আল আ'রাফ আয়াত ২১

আর সে তাদের উভয়ের কাছে শপথ করে বলল , ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের শুভাকাংখীদের একজন [১]।'

[১] কাতাদা বলেন, শয়তান তাদের দু'জনের কাছে শপথের মাধ্যমে এগিয়ে এসে ধোকা দিয়েছিল। কখনও কখনও আল্লাহর উপর খাঁটি ঈমানদার ব্যক্তিও ধোঁকা খেয়ে থাকে। অনুরূপ এখানেও শয়তান তাদের দু'জনকে ধোঁকা দিয়েছিল। সে বলেছিল, ‘আমি তোমাদের আগে সৃষ্ট হয়েছি। আমি তোমাদের থেকে ভাল জানি। সুতরাং তোমরা আমার অনুসরণ কর, আমি তোমাদেরকে পথ দেখাব।’ কোন কোন মনীষী বলেন, কেউ আমাদেরকে আল্লাহর কথা বলে ধোঁকা দিলে আমরা ধোঁকাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। [তাবারী]

আর সে তাদের নিকট শপথ করল যে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের উভয়ের জন্য কল্যাণকামীদের একজন’।

সে তাদের কাছে কসম খেয়ে বললঃ আমি অবশ্যই তোমাদের হিতাকাঙ্খী।

আর সে তাদের কাছে কসম খেলো -- ''নিঃসন্দেহ আমি তো তোমাদের জন্য সদুপদেশদাতাদের মধ্যেকার।’’

সে তাদের সামনে কসম খেয়ে বলল, বিশ্বাস কর, আমি তোমাদের কল্যাণকামীদের একজন।

সে তাদের উভয়ের নিকট শপথ করে বললঃ আমি তোমাদের হিতাকাংখীদের অন্যতম।

Please check ayah 7:25 for complete tafsir.

সে তাদের কাছে শপথ করে বলল, “আমি অবশ্যই তোমাদের হিতাকাংক্ষী।”

২১. সে তাদেরকে আল্লাহর কসম দিয়ে বললো: হে আদম ও হাওয়া! আমি তোমাদেরকে যে পরামর্শ দিলাম সে ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কল্যাণকামী।

১৯-২১ নং আয়াতের তাফসীর:

ইরশাদ হচ্ছে- আদম (আঃ) ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া (আঃ)-এর জন্যে জান্নাতকে বাসস্থান বানানো হয়েছিল এবং তাদেরকে বলা হয়েছিল, তোমরা জান্নাতের একটি গাছের ফল ছাড়া সমস্ত গাছের ফল খেতে পার। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা সূরায়ে বাকারায় হয়ে গেছে। এ ব্যাপার দেখে শয়তানের তাদের দু’জনের উপর হিংসা হলো। সুতরাং সে প্রতারণার মাধ্যমে কাজ হাসিল করার চেষ্টা করতে লাগলো যেন যে নিয়ামত ও সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদ তারা লাভ করেছেন তা থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করে দেয়। এখন ইবলীস আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ)-কে বললোঃ “আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে যে এই গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছেন এর মধ্যে যৌক্তিকতা এই রয়েছে যে, তোমরা যেন মালাইকা হয়ে না যাও এবং এখানে চিরকাল বসবাস করার অধিকারী হয়ে না পড়। সুতরাং যদি তোমরা এই গাছের ফল খেয়ে নাও তবে তোমরা এই সুযোগ লাভ করতে পারবে।” যেমন সে বলেছিলঃ “হে আদম (আঃ)! আমি কি তোমাকে এমন গাছের কথা ও এমন ভূ-সম্পত্তির কথা বলে দেবো যা কখনো ধ্বংস হবে না?” যেমন আল্লাহ পাক বলেছেনঃ “আল্লাহ তোমাদেরকে এ কথা খোলাখুলিভাবে এ জন্যে বুঝাতে রয়েছেন যে, যেন তোমরা পথভ্রষ্ট না হয়ে পড়।” এখানে اَنْ تَضِلُّوْا-এর অর্থ হচ্ছে اَنْ لَّا تَضِلُّوْا অর্থাৎ যেন তোমরা পথভ্রষ্ট না হও। (৪:১৭৬) আর এক জায়গায় তিনি বলেছেনঃ “তিনি যমীনে পাহাড়ের পেরেক মেরে দিয়েছেন যেন তা হেলা দোলা ও টলমল না করে।” এখানেও اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ -এর ভাবার্থ হচ্ছে اَنْ لَّا تَمِيْدَ بِكُمْ অর্থাৎ যেন যমীন তোমাদেরকে নিয়ে টলমল না করে। (১৬:১৫)।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও ইয়াহইয়া ইবনে আবী কাসীর (রঃ) মালাকাইনে শব্দটিকে ‘মালিকাইনে অর্থাৎ كَسْرَة দিয়ে পড়তেন। কিন্তু জমহুর উলামা فَتْحَة দিয়ে পড়ে থাকেন।

وَقَاسَمَهُمَا অর্থাৎ ইবলীস হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ)-এর সামনে আল্লাহর নামে শপথ করে বললোঃ “আমি তোমাদের শুভাকাংখী। তোমাদের পূর্বে আমি এখানে অবস্থান করতাম এবং আমি এই জান্নাতের জায়গাগুলোর সঙ্গে সম্যক পরিচিত।” قَاسَمَ ক্রিয়া পদটির بَابْ হচ্ছে مُفَاعَلَة এবং بَابِ مُفَاعَلَة-এর একটি خَاصِيَّتْ হচ্ছে شِرْكَتْ বা মিলন। কিন্তু কোন কোন সময় একমুখীই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। অর্থাৎ আদম (আঃ) ও ইবলীস দু'জনে নয়; বরং শুধুমাত্র ইবলীসই পুথ করেছিল। শেষ পর্যন্ত সে প্রতারণায় সফলকাম হয়েছিল। আর আল্লাহর নাম নিয়ে মুমিনকে প্রতারিত করা যেতে পারে। কোন কোন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেনঃ “যে আমাকে আল্লাহর নাম নিয়ে প্রতারণা করেছে, আমি সদা-সর্বদা তার কছে প্রতারিত হয়েছি। তাহলে আদম (আঃ) প্রতারিত হবেন না কেন?”