আস-সাফফাত আয়াত ৪৯
كَاَنَّهُنَّ بَيْضٌ مَّكْنُوْنٌ ( الصافات: ٤٩ )
Ka annahunna baidum maknoon (aṣ-Ṣāffāt ৩৭:৪৯)
English Sahih:
As if they were [delicate] eggs, well-protected. (As-Saffat [37] : 49)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তারা যেন সযত্নে ঢেকে রাখা ডিম। (আস-সাফফাত [৩৭] : ৪৯)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
যেন তারা গৌরবর্ণ সুরক্ষিত ডিম। [১]
[১] উটপাখী তার ডানার নিচে নিজ ডিমকে লুকিয়ে রাখে। যার ফলে তা হাওয়া এবং ধুলো-মাটি থেকে বেঁচে যায়। বলা হয় যে, উটপাখীর ডিমের রঙ খুব সুন্দর ও সুদর্শন হয়, যা হলুদ মিশ্রিত সাদা হয়। আর এই রঙকে মানুষের রূপ-জগতে সর্বোৎকৃষ্ট ভাবা হয়। পরন্তু সুরক্ষিত ডিমের সাথে এই সাদৃশ্য শুধু সাদা হওয়ার জন্য নয়; বরং (কাঁচা হলুদ বা সোনালী রঙ মিশ্রিত গৌরবর্ণ) সুন্দর রঙ এবং রূপ হওয়ার দিক দিয়েও।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
তারা যেন সুরক্ষিত ডিম্ব [১]।
[১] এখানে জান্নাতের হুরীগণের তৃতীয় গুণ বর্ণিত হয়েছে। তাদেরকে সুরক্ষিত ডিমের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আরবদের কাছ এই তুলনা প্রসিদ্ধ ও সুবিদিত ছিল। যে ডিম পাখার নিচে লুকানো থাকে, তা এমনই সুরক্ষিত থাকে যে, এর উপর বাইরের ধূলিকণার কোন প্রভাব পড়ে না। ফলে তা খুব স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন থাকে। এছাড়া এর রঙ সাদা হলুদাভ হয়ে থাকে; যা আরবদের কাছে মহিলাদের সর্বাধিক চিত্তাকর্ষক রঙ হিসেবে গণ্য হত। তাই এর সাথে তুলনা করা হয়েছে। [দেখুন,তাবারী; আদওয়াউল বায়ান]
3 Tafsir Bayaan Foundation
তারা যেন আচ্ছাদিত ডিম।
4 Muhiuddin Khan
যেন তারা সুরক্ষিত ডিম।
5 Zohurul Hoque
যেন তারা সুরক্ষিত ডিম।
6 Mufti Taqi Usmani
(তাদের নিখুঁত অস্তিত্ব এমন) যেন তারা (ধুলোবালি হতে) লুকিয়ে রাখা ডিম।
7 Mujibur Rahman
তারা যেন সুরক্ষিত ডিম্ব।
8 Tafsir Fathul Mazid
৪০-৪৯ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
পূর্বের আয়াতগুলোতে কাফির-মুশরিকদের শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা করার পর এখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর একনিষ্ঠ মু’মিন বান্দারা পরকালে যে নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতে থাকবে তার বিবরণ তুলে ধরেছেন। জান্নাতীরা জান্নাতে পরম সুখে বসবাস করবে। তাদের জন্য সেখানে থাকবে অপরিমেয় রিযিক, ফল-মূল আর তারা সেখানে সম্মানের সাথে থাকবে। সুখময় বাগানসমূহে তারা পরস্পর মুখোমুখী হয়ে বসে থাকবে। তাদেরকে তথায় পরিবেশন করা হবে বিশুদ্ধ সুরাপূর্ণ পান পাত্র।
كاس মদভর্তি পান পাত্রকে বলা হয়। مَعِيْنٍ হলো প্রবাহিত ঝর্ণা।
অর্থাৎ- প্রবাহিত ঝর্ণার ন্যায় জান্নাতে সর্বদা শরাব বা পানীয় দ্রব্য পাওয়া যাবে। আর সে শরাব হবে শুভ্র, উজ্জ্বল এবং পানকারীদের জন্য সুস্বাদু। যা পান করলে পানকারীগণ মাতাল হবে না এবং কোন প্রকার ক্ষতিও হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(یَطُوْفُ عَلَیْھِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُوْنَﭠﺫ بِاَکْوَابٍ وَّاَبَارِیْقَﺃ وَکَاْسٍ مِّنْ مَّعِیْنٍﭡﺫ لَّا یُصَدَّعُوْنَ عَنْھَا وَلَا یُنْزِفُوْنَﭢﺫ )
