ইয়াসীন আয়াত ২৯
اِنْ كَانَتْ اِلَّا صَيْحَةً وَّاحِدَةً فَاِذَا هُمْ خَامِدُوْنَ ( يس: ٢٩ )
In kaanat illaa saihatanw waahidatan fa-izaa hum khaamidoon (Yāʾ Sīn ৩৬:২৯)
English Sahih:
It was not but one shout, and immediately they were extinguished. (Ya-Sin [36] : 29)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
ওটা ছিল মাত্র একটা প্রচন্ড শব্দ, ফলে তারা সহসাই নিস্তব্ধ হয়ে গেল। (ইয়াসীন [৩৬] : ২৯)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
কেবলমাত্র এক মহাগর্জন হল। ফলে ওরা নিথর-নিস্তব্ধ হয়ে গেল। [১]
[১] বলা হয়েছে যে, জিবরীল (আঃ) একটি হুঙ্কার দিয়েছিলেন, যাতে সকলের শরীর থেকে প্রাণ বের হয়ে গিয়েছিল এবং তারা নিভানো আগুনের মত স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল। জীবন যেন এক প্রজ্বলিত অগ্নিশিখা। আর মৃত্যু হল তা নিভে ভষ্মে পরিণত হওয়া।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
সেটা ছিল শুধুমাত্র এক বিকট শব্দ। ফলে তারা নিথর নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
3 Tafsir Bayaan Foundation
তা ছিল শুধুই একটি বিকট আওয়াজ, ফলে তারা নিথর-নিস্তব্ধ হয়ে পড়ল।
4 Muhiuddin Khan
বস্তুতঃ এ ছিল এক মহানাদ। অতঃপর সঙ্গে সঙ্গে সবাই স্তদ্ধ হয়ে গেল।
5 Zohurul Hoque
এটি অবশ্য একটিমাত্র মহাগর্জন বৈ তো নয়, তখন দেখো, তারা নিথরদেহী হয়ে গেল!
6 Mufti Taqi Usmani
তা ছিল কেবল একটি মহানাদ, যাতে তারা সব নিভে নিথর হয়ে গেল।
7 Mujibur Rahman
ওটা ছিল শুধুমাত্র এক মহানাদ। ফলে তারা নিথর নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
8 Tafsir Fathul Mazid
২২-২৯ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
ঐ ব্যক্তি যে শহরে একাই মু’মিন ছিল এবং শহরের শেষ প্রান্তে বসবাস করত সে নিজ সম্প্রদায়ের নিকট তাঁর নিজের আমল ও আক্বীদার কথা বর্ণনা করে শুনাচ্ছেন। আমি তো শুধু এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করি। যেহেতু তিনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন তাহলে কেন আমি তাঁর ইবাদত করব না? এটাও নয় যে, আমরা তাঁর ক্ষমতার বাইরে চলে গেছি, তাই তাঁর সাথে আমাদের কোনই সম্পর্ক নেই? বরং আমরা তাঁর ক্ষমতাধীন, আমাদের সবাইকেই তাঁর সামনে একত্রিত হতে হবে। আমি কি আল্লাহ তা‘আলার পরিবর্তে অন্য মা‘বূদ গ্রহণ করব; যদি দয়াময় আল্লাহ তা‘আলা আমার কোন ক্ষতি করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোন উপকারে আসবে না এবং তারা আমাকে মুক্তও করতে পারবে না। সুতরাং কেন তাদের ইবাদত করব?
আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
(قُلْ أَفَرَأَيْتُمْ مَّا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ إِنْ أَرَادَنِيَ اللّٰهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّه۪ٓ أَوْ أَرَادَنِيْ بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِه۪ ط قُلْ حَسْبِيَ اللّٰهُ ط عَلَيْهِ يَتَوَكَّلُ الْمُتَوَكِّلُوْنَ)
“বল : তোমরা কি ভেবে দেখছ যে, আল্লাহ আমার অনিষ্ট চাইলে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কি সেই অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চাইলে তারা কি সে অনুগ্রহকে বন্ধ করতে পারবে? বল : আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা তারই ওপর নির্ভর করে।” (সূরা যুমার ৩৯ : ৩৮)
অতএব আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে ঐ বাতিল মা‘বূদদেরকে যদি আমি আহ্বান করি যারা কোনই উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না তাহলে আমি অবশ্যই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পড়ব। তাই আমি তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান নিয়ে আসলাম। তোমরা আমার কথা শুন অর্থাৎ রাসূলদের রিসালাতের অনুসরণ করো। এ কথা বলার পর পরই তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করল। (তাফসীর সা‘দী)
(قِيْلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَ)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদার লোকটির মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থা বর্ণনা করে বলছেন : মৃত্যুর পর লোকটিকে বলা হলো যে, তুমি জান্নাতে প্রবেশ করো। তখন লোকটি তার সম্প্রদায়ের জন্য আফসোস করে বলল : যদি আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা আমার এ মর্যাদার কথা জানতে পারত যে, আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আমাকে সম্মানিত করেছেন! তাহলে তারাও ঈমান আনত।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা দিচ্ছেন, পরবর্তীতে তাদের নিকট আর কোনই সতর্ককারী পাঠানো হয়নি এবং তার কোন প্রয়োজনও ছিল না। তারা মু’মিন ব্যক্তিকে হত্যা করার ফলে তাদের ওপর এসেছিল এক মহানাদ, যা তাদেরকে ধ্বংস ও নিথর নিস্তব্ধ করে দিয়েছিল।
সুতরাং যেসব জনবসতির নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দাওয়াত পৌঁছবে কিন্তু তারা তা মেনে নিবে না তাহলে তাদের ওপর এরূপ ধ্বংসাত্মক শাস্তি আপতিত হবে, তা থেকে মুক্তির উপায় থাকবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. সৎ কর্মের প্রতিদান জান্নাত, যারা ঈমানের সাথে সৎ কর্ম করবে তাদের জন্যই এ প্রতিদান।
২. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কেউ কোন উপকার বা ক্ষতি করার মালিক নয়।
৩. আল্লাহ তা‘আলাকে ছাড়া অন্যের পূজা বা উপাসনা করা স্পষ্ট বিভ্রান্তি।
৪. নাবী, রাসূল ও সৎ ব্যক্তিদের হত্যা করার পরিণাম খুবই খারাপ।
9 Fozlur Rahman
একটিমাত্র (বিকট) আওয়াজ (&নিত হল)। আর অমনি তারা নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
10 Mokhtasar Bangla
২৯. তার জাতিকে ধ্বংস করার কাহিনী কেবল একটি বিকট শব্দ মাত্র। অগত্যা তারা মরে লাশ হয়ে গেল। তাদের কোন চিহ্ন অবশিষ্ট থাকল না।
11 Tafsir Ibn Kathir
২৬-২৯ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, ঐ কাফিররা ঐ পূর্ণ মুমিন লোকটিকে নিষ্ঠুরভাবে মারপিট করলো। তাঁকে ফেলে দিয়ে তার পেটের উপর চড়ে বসলো এবং পা দিয়ে পিষ্ট করতে লাগলো, এমন কি তাঁর পিছনের রাস্তা দিয়ে নাড়িভূড়ি বেরিয়ে পড়লো! তৎক্ষণাৎ আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ জানিয়ে দেয়া হলো। মহান আল্লাহ্ তাঁকে দুনিয়ার চিন্তা ও দুঃখ হতে মুক্তি দান করলেন এবং শান্তির সাথে জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিলেন। তার শাহাদাতে আল্লাহ তা'আলা সন্তুষ্ট হলেন। জান্নাত তার জন্যে খুলে দেয়া হলো এবং তিনি জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি লাভ করলেন। নিজের সওয়াব ও পুরস্কার এবং ইযযত ও সম্মান দেখে তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়লোঃ “হায়! আমার কওম যদি জানতে পারতো যে, আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আমাকে খুবই সম্মান দান করেছেন। প্রকৃতপক্ষে মুমিন ব্যক্তি সবারই শুভাকাক্ষী হয়ে থাকে। তারা প্রতারকও হয় না এবং তারা কারো অমঙ্গল কামনা করে না। তাই তো দেখা যায় যে, এই আল্লাহভীরু লোকটি নিজের জীবদ্দশাতেও স্বীয় কওমের মঙ্গল কামনা করেন এবং মৃত্যুর পরেও তাদের শুভাকাক্ষীই থাকেন। ভাবার্থ এও হতে পারে যে, তিনি বলেনঃ “হায়! যদি আমার কওম এটা জানতো যে, কি কারণে আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং কি কারণেই বা আমাকে সম্মানিত করেছেন তবে অবশ্যই তারাও ওটা লাভ করার চেষ্টা করতো। তারা আল্লাহ তা'আলার উপর ঈমান আনতো এবং রাসূলদের (আঃ) আনুগত্য করতো।” আল্লাহ তাঁর প্রতি দয়া করুন এবং তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন! তিনি তার কওমের হিদায়াতের জন্যে কতই না আকাক্ষী ছিলেন।
হযরত ইবনে উমায়ের (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত উরওয়া ইবনে মাসউদ সাকাফী (রাঃ) নবী (সঃ)-কে বলেনঃ “আপনি আমাকে আমার কওমের নিকট প্রেরণ করুন, আমি তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করবো।” তখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “আমি আশংকা করছি যে, তারা তোমাকে হত্যা করে ফেলবে।” তিনি তখন বললেনঃ “আমি ঘুমিয়ে থাকলে তারা আমাকে জাগাবেও না।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বললেনঃ “আচ্ছা, তাহলে যাও।”
অতঃপর তিনি চললেন। লাত ও উযযা প্রতিমাদ্বয়ের পার্শ্ব দিয়ে গমনের সময়। তিনি ও দুটিকে লক্ষ্য করে বললেনঃ “তোমাদের ভাগ্য বিপর্যয়ের সময় এসে গেছে।" তাঁর এ কথায় পুরো সাকীফ গোত্রটি বিগড়ে যায়। তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে আমার কওমের লোক সকল! তোমরা এই প্রতিমাগুলোকে পরিত্যাগ কর। আসলে লাত ও উযযা কিছুই নয় ! হে আমার ভাই ও বন্ধুরা! বিশ্বাস রাখো যে, প্রকৃতপক্ষে এই প্রতিমাগুলো কোন কিছুরই অধিকার ও ক্ষমতা রাখে না। তোমরা ইসলাম কবূল করে নাও, শান্তি লাভ করবে। সমস্ত কল্যাণ ইসলামের মধ্যেই রয়েছে। তিনি এই কথাগুলো তিনবার মাত্র উচ্চারণ করেছেন, ইতিমধ্যে একজন দুবৃত্ত তাকে দূর হতে তীর মেরে দেয় এবং তাতেই তিনি শহীদ হয়ে যান। এ খবর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন, এ ঘটনাটি সূরায়ে ইয়াসীনে বর্ণিত ঘটনার মতই। এই সূরায় বর্ণিত লোকটি বলেছিলঃ “হায়! আমার সম্প্রদায় যদি জানতে পারতো যে, কি কারণে আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিত করেছেন।” (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
মুআম্মার ইবনে হাযাম (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত কা'ব আহবার (রাঃ)-এর নিকট বানু মাযিন ইবনে নাজ্জার গোত্রভুক্ত হযরত হাবীব ইবনে যায়েদ ইবনে আ’সেম (রাঃ)-এর ঘটনাটি যখন বর্ণনা করা হলো, যিনি ইয়ামামার যুদ্ধে মুসাইলামা কাযযাব কর্তৃক নিহত হয়েছিলেন, তখন তিনি বলেনঃ “আল্লাহর কসম! এই হাবীবও ঐ হাবীবেরই মত ছিলেন যার বর্ণনা সূরায়ে ইয়াসীনে রয়েছে। তাঁকে ঐ কাযযাব (চরম মিথ্যাবাদী) জিজ্ঞেস করেছিলঃ “তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল?” তিনি উত্তরে বলেছিলেনঃ “হ্যা। আবার সে জিজ্ঞেস করেঃ “তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, আমি আল্লাহর রাসূল?” তিনি উত্তর দেনঃ “আমি শুনি না।” তখন ঐ অভিশপ্ত মুসাইলামা তাঁকে বলেঃ “তুমি এটা শুনতে পাও, আর ওটা শুনতে পাও না?” তিনি জবাব দেনঃ “হ্যা।” অতঃপর সে তাঁকে একটি করে প্রশ্ন করতো এবং প্রতিটির জবাবে তার দেহের একটি করে অঙ্গ কেটে নিতো। কিন্তু তবুও তিনি ইসলামের উপর অটল ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ঐ অভিশপ্ত মুসাইলামা তাঁকে শহীদ করে দেয়। আল্লাহ্ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন এবং তাঁকে সন্তুষ্ট রাখুন!
