তাফসীর তাইসীরুল কুরআন:
তা কতই না নিকৃষ্ট যার বিনিময়ে তারা নিজেদের আত্মাকে বিক্রি করেছে, তা এই যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, জিদের বশে তারা তা প্রত্যাখ্যান করত শুধু এজন্য যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাহদের মধ্য হতে যাকে ইচ্ছে অনুগ্রহ করেন, অতএব তারা ক্রোধের উপর ক্রোধের পাত্র হল এবং কাফিরদের জন্যই লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
1 আহসানুল বায়ান | Tafsir Ahsanul Bayaan
তা কত নিকৃষ্ট যার বিনিময়ে তারা তাদের আত্মাকে বিক্রয় করেছে; তা এই যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা তারা অবিশ্বাস করছে শুধু এই হঠকারিতার দরুন[১] যে, আল্লাহ তাঁর দাসদের মধ্য হতে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। সুতরাং তারা ক্রোধের[২] উপর ক্রোধের পাত্র হল। আর (কাফের) অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
[১] অর্থাৎ, এ কথা জানা সত্ত্বেও যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) সেই শেষ নবী, যাঁর গুণাবলীর কথা তাওরাত ও ইঞ্জীলে উল্লিখিত হয়েছে এবং আহলে কিতাব তাদের এক মুক্তিদাতা হিসেবে তাঁর আগমনের অপেক্ষাও করছিল, কিন্তু কেবল এই জ্বালায় ও হিংসায় তাঁর উপর ঈমান আনেনি যে, নবী আমাদের মধ্য থেকে কেন হল না, যেমন আমাদের ধারণা ছিল। অর্থাৎ, তারা (নবীর নবুঅতকে) অস্বীকার করেছিল জাতিগত বিদ্বেষ ও হিংসার ভিত্তিতে, দলীল ও প্রমাণের ভিত্তিতে নয়।
[২] ক্রোধের উপর ক্রোধের অর্থ হল, অত্যধিক ক্রোধ। কারণ, তারা বারবার ক্রোধ উদ্রেককর কাজ করতে থাকে; যেমন পূর্বে (৬১নং আয়াতের টীকায়) এর বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এখন শুধুমাত্র হিংসার কারণে ক্বুরআন ও মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে অস্বীকার করল।
2 আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া | Tafsir Abu Bakr Zakaria
যার বিনিময়ে তারা তদের নিজেদের কে বিক্রি করেছে তা কতই না নিকৃষ্ট ! তা হচ্ছে, আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন, তারা তার সাথে কুফরী করেছে, হটকারীতাবশতঃ শুধু এজন্য যে, আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় অনুগ্রহ নাযিল করেন। কাজেই তারা ক্রোধের উপর ক্রোধ অর্জন করেছে [১]। আর কাফেরদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাময় শাস্তি [২]।
[১] এখানে তাদের শক্রতাকে কুফরের কারণ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এখানে এক ক্রোধ কুফরের কারণে এবং অপর ক্রোধ হিংসার কারণে। এ জন্যই ক্রোধের উপর ক্ৰোধ বলা হয়েছে। পরবর্তী আয়াতে তাদের যে উক্তি উদ্ধৃত হয়েছে তা থেকে কুফর প্রমাণিত হয় এবং হিংসাও বুঝা যায়। তবে ইকরিমাহ বলেন, তাদের উপর এক ক্রোধ হচ্ছে, ঈসা ‘আলাইহিস সালামের উপর কুফরী করার কারণে, আর অন্য ক্রোধ হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর কুফরীর কারণে। তাছাড়া শাস্তির সাথে অপমানজনক পদ যোগ করে বলা হয়েছে যে, এ শাস্তি কাফেরদের জন্যই নির্দিষ্ট। কেননা, পাপী ঈমানদারদেরকে যে শাস্তি দেয়া হবে, তা হবে তাকে পাপমুক্ত করার উদ্দেশ্যে, অপমান করার উদ্দেশ্যে নয়। কাফেরদের জন্য অপমানজনক শাস্তির আরেক কারণ হচ্ছে, তাদের অহঙ্কার। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন অহংকারীদেরকে মানুষের সুরতে পিপড়ার মত করে জমায়েত করা হবে। ছোট সব কিছুই তাদের উপর থাকবে। শেষ পর্যন্ত তাদেরকে জাহান্নামের এক কয়েদখানায় প্রবিষ্ট করানো হবে যার নাম হচ্ছে, বুলস ! যাবতীয় আগুন তাদের উপরে থাকবে। তাদেরকে জাহান্নামবাসীদের পুঁজ তীনাতুল খাবাল থেকে পান করানো হবে। " [মুসনাদে আহমাদ; ২/১৭৯]
[২] আয়াতে উল্লেখিত দু'টি শাস্তির প্রথমটি হলো পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা ও দুর্গতি। তা এভাবে বাস্তব রূপ লাভ করেছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমলেই মুসলিমদের সাথে সম্পাদিত চুক্তিভংগের অপরাধে বনী-কুরাইযা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ও বন্দী হয়েছে এবং বনী-নাদীরকে চরম অপমান ও লাঞ্ছনার সাথে সিরিয়ায় নির্বাসিত করা হয়েছে।
3 আল-বায়ান ফাউন্ডেশন | Tafsir Bayaan Foundation
যার বিনিময়ে তারা নিজদেরকে বিক্রয় করেছে তা কত জঘন্য (তা এই) যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা তারা অস্বীকার করেছে এই জিদের বশবর্তী হয়ে যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তার উপর তাঁর অনুগ্রহ নাযিল করেছেন। সুতরাং তারা ক্রোধের উপর ক্রোধের অধিকারী হল। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব।
4 মুহিউদ্দীন খান | Muhiuddin Khan
যার বিনিময়ে তারা নিজেদের বিক্রি করেছে, তা খুবই মন্দ; যেহেতু তারা আল্লাহ যা নযিল করেছেন, তা অস্বীকার করেছে এই হঠকারিতার দরুন যে, আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ নাযিল করেন। অতএব, তারা ক্রোধের উপর ক্রোধ অর্জন করেছে। আর কাফেরদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।
5 জহুরুল হক | Zohurul Hoque
গর্হিত তা যা দিয়ে তারা নিজেদের আত্মা বিনিময় করেছে যে জন্য আল্লাহ্ যা অবতারণ করেছেন তা তারা অবিশ্বাস করে বিদ্বেষের বশে -- যে আল্লাহ্ তাঁর কৃপাবশতঃ উহা অবতীর্ণ করবেন তাঁর দাসদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করেন তার কাছে! তাই তারা রোষের উপর রোষ টেনে আনলো। আর অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।