স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে ফির‘আওনী গোষ্ঠী থেকে রক্ষা করেছি যারা তোমাদেরকে কঠিন আযাবে ডুবিয়ে রেখেছিল, যারা তোমাদের ছেলে সন্তানগুলোকে হত্যা করছিল আর তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখছিল, এতে তোমাদের জন্য ছিল তোমাদের রবেবর পক্ষ হতে এক কঠিন পরীক্ষা।
আমি মূসার জন্য (সিনাই পর্বতের উপর) ত্রিশ রাত্রি নির্ধারণ করলাম। অতঃপর আরো দশ (বাড়িয়ে) দিয়ে (সেই সময়) পূর্ণ করলাম। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত চল্লিশ রাত্রি পূর্ণ হল। মূসা তার ভাই হারূনকে বলল, ‘আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের জন্য তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব কর, সংশোধন কর, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের অনুসরণ করো না।’
মূসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে আসল, আর তার রব্ব তার সঙ্গে কথা বললেন, তখন সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দেখা দাও, আমি তোমাকে দেখব’। তিনি বললেন, ‘তুমি আমাকে কক্ষনো দেখতে পাবে না, বরং তুমি পাহাড়ের দিকে তাকাও, যদি তা নিজ স্থানে স্থির থাকতে পারে তাহলে তুমি আমাকে দেখতে পাবে।’ অতঃপর তার প্রতিপালক যখন পাহাড়ে নিজ জ্যোতি বিচ্ছুরিত করলেন, তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল আর মূসা চৈতন্য হারিয়ে পড়ে গেল। যখন চেতনা ফিরে পেল, তখন সে বলল, ‘পবিত্র তোমার সত্ত্বা, আমি অনুশোচনা ভরে তোমার পানেই ফিরে এলাম, আর আমি প্রথম ঈমান আনছি।’
তিনি বললেন, ‘হে মূসা! আমি আমার রিসালাত (যা তোমাকে দিয়েছি) ও আমার বাক্য (যা তোমার সঙ্গে বলেছিলাম তার) দ্বারা সকল লোকের মধ্য থেকে তোমাকে নির্বাচিত করেছি। কাজেই যা তোমাকে দিয়েছি তা গ্রহণ কর আর শোকর আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।
আমি তার জন্য ফলকে লিখে দিলাম সকল বিষয় সংক্রান্ত নাসীহাত আর সকল বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা (আর তাকে বললাম) এগুলো শক্ত হাতে ধর, তোমার লোকজনকে আদেশ দাও এগুলো উত্তম পন্থায় মান্য করে চলতে। শীঘ্রই আমি তোমাদেরকে (আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে ধ্বংসস্তুপে পরিণত) ফাসিকদের বাসস্থান দেখাব।
যারা অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহঙ্কার করে বেড়ায় আমি শীঘ্রই তাদের দৃষ্টিকে আমার নিদর্শন হতে ফিরিয়ে দেব। তারা আমার নিদর্শন দেখলেও তাতে বিশ্বাস করবে না। তারা সত্যপথ দেখলেও তাকে পথ হিসেবে গ্রহণ করবে না। তারা বক্র পথ দেখলে তাকে পথ হিসেবে গ্রহণ করবে। তার কারণ হল তারা আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছে আর এগুলোর ব্যাপারে তারা ছিল একেবারে চিন্তা ভাবনাহীন।
যারা আমার নিদর্শনগুলোকে আর আখেরাতের সাক্ষাৎকে মিথ্যে জেনে অস্বীকার করে তাদের ‘আমালগুলো নিস্ফল। তারা যা করত সে অনুযায়ী প্রতিফল ছাড়া তারা কী আর আশা করতে পারে?
মূসার অনুপস্থিতিতে তার জাতির লোকেরা তাদের অলঙ্কারের সাহায্যে গো-বৎসের একটা অবয়ব তৈরি করল যা গরুর ন্যায় ‘হাম্বা’ আওয়াজ করত। তারা কি দেখল না যে তা তাদের সঙ্গে কথা বলে না, আর তাদেরকে পথও দেখায় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা তাকে মা‘বূদ হিসেবে গ্রহণ করল। তারা ছিল যালিম।
অতঃপর যখন তারা অনুতপ্ত হল আর বুঝতে পারল যে তারা পথহারা হয়ে গেছে, তারা বলল, ‘আমাদের প্রতিপালক যদি আমাদের উপর দয়া না করেন আর আমাদেরকে ক্ষমা না করেন তাহলে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’
তারপর মূসা যখন ক্ষোভ আর ক্রোধ নিয়ে তার লোকজনের কাছে ফিরে এল তখন বলল, ‘আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা কত নিকৃষ্টভাবেই না আমার প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছ! তোমাদের প্রতিপালকের নির্দেশ লাভের আগেই তোমরা তাড়াহুড়ো করে বসলে?’ অতঃপর সে ফলকগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিল, আর নিজ ভাইয়ের মাথার চুল ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসল। হারূন বলল, ‘হে আমার মায়ের পেটের ভাই! লোকেরা আমাকে দুর্বল করে দিয়েছিল আর আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল, কাজেই আমার ব্যাপারে দুশমনদেরকে আনন্দিত হওয়ার সুযোগ দিও না আর আমাকে যালিম সম্প্রদায়ের মধ্যে গণ্য করো না।’