“তাদের সেবায় ঘোরাফেরা করবে চির কিশোররা। পানপাত্র, ঘটি ও শরাবে পরিপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে, (এরা হাজির হবে।) সেই সুরা পানে তাদের মাথা ব্যথা হবে না, তারা জ্ঞানহারাও হবে না।” (সূরা ওয়া-ক্বি‘আহ্ ৫৬ : ১৭-১৯)
এরপর বলা হচ্ছে যে, জান্নাতে জান্নাতীদের জন্য থাকবে আনতনয়না, আয়তলোচনা অর্থাৎ- বড় ও টানা টানা চক্ষুবিশিষ্ট হুর/তরুণীগণ, তাদেরকে মনে হবে যেন তারা সুরক্ষিত মণি-মুক্তার মতো। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَحُوْرٌ عِيْنٌ- كَأَمْثَالِ الْلُّؤْلُؤِ الْمَكْنُوْنِ)
“আর (তাদের জন্য থাকবে) সুন্দর চক্ষুধারী হূর, সুরক্ষিত মুক্তা সদৃশ।” (সূরা ওয়া-ক্বি‘আহ্ ৫৬ : ২২-২৩) এ আয়াতে জান্নাতী হুরদের তিনটি গুণ বর্ণনা করা হয়েছে যেগুলো হলো- ১. বড় বড় চক্ষু, ২. টানা টানা চক্ষু, ৩. মণি-মুক্ত/ডিমের মতো সুরক্ষিত হবে।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
(فِيْهِنَّ قٰصِرٰتُ الطَّرْفِ لا لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنْسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَآنٌّ - فَبِأَيِّ اٰلَا۬ءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبٰنِ - كَأَنَّهُنَّ الْيَاقُوْتُ وَالْمَرْجَانُ)
“সেখানে রয়েছে বহু আনতনয়না স্ত্রীগণ, যাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ অথবা জিন স্পর্শ করেনি। সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নেয়ামত অস্বীকার করবে? তারা যেন হীরা ও মতি; (সূরা র্আ রহমান ৫৫ : ৫৬-৫৮)
সুতরাং এরূপ নিয়ামতপূর্ণ জান্নাত পেতে হলে অবশ্যই ঈমানের সাথে সৎ আমল করতে হবে এবং ঈমান বিনষ্টকারী কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. জান্নাতীদের জন্য তথায় সকল প্রকার পানীয় পানের ব্যবস্থা থাকবে।
২. জান্নাতে অনন্যা সুন্দরী হুরগণ থাকবে, যারা আনয়তনয়না ও আনুগত্যশীলা হবে।
9 Fozlur Rahman
(সৌন্দর্যে) তারা যেন সুরক্ষিত ডিম।
10 Mokhtasar Bangla
৪৯. তারা হলুদ মিশ্রিত শুভ্রতায় যেন উড্ডয়মান রক্ষিত ডিমের ন্যায়। যাকে কোন হাত স্পর্শ করেনি।
11 Tafsir Ibn Kathir
৩৮-৪৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা লোকদেরকে সম্বোধন করে বলছেনঃ তোমরা অবশ্যই বেদনাদায়ক শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করবে এবং তোমরা যা করতে তারই প্রতিফল পাবে। এরপর মহান আল্লাহ স্বীয় মনোনীত বান্দাদের এর থেকে পৃথক করে নিচ্ছেন যে, তারা নয় যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা। যেমন তিনি বলেনঃ
وَ الْعَصْرِ ـ اِنَّ الْاِنْسَانَ لَفِیْ خُسْرٍ ـ اِلَّا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ
অর্থাৎ “মহাকাশের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয় যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে।”(১০৩: ১-৩) মহামহিমান্বিত আল্লাহ আরো বলেনঃ
لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِیْۤ اَحْسَنِ تَقْوِیْمٍ ـ ثُمَّ رَدَدْنٰهُ اَسْفَلَ سٰفِلِیْنَ ـ اِلَّا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ
অর্থাৎ “আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে। অতঃপর আমি তাকে হীনতাগ্রস্তদের হীনতমে পরিণত করি, কিন্তু তাদেরকে নয় যারা মুমিন ও সৎকর্মপরায়ণ।”(৯৫:৪-৬) আর এক জায়গায় বলেনঃ
وَ اِنْ مِّنْكُمْ اِلَّا وَارِدُهَا كَانَ عَلٰى رَبِّكَ حَتْمًا مَّقْضِیًّا ـ ثُمَّ نُنَجِّی الَّذِیْنَ اتَّقَوْا وَّ نَذَرُ الظّٰلِمِیْنَ فِیْهَا جِثِیًّا
অর্থাৎ “তোমাদের প্রত্যেকেই ওটা (জাহান্নাম) অতিক্রম করবে, এটা তোমার প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত। পরে আমি মুত্তাকীদেরকে উদ্ধার করবো এবং যালিমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় রেখে দিবো।”(১৯:৭১-৭২) অন্য এক জায়গায় প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ
كُلُّ نَفْسٍۭ بِمَا كَسَبَتْ رَهِیْنَةٌ ـ اِلَّاۤ اَصْحٰبَ الْیَمِیْنِ
অর্থাৎ “প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ, তবে দক্ষিণ পার্শ্বস্থ ব্যক্তিরা নয়।”(৭৪:৩৮-৩৯)
এজন্যেই মহামহিমান্বিত আল্লাহ এখানে বলেনঃ “তারা নয় যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা।” বেদনাদায়ক শাস্তিতে পতিত ব্যক্তিদের হতে আল্লাহ তা'আলা স্বীয় একনিষ্ঠ বান্দাদেরকে পৃথক করে নিয়েছেন যাতে তারা কঠিন শা হিসাব-নিকাশের ভীষণ বিপদ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। তাদেরকে যাবতীয় বিপদাপদ থেকে দূরে রাখা হবে। আর ঐ সব বান্দার নেক আমলগুলোকে একটির বদলে দশগুণ তা হতে সাতশগুণ এমনকি আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছানুযায়ী আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়া হবে ।
আল্লাহ তা'আলার উক্তিঃ তাদের জন্যে আছে নির্ধারিত রিযক। কাতাদা (রাঃ) ও সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা জান্নাতকে বুঝানো হয়েছে। তা হবে নানা প্রকারের ফলে পরিপূর্ণ। সেখানে তারা হবে মহাসম্মানের অধিকারী। সুখদ কাননে তারা মুখোমুখি হয়ে আসনে সমাসীন থাকবে। মুজাহিদ (রঃ) বলেনঃ তারা এমনভাবে বসে থাকবে যে, কারো পৃষ্ঠ দেশ কেউ দেখতে পাবে না।
হযরত যায়েদ ইবনে আবি আওফা (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের নিকট হাযির হয়ে عِلٰى سُرُرٍ مُّتَقَابِلِيْنَ -এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন এবং বলেনঃ “প্রত্যেকে এমনভাবে সামনা সামনি হয়ে বসে থাকবে যে, তাদের দৃষ্টি পরস্পরের মুখমণ্ডলের উপর পতিত হবে।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাদীসটি গারীব)
মহান আল্লাহ বলেনঃ তাদেরকে ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে বিশুদ্ধ সুরাপূর্ণ পাত্র। প্রবাহিত শরাব হতে পূর্ণ পেয়ালা তাদের মধ্যে পরিবেশিত হবে। তা হবে ধবধবে সাদা ও সুমিষ্ট। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেনঃ
یَطُوْفُ عَلَیْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُوْنَ ـ بِاَكْوَابٍ وَّ اَبَارِیْقَ وَ كَاْسٍ مِّنْ مَّعِیْنٍ ـ لَّا یُصَدَّعُوْنَ عَنْهَا وَ لَا یُنْزِفُوْنَ
অর্থাৎ “তাদের সেবায় ঘোরাফিরা করবে চির কিশোরেরা পানপাত্র, কুজা প্রস্রবণ নিঃসৃত সুরাপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে। সেই সুরা পানে তাদের শিরঃপীড়া হবে , তারা জ্ঞান হারাও হবে না।”(৫৬:১৭-১৯) দুনিয়ার মদে এই ক্ষতি রয়েছে। যে, এটা পান করলে পেটে অসুখ হয়, মাথা ব্যথা হয় এবং জ্ঞান লোপ পায়। কিন্তু জান্নাতের সুরার মধ্যে এসব মন্দ গুণ কিছুই নেই। এর রঙ সুদৃশ্য এবং পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু। এর উল্টো হচ্ছে দুনিয়ার মদ। তাতে দুর্গন্ধ বিদ্যমান এবং রঙ দেখতেও ঘৃণাবোধ হয়।
এখানে মহামহিমান্বিত আল্লাহ জান্নাতের শরাব সম্পর্কে বলেনঃ তাতে ক্ষতিকর কিছুই থাকবে না। এবং তাতে তারা মাতালও হবে না। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হযরত কাতাদা (রঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ) প্রমুখ গুরুজনের মতে غَوْل শব্দ দ্বারা পেটের ব্যথা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ দুনিয়ার মদ্যপানে যেমন পেটের ব্যথা হয় জান্নাতের মদ্য পানে তা হবে না। কেউ কেউ বলেন যে, غَوْل শব্দের অর্থ হলো শিরঃপীড়া। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, ঐ সুরা পানে জ্ঞান লোপ পাবে না। সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ) বলেন যে, তাতে কোন ঘৃণার বস্তু থাকবে না এবং কোন কষ্টও হবে না। তবে হযরত মুজাহিদ প্রমুখ গুরুজনের উক্তিটিই সঠিক যে, غَوْل শব্দ দ্বারা পেটের ব্যথাকে বুঝানো হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ وَلَاهُمْ عَنْهَا يُنْزَفُوْنَ অর্থাৎ তাতে তারা মাতালও হবে না।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, শরাবে চারটি মন্দ গুণ রয়েছে। যেমন- মাতলামী, মাথা ব্যথা, বমন এবং মূত্র দোষ। মহামহিমান্বিত আল্লাহ জান্নাতের শরাবের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে, তাতে উক্ত দোষগুলোর একটিও থাকবে না।
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তাদের সঙ্গে থাকবে আনত নয়না, আয়ত লোচনা হুরীগণ। তারা নিজেদের স্বামীদের ছাড়া আর কারো চেহারার দিকে দৃষ্টিপাত করবে না। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ) প্রমুখ গুরুজন এই মত পোষণ করেন। عَيْن অর্থ সুলোচনা। কেউ কেউ বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে বড় চক্ষু। আর একটি অর্থ হলো আনত নয়না। অবশ্য এটা সৌন্দর্যের চরম বিকাশ ও উত্তম চরিত্রের পরিচায়ক। জুলাইখা হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর মধ্যে এই উভয়বিধ সৌন্দর্য দেখেছিলেন। একদা জুলাইখা হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে উত্তমরূপে সাজিয়ে মিসরের ভদ্র মহিলাদের সামনে হাযির করেন। তারা নবী (আঃ)-এর রূপ ও চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য