাজিয়েছি উজ্জ্বল প্রদীপ দ্বারা এবং সেগুলোকে শয়তানের উপর নিক্ষেপের উপকরণও বানিয়েছি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।
7 Mujibur Rahman
আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা এবং ওগুলিকে করেছি শাইতানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।
8 Tafsir Fathul Mazid
নামকরণ :
মুলক (الْمُلْكُ) শব্দের অর্থ : রাজত্ব, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা ইত্যাদি। দুনিয়া ও আখেরাতের সকল প্রকার রাজত্ব ও ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার হাতে। তবে দুনিয়ার রাজত্ব ও ক্ষমতা ক্ষণিকের জন্য আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হাতে দিলেও তার প্রকৃত ও একচ্ছত্র মালিক একমাত্র তিনি। তিনি যখন ইচ্ছা কারো কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন। الْمُلْكُ শব্দটি অত্র সূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত আছে। সেখান থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
ফযীলত :
সূরা মুলক একটি বিশেষ ফযীলতপূর্ণ সূরা। আবূূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :
إِنَّ سُورَةً فِي الْقُرْآنِ ثَلَاثُونَ آيَةً شَفَعَتْ لِصَاحِبِهَا حَتّي غُفِرَ لَهُ تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ
নিশ্চয়ই কুরআনে ত্রিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা রয়েছে যা কিয়ামত দিবসে পাঠককে সুপারিশ করবে ফলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। তা হল সূরা মুলক। (আবূূ দাঊদ হা. ১৪০০, তিরমিযী হা. ২৮৯১, নাসায়ী হা. ৩১০, সহীহ)
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : কুরআনে একটি সূরা আছে যা পাঠকের জন্য আল্লাহ তা‘আলার সাথে ঝগড়া করবে, এমনকি ঝগড়া করতে করতে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তা হল সূরা মুলক। (দুররুল মানসুর ৬/২৪৬, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৭/১২৩১, বণর্নাকারীগণ নির্ভরযোগ্য )
জাবের (রাঃ) বলেন : নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
(ال۬مّ۬ﭐﺆ تَنْزِیْلُ الْکِتٰبِ) (সূরা সিজদাহ) ও
(تَبَارَكَ الَّذِيْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ)
(সূরা মুলক) না পড়ে ঘুমাতেন না। (তিরমিযী হা. ২৮১২, মিশকাত হা. ২১৫৫, সহীহ)
এ সূরা পাঠ করলে কবরের আযাব মাফ করে দেওয়া হয় বলে যে হাদীস রয়েছে তা দুর্বল। (তিরমিযী হা. ২৮৯০, মিশকাত হা. ২১৫৪)
সূরার শুরুতে আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্ব, মানুষের জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টির মূল লক্ষ্য তাদেরকে পরীক্ষা করা, তারকারাজি সৃষ্টি করার হিকমত, জাহান্নামীদেরকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে তখন তাদের অবস্থা ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে। তারপর জাহান্নামকে তার নির্দিষ্ট আকৃতি, গুণাগুণ ও রক্ষকসহকারে প্রস্তুত করা, অতীতকালের কাফিরদের ওপর আপতিত আকস্মিক বিপদাপদ অবতরণ করা এবং শেষের দিকে আল্লাহ তা‘আলার কয়েকটি নেয়ামতের কথা উল্লেখ করা হয়ছে।
১-৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
সূরার শুরুতেই আল্লাহ তা‘আলা নিজের মহিমা, গৌরব ও মর্যাদা বর্ণনা করেছেন এবং সংবাদ দিচ্ছেন যে, তাঁর হাতেই সকল রাজত্ব ও ক্ষমতা, তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, তাই তিনি বলেছেন :
(وَھُوَ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرُ)
তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। সুতরাং তাঁকে কোন কিছুই অক্ষম করতে পারবে না। তাঁর ঊর্ধ্বে কেউ উঠতে পারবে না, তাঁর ইচ্ছাকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই হয়, নিজের ইচ্ছার ওপর তিনি কর্তৃত্ববান ও সর্বজয়ী।
تَبَارَكَ শব্দটি بركة থেকে উদ্ভুত। এর শাব্দিক অর্থ বেশি হওয়া। এ শব্দটি আল্লাহ তা‘আলার শানে ব্যবহার হলে এর অর্থ হয় মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার সাথে যে সকল শির্ক করে তা থেকে তিনি সুমহান ও সুউচ্চ এবং সৃষ্টির প্রতি তাঁর কল্যাণ ও দয়া অনেক।
(بِيَدِهِ الْمُلْكُ) ‘যাঁর হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব’ এখানে আল্লাহ তা‘আলার হাত অর্থে يد শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। কুরআনে আল্লাহ তা‘আলার হাত বুঝানোর জন্য এরূপ শব্দের ব্যবহার ৫/৬ বার এসেছে। সূরা মায়িদার ৬৪ নম্বর, ফাত্হের ১০ নম্বর, সোয়াদের ৭৫ নম্বর, সূরা ইয়াসীনের ৮৩ নম্বর এবং সূরা মু’মিনূনের ৮৮ নম্বর আয়াতে। এসব আয়াতে يد শব্দ ব্যবহার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলার হাত রয়েছে এবং সে হাত প্রকৃত হাত, কোন রূপক নয় এবং তা আল্লাহ তা‘আলার শানে যেমন উপযোগী তেমন। সৃষ্টির কোন হাতের সাথে সাদৃশ্য দেওয়া যাবে না এবং অস্বীকারও করা যাবে না। অনেকে বলতে পারেন, এখানে হাত দ্বারা প্রকৃত হাত উদ্দেশ্য নয়, বরং রূপক অর্থে আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমতাকে বুঝোনো হয়েছে, যেমন মানুষ বলে থাকে-এ বিষয়ে আমার হাত নেই। আমরা বলব, মানুষের প্রকৃত হাত আছে বলেই তো এখানে হাত শব্দটি ব্যবহার করতে পারা যাচ্ছে। এখন যদি কোন প্রাণী বলে : এ বিষয়ে আমার কোন হাত নেই, তাহলে কি তার বলা শোভা পাবে? না, কারণ প্রাণীর তো হাতই নেই, সে রূপক অর্থে ব্যবহার করবে কিভাবে? যার প্রকৃত হাত বা অন্যান্য অঙ্গ রয়েছে সে কেবল সে সকল অঙ্গ রূপক অর্থে ব্যবহার করতে পারে। তাছাড়া কুরআন ও সহীহ হাদীসে এ গুণটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। সুতরাং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বীদাহ হল-কোন অপব্যাখ্যা, অস্বীকৃতি ও সাদৃশ্য ছাড়াই আল্লাহর প্রকৃত হাত রয়েছে। কিন্তু হাতের ধরণ, গঠন ও প্রকৃতি সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহই জানেন, আমরা জানি না।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা মানুষের মৃত্যু-জীবন সৃষ্টির লক্ষ্য উদ্দেশ্য উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি মানুষের মৃত্যু-জীবন সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য-কে সৎ আমলে শ্রেষ্ঠ। সৎ আমলের পরিচয় তুলে ধরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : সে ব্যক্তি ভাল কর্মী, যে আল্লাহ তা‘আলার হারামকৃত বিষয়াদি থেকে সর্বাধিক বেঁচে থাকে এবং আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করার জন্য সদাসর্বদা উন্মুখ হয়ে থাকে। (কুরতুবী) মানুষের মন মগজে এ সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষ সদা সতর্ক থাকে, সচেতন ও ছোট বড় যাবতীয় গুনাহ থেকে বিরত হয় এবং মনের গোপন ইচ্ছা ও প্রকাশ্য কাজ কর্ম সম্পর্কে হুশিয়ার হয়। বিশ্ব সাম্রাজের ওপর আল্লাহ তা‘আলার যে সর্বময় কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা বিরাজমান এবং তাঁর ইচ্ছা যে বাধা-বন্ধনহীন তার প্রমাণ এই যে, তিনি জীবন ও মৃত্যুর স্রষ্টা। জীবন বলতে দুনিয়া ও আখিরাতের উভয় জীবন উদ্দেশ্য। এখানে মৃত্যুকে জীবনের পূর্বে উল্লেখ করার কারণ হল, মানুষ মূলত মৃত ছিল পরে তাকে জীবন দান করা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(كَيْفَ تَكْفُرُوْنَ بِاللّٰهِ وَكُنْتُمْ أَمْوَاتًا فَأَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيْكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ)
