আল্লাহ তা'আলা নিজের ইহসান বা অনুগ্রহের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি ঝড়-তুফান ও অদৃশ্য সেনাবাহিনী প্রেরণ করে কাফিরদের শক্তি-সাহস সবকিছু চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছেন। তারা কঠিন নৈরাশ্যের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। অকৃতকার্য অবস্থায় তারা অবরোধ উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। যদি তারা বিশ্ব শান্তির দূত হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উম্মতের মধ্যে না থাকতো তবে এ ঝড়-তুফান তাদের সাথে ঐ ব্যবহারই করতো যেমন ব্যবহার করেছিল আ’দ জাতির সাথে। যেহেতু বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেছেনঃ যতদিন তুমি তাদের মধ্যে অবস্থান করবে ততদিন আল্লাহ তাদের উপর সাধারণ আযাব নাযিল করবেন না, সেহেতু তিনি তাদেরকে তাদের দুষ্টামির স্বাদ গ্রহণ করালেন তাদের একতাকে ভেঙ্গে দিয়ে, তাদেরকে তিনি ছিন্ন ভিন্ন করে দিলেন এবং নিজের আযাব সরিয়ে নিলেন। তাদের একতাবদ্ধতা তাদের প্রবৃত্তি প্রসূত ছিল বলে ঝড়-তুফানই তাদেরকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিলো। যারা চিন্তা-ভাবনা করে এসেছিল তারাও সবাই মাটির সাথে মিশে গেল। কোথায় গেল তাদের গনীমতের মাল এবং কোথায় গেল তাদের বিজয়! তাদের জীবনের উপর মরিচা পড়ে গেল। তারা হাতে হাত মলতে লাগলো; দাঁতে দাঁত পিষতে লাগলো। ঘুরানো চক্রে আপতিত হয়ে অপমান ও লাঞ্ছনার সাথে উদ্দেশ্য সাধন ছাড়াই অকৃতকার্য হয়ে তারা ফিরে গেল। দুনিয়ার ক্ষতি তাদের পৃথকভাবে হলো এবং আখিরাতের শাস্তি তো পৃথকভাবে আছেই। কেননা, কেউ যদি কোন কাজ করার নিয়ত করে এবং তা কার্যে পরিণত করে, তবে সে তাতে কৃতকার্য হালে আর নাই হালে, পাপ তার হবেই। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে হত্যা ও তার দ্বীনকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা ইত্যাদি সব কিছুই তারা করেছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা উভয় জগতের বিপদ তাদের উপর আপতিত করে তাদের অন্তর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেন এবং তাদেরকে ব্যর্থ মনোরথ করে ফিরিয়ে দেন। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের পক্ষ থেকে তাদের মুকাবিলা করেন। মুসলমানরা না তাদের সাথে লড়েছে, না তাদেরকে সরিয়ে দিয়েছে। বরং মুসলমানরা তাদের জায়গাতেই অবস্থান করেছে। আর কাফির ও মুশরিকরা এমনিতেই পলায়ন করেছে। আল্লাহ তা'আলা তাঁর সেনাবাহিনীর মর্যাদা রক্ষা করলেন, নিজের বান্দাদের তিনি সাহায্য করলেন এবং নিজেই তিনি যথেষ্ট হয়ে গেলেন। এজন্যেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেনঃ
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهٗ صَدَقَ وَعْدَهٗ وَنَصَرَ عَبْدَهٗ وَاَعَزَّ جُنْدَهٗ وَهَزَمَ الْاَحْزَابَ وَحْدَهٗ فَلَا شَيْءٌ بَعْدَهٗ
অর্থাৎ “আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই, তিনি এক, তাঁর ওয়াদা সত্য, তিনি তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন, তার সেনাবাহিনীর মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন, সম্মিলিত বাহিনী পরাজিত হলো এবং এরপরে আর কিছুই নেই। (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে তাখরীজ করেছেন)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আহযাবের যুদ্ধে দু'আ করেছিলেনঃ
اَللّٰهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ سَرِيْعَ الْحِسَابِ اَهْزَمَ الْاَحْزَابِ اَللّٰهُمَّ اهْزِمْهُمْ وَزَلْزِلْهُمْ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! হে কিতাব অবতীর্ণকারী, হে তাড়াতাড়ি হিসাব গ্রহণকারী! সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করুন এবং তাদেরকে আন্দোলিত ও প্রকম্পিত করুন।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)
মহান আল্লাহ বলেনঃ “যুদ্ধে মুমিনদের জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট। এতে একটি অতি সূক্ষ্ম কথা এই আছে যে, মুসলমানরা শুধু এই যুদ্ধ হতেই মুক্ত হননি, বরং আগামীতে সদা-সর্বদার জন্যে সাহাবীগণ (রাঃ) যুদ্ধ হতে মুক্তি লাভ করেছিলেন। মুশরিকরা আর তাঁদের উপর আক্রমণ করার সাহস কখনো করেনি। ইতিহাস সাক্ষী আছে যে, আহযাবের যুদ্ধের পর কাফিরদের এ সাহস হয়নি যে, তারা মদীনার উপর অথবা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর কোন স্থান হতে আক্রমণ করে। তাদের এ অপবিত্র পদক্ষেপ হতে আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে এবং তার বাসস্থান ও আরামের জায়গাকে সুরক্ষিত রেখেছেন। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্যে। বরং অপরপক্ষে মুসলমানরা তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করেছেন। এমনকি আল্লাহ তা'আলা আরব উপমহাদেশ হতে শিরক ও কফরী সমলে উৎপাটিত করেছেন। যখন কাফিররা এ যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তন করে। তখনই রাসূলুল্লাহ (সঃ) ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে বলেছিলেনঃ “এ বছরের পর কুরায়েশরা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করবে না। বরং তোমরাই তাদের সাথে যুদ্ধ করবে।” তাই হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মক্কা বিজিত হলো। আল্লাহর শক্তির মুকাবেলা করা বান্দার সাধ্যাতীত। আল্লাহকে কেউই পরাজিত করতে পারে না। তিনিই স্বীয় শক্তি ও সাহায্যবলে ঐ সম্মিলিত বাহিনীকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছিলেন। তাদের নাম নেয়ার মত কেউই থাকলো না। তিনি ইসলাম ও মুসলমানদেরকে বিজয় দান করলেন এবং স্বীয় ওয়াদাকে সত্য করে দেখালেন। তিনি স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে সাহায্য করলেন। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহরই জন্যে।