দেখে বলে উঠেছিলঃ “অদ্ভূত আল্লাহর মাহাত্ম্য! এতো মানুষ নয়, এতো এক মহিমান্বিত ফেরেশতা?” জুলাইখা তখন বলেছিলেনঃ “এ-ই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দে করেছে। আমি তো তা হতে অসঙ্কর্ম কামনা করেছি, কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে।” তিনি বাহ্যিক সৌন্দর্যের সাথে আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যও বহাল রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন অতি সৎ, পবিত্র, বিশ্বস্ত, পুণ্যবান এবং আল্লাহভীরু। জান্নাতী হুরীরাও ঠিক অনুরূপ। তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেনঃ তারা যেন সুরক্ষিত ডিম্ব। তারা সুন্দর তনুধারিণী উজ্জ্বল গৌর বর্ণের সঙ্গিনী।
আলী ইবনে আবি তালহা (রাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, كَاَنَّهُنَّ بَيْضٌ مَّكْنُوْنٌ-এর অর্থ হচ্ছে كَاَنَّهُنَّ لُؤْلُوٌ مَّكْنُوْنٌ অর্থাৎ “যেন তারা রক্ষিত মুক্তা।” এর স্বপক্ষে কবি আবু দুহায়েলের কাসীদা হতে একটি পংক্তি এখানে উদ্ধৃত হচ্ছেঃ
وَهْيَ زَهْرَاءُ مِثْلِ لُؤْلُؤِةِ الْغَوَاصِ ـ مُيِّزَتْ مِنْ جَوْهَرٍ مَّكْنُوْنٍ
অর্থাৎ “মহিলাটি ডুবুরীর ঐ মুক্তার ন্যায় পরমা সুন্দরী, যাকে সুরক্ষিত জওহর হতে পৃথক করা হয়েছে।” হাসান (রঃ), সুদ্দী (রঃ), সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ) প্রমুখ মনীষীবর্গ বলেন যে, بَيْضٌ مَّكْنُوْنٌ-এর অর্থ হচ্ছে ঐ সুরক্ষিত মুক্তা যেখানে কারো হাত পৌছেনি এবং যাকে ঝিনুক থেকে বের করা হয়নি। ওটা যেন ডিম্বের উপরের পরদার মাঝে সুরক্ষিত অংশ বিশেষ, যা কেউ স্পর্শ করেনি। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ।
হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে মহামহিমান্বিত আল্লাহর حُوْرٌ عِيْنٌ-এর ভাবার্থ বুঝিয়ে দিন! রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “এর ভাবার্থ হলো- বড় চক্ষু ও কালো পলক বিশিষ্ট হর।" আমি আবার জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) كَاَنَّهُنَّ بَيْضٌ مَّكْنُوْنٌ -এর ভাবার্থ কি? তিনি উত্তর দিলেনঃ “ডিম্বের মধ্যস্থিত সাদা ঝিল্লীর মত তাদের দেহ।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন লোকদেরকে কবর হতে উঠানো হবে তখন সর্বপ্রথম আমিই দণ্ডায়মান হবে। যখন সকলকে প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহর নিকট হাযির করা হবে তখন আমিই হলো তাদের খতীব বা ভাষণদানকারী। যখন তারা চিন্তাযুক্ত থাকবে তখন আমিই তাদেরকে সুসংবাদ দান করবো। যখন তারা বন্দী অবস্থায় থাকবে তখন আমিই তাদের জন্যে সুপারিশ করবো। সেই দিন প্রশংসার পতাকা আমার হাতেই থাকবে। আদম সন্তানের মধ্যে সেই দিন আমিই হবো সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি। এটা আমি অহংকার করে বলছি না। কিয়ামতের দিন আমার সামনে ও পিছনে এক হাজার খাদেম ঘুরাঘুরি করবে যারা রক্ষিত ডিম্ব বা এমন মুক্তার মত হবে যেগুলোকে স্পর্শ করা হয়নি। একমাত্র আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।