“কিভাবে তোমরা আল্লাহকে অস্বীকার করছ? অথচ তোমরা নির্জীব ছিলে, পরে তিনিই তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন, এরপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, পরে আবার জীবিত করবেন, অবশেষে তোমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে।” (সূরা বাক্বারাহ ২ : ২৮ )
মরণ ও জীবনের স্বরূপ : উক্ত আয়াত থেকে বুঝা গেল, মরণ ও জীবন দুটি সৃষ্ট বস্তু। জীবন যেমন দেহের একটি অবস্থার নাম, মৃত্যুও তেমনি একটি অবস্থা। মুমূর্ষু ব্যক্তির দিকে দৃষ্টিপাত করলেই তা অনুমান করা যায়। সহীহ হাদীসে এসেছে : কিয়ামতের দিন যখন জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে চলে যাবে, তখন মৃত্যুকে একটি ভেড়ার আকারে উপস্থিত করা হবে এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে জবাই করে ঘোষণা করা হবে : এখন যারা যে অবস্থায় আছ অনন্তকাল সে-অবস্থায়ই থাকবে। এখন থেকে কারো মৃত্যু হবে না। (সহীহ বুখারী হা. ৬৫৮৪)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির নৈপুণ্যতা উল্লেখ করছেন। আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সৃষ্টির শৈল্পিক পূর্ণতা ও চমৎকারিত্ব সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। সৃষ্টির এ পূর্ণতা ও চমৎকারিত্ব চক্ষুকে করে বিস্ময়ে বিস্ফারিত, অভিভূত ও হতভম্ব।
طِبَاقًا অর্র্থ : طبقة فوق طبقة
এক স্তরের ওপর অপর স্তর। তা হল সাত স্তর যা একটি অন্যটির সাথে মিলিত নয়। সাহাবী ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : দুনিয়ার আকাশ ও তার উপরের আকাশের মাঝে দূরত্ব্ হল পাঁচ শত বছরের দূরত্বের সমান। অনুরূপ প্রত্যেক আকাশের মাঝে পাঁচ শত বছরের সমান দূরত্ব রয়েছে। (মু‘জামুল কাবীর, ইমাম তাবরানী হা. ৮৯৮৭)
تَفٰوُتٍ বক্রতা, অসামঞ্জস্য, ত্র“টি ও খুঁত। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টিতে কোন প্রকার ত্র“টি ও অসামঞ্জস্যতা বলতে কিছুই নেই। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্ট আকাশের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে বললেন যে, দেখ কোন দোষ ত্র“টি খুঁজে পাও কিনা। আল্লাহ তা‘আলা পুনরায় ভালভাবে দৃষ্টি দিতে বললেন যাতে মনের ভেতর কোন প্রকার দ্বিধা না থাকে। তারপর আল্লাহ তা‘আলা নিজেই বলছেন, তাঁর সৃষ্টিতে কোন প্রকার ত্র“টি দেখতে পাবে না। বরং তোমার দৃষ্টি কোন প্রকার দোষ ত্র“টি ও অসামঞ্জস্যতা না দেখে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসবে। যে ব্যক্তি এ বিশ্বজগত এবং তার নিয়ম-নীতি ও স্বভাব-প্রকৃতি সম্পর্কে নূ্যূনতম তথ্য জানে যেমনটি আধুনিক বিজ্ঞান কিছু কিছু তথ্য উদ্ঘাটন করছে, সে নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে বিস্ময়ে স্তম্ভিত ও হতবাক না হয়ে পারবে না। এজন্যই কুরআন মানুষকে এ বিশ্ব প্রকৃতি ও তার বিস্ময়কর উপাদানগুলো পর্যবেক্ষণ করতে উদ্ধুদ্ধ করে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তারকারাজির সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী তা ব্যক্ত করছেন। আল্লাহ তা‘আলা তারকাকে তিনটি কারণে সৃষ্টি করেছেন :
১. দুনিয়ার আকাশকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করার জন্য।
২. শয়তানের জন্য ক্ষেপাণাস্ত্রস্বরূপ। যেমন অত্র সূরার ৫ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
৩. পথ প্রদর্শনের জন্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَعَلٰمٰتٍ ط وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُوْنَ )
“এবং পথ নির্ণায়ক চিহ“সমূহও। আর তারা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায়।” (সূরা নাহল ১৬ : ১৬)
অতএব এ তিনটি কাজ ছাড়া তারকারাজিকে অন্য কোন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহার করা নিষেধ। যেমন তারকা দিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করা, তারকা দ্বারা সুলক্ষণ-কুলক্ষণ গ্রহণ করা ইত্যাদি।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. সূরা মুলকের ফযীলত জানতে পারলাম।
২. আল্লাহ তা‘আলার হাত রয়েছে তার প্রমাণ পেলাম।
৩. মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে-কে উত্তম আমলে শ্রেষ্ঠ তা পরীক্ষা করার জন্য।
৪. আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির নৈপুণ্যতা জানলাম।
৫. তারকারাজিকে মাত্র তিনটি কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এ তিনটি ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করা নিষেধ।
9 Fozlur Rahman
আমি (পৃথিবীর) নিকটতম আসমানকে প্রদীপমালা (তারকারাজি) দিয়ে সুসজ্জিত করেছি, সেগুলোকে শয়তানদের (তাড়ানোর) জন্য ক্ষেপণাস্ত্র বানিয়েছি এবং তাদের জন্য জ্বলন্ত আগুনের (জাহান্নামের) শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।
10 Mokhtasar Bangla
৫. আমি যমীনের সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী আসমানকে আলোক-উজ্জল তারকারাজি দিয়ে সৌন্দর্যমÐিত করেছি। আমি সেগুলোকে সেসব শয়তানের জন্য নিক্ষেপণ বানিয়েছি যারা চুরি করে কথা শ্রবণ করে। ফলে আমি তদ্বারা তাদেরকে পুড়িয়ে দেই। আর আমি তাদের উদ্দেশ্যে পরকালে সৃষ্টি করে রেখেছি প্রজ্জলিত আগুন।
11 Tafsir Ibn Kathir
মুসনাদে আহমাদে হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কুরআন কারীমে ত্রিশটি আয়াত বিশিষ্ট এমন একটি সূরা রয়েছে যা ওর পাঠকের জন্যে সুপারিশ করতে থাকবে যে পর্যন্ত না তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। ওটা হলো تَبَارَكَ الَّذِىْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ-এই সূরাটি। (এ হাদীসটি সুনানে নাসাঈ, সুনানে আবি দাউদ, জামেউত তিরমিযী এবং সুনানে ইবনে মাজাহতেও বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান বলেছেন)
‘তারীখে ইবনে আসাকির’ গ্রন্থে হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী যুগে একটি লোক মারা যায়। তার সাথে আল্লাহর কিতাবের মধ্য হতে সূরা ‘তাবারাকা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তাকে সমাধিস্থ করা হলে ফেরেশতা এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে যান। এ দেখে এ সূরাটি ফেরেশতার মুখোমুখি হয়ে যায়। তখন ফেরেশতা সূরাটিকে বলেনঃ “তুমি আল্লাহর কিতাব। সুতরাং আমি তোমাকে অসন্তুষ্ট করতে চাইনে। তোমার জানা আছে যে, আমি তোমার এই মৃতের এবং আমার নিজের লাভ ক্ষতির কোন অধিকার রাখি না। সুতরাং তুমি যদি একে (কবরের আযাব হতে) রক্ষা করতে চাও তবে তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট গমন কর এবং এর জন্যে সুপারিশ কর।” এ সূরাটি তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহর নিকট গমন করলো এবং বললোঃ “হে আমার প্রতিপালক! অমুক ব্যক্তি আপনার কিতাবের মধ্য হতে আমাকে শিখেছে ও পাঠ করেছে। সুতরাং আমি তার বক্ষে রক্ষিত আছি এমতাবস্থায়ও কি আপনি তাকে আগুনে ফেলে শাস্তি দিবেন? যদি তাই করেন তবে আমাকে আপনার কিতাব হতে মুছে ফেলুন। তার এই কথা শুনে আল্লাহ তা'আলা তাকে বলবেনঃ “তোমাকে তো এ সময় খুবই রাগান্বিত দেখছি।" সে জবাবে বললোঃ “অসন্তুষ্টি প্রকাশের আমার অধিকার রয়েছে।” আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা তখন তাকে বললেনঃ যাও, আমি ঐ ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমার সুপারিশ কবূল করলাম।” এই সূরাটি তখন ঐ লোকটির কাছে ফিরে গেলো এবং আযাবের ফেরেশতাকে সরিয়ে দিলো। অতঃপর ঐ মৃত ব্যক্তির মুখের সাথে নিজের মুখ মিলিয়ে দিয়ে বললোঃ “এ মুখকে ধন্যবাদ! এই মুখই তো আমাকে পাঠ করতো। এই বক্ষকে মুবারকবাদ! এই বক্ষই তো আমাকে মুখস্থ করে রেখেছিল। ধন্য এ পা দু’টি! এ পা দু’টিই তো আমাকে পাঠের সাথে রাত্রে দাঁড়িয়ে থাকতে।" এ সূরাটি কবরে তাকে কোন প্রকারের দুঃখ কষ্ট পৌঁছতে দিবে না।” বর্ণনাকারী বলেন যে, এ হাদীসটি শোনা মাত্রই ছোট-বড়, আযাদ-গোলাম সবাই এই সূরাটি শিখে নিলো। এই সূরাটির নাম রাসূলুল্লাহ (সঃ) مُنْجِيَة রেখেছেন অর্থাৎ মুক্তিদাতা সূরা। (এ হাদীসটি মুনকার বা অস্বীকৃত। ফুরাত ইসায়েব নামক এর একজন বর্ণনাকারীকে ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন (রঃ), ইমাম বুখারী (রঃ), ইমাম আবূ হাতিম (রঃ), ইমাম দারকুতনী (রঃ) প্রমুখ গুরুজন দুর্বল বলেছেন। অন্য সনদে বর্ণিত আছে যে, এটা ইমাম যুহরী (রঃ)-এর উক্তি, মারফূ’ হাদীস নয়) ইমাম বায়হাকী (রঃ) ইসতাতু আবিল কাবরি’ নামক গ্রন্থে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে একটি মারফূ’ এবং একটি মাওকুফ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে যে বিষয়টি রয়েছে, সেটাও এর সাক্ষীরূপে কাজে লাগতে পারে। আমরা এটাকে আহকামি কুবরার কিতাবুল জানায়েযের মধ্যে বর্ণনা করেছি। সুতরাং আল্লাহ তা'আলারই জন্যে সমস্ত প্রশংসা এবং আমরা তাঁর নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কুরআন কারীমে এমন একটি সূরা রয়েছে যা তার পাঠকের পক্ষ হতে আল্লাহ তা’আলার সাথে ঝগড়া ও তর্ক-বিতর্ক করে তাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করেছে। ওটা হলো تَبَارَكَ الَّذِىْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ-এই সূরাটি।” (এ হাদীসটি তিবরানী (রঃ)-এর হাফিয যিয়া মুকাদ্দসী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ)-এর কোন একজন সাহাবী জঙ্গলের এমন এক জায়গায় তার তাঁবু স্থাপন করেন, যেখানে একটি কবর ছিল। কিন্তু ওটা তাঁর জানা ছিল না। তিনি শুনতে পান যে কে যেন সূরা মূলক পাঠ করছেন এবং পূর্ণ সূরাটি পাঠ করেন। ঐ সাহাবী এসে নবী (সঃ)-এর নিকট ঘটনাটি বর্ণনা করেন। এটা শুনে নবী (সঃ) বলেনঃ “এ সূরাটি হলো বাধাদানকারী এবং মুক্তিদাতা। এটা কবরের আযাব থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে। (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটা গারীব বা দুর্বল হাদীস)
হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) শয়নের পূর্বে آلٓمّٓ تَنْزِيْل এবং تَبَارَكَ الَّذِىْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ সূরা দু’টি পাঠ করতেন। (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত তাউস (রঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, এ সূরা দু’টি কুরআন কারামের অন্যান্য সূরাগুলোর উপর সত্তরটি পুণ্যের ফযীলত রাখে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি চাই যে, এ সূরাটি যেন আমার উম্মতের প্রত্যেকের অন্তরেই থাকে। অর্থাৎ تَبَارَكَ الَّذِىْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ -এই সূরাটি।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটা গারীর হাদীসু এর ইবরাহীম নামক বর্ণনাকারী দুর্বল। এ ধরনেরই বর্ণনা সূরা ইয়াসীনের তাফসীরে গত হয়েছে)
মুসনাদে আবদ ইবনে হুমাইদে কিছুটা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) একজন লোককে বলেনঃ “এসো, আমি তোমাকে এমন একটি উপহার দিই যাতে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যেতে পার। (তা হলো এই যে,) তুমি تَبَارَكَ الَّذِىْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ সূরাটি পাঠ করবে এবং পরিবারবর্গকে, সন্তান- সন্তুতিকে এবং পাড়া-প্রতিবেশীকে এটা শিখিয়ে দিবে। এ সূরাটি মুক্তিদাতা এবং সুপারিশকারী। কিয়ামতের দিন এটা এই পাঠকের পক্ষ হতে আল্লাহ তা'আলার নিকট সুপারিশ করে তাকে আগুনের শাস্তি হতে বাঁচিয়ে নিবে এবং কবরের আযাব হতেও রক্ষার ব্যবস্থা করবে।”
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি আকাক্ষা করি যে, আমার উম্মতের প্রত্যেকের অন্তরেই যেন এ সূরাটি থাকে।
১-৫ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা'আলা নিজের প্রশংসা করছেন এবং খবর দিচ্ছেন যে, সমস্ত মাখলূকের উপর তাঁরই আধিপত্য রয়েছে। তিনি যা চান তাই করেন। তাঁর হুকুমকে কেউ টলাতে পারে না। তাঁর শক্তি, হিকমত এবং ন্যায়পরায়ণতার কারণে কেউ তাঁর কাছে কোন কৈফিয়ত তলব করতে পারে না। তিনি সব কিছুর উপরই পূর্ণ ক্ষমতাবান।
এরপর আল্লাহ পাক মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টির বর্ণনা দিয়েছেন। এ আয়াত দ্বারা ঐ লোকগুলো দলীল গ্রহণ করেছেন। যাঁরা বলেন যে, মৃত্যুর অস্তিত্ব রয়েছে। কেননা, ওটাকেও সৃষ্টি করা হয়েছে। এ আয়াতের ভাবার্থ এই যে, আল্লাহ তা'আলা সমস্ত মাখলূকের অস্তিত্বহীনতাকে অস্তিত্বে আনয়ন করেছেন যাতে সকৎর্মশীলদের পরীক্ষা হয়ে যায়। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ
كَیْفَ تَكْفُرُوْنَ بِاللّٰهِ وَ كُنْتُمْ اَمْوَاتًا فَاَحْیَاكُمْ
অর্থাৎ “তোমরা কিরূপে আল্লাহকে অস্বীকার কর? অথচ তোমরা ছিলে মৃত, তিনি তোমাদেরকে জীবন্ত করেছেন।” (২৪:২৮) সুতরাং প্রাথমিক অবস্থা অর্থাৎ অস্তিত্বহীনতাকে এখানে মৃত বলা হয়েছে এবং সৃষ্টিকে জীবন্ত বলা হয়েছে। এ জন্যেই এর পরে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেছেনঃ
ثُمَّ یُمِیْتُكُمْ ثُمَّ یُحْیِیْكُمْ
অর্থাৎ “আবার তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন ও পুনরায় জীবন্ত করবেন।” (২:২৮)
মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে হ্যরত কাতাদাহ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আল্লাহ তা'আলার اَلَّذِیْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَ الْحَیٰوةَ-এই উক্তি সম্পর্কে বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা আদম সন্তানকে মৃত্যু দ্বারা লাঞ্ছিত করেন এবং তিনি দুনিয়াকে জীবনের ঘর বানিয়ে দেন, তারপর বানিয়ে দেন মৃত্যুর ঘর। আর আখিরাতকে তিনি প্রতিফল ও প্রতিদানের ঘর বানিয়ে দেন, তারপর বানিয়ে দেন চিরস্থায়ী ঘর। (অন্য জায়গায় এই রিওয়াইয়াটিই হযরত কাতাদাহ (রঃ)-এর নিজের উক্তি বলে বর্ণিত হয়েছে)
মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমাদেরকে পরীক্ষা করবার জন্যে- কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? অধিক কর্মশীল নয়, বরং উত্তম কর্মশীল। আল্লাহ তা’আলা মহাপরাক্রমশালী হওয়া সত্ত্বেও অবাধ্য ও উদ্ধত লোকেরা তাওবা করলে তাদের জন্যে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীলও বটে।
এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সপ্তাকাশ। অর্থাৎ উপর নীচ করে সৃষ্টি করেছেন, একটির উপর অপরটিকে। কেউ কেউ এ কথাও বলেছেন যে, একটির উপর অপরটি মিলিতভাবে রয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় উক্তি এই যে, মধ্যভাগে জায়গা রয়েছে এবং একটি হতে অপরটি পর্যন্ত দূরত্ব রয়েছে। সর্বাধিক সঠিক উক্তি এটাই বটে। মিরাজের হাদীস দ্বারাও এটাই প্রমাণিত হয়।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবে না। বরং তুমি দেখবে যে, ওটা সমান রয়েছে। না তাতে আছে কোন হের-ফের, না কোন গরমিল। আবার তুমি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখো, কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি অত্যন্ত গভীর দৃষ্টিতে দেখো তো, কোথাও কোন ফাটা-ফুটা ও ছিদ্র পরিলক্ষিত হয় কি? এরপরেও যদি সন্দেহ হয় তবে বারবার দৃষ্টি ফিরাও, সেই দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে। অর্থাৎ বারবার দৃষ্টি ফিরালেও তুমি আকাশে কোন প্রকারের ত্রুটি দেখতে পাবে না এবং তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ-মনোরথ হয়ে ফিরে আসবে।
অপূর্ণতা ও দোষ-ত্রুটির অস্বীকৃতি জানিয়ে এখন পূর্ণতা সাব্যস্ত করতে গিয়ে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা অর্থাৎ নক্ষত্রপুঞ্জ দ্বারা, যেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু চলাফেরা করে এবং কতকগুলো স্থির থাকে।
এরপর ঐ নক্ষত্রগুলোর আরো একটি উপকারিতা বর্ণনা করছেন যে ওগুলোর দ্বারা শয়তানদেরকে মারা হয়। ওগুলো হতে অগ্নি শিখা বের হয়ে ঐ শয়তানদের উপর নিক্ষিপ্ত হয়, এ নয় যে, স্বয়ং তারকাই তাদের উপর ভেঙ্গে পড়ে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। শয়তানদের জন্যে তো দুনিয়ায় এ শাস্তি, আর আখিরাতে আল্লাহ তা'আলা তাদের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নির শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। যেমন সূরা সাফফাতের শুরুতে রয়েছেঃ
اِنَّا زَیَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنْیَا بِزِیْنَةِ اِ۟لْكَوَاكِبِ ـ وَ حِفْظًا مِّنْ كُلِّ شَیْطٰنٍ مَّارِدٍ ـ لَا یَسَّمَّعُوْنَ اِلَى الْمَلَاِ الْاَعْلٰى وَ یُقْذَفُوْنَ مِنْ كُلِّ جَانِبٍ ـ دُحُوْرًا وَّ لَهُمْ عَذَابٌ وَّاصِبٌ ـ اِلَّا مَنْ خَطِفَ الْخَطْفَةَ فَاَتْبَعَهٗ شِهَابٌ ثَاقِبٌ
অর্থাৎ “আমি নিকটবর্তী আকাশকে নক্ষত্ররাজির সুষমা দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং রক্ষা করেছি প্রত্যেক বিদ্রোহী, শয়তান হতে। ফলে তারা উর্ধ জগতের কিছু শ্রবণ করতে পারে না এবং তাদের প্রতি নিক্ষিপ্ত হয় সকল দিক হতে বিতাড়নের জন্যে এবং তাদের জন্যে আছে অবিরাম শাস্তি। তবে কেউ হঠাৎ কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ড তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে।” (৩৭:৬-১০)
হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, তারকারাজ তিনটি উপকারের জন্যে সৃষ্টি হয়েছে। (এক) আকাশের সৌন্দর্য, (দুই) শয়তানদের মার এবং (তিন) পথ প্রাপ্তির নিদর্শন। যে ব্যক্তি এ তিনটি ছাড়া অন্য কিছু অনুসন্ধান করে সে তার নিজের মতের অনুসরণ করে এবং নিজের বিশুদ্ধ ও সঠিক অংশকে হারিয়ে ফেলে আর অধিক জ্ঞান ও বিদ্যা না থাকা সত্ত্বেও নিজেকে বড় জ্ঞানী বলে প্রমাণিত করার কৃত্রিমতা প্রকাশ করে।” (এটা ইমাম জারীর (রঃ) ও ইমাম আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)