এরপর ঐ লোকদের উপর আল্লাহ্ যে গযব নাযিল হয় এবং যে গযবে তারা ধ্বংস হয়ে যায় তারই বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। যেহেতু তারা আল্লাহর রাসূলদেরকে মিখ্যা প্রতিপন্ন করেছিল এবং আল্লাহর অলীকে হত্যা করেছিল। সেই হেতু তাদের উপর আল্লাহর আযাব আপতিত হয় এবং তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। কিন্তু তাদেরকে ধ্বংস করার জন্যে আল্লাহ তাআলা না আকাশ হতে কোন সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন, না প্রেরণের কোন প্রয়োজন ছিল। তার জন্যে তো শুধু হুকুম দেয়াই যথেষ্ট। তাদের উপর ফেরেশতামণ্ডলী অবতীর্ণ করা হয়নি। বরং কোন অবকাশ ছাড়াই তাদেরকে আযাবে গ্রেফতার করা হয়। তাদের সবাইকে এক এক করে ধ্বংসের ঘাটে নামানো হয়। হযরত জিবরাঈল (রাঃ) আগমন করেন এবং তাদের শহর ইনতাকিয়ার দরযার চৌকাঠ ধরে এমন জোরে এক শব্দ করেন যে, তাদের কলেজা ফেটে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় এবং তাদের রূহ বেরিয়ে পড়ে।
হযরত কাতাদা (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তাদের কাছে যে তিনজন রাসূল এসেছিলেন তারা হযরত ঈসা (আঃ)-এর প্রেরিত দূত ছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, বাহ্যতঃ জানা যাচ্ছে যে, তারা স্বতন্ত্র রাসূল ছিলেন। ঘোষিত হচ্ছেঃ اِذْ اَرْسَلْنَآ اِلَيْهِمُ اثْنَيْنِ ـ ـ ـ অর্থাৎ “যখন আমি তাদের নিকট পাঠিয়েছিলাম দুইজন রাসূল, কিন্তু তারা তাদেরকে মিথ্যাবাদী। বললো; তখন আমি তাদেরকে শক্তিশালী করেছিলাম তৃতীয় একজন দ্বারা।” তারপর ঐ তিনজন রাসূল ইনতাকিয়াবাসীদেরকে বলেনঃ اِنَّا اِلَيْكُمْ مُّرْسَلِيْنَ অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি।” যদি ঐ তিনজন হযরত ঈসা (আঃ)-এর সাহায্যকারীদের মধ্য হতে তাঁর পক্ষ হতে প্রেরিত হতেন তবে তারা এরূপ কথা বলতেন না, বরং অন্য বাক্য বলতেন, যার দ্বারা এটা জানা যেতো যে, তারা হযরত ঈসা (আঃ)-এর দূত। এসব ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
তারা যে হযরত ঈসা (আঃ)-এর প্রেরিত দূত ছিলেন না তার আর একটি ইঙ্গিত এই যে, তাঁদের কথার জবাবে ইনতাকিয়াবাসীরা বলেঃ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا بَشَرٌ مِّثُلُنَا অর্থাৎ “তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ।” এটা লক্ষ্যণীয় বিষয় যে, কাফিররা সদা এ উক্তিটি রাসূলদের ব্যাপারেই করতো। যদি ঐ তিনজন রাসূল হাওয়ারীদের মধ্য হতেই হতেন তবে তারা স্বতন্ত্রভাবে রিসালাতের দাবী কেন করবেন? আর ঐ ইনতাকিয়াবাসীরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেনই বা করবে? দ্বিতীয়তঃ ঐ ইনতাকিয়াবাসীদের নিকট যখন হযরত ঈসা (আঃ)-এর দূত গিয়েছিলেন তখন ঐ গোটা গ্রামের লোকেরাই তার উপর ঈমান এনেছিল। এমনকি ওটাই ছিল প্রথম গ্রাম, যার সমস্ত অধিবাসীই হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপর ঈমান এনেছিল। এজন্যেই খৃষ্টানদের যে চারটি শহরকে মুকাদ্দাস বা পবিত্র বলা হয়, ওগুলোর মধ্যে এটিও একটি। তারা বায়তুল মুকাদ্দাসকে ইবাদতের শহর এজন্যেই বলে যে, ওটা হযরত ঈসা (আঃ)-এর শহর। আর ইনতাকিয়াকে মর্যাদা সম্পন্ন শহর বলার কারণ এই যে, সর্বপ্রথম তথাকার লোকই হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপর ঈমান এনেছিল। ইসকানদারিয়ার মর্যাদার কারণ এই যে, এখানে তারা তাদের মাযহাবী পত্রধারীদের বচনের উপর ইজমা করেছে। আর রুমিয়্যার মর্যাদার কারণ হচ্ছে এই যে, কুসতুনতীন বাদশাহর শহর এটাই এবং সেই তাদের ধর্মের সাহায্য করেছিল এবং এখানেই তাদের বরকত ছিল। অতঃপর সে যখন কুসতুনতুনিয়া শহর বসিয়ে দেয় তখন তাবাররুক রূমিয়া হতে এখানেই রেখে দেয়া হয়। সাঈদ ইবনে বিতরীক পমুখ খৃষ্টান ঐতিহাসিকদের ইতিহাসসমূহে এসব ঘটনা উল্লিখিত হয়েছে। মুসলিম ঐতিহাসিকগণও এটাই লিখেছেন। সুতরাং জানা গেল যে, ইনতাকিয়াবাসীরা হযরত ঈসা (আঃ)-এর দূতদের কথা মেনে নিয়েছিল। অথচ এখানে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা রাসূলদেরকে মানেনি এবং তাদের উপর আল্লাহর আযাব এসেছিল এবং তাদেরকে তচনচু করে দেয়া হয়েছিল। সুতরাং এটা প্রমাণিত হলো যে, এটা অন্য ঘটনা এবং ঐ তিনজন রাসূল স্বতন্ত্র রাসূল ছিলেন। ইতাকিয়াবাসী তাদেরকে মানেনি। ফলে তাদের উপর আল্লাহর আযাব এসেছিল এবং তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছিল। তাদেরকে সকালের প্রদীপের মত নির্বাপিত করে দেয়া হয়েছিল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
তৃতীয়তঃ ইনতাকিয়াবাসীদের ঘটনা, যা হ্যরত ঈসা (আঃ)-এর হাওয়ারীদের সাথে ঘটেছিল ওটা হলো তাওরাত অবতীর্ণ হওয়ার পরের ঘটনা। আর হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) ও পূর্বযুগীয় গুরুজনদের একটি জামাআত হতে বর্ণিত আছে যে, তাওরাত অবতীর্ণ হওয়ার পরে কোন বস্তীকে আল্লাহ তাআলা। আসমানী আযাব দ্বারা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেননি। বরং মুমিনদেরকে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়ে কাফিরদের মাথা নীচু করে দেখিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ وَ لَقَدْ اٰتَیْنَا مُوْسَى الْكِتٰبَ مِنْۢ بَعْدِ مَاۤ اَهْلَكْنَا الْقُرُوْنَ الْاُوْلٰى অর্থাৎ “প্রথম যুগসমূহকে ধ্বংস করে দেয়ার পর আমি মূসা (আঃ)-কে বি (তাওরাত) দিয়েছিলাম।”(২৮:৪৩) আর এই বস্তীটির আসমানী ধ্বংসের উপর কুরআনের আয়াতসমূহ সাক্ষী রয়েছে। এগুলো দ্বারা ইনসাফ সুস্পষ্ট। তাছাড়া এর দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয় যে, এটা ইনতাকিয়ার ঘটনা নয়, যেমন পূর্ব যুগীয় কোন কোন গুরুজনের উক্তি রয়েছে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য এই বিখ্যাত শহর ইনতাকিয়া নয়। এটাও হতে পারে যে, এটা ইনতাকিয়া নামক অন্য কোন শহর। আর এটা হয়তো ঐ শহরেরই ঘটনা। কেননা, যে ইনতাকিয়া শহরটি প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে তা আল্লাহর আযাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া মশহর নয়। খৃষ্টানদের যুগেও না এবং তাদের পূর্ববর্তী যুগেও না। মহান আল্লাহই এসব ব্যাপারে সবচেয়ে ভাল জানেন।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ দুনিয়ায় তিন ব্যক্তি সবচেয়ে অগ্রগামী। হযরত মূসা (আঃ)-এর দিকে অগ্রগামী ছিলেন হযরত ইউশা ইবনে নূন (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ)-এর দিকে অগ্রগামী ছিলেন ঐ তিন ব্যক্তি, যাদের বর্ণনা সূরায়ে ইয়াসীনে রয়েছে এবং হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর খিদমতে সবচেয়ে অগ্রগামী ছিলেন হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ)।” (এ হাদীসটি হাফিয আবুল কাসিম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটা সম্পূর্ণরূপে মুনকার বা অস্বীকৃত হাদীস। এটা শুধু হুসাইন ইবনে আশকার রিওয়াইয়াত করেছেন। তিনি একজন শীয়া এবং তিনি পরিত্যজ্য। এসব ব্যাপারে মহান আল্লাহই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী)