৯৭-১০০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেন যে, কোন পুরুষ বা নারী যদি ঈমানের সাথে সৎ আমল করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দুটি উপহার দেবেন একটি দুনিয়াতে অপরটি আখিরাতে। দুনিয়াতে তাকে حَيٰوةً طَيِّبَةً তথা সুখী-সুন্দর জীবন দান করবেন। অর্থাৎ দুনিয়াতে পবিত্র ও হালাল রিযিক, সুখ সম্ভোগ, মনের তৃপ্তি, ইবাদতের স্বাদ, আনুগত্যের মজা ইত্যাদি সবই দেবেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ঐ ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাকে যথেষ্ট পরিমাণ রিযিক দান করা হয়েছে এবং আল্লাহ তা‘আলা তাকে যা দিয়েছেন তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থেকেছে। (তিরমিযী হা: ২৩৪৮, সহীহ)
আর আখিরাতে তাকে কাজের চেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দেবেন। হাদীসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
أَعْدَدْتُ لِعِبَادِيَ الصَّالِحِينَ مَا لَا عَيْنٌ رَأَتْ، وَلَا أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلَا خَطَرَ عَلَي قَلْبِ بَشَرٍ)
আমি আমার সৎ বান্দাদের জন্য এমন কিছু তৈরি করে রেখেছি যা কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কান শ্রবণ করেনি এবং কোন মানুষের অন্তর কল্পনাও করেনি। (সহীহ বুখারী হা: ৩২৪৪, সহীহ মুসলিম হা: ২৮২৪)
তবে কোন আমল সৎ আমল হিসেবে গণ্য হবার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে
১. একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ أُمِرُوْآ إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَا۬ءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلٰوةَ وَيُؤْتُوا الزَّكٰوةَ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ)
“তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা বিশুদ্ধচিত্তে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম। ” (সূরা বাইয়্যেনাহ ৯৮:৫)
২. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত অনুযায়ী হতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ ج وَمَا نَهٰكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا)
“রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক।”(সূরা হাশর ৫৯:৭)
সুতরাং কোন মুসলিম ব্যক্তি উক্ত শর্ত ছাড়া আমল করলে তা গ্রহণযোগ্য হবার আশা করা যায় না।
(فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ...)
এখানে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে উম্মতের সকলকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, কুরআন পাঠ করার শুরুতে
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
বিতাড়িত শয়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনা করে শুরু করতে হবে। এটা পাঠ করা ওয়াজিব; নফল বা মুস্তাহাব নয়। সুতরাং যখনই কেউ কুরআন পাঠ করবে তখনই আউযুবিল্লাহ........বলে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে শুরু করতে হবে। এ সম্পর্কে সূরা ফাতিহার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকের ওপর ভরসা করে শয়তান তার ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে না। বরং যারা তাকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে সেই তাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে এবং তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّ عِبَادِيْ لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطٰنٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغٰوِيْنَ)
‘‘বিভ্রান্তদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে তারা ব্যতীত আমার বান্দাদের ওপর তোমার কোনই ক্ষমতা থাকবে না; (সূরা হিজর ১৫:৪২)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ- إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ)
“সে বলল: তোমার ইযযতের শপথ! আমি তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করবই। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা তোমার একনিষ্ঠ বান্দা, তাদেরকে ছাড়া।” (সূরা স্ব-দ ৩৮:৮২-৮৩)
শয়তানের আধিপত্য বলতে বিষয়টি এমন যে, শয়তান সবধরণের মানুষের উপরই কর্তৃত্ব খাটাতে এমনকি একনিষ্ঠ মু’মিনদেরকেও পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করবে। কিন্তু সাধারণ লোকদের মাধ্যমে যেভাবে সে অন্যায় কাজ করানোর ব্যাপারে সফল হবে একনিষ্ঠ মু’মিনদের বেলায় সে তা পারবে না, তাদের বেলায় সে ব্যর্থ হবে। কারণ তারা সর্বদাই আল্লাহ তা‘আলার উপর ভরসা করে এবং তাঁরই আনুগত্যে ব্যস্ত থাকে, শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে রক্ষা করুন। আমীন! (তাফসীর আযয়াউল বায়ান)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যারা সৎ আমল করবে তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে সফলকাম হবে।
২. কুরআন পাঠের পূর্বে اَعُوْذُ بِاللّٰهِ পাঠ করতে হবে।
৩. ঈমানদারের ওপর শয়তান প্রাধান্য লাভ করতে পারে না।
৪. কোন আমল গ্রহণযোগ্য হতে হলে তা দুটি শর্ত সাপেক্ষে হতে